হার_না_মানা_সুলতানা_আমি
#হার_না_মানা_সুলতানা_আমি -
👩🦱 আমার শৈশব -
২০০০ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় আমার জন্ম । একটা অজপাড়া গায়ে আমার জন্ম তাই ছোটবেলা থেকেই একটু নরম স্বভাবের ছিলাম আমি। বাবা - মায়ের তৃতীয় সন্তান আমি। আদরটাও খুব একটা পাইনি। পরিবার এর বড় সন্তান আর ছোটো সন্তানের মতো আদর কেউই পায়না৷ সেটা আমি বুঝেছি৷ জানিনা কথাটা বাকিরা কতটুকু বিশ্বাস করে৷ আমি আমার পরিবার এর সন্তান হিসেবে সেই আদরটুকু পাইনি৷ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। বাবা পেশায় একজন কৃষক৷ খুব নামকরা বংশের মেয়ে আমি। কিন্তু, কথায় আছে না - নামে নয় গুণে পরিচয়৷ ঠিক তেমনি অবস্থা হয়েছে আমার বংশের৷ পুরো বংশের কেউ কোনো সাহায্য করতো না আমাদের৷ অভাব অনটনের টানা হেচড়ায় জীবনটা খুব আহ্লাদে কাটেনি আমার৷ শখ থাকলে শখ পুরণের কোনো উপায় ছিলো না। সাধ ছিলো কিন্তু, সাধ্য ছিলো না৷ ১৯৯৮ সালে বন্যায় অনেক ক্ষতি হয় আমাদের। সেই ক্ষতি পোষাতে ধার দেনা করেন বাবা৷ কিন্তু, ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার পরিবর্তে আরো ক্ষতি হয়ে গেলো৷ মানুষের ধার - দেনা শোধ করতে বিক্রি করেছিলেন নিজের সকল চাষের জমি৷ একেবারে নিশ্ব হয়ে গেলো আমার বাবা। আমাদের মানুষ করার মানুষের জমি লিজ নিয়ে চাষ করতেন আমার বাবা। বর্গা চাষীদের বর্গার ভাগ দিয়ে কি বা থাকে। তাই দিয়ে সংসার এর নানান খরচ চালাতেন আমার বাবা৷ সেই অভাবের দিনগুলোর কথা এখনো আমাকে কাঁদায়। আমার ছোটো আমার ভাই। চার সন্তানের পিতা-মাতা সন্তানদের খাওয়াতে- পড়াতেই হিমসিম খেতো। তারা শখ পূরণ করতে অক্ষম ছিলেন৷ তাই আফসোসটা সবসময় লেগেই থাকতো৷ আশে - পাশের সবাই যখন নানান ধরনের খেলা করতো আমি তখন মাকে কাজে সাহায্য করতাম৷ ২০০৪ সালে বড় আপার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। তাই একাই বাড়িতে থাকতাম আমি। বাড়ির বাকি ঘরের মানুষগুলো সবসময় আমাদের এড়িয়ে চলতো। কারণ, আমার বাবার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালো ছিলো না৷ আর মেঝো ভাইয়া স্কুলে পড়তেন তার পড়া দেখে আমিও স্কুলে যাওয়ার বায়না ধরি। বাবা আমার কান্নাকাটি থামাতে ২০০৬ সালে গ্রামের ত্রিপল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করিয়ে দেয়৷
সারাদিন স্কুল শেষ করে বিকেলে বাড়ি ফিরলে মা খেলতে যেতে দিতেন না৷ আমাকে নিয়ে ঘরের কাজ করতেন৷ মাঝে মাঝে অন্য সবার খেলা দেখে একা একাই এক্কা দোক্কা, বউছি এগুলো খেলতাম ৷ বাড়িতেই থাকতাম সারাক্ষণ৷ দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত আমার ক্লাস রোল এক ছিলো৷ পড়ার প্রতি এক ধরনের নেশা কাজ করতো আমার। বাবা সারাদিন মাঠে কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতো। আমাদের গ্রামেও হাট বসে। বাবা আমাকে হাটে নিতে চাইতো না। কারণ, তার অবস্থা ছিলো না আমাকে কিছু কিনে দেওয়ার৷ আমাকে বাবা অনেক ভালোবাসতেন এখনো বাসে৷ কিন্তু, তবুও শখের অপূর্ণতা থেকেই যেতো৷ বড় বোনের বিয়ের পর আমিই একটি মেয়ে তাদের ঘরে ছিলাম৷ বাবা হাটবারে আমার জন্য একটা চকলেট হলেও আনতেন৷ লুকিয়ে দিতেন আমার কাছে৷ সেটাই ছিলো আমার মহা খুশির একটা অংশ। এতো পরিশ্রমী আর সৎ হওয়ার পরও আমার বাবা কখনই কোনো কাজে সফল হতে পারতেন না। মেঝো ভাইয়াকে বিদেশে পাঠাতেও অনেক চেষ্টা করেন বাবা। এজন্যও অনেক টাকা লোকসান করতে হয়েছে তাকে৷ হয়নি মেঝো ভাইয়ার কোনো বিদেশ গমনের গতি।
