আর এই গল্পটি কোন সাধারণ গল্প নয় এটি "নিজের বলার মত একটা গল্প"!!
আসসালামু আলাইকুম!!
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি!!
ছোট্ট এক জীবন! বেঁচে থাকার সংগ্রাম অনেক বড় হয়ে থাকে!!
সে যেই হোক না কেন প্রতিটা মানুষের জীবনে কোন না কোন গল্প তৈরি হয়!
কিন্তু সব গল্প মানুষের বলা হয়ে ওঠেনা তাই সব গল্প মানুষ জানতেও পারেনা । কারণ সেই গল্প তুলে ধরার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার পড়ে এবং আন্তরিক কিছু শ্রোতা না থাকলে তার মাধূর্যতা প্রকাশিত হয় না।
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন যেখানে আমরা আমাদের জীবনের গল্পগুলো কে তুলে ধরার জন্য অনুপ্রাণিত হচ্ছি!
আর এই গল্পটি কোন সাধারণ গল্প নয় এটি "নিজের বলার মত একটা গল্প"!!
আমি শেখ আল আমিন
বাগেরহাট জেলার মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান!! আট ভাই বোনের ভিতর সবচেয়ে ছোট হওয়ায় ছোটবেলায় হয়তো আদরের কোনো ঘাটতি ছিল না!!
কৈশোরের আনন্দটা ছিল আকাশ ছোঁয়া মাথার উপরে অভিভাবক হিসেবে বাবা বেঁচে ছিলেন একজন কর্মজীবি,শক্তিমান প্রত্যয়ি মানুষ হিসেবে!!
আমার বাবা,শেখ আলতাফ হোসেন ছিলেন একজন দক্ষ কারিগর । তিনি একাধারে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পেশায় নিজেকে যুক্ত করেছেন!! তাই আমার দেখা মতে আমার বাবা ছিলেন একজন সেরা #উদ্যোক্তা!! যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে দেখেছি শীতের সময়ে খুলনা শহর থেকে পুরাতন কাপড়ের বড় বড় লট ক্রয় করে বাড়িতে এনে নিজ হাতে নিজের মেশিনে সুন্দর ডিজাইনের নতুনের মতো করে তৈরি করে ফেলতেন এবং আমাদের স্থানীয় হাটবাজারে পুরো শীতজুড়ে এই ব্যবসায় পরিচালনা করতেন, গরমের দিনে প্রচণ্ড তাপদাহে যখন মানুষ অস্থির তখন সেই সময় দেখেছি তিনি নিজ হাতে তৈরি মেশিনে কিভাবে বরফ কেটে বিভিন্ন ফলের মিশ্রণে চমৎকার শরবত তৈরি করে উদ্যোক্তার পরিচয় দিয়েছেন।
বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী রথের মেলা অনুষ্ঠিত হয় পুরো এক মাস জুড়ে তা এখনো চলমান। দেখেছি আমার পিতার হস্তশিল্পের নিপুণ দক্ষতায় নিজ হাতে তৈরি সকল রকম কাঠের সরঞ্জাম বেলুনি পিড়ি, নারকেল কোরানি দা বটির হাতলি সেই সময়ে কোনরকম যন্ত্র ছাড়া নিজের হাতে তৈরি পা দিয়ে চালিত দড়ি পেচিয়ে কাঠের উপর সুন্দর নকশা তৈরি করেছেন।
সংসারে সদস্য সংখ্যা বেশি এবং সবাই কিন্তু পড়াশোনা করেন এবং তিনি একাই কিন্তু উপার্জন করে সবার লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন তাই আমার বাবা সেরা #উদ্যোক্তা কারন তিনি আমাদের লেখাপড়া করে ভাল মানুষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
2002 সাল তখন আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী আমার প্রিটেস্ট পরীক্ষার শেষ পরীক্ষার দিনে তিনি চলে গেলেন আমাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে! নিজের কোলের উপর রেখে বিদায় দিয়েছিলাম সেদিন বাবাকে!!
