অনেক আশা স্বপ্ন নিয়ে একটা সময়
লেবানন মধ্যপ্রাচ্যের একটি ছোট মুসলিম দেশ।এ দেশের জনসংখ্যা খুবই সীমিত। লেবাননকে মানুষ বলে থাকে সুইজারল্যান্ড খ্যাত।এদেশের মুদ্রা লেবানিজ পাউন্ড পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সাথে কারেন্সি হিসাবে ডলার ব্যবহার করা হয়।একটা সময় ছিল মধ্যপ্রাচ্যের ভেতরে অধিবাসীদের জন্য পর্যটন ব্যবস্থা লেবাননে সবচাইতে ভাল ছিল। এ দেশের জনসংখ্যার চাইতে ভিন্ন দেশের লোক বেশি বসবাস করে।আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন আমি লেবানন নিয়ে লিখছি কেন আসুন তাহলে আসল কথায় আসা যাক...............
সুইজারল্যান্ড খ্যাত লেবাননে প্রতিবছর হাজার হাজার শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে লেবাননে আসে। অনেক আশা স্বপ্ন নিয়ে একটা সময় লেবাননে অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক টাই ভাল ছিল।এদেশে ঠিকমতো কাজ করলে প্রত্যেক মাসে যে কেউ 40 হাজার থেকে 50 হাজার টাকা ইনকাম করতে পারত। লেবাননে পুরুষ শ্রমিকের চাইতে নারী শ্রমিক অনেকাংশে বেশি।এদেশে বাসা বাড়ির কাজের জন্য নারী শ্রমিক বেশি নিয়োগ করে থাকে।এই স্বপ্নের দেশ সুইজারল্যান্ড খ্যাত লেবানন আস্তে আস্তে করে দিন যায় অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে।এর পাশাপাশি এদেশে ভিন্নমত বিশ্বাসী তিনটি রাজনৈতিক দল আছে।তিন দলের তিনজন প্রধান যারা ভিন্ন মত বিশ্বাস করে।আপনারা সবাই জানেন এক দেশে যদি দুইটি রাজা থাকে তাহলে সেদেশের অবস্থা কেমন হয় ঠিক তেমনি লেবাননে হচ্ছে। এর জন্য এদেশের প্রত্যেকদিনই খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। হয়তোবা আপনাদেরকে আমি লিখে বোঝাতে পারবো না লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না। লেবাননে প্রবাসী বাঙালিরা কেমনে দিনযাপন করছে প্রত্যেকটা দিনই তাদের দীর্ঘশ্বাস বাড়িয়ে তুলছে। আমার এই কথাগুলো বলার কারণ হল লেবাননে প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের আত্ম কান্না
লেবাননের অর্থনৈতিক দরপতনের কারণে প্রত্যেকটা প্রবাসীর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আগাচ্ছে।গতবছরের নভেম্বরের শুরুর দিকে এদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়।রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী চাপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে শুরু হয় লেবাননের ডলার ক্রাইসিস কিছুদিন যেতে না যেতেই লেবাননের শুরু হয়ে যায় করোনা ভাইরাসের আক্রমণ।বেশ কয়েক মাস লেবানন সরকার লকডাউন দিতে বাধ্য হয়।এর কারণে একদিকে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক অফিস আদালত রেস্টুরেন্ট সুপার মার্কেট মিনি সুপার মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়।এতে করে বেকার হয়ে পড়ে বাংলাদেশি হাজার হাজার রেমিটেন্স যোদ্ধা।আস্তে আস্তে করে এ দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। প্রত্যেকটা দিন এদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়তে থাকে অনেক প্রবাসী বেকার হয়ে পড়ে এদেশে তাদের ঠিক মত দু বলা খেতে পর্যন্ত পারত না। যেখানে এক বস্তা চালের দাম লেবানিজ পাউন্ড বিশ হাজার লেবানিজ পাউন্ড ছিল সেই চালের দাম এখন এক বস্তা তিন লক্ষ ষাট হাজার লেবানিজ পাউন্ডে এসে দাঁড়িয়েছে। হয়তোবা আপনারা এ দেশের পরিস্থিতি টা অনুভব করতে পারবেন না। বর্তমানে এদেশে প্রত্যেকটা বাংলাদেশি শ্রমিকের বেতন বাংলা টাকা মাত্র 6 হাজার থেকে 7 হাজার টাকা। খাবার খরচ রুম ভাড়া দিয়ে কিছুই থাকে না প্রত্যেকটা দিন প্রত্যেকটা রাত দীর্ঘশ্বাসের সাথে কাটে।