আমার এখনও মনে আছে আমাদের বাড়ির অনেকের ঘরে বিদ্যুত থাকলেও টাকার অভাবে আমার বাবা বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারেনি৷ মাটির কুপিতে কেরোসিন দিয়ে রাতে পড়তাম৷ বিদেশ যাওয়ার চেষ্টার পর মেঝো ভাইয়ার আর পড়াশুনা করা হয়নি৷ আমি বাবার অভাব গুলো দেখতাম৷ আমার রেজাল্ট ভালো দেখে বাবা মাঝে মাঝে আমাকে দুই টাকা করে দিতো৷ অনেক কিছু খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও খাইনি। বাবার অভাব বাবার কান্না চোখে ভাসতো৷ আমি কখনও প্রাইভেট পড়িনি৷ প্রাইভেট দূরের কথা আমার একটা কলম কেনার টাকাও আমি বাবার কাছ থেকে নেই নি।
🙎♀️আমার কৈশোর -
পঞ্চম শ্রেনীতে বৃত্তি পেয়েছিলাম৷ হাইস্কুলে ভর্তি হতে কোনো টাকা লাগেনি আমার৷ হাইস্কুলে উঠেই। নানান ধরনের চাপ। নিয়মিত ক্লাস করা, প্রাইভেট পড়া, গাইড বই কেনা। কোনোটাই করার সুযোগ হয়নি আমার। আমার নানি হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করলো৷ মা চলে গেলো খুলনায় মামার বাড়িতে। নানির দেখা শুনা করতে। বছরে প্রায় ১০ মাসই খুলনায় নানীকে দেখাশুনা করতে থাকতো মা৷ এদিকে বাবাকে দেখা শুনা করা, ঘরের রান্না, মেঝো ভাইয়ার সবকিছু ঘুচিয়ে রাখা, বাবাকে মাঠে খাবার পৌঁছে দেওয়া আবার নিজের পড়াশুনা৷ সব একসাথে হয়ে উঠতো না৷ আমাদের বংশে মেয়েদের বিয়ে ছোটোবেলাতেই দিয়ে দেয়৷ সেই নিয়মে আমার দাদা আমার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করলো৷ আমার এখনো মনে আছে, আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী তখন একদিন বাড়ির উঠোনে বসে আমার জুতো ছিড়ে গিয়েছে তাই সেলাই করছিলাম। হঠাৎ দুইজন অপরিচিত মানুষ আমাদের বাড়িতে আসলো৷ দাদা আমাকে দেখালেন তাদের। আমি যখন শুনতে পারলাম। তারা আমাকে বিয়ের জন্য দেখতে আসছে৷ তখন পালিয়ে রইলাম। টানা দুইদিন আমি পালিয়ে ছিলাম। অনেক ঝড় ঝাপটা পেড়িয়ে সেই বিয়ে নাকোজ করলাম। পড়লেখায় মনোযোগী হলাম আরো। কষ্ট করে রাত জেগে পড়াশুনা করতে থাকলাম৷ লড়াই ছাড়িনি তবুও। অনেক কষ্টেই ২০১৭ সালে এসএসসি পাশ করলাম।
👰 আমার বিয়ে -
বিয়ে নিয়ে সবার যেমন অনেক স্বপ্ন থাকে। আমি ঠিক তার উল্টো৷ ১৬ বছর বয়সে ২০১৭ সালেই এসএসসি পাশের পরই পারিবারিক ভাবে এক ধনাঢ্য পরিবারের ধনীর দুলালের সাথে বিয়ে দেওয়া হয় আমাকে৷ বিয়ে একটা প্রাকৃতিক নিয়ম। তাই সে কথা ভেবে মেনে নিয়েছিলাম সবকিছু আর সবকিছু স্বাভাবিকই ছিলো৷ কাজের সুবাদে আমার স্বামী আমাকে নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরে থাকতো। এর মধ্যেই একবছর শেষ পড়াশুনার কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি৷ ভেবেছিলাম আর বুঝি আমি পড়াশুনা করতে পারবো না। আমার সময় বুঝি শেষ। আমার স্বপ্নগুলো আমাকে রাতে ঘুমাতে দিতো না৷ তাই একবছর পর স্বামীর সাথে পরামর্শ করে নিজের উদ্যোগে গোপালগঞ্জ- এ টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এর অধীনে একটা কলেজে কম্পিউটার এর উপর ডিপ্লোমা ইন ইন্জিনিয়ারিং কোর্স ভর্তি হই৷ বিয়ের পর হতে সে ফোনে মেয়েদের সাথে কথা বলতো। এ নিয়ে যখন আমি আমার ও তার পরিবারে অভিযোগ করলাম। তার প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের মিমাংসা করে দিলো৷ আমার মা - বড় বোন বলল মাত্র বিয়ে হয়েছে, একটু ধৈর্য্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে৷ বাচ্চা - কাচ্চা হলে এমন করবে না। সমাজকে মেনে চলি এখনো তাই বিয়ে টাকে খেলা মনে না করে সংসারকে সুন্দর করে সাজাতে সেইদিন জীবনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যার ফল এখনও আমাকে পোহাতে হয়৷ আমি বাচ্চা নিলাম। কিন্তু, তবুও সে সুধরালো না৷ বরং, সে পরকীয়া বিষয়ে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল৷ আমার বাচ্চা হওয়া নিয়েও তার ছিলো নানান সমস্যা৷ আমার গর্ভের সন্তানকে গর্ভপাত করানোর জন্য সে নানান রকম চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্ত, আল্লাহ সহায় থাকলে কেউ কারো ক্ষতি করতে পারে না৷ আমার আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছে৷ আমার গর্ভপাত হয়নি। পরবর্তীতে সে আমার জীবন নিয়ে মজার খেলা শুরু করল৷ শুরু হলো তার নতুন খেলা সিজার৷ আর এই কষ্টটা সেই মা - জানে যে কিনা। নিজের সন্তানকে সিজার এর মাধ্যমে জন্ম দিয়েছে৷ আমার বয়সটা অনেক কম৷ এতো কম বয়সে এতো ঝুকির পর আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার জন্য আমার ৮মাস গর্ভকালীন সময়ে সে আমাকে সিজার করায়৷ আমি সেই দিনটির কথা কখনই ভুলবো না।
আমি সেদিন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছিলাম - আল্লাহগো আমাকে মাফ করে দিও। আমি বুঝি পারলাম না৷ আমার ছোট্ট সোনা কে বাঁচাতে। আমি নিজেই তো মরে যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে তুমি আমাকে নিয়ে যাও। আমার বুকের ধনকে বাচিয়ে রাখো৷
আল্লাহর এক অশেষ রহমত৷ এতো বড় বিপদের পরেও আল্লাহ আমাকে ও আমার সন্তানকে বাচিয়ে রেখেছে৷ আলহামদুলিল্লাহ ২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বর আমি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছি। সবাই আমার কলিজার টুকরার জন্য দোয়া করবেন৷
আমি আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছি৷ আর অপরদিকে আমার স্বামী তার জীবন তামাসার রঙ্গলীলা নিয়ে ব্যস্ত। আমরা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলাম৷ কিন্তু, সে ঠিকঠাক বাসায় ফিরতো না৷ তারপরও মেয়ের দিকে তাকিয়ে সব কিছু চুপচাপ মেনে নিতাম৷ জীবনের সকল স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়েছিলাম এই ভুল মানুষটিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবো বলে৷ অন্য পাঁচটি মেয়ের মতো সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্ত, না আমি ভুল ছিলাম৷ ছোট্ট এই জীবনে কোনো পাপ করিনি যে, মেনে নিবো এটা আমার কর্মফল৷ ভুল মানুষটির ভুল কাজের পরেও দিনশেষে মেনে নিতাম তাকে৷ মনে মনে ভাবতাম মেয়েটার মায়াও পড়লে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু, না। আমার ধারণা ভুল ছিলো৷ আমার সন্তানকে নিয়ে যখন প্রথম আমি আমার বাবার বাড়ি আসলাম বেড়াতে। সেই সুযোগে সে অনেককিছুই করেছে৷ হঠাৎ, সে ডিভোর্স নোটিশ পাঠায় আমার বাবার বাড়িতে। আর ফিরে যাইনি সেখানে। গিয়েও বা কি করবো। আমার অধিকারই যেখানে নেই। বাবার বাড়ির মানুষগুলো আমাকে দোষারোপ করতে শুরু করলো৷ তারপরও বেশ কিছুদিন বাবার বাড়িতে ছিলাম৷ টুকিটাকি কাজ শিখেছি করেছি।
💗 আমার উদ্যোগ -