মনে পরে সেদিনের একটি কথা, পরের দিন পরীক্ষা তাই ঘরে বসে পড়ছিলাম! আব্বা আমাকে ডাকছিলেন মা বলেছিলেন ওর পরীক্ষা ও পড়ছে, তিনি জবাবে বলেছিলেন "ওর পরীক্ষা হয়ে গেছে"
কাছে এসে বসলাম মাথাটাকে যখন কোলের উপর নিয়ে বসেছিলাম বাবার কণ্ঠস্বর কিছুটা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল। আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন "তোমার ভালো হবে!"
এটাই আমার জীবন চলার পথে প্রথম সাহস, প্রথম আত্মবিশ্বাস যেটা আমাকে প্রতিদিন রিমাইন্ড করে! আর তাই তো কখনই যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতেও ভীত নয় কারণ আমি জানি আমার ভালো হবে, ইনশাআল্লাহ!
2003 সালে এসএসসি পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করলাম বাগেরহাট জেলা প্রশাসক এবং এমপি মহোদয়ের কাছ থেকে সংবর্ধনা এবং মেডেল নিয়ে ঘরে ফেরা। হয়তো বাবা থাকলে দেখতেন তার পরিশ্রমটা বৃথা ছিল না!!
যেহেতু তখন আমার অভিভাবক আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাইগণ তাই তাদের অনুমতি নিয়ে ছুটে আসা ঢাকা রাজধানীতে ভালো কোন কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে।
ঢাকায় আসার পর থেকেই বুঝতে পারলাম জীবনের বাস্তবতা! বাবা যতদিন ছিলেন কোন কিছুর জন্যই জবাবদিহিতা করতে হয়নি, কিন্তু এখন থেকে প্রতিনিয়ত এই প্রতিটি পদক্ষেপে জবাবদিহিতায় বিষন্ন হয়ে উঠতে শুরু করল জীবন!
বুঝতে পারলাম ভালো কোন কলেজে পড়াশোনা করার জন্য যে খরচ সেটার জন্য আমাকে হয়তো মাঝপথে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে।
ঠিক তখন একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞাপন দেখে ছুটে গিয়েছিলাম!! ভালো রেজাল্ট থাকার কারণে তারা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন! ঢাকা শহরে কলেজে পড়ে হোস্টেলে থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ বহন করেছিলেন ধানমন্ডি এমপি আলহাজ্ব মকবুল হোসেন
আমি আজও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি তাকে এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি তিনি ওই সময় আমার মতো আরও অনেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছিলেন!!
সেই সাথে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার অভিভাবক বড় ভাইদের যারা আমাকে সেই সময়ে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমাকে সহযোগিতা করেছেন!!তারা না থাকলে হয়তো আমার পথচলা আরও বেশি কঠিন হয়ে উঠতো!!!
এইচএসসি 2005 সালে আলহামদুলিল্লাহ ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়ে মিরপুর 1 নাম্বার মেজ আপার বাসায় থাকার ব্যবস্থা হল!!
অবসর সময়ে থাকায় টিউশনিতে মনোযোগ দিলাম! তখনকার এক নাম্বার চাইনিজ এর সামনে কোয়ার্টারে আনোয়ার ভাই নামে এক বড় ভাই উনি আমাকে একটি টিউশনির ম্যানেজ করে দিলেন যেখানে প্রথম মাসে আমি সম্মানী হিসেবে পেয়েছিলাম 300 টাকা!
এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম অর্জন!! আলহামদুলিল্লাহ এই টাকা দিয়ে আমি প্রথম আমার মা এবং বড় বোনকে দুটি
জায়নামাজ কিনে দিয়েছিলাম!!
আমি কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করছি প্রিয় আনোয়ার ভাইকে যিনি সবসময় আমাকে সাহস এবং সহযোগিতা করেছেন!!
পরবর্তীতে সরকারি বাংলা কলেজে বিবিএস অনার্স ভর্তি হলাম!! আস্তে আস্তে টিউশনি বাড়তে থাকলো, পাশাপাশি মিরপুর 2 নাম্বার স্কলার কোচিং সেন্টারে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ সেখানেও নিজের যোগ্যতায় জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে আরো কিছু টিউশনিও ম্যানেজ হয়েছিল। এভাবেই চলছিল কিন্তু সব সময় নিজের ভেতর ভাবনা ছিল বাস্তবতা নিয়ে।। কঠিন বাস্তবতায় লেখাপড়া শেষে একটা চাকরি করা যে দীর্ঘ সময় সেই সময় পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সব সময় ছিল আমার মনের বিরুদ্ধে।
কারণ সব সময়ই নিজে কিছু একটা করতে হবে এটা তাড়না করতো আমাকে। অনেক নির্ঘুম রাত কেটেছে কি করা যায় কিভাবে করা যায় সেই পরিকল্পনা তৈরিতে।।
আমাদের দেশের কঠিন বাস্তবতায় আমার ভিতর বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল যে চাকরি নামক বস্তুর পিছনে ছুটে চলা আমার কাজ নয়।
কিভাবে কি করা যায় কিভাবে কিছু একটা করা যায় সারাদিন সারাক্ষণ শুধু এই ভাবোনায়!! তাইতো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে বিভিন্ন মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরী একটা ভালো নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছিল!!
2009 সাল বাগেরহাটের আমার মামাতো ভাইয়ের মামার মাধ্যমে পরিচিত হই একজন কাপড় ব্যবসায়ীর সাথে উনি টাঙ্গাইল থেকে ফ্রেশ শাড়ি কিনে এনে তর উপর ডিজাইন করতেন, এপ্লিকের কাজ করতেন, এমব্রয়ডারির কাজ করতেন।। একদিন তার গোডাউনে দেখে আমিতো অবাক!! সেখান থেকে আমার মামার পরিচয় নিয়ে সামান্য কিছু কাপড় নিয়ে আসি সাহস করে।
এখনো মনে পড়ে তখন ঈদের আগে ঢাকা শহরে মিরপুর 12 নম্বরে গলির ভিতরে অস্থায়ীভাবে কয়েকটি দোকান গড়ে উঠেছিল। আমি তাদের সাথে কথা বলে আমার একটি স্যাম্পল দেখালে তারা আগ্রহ প্রকাশ করে! মামাদের একটা গারমেন্টস ফ্যাক্টরী রয়েছে মিরপুর 10 নাম্বার খানজাহান আলী নীট ওয়্যার। সেখান থেকে আমি left-over কিছু টি শার্ট দোকানগুলোতে বিক্রি করে ছিলাম!! কলেজ লাইফের পরিচিত এক ভাই মশিউর রহমান তিনিও আমাকে কিছু পাঞ্জাবির স্যাম্পল দিয়েছিলেন সেগুলোতে আমি ভালো সাড়া পেয়েছিলাম!
তবে সবচেয়ে সাড়া পেয়েছিলাম শাড়িগুলো থেকে তখন আমি পরিচিত দোকানগুলোতে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে আমার সেম্পল দেখালে প্রতিদিনই আমার বেশ ভাল সেল হচ্ছিল!
সবচেয়ে বড় অর্ডার ছিল মিরপুর 12 এলাকার এমপি ইলিয়াস সাহেবের এক ভাগ্নে আমার কাছ থেকে একসাথে সাতটা শাড়ি অর্ডার করেছিল!!
এই প্রতিটি কাজ আমাকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিল!!
এরই মাঝে আমার মা হঠাৎ স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন!! আলহামদুলিল্লাহ আমার মাকে চিকিৎসা করানোর জন্য সেই সময় আমার এই বিজনেসের টাকাটা অনেক বড় সাপোর্ট দিয়েছিল!! যদিও পরবর্তীতে ভাইয়েরা চিকিৎসা খরচ বাবদ অন্যান্য টাকারও দিয়েছিলেন!!
বিদেশে যাবার জন্য নিজের ভিতর একটা আগ্রহ কাজ করছিল বেশ আগে থেকে।। চিন্তাটাই এমন ছিল যে বিদেশে গেলে কিছু মূলধন নিয়ে দেশে এসে ব্যবসা করা যাবে!! এরই মাঝে একটি সুযোগ এসে যায় আমার এক আত্মীয় মালয়েশিয়াতে টুরিস্ট ভিসায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেয়।
টুরিস্ট ভিসায় অল্প খরচে যাওয়া যাবে এবং ওখানে যাওয়ার পর পারমিট করা যাবে সেই প্লান থাকায় আমি রাজি হয়ে যাই এবং সবকিছু গুছিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে মালয়েশিয়া পাড়ি দেবার জন্য।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষে পা রাখি মালয়েশিয়ার মাটিতে!! আমার আত্মীয় যেখানে কাজ করতেন সেখানে কাজ করার সুযোগ হয় 700 রিংগিত বেতনে।
বেশ ভালোই চলছিল এরইমধ্যে মালয়েশিয়াতে পারমিট করার সুযোগ আসে এবং আমিও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই কিন্তু সমস্যা সব জায়গায় থাকে!!
কখনো কখনো মানুষের দক্ষতা নিজের শত্রু হয়ে ওঠে। আমার বেলায়ও তাই হয়েছিল!! মাত্র তিন মাসে মালয়েশিয়ান ভাষা রপ্ত করে বসের চোখে প্রিয় হয়ে উঠেছিলাম এবং অন্য 2 জন বাঙালির কাছে অপ্রিয় হয়ে গেছিলাম। আর তাইতো তারা কোনোভাবেই চাইছিল না যে আমি আমার বসের নামে ভিসা করে তার খাস লোক হিসেবে আরও মজবুত অবস্থান তৈরি হোক।
সব কিছু বোঝার পর নিজেকে বুঝতে পারলাম আমি সব জায়গায় ভালো কিছু করতে পারবো তাই যে আমাকে উপকার করে এখানে এনেছে তাকে কষ্ট না দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ তাইতো আরামের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলাম কনস্ট্রাকশনের কাজ করতে!আমার এখনো মনে পড়ে বস আমাকে একা ডেকে বলেছিল তুই লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে কাগজপত্র দিয়ে দে আমি আমার নামে তোর পারমিট করে দেই । আমি বলেছিলাম না বস আমি কারো পেটে লাথি মারতে চাই না!!
কিন্তু ওই দিনের ওই ত্যাগের কারণেই আমি আরো ভালো কিছু পাওয়ার পথে যাচ্ছি সেটা আমার জানা ছিল না কারন আল্লাহ মহা পরিকল্পনাকারী!
ওখান থেকে বের হয়ে বুঝতে পারলাম প্রতিটা জায়গায় নেটওয়ার্কিং এর বিশাল গুরুত্ব রয়েছে!! আর তাই যখন কোম্পানি থেকে বের হয়ে নিজের মত করে কাজ করতে থাকলাম তখন নানা জায়গায় নানা মানুষের সাথে পরিচিত হতে লাগলো! আমাকে ভালোবেসে সবাই সব সময় ভালো একটি মার্জিত কাজ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করত! আলাদা একটা সম্মান করতো সবাই
কারণ হিসেবে বুঝতে পারলাম মালয়েশিয়াতে বেশিরভাগ মানুষ যারা গিয়েছেন তারা সবাই লেবার খেটে খাওয়া মানুষ তাদের মাঝে আমার শিক্ষা জ্ঞান এবং আমার কর্মকৌশল আমাকে সম্মানের জায়গা দিতে সহযোগিতা করেছে!! কারণ কনস্ট্রাকশন জগতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে একটা সাইটে যে কয়জন কাজ করতো তাদের সমান তালে আমি ইট গাথা ও প্লাস্টারের কাজ করা রপ্ত করে ফেলেছিলাম!!
এর মধ্য দিয়েই এক ভাই আমাকে ভালোবেসে একটি সুপার মার্কেটে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় ক্যাশ কাউন্টারে খুব ভালো ভাবেই চলছিল। কিছুদিন পরেই আমার জন্য প্রস্তাব আসে সেই আল্লাহর প্রদত্ত সুযোগ!! প্রাণ আরএফএল কোম্পানি তখন মালয়েশিয়াতে ভালো একটা অবস্থান তৈরির পথে কাজ করছে । ওই সুপার মার্কেটে প্রাণ কোম্পানির মাল দিতে এসে সেলসম্যান এর সাথে কথা হয় আমার । উনি আমার সাথে কথা বলে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে কথা বলে এবং পরের দিন সাক্ষাৎ হেড অফ সেলস ইন্টারভিউ নেয় এবং চাকরি কনফার্ম হয়ে যায় সবকিছু যেন মুহূর্তের মধ্য পাল্টে গেল।
আলহামদুলিল্লাহ প্রাণ আরএফএল কোম্পানিতে কাজ করে অল্প সময়ের ভিতর সুপার ডুপার সেলসম্যান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে কাজ করতে থাকলাম!!
দিন গড়িয়ে যেতে থাকলো আমার প্ল্যান অনুযায়ী পাঁচ বছর হওয়ার শেষের দিকে!! এর ভিতরে কখনোই দেশে আসার সুযোগ হয়নি!! তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এবার দেশে চলে যেতে হবে! পাঁচ বছর শেষ করে দেশে ফিরলাম 2014 সালের নভেম্বর মাসে।
পাঁচ বছরের প্রবাস জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমার সন্তুষ্ট ছিল যে আমি এই মুহূর্তে কারো উপর নির্ভর না করে আমার পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারছি, আত্মীয়স্বজনকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করতে পারছি এবং সবচেয়ে বড় অর্জন আমার মায়ের জন্য যাবতীয় খরচ আমি বহন করছি!!
এখন পর্যন্ত আমার মা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড অবস্থায় বিছানায় রয়েছেন এবং তিনি আমার কাছে রয়েছেন!! আমার সবচেয়ে বড় অর্জনটা ও এখানে যে, হামদুলিল্লাহ আমার বড় ভাইয়েরা যার যার অবস্থানে ভালো থাকা সত্বেও আমার মাকে খেদমত করার এবং দেখাশোনা করার সুযোগ আল্লাহতালা শুধুমাত্র আমাকে দিয়েছেন!! তবে আলহামদুলিল্লাহ তারাও যথেষ্ট আন্তরিক মার খরচ পোষনে তারাও যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছেন!!
বিদেশের মাটিতে প্রতিটি রাত একা একা যত পরিকল্পনা করেছিলাম যৌথ উদ্যোগ নেয়ার কথা ভেবেছিলাম সবগুলোই ডাইরিতে লেখা ছিলো আমার!! দেশে আসার পরই সে কাজগুলো শুরু করি!!
জানুয়ারি 2015 সাল থেকেই গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য একটি কোচিং সেন্টার স্থাপন করলাম!! আলহামদুলিল্লাহ ব্যাপক সাড়া পেলাম প্রথম বছরেই 100 প্লাস স্টুডেন্ট!!
এলাকায় এসে সবার আস্থা ও ভালোবাসায় এগিয়ে যেতে থাকলাম!! সামাজিক ও মানবিক কাজের প্রতি আমার আগ্রহ ছোটোবেলা থেকেই! মালয়েশিয়ায় বসেই পরিকল্পনা করেছিলাম দেশে এসে একটি সংগঠন করব আমার এলাকার বন্ধু-বান্ধব দের কে নিয়ে এবং একটি নাম দিয়েছিলাম টিম অফ মডেল ভিলেজ (TMV) অর্থাৎ আদর্শ গ্রামের দল! 2015 সালেই এলাকার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গড়ে তুলতে সক্ষম হয় আমার স্বপ্নের সংগঠনটি!
আলহামদুলিল্লাহ অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের সংগঠনটি এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাশে এসে দাঁড়ায়
আমরা এলাকার সবাইকে নিয়ে রাস্তা সংস্কার, বৃক্ষরোপণ, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো, চিকিৎসাবঞ্চিত রোগীদের চাঁদা তুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, গ্রামাঞ্চলে সবার জন্য সংবাদ নিশ্চিত করতে ওয়ালপেপার এর ব্যবস্থা করা, অন্ধকার রাস্তায় বিদ্যুতের খাম্বার সাথে নিজস্ব উদ্যোগে পোস্ট লাইটের ব্যবস্থা , ফ্রি বই বিতরণ, কোচিং থেকে ছাত্রবৃত্তি ব্যবস্থা করা ও অন্যান্য আয়োজনের মাধ্যমে সংগঠনটি এখন পর্যন্ত একমাত্র জনপ্রিয় সংগঠন!!
এভাবেই চলছিল, নিজের উদ্যোগ সামাজিক কাজ মানবিক কাজ নিয়ে 2017 সালে কোচিং থাকে স্কুল কেন্দ্রটি স্থাপন করে আরো দুজন শিক্ষকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম!! পাশাপাশি সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কোচিং এর সাথেই স্টুডেন্ট কর্নার একটি স্টেশনারি দোকান শুরু করেছিলাম 2018 সাল। নিজের কিছু একটা করার চিন্তাটাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারায় ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম স্বপ্নের পথে!! 2020 সাল জানুয়ারিতে ঢেলে সাজানোর দোকান টা কে কসমেটিক্স স্টেশনারি ফুড আইটেম এবং স্পোর্টস আইটেম নিয়ে একটি মিনি সুপার স্টোরে পরিণত করলাম!! পুরো বছরের মালামাল যখন দোকানে স্টক করা হলো মার্চ মাসে সেই লকডাউন সবকিছুই স্থবির করে দিয়েছিল!!
যেহেতু আমার দোকানটি ছিল স্কুল কেন্দ্রিক স্কুল খোলা না থাকলে আমার দোকানে কোন বেচা-বিক্রিও হতনা ।দোকান টা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এখন পর্যন্ত।।
তাইতো ঘরে বসে মোবাইল নিয়ে সময় কাটানো!!
আমি যেহেতু বেশকিছু ট্রেনিং করেছি তাই মোটিভেশনাল ট্রেনিং এর প্রতি ছিলাম প্রথম থেকেই বেশ দুর্বল তাই অনলাইনে ইউটিউবে যখন কোন মোটিভেশনাল ট্রেনিং দেখতাম সেগুলো মিস করতাম না!! এভাবেই একদিন দেখা পেলাম আমাদের প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর একটি ভিডিও!! বেশ ভালো লাগলো কথাগুলো এভাবে ফলো করতে থাকলাম তখন সম্ভবত ষষ্ঠ ব্যাচ চলে গ্রুপে যুক্ত হয় কিন্তু দুই দুইবার রেজিস্ট্রেশন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় যেকোনো কারণে রেস্তরেশন করছিল নাচেষ্টা করতে করতে অষ্টম বেঁচে এসে আমি রেজিস্ট্রেশন করতে সফল হই!গ্রুপের পোস্টগুলো এবং স্টেশনগুলোতে যখন দেখতাম বিভিন্ন জেলার অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন তারা টিম নিয়ে কাজ করছেনকরতে থাকি বাগেরহাট জেলা এম্বাসিডর কে আছেন! একদিন প্রিয় সাগর বণিক ভাই আমাকে মেনশন করেন এবং বাগেরহাট জেলা টিমের অ্যাম্বাসেডর দেবাশীষ দেব প্রীতম কে মেনশন করেন।
গল্পটা তখন থেকেই শুরু, পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আর!! একটি ব্যাবসা একটি ইনভেস্ট সবকিছু বন্ধ থাকলেও নতুন উদ্যোগে নতুন ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে থাকি। ধীরে ধীরে বাগেরহাট জেলা টিমের সাথে যুক্ত হয়ে শুরু হয় নতুন পথ চলা!