আপনাদের মাঝে এ কথাগুলো শেয়ার করার একমাত্র কারণ হল________ আমি
আমিও এই লেবাননে হতভাগা একজন প্রবাসী অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বপ্নের দেশ লেবাননে এসেছিলাম।অনেক স্বপ্ন ছিল এদেশে এসে দুই হাতে টাকা কামাই করব।অনেক বড় হবো অনেক টাকার মালিক হব। কিন্তু আমার জানা ছিল না সব স্বপ্নই সত্যি হয় না কিছু কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়।
আমার স্বপ্ন ভাঙ্গার ঢেউ
দিন যাচ্ছে আমার স্বপ্নগুলো আমার চোখের সামনে শেষ হয়ে যাচ্ছে।অনেক স্বপ্ন নিয়ে অনেক আশা নিয়ে সুইজারল্যান্ড খ্যাত লেবাননে এসেছিলাম। দেশে থেকে ভেবেছিলাম লেবাননের অনেক ডলার কাজ করব আর অনেক ডলার ইনকাম করব। আসলে স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়। হয়তো আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়ার ছিল না।অনেক টাকা ধার দেনা করে লেবানন এসেছিলাম। নিজের চোখের সামনে নিজের স্বপ্ন গুলো শেষ হতে দেখলে কতটা খারাপ লাগে সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। আমার প্রতিটা রাত দীর্ঘশ্বাসের সাথে কাটতো আমি সর্বক্ষণ ভাবতাম কবে এই দেশের পরিস্থিতি একটুভালো হবে।কবে আমার স্বপ্নটা পূরণ করতে পারবো দেখতে দেখতে প্রায় একটি বছর চলে গেল। পরিস্থিতি খারাপের চাইতে অনেক খারাপ হলো,,,, আমি কিছুতেই কিছু ভেবে পাছছিলাম না।
আমি অনেক ডিপ্রেশনে চলে যাই আমি ছিলাম ফ্যামিলির একমাত্র সন্তান।আমার ওপর আমার ফ্যামিলি নির্ভরশীল আমাকে প্রতি মাসে দেশে পাঠানো হত। অনেক কষ্ট করে পরিশ্রম করে প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠাতাম আর কিছু টাকা সঞ্চয় করতাম। এভাবে কিছুদিন চলার পর আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে ও একটা বিজনেস করে।ওই বিজনেসটা আমি চাইলে ওকে সাহায্য করতে পারি,,,,আমার বন্ধু আমাকে বিজনেস সম্পর্কে সবকিছু বুঝিয়ে বলল আমি ভাবলাম আমার যে বর্তমানে পরিস্থিতি আমি যদি ওর সাথে বিজনেসটা করি তাহলে আমার জন্য একটু ভালো হবে।আমি ওর সাথে কয়েকটা মাস বিজনেস করি।
এর মাঝে লেবাননের ডলারের দরপতনের কারণে আমাকে প্রায় 70 হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়।আমি অনেক হতাশ হয়ে পড়ি এমনিতে লেবাননে পরিস্থিতি অনেক খারাপ। এর ভিতর এতগুলো টাকা ক্ষতি হলো আমি এখন কি করবো এভাবে আমি কয়েকটা মাস আমার ব্যবসাটা বন্ধ করে দিই। কিছুদিন যাওয়ার পর আমার বউ আমাকে একটা পরামর্শ দেয় যে আপনি চাইলে আবার ভালো করে বিজনেসটা শুরু করতে পারেন। কিন্তু ছোট্ট পরিসরে এভাবে অস্তে অস্তে করে ছোট্ট পরিসরে আমার স্বপ্নের বিজনেসটা করতে থাকি। কিছুটা কষ্ট করলে কিছুটা সুখ পাওয়া যায়।আমার বিজনেস ভালোই চলছে......... কিন্তু আমার মাথা সব সময় একটা বিষয় ঘুরপাক খেত আমি দেশে যেয়ে কি করব। আমাকে দেশে যে কিছু একটা করতে হবে এভাবে রাত্রে ঘুম আসত না।কিছুদিন যাওয়ার পর হঠাৎ করে আলাদিনের চেরাগের মত সন্ধান পেয়ে যাই,,,,, হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রিয় মেন্টর শিক্ষক ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের নিজের বলার মত একটা গল্প প্ল্যাটফর্মের। আমি সাথে সাথে সেখানে যুক্ত হয়ে যাই। প্রতিদিন স্যারের সেশনগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তাম এবং বুকের ভেতর ধারণ করতাম।