একটা সময় এতো বেশি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলাম যে বেঁচে থাকার ইচ্ছা শক্তিও হারিয়ে ফেলছিলাম। শুধু এটাই ভাবতাম এক জীবনে এর চেয়ে বেশি সওয়া কি সত্যি সম্ভব কি না? ফোন ছিলো না, ল্যাপটপ ছিলো তা ও নেট কানেকশন সিস্টেম ছিলো না। শুধুই অতল সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। উঠে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা পাচ্ছিলাম না। একটা সময় আত্মহত্যার মতো পাপ কাজের অনুসারীও হয়েছিলাম৷ চেষ্টা চালিয়েছি নিঃশ্ব হয়ে যাবার৷
তারপর একটা সময় আমার হুঁশ হলো যে আমায় বাঁচতে হবে। আমার সন্তানের জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে হবে। যেহেতু আমি ভুল মানুষের কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য বোন জামাইয়ের কাছ থেকে বেশ মোটা অংকের টাকা ধার এনে দিয়েছিলাম৷ সেটাও সে পুরোপুরি শোধ করেনি। তাই নিজের ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোনো উপায় ছিলো না। তাই আমাদের এলাকায় ডেলটা লাইফ ইন্সুইরেন্স এ এজেন্ট হিসেবে জয়েন করি। লাইফ ইন্সুইরেন্স এ মানুষের আস্থা উঠে গিয়েছে৷ তাই সেটায় আমি খুব একটা সফল হইনি। তবে আশা ছাড়িনি। তারপর ভাবলাম নিজে কিছু করি৷ অনেক ভেবে স্থানীয় একটি ঋণদান সংগঠন থেকে ১৫ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে মহিলাদের গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে আমার প্রথম যাত্রা শুরু করেছি। খুলনা থেকে পন্য এনে বাড়িতে রেখে বিক্রি শুরু করি৷ তখন সময় কাটানো ও নিজের প্রয়োজনে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কিনেছিলাম৷ হঠাৎ একদিন মনে পড়ল আমি এসএসসি পরিক্ষার পরে একটা ছোট্ট ট্টেনিং করেছিলাম আর সেটা ছিলো সজনে পাতার পাউডার অর্থাৎ মরিঙ্গা পাউডার নিয়ে৷ যেই ভাবা সেই কাজ তারপর ইউটিউবে, গুগলে ও নানান মাধ্যমে মরিঙ্গা পাউডার মানে সজনে পাতার পাউডার নিয়ে রিচার্জ করি । ২০১৭ সালে মরিঙ্গা পাউডার এর ওপরে আমার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদে একটি ছোট্ট কোর্স করেছিলাম। তাই ভাবলাম আমাদের তো গাছ আছে আমি এটা দিয়ে শুরু করি। অনেকের তো অনেক ভাবে ভাগ্য পরিবর্তন হয়। আমি না হয় এটা দিয়ে একটু চেষ্টা করে দেখি। আল্লাহর রহমতে অফলাইনে অনেককে ফ্রিতে দেওয়ার পর উপকৃত হয়ে সবাই নিতে শুরু করে। কিন্তু, অনলাইনে আসি না। আমার লজ্জা করতো, মনে হতো এই পাতার গুড়ো কেউ নিবে? মানুষ তো নানান কথা শুনাবে । একটা সময় লজ্জা, ভয় কাটিয়ে অনলাইনে ও শুরু করলাম। তারপর আমাদের কলেজের একজন শ্রদ্ধেয় প্রফেসর #Engr_Md_Nuruzzaman স্যারের এর মাধ্যমে এই প্রাণের গ্রুপের সন্ধান পাই৷ কিন্তু, মুল্যায়ন না করে রেজিষ্ট্রেশন করি নি৷ যার ফল আমি ভুগতেছিলাম৷ তাছাড়া ভালো ফোন না থাকায়ও অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। তবুও যারা আমার এই সুপারফুড মরিঙ্গার মূল্যায়ন করে তারা খুব বেশি পছন্দ করে। এটা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ সহ প্রায় ৩০০ রোগের প্রতিরোধক ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে ও আধুনিক বিজ্ঞান সমর্থন করে। তারপর একে একে মেহেদী, নিম, তুলসী, থানকুনি, ভৃঙ্গরাজ পাউডার, নিম তেল ও রাজশাহীর ফলের রাজা আম যুক্ত করি৷
১০ম ব্যাচে ২০২০ সালে প্রিয় ফাউন্ডেশন নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন এ যুক্ত হলেও ২০২১ সালে ১৩ তম ব্যাচে প্রিয় ফাউন্ডেশন এর একটিভ সদস্য #Rich_Md_Hakim ভাইয়ার মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করতে সক্ষম হই৷
আল্লাহর রহমতে এই মাত্র ৬ মাস এর উদ্যোক্তা জীবনে আমি অসংখ্য আপু, ভাইয়ার সাথে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। আরও চেষ্টা করছি। আমি ক্রেতা হয়েছি অনেকবার। আর আমার সকলের ভালোবাসা পাবার একটা মুল কারণ হলো আমি সবার পোস্ট পড়ে গঠনমূলক কমেন্ট করার চেষ্টা করি । এটাও প্রিয় এই ফাউন্ডেশনের শিক্ষা। এ জন্য অনেক এর হৃদয় এ স্থান পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে ।
💟💗💟 আমার স্বপ্ন -
আমার কাছে অনেক মানুষ আসা যাওয়া করতো। মেঝো ভাই বিয়ে করেছিলো ২০১৮ সালে। ভাবি তার সংসারটা সে নিজের মতো করে রাখতে চাইতো। আমার কাছে এতো মানুষ আসা তাদের পছন্দ ছিলো না। মাও হঠাৎ স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে গিয়েছে৷ বাবার বয়সটাও বেড়ে গিয়েছে। তারা কেউ চাইলেও কিছু করতে পারতো না আমার জন্য আমার এই দুঃসময়ে কোনো উপায় ছিলো না৷ তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে। বাবার বাড়ি থেকে বেশ দূরে একটা বাসা নিয়েছি। সবকিছু নতুন করে শুরু করেছি। প্রতিনিয়তই চলছে আমার স্বপ্নের বীজ বপন। আমি এখন মুক্ত পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়াই। মেয়েকে সাথে নিয়েই আছি৷ এখন মেয়েটাই আমার স্বপ্ন। মেয়েটাই আমার সব৷ সেই ঋণ শোধ করেছি আমি৷ অল্প অল্প করে ঘুচিয়ে নিচ্ছি নিজের ভূবনকে। একটা ফোন কিনেছি, একটি সেলাইমেশিন কিনেছি। মেয়ের ও নিজের নানান খরচ চালাই নিজের উপার্জন হতেই ।
আমি আমার সকল কাজ নিজেই করে থাকি। অনেক ধিক্কার এর সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু আমি আমার বাবা সমতুল্য "জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যার এর কথা বুকে ধারণ করি,, আমি না খেয়ে থাকলে এই সমাজ আমায় খাইয়ে দিবে না, আমার দায় বহন করবে না। এমনকি এই দেশ এর আইন থেকেও আমি আজও কোনো ফলাফল পাই নি। অনেক পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আগামীর সমস্ত পরিক্ষায় সামিল হতে আমি সদা প্রস্তুত। আমি আবারও কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করছি।আমি কারো করুনার পাত্র হবো না। আমি আগামীতে আরও পরিকল্পনা করে রেখেছি। আমি অনেককে আমার প্রোডাক্ট পাইকারি দিয়েছি৷ আমি পরিশ্রম এর দ্বারা একদিন সফল হবো।
সে দিন তরুণ সমাজের যারা জীবন সাগরের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে তাঁদের টেনে তুলবো। বলবো বাঁচতেই হবে। কোনো ভুল মানুষ, কোনো তুচ্ছ ভালোবাসা, কোনো তুচ্ছ কারণে এই মূল্যবান জীবনটাকে হারিয়ে ফেলা যাবে না৷
সবাই দোয়া করবেন আমি যেনো এই খাঁটি পণ্যগুলো সবার কাছে পৌঁছাতে পারি৷ আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি। "উদ্দেশ্য কেবল অর্জন এই নয়, উদ্দেশ্য হোক মানব কল্যাণেও।"
ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সবার উদ্দেশ্য একটি কথা বলতে চাই,,,,, "বিড়ালের মতো মাথা নুইয়ে হাজার বছর নয়, বাঁচলে সিংহের মতো যুদ্ধ করে সামান্য সময় বাঁচুন।"
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
উদ্যোক্তা: সুলতানা
ব্যাচ: ১৩ // রেজিঃ ৫৮৬০২
প্রতিষ্ঠানের নাম: Sultana's Dream
স্থায়ী ঠিকানা: বাগেরহাট
ফেসবুক পেজ লিংক: https://www.facebook.com/meghlaSultanah/