স্যারের সেশন গুলো আমাকে আরো নতুন করে উজ্জীবিত করে এরই মাঝে পরিচয় হয় প্রিয় বড় ভাই খন্দকার রবি তিনিও আমাকে সাহস এবং উৎসাহ দিতে থাকেন এবং সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন!
গ্রুপের কয়েকজন সুপার একটিভ সদস্য যেমন মিন্টু মাতব্বর, মুজাহিদ অপু ভাইয়ের পিওর হানি তাদের এই ব্যবসা গুলো আমাকে আকৃষ্ট করে! কারণঃ আমি যেহেতু সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার বাগেরহাট শহরে অবস্থান করছি তাই পন্য নির্বাচনে মধুর নামটাই প্রথমে চলে আসে!! কারণ প্রিয় স্যারের একটি স্টেশন থেকে আমরা সবাই জানি যার যার এলাকার বিখ্যাত পণ্য নিয়ে কাজ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
অবশেষে শুরু হয় Ⓜ️মধুরাজ🐝 ব্রান্ডের পথ চলা! নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি ব্র্যান্ড!! প্রিয় স্যারের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বুকে অদম্য সাহস নিয়ে আর নিজের আত্মবিশ্বাস কে পুঁজি করে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছি!! 2020 সালের পৃথিবীর কঠিনতম দুর্যোগের ভিতরেও ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি নতুনভাবে ইনশাআল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ ,প্রথমে মাত্র দুই কেজি মধু সংগ্রহ করে 1 কেজি বিক্রি করে ছিলাম! আর এখন আলহামদুলিল্লাহ এই গ্রুপে আমার থেকে 8 থেকে 9 জন পণ্য নিয়ে তারা উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছে!!
অফলাইনেও অনেকেই আমার পণ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি কিছু করার জন্য!
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের ম্যাজিকাল শক্তিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছি একসাথে এরই মধ্যে আরও একটি অর্জন , আমার অ্যাক্টিভিটি দেখে বাগেরহাট জেলার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাম্বাসেডর দেবাশীষ দে প্রীতম দাদা আমাকে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নাম প্রস্তাব করেন!! প্রিয় স্যার আমাকে ডিস্ট্রিক অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নাম ঘোষণা করে আমার আত্মবিশ্বাস কে আরো অনেক উঁচুতে তুলে দিয়েছেন!!
সেই থেকে বাগেরহাট জেলা টিমের জন্য একজন নিবেদিত সদস্য হয়ে কাজ করছি!!কাজ করছি বাগেরহাট জেলা টিমের সকল সদস্যকে একত্রিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে!!
আজকের Ⓜ️মধুরাজ 🐝 বাগেরহাট জেলা টিমের একটি ব্র্যান্ড! নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশ এর বাগেরহাট জেলা টিমের প্রতিটি উদ্যোক্তা যেন এক একটি ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে!
বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই বাগেরহাট জেলা টিমের সকল সদস্যবৃন্দ আমাকে আমার পথ চলায় এত বেশি আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করার জন্য!
বিশেষ কৃতজ্ঞতা বাগেরহাট জেলা এম্বাসিডরDebasis Dey Prètøm আমাকে সার্বিক নির্দেশনা ও সহযোগিতা করার জন্য!!
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
ধন্যবাদান্তে
শেখ আল আমিন
জেলা এম্বাসেডর বাগেরহাট
সদস্য ঃ ব্লাড ডোনেশন মানেজমেন্ট টিম কমিউনিটি
ব্যাচ নং 8
রেজিস্ট্রেশন নং 8153
#বাগেরহাট