স্যারের একটা স্লোগান আমার আমার বুকে গেঁথে গেল। যে আমাদেরকে শুরু করতে হবে যেকোনো মূল্যে।
স্যার একটা কথা সবসময় বলেন
স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
শুরু করুন
লেগে থাকুন
সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ
আমি স্যারের কথা শোনে শুরু করে দেই মাত্র 9 হাজার টাকা দিয়ে।মেয়েদের কিছু থ্রি পিস শাড়ি এবং জুয়েলারি নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ স্যারের শিক্ষা নিয়ে আমার ব্যবসাটা ভালোই চলছে।পাশাপাশি লেবাননের বিজনেসটা তার চাইতে ভালো চলছে।আগে আমি অল্প কথায় রেগে যেতাম।মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম আমার...... ধৈর্য খুবই কম ছিল কিন্তু এখন আমি আমার ভেতরে একটা পরিবর্তন প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করছি। আমি এখন অল্প কথায় রাগ করি না,,,আমি চুপ থাকতে পারি এবং আমার ভেতরে অনেক ধৈর্য কাজ করছে। এসব কিছুর সম্ভব হয়েছে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের জন্য।কিভাবে যে স্যারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। প্রিয় মেন্টর প্রত্যেকদিন আমাদের ভেতরের বিবেককে জাগ্রত করছেন। কিভাবে একজন ভালো মানুষ হতে পারব.....কিভাবে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা তৈরি করে দেশের সম্পদ হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারব। সেই শিক্ষা অনবরত বিনা স্বার্থে বিনা পারিশ্রমিকে দিয়ে যাচ্ছেন।
---একজন ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এবং কৃতজ্ঞতা---
আমি চির কৃতজ্ঞ আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।তার অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এত সুন্দর একটি নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন পেয়েছি।যেখান থেকে আমরা প্রতিনিয়ত ভালো মানুষ হতে পারছি,শিখছি কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারব এবং পরিবারের সকলকে ভালো রাখতে পারবো।তার কাছে আমরা ঋনি,বিনাস্বার্থে তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এমন একজন ভাল মানুষ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।তিনি শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন কিভাবে নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো এবং সফল উদ্যোক্তা হতে পারব, নেটওয়ার্কিং বাড়াতে পারবো, মানুষের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব। ধৈর্যশীল মানুষ হওয়া মানুষকে কিভাবে সাহায্য টপ টেন করবো।কিভাবে মানুষের থেকে সাহায্য নিব।সকলের পাশে থাকতে হবে সবই তিনি আমাদের বুঝাচ্ছেন।
আমার বিজনেস পেজ এর লিংক আশা করি সবাই ভালোবেসে পাশে থাকবেন:https://www.facebook.com/Mf-fasion-store-telecom-114165730714758/
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
শুভেচ্ছান্তে
_____________________
মোহাম্মদ মেহেদী হাসান
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার টপ টেন ক্লাব সদস্য
১২তম/৪৮১১৯
তারুণ্যের মানিকগঞ্জ
লেবানন প্রবাসী
ফাউন্ডার এমএফ ফ্যাশন স্টোর এন্ড টেলিকম
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন