প্রতিটি মানুষের জীবনে দুঃখ কষ্ট বেদনা লুকিয়ে থাকে
#জীবনের গল্প
প্রতিটি মানুষের জীবনে দুঃখ কষ্ট বেদনা লুকিয়ে থাকে,
প্রকাশ করার মতন কোনো মানুষ খুঁজে না পাওয়া এবং সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে কারো সাথে শেয়ার করা যায় না, নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন,
আমাদের সবাইকে মন খুলে কথা বলার অ্যাক্টিভ পরিবার তৈরি করে দিয়েছেন।
এইজন্য স্যারের জন্য আবারো অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো।
আমি অতি নিম্ন আয়ের পরিবারের একটি সন্তান
আমার বয়স যখন ৮-৯ তখন থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি, আমার বাবার কাজে সহযোগিতা করতে হয়েছে, ওই বয়সটাকে মানুষ ঠিকমতো খেলাধুলা করে লেখাপড়া করে এবং দুষ্ট পনা হয়ে থাকে।
আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা ছিল একটু ভিন্ন, প্রতিদিন সকালবেলা আমার বাবা মাছ ধরতেন আর আমি এই মাছগুলো বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যেতাম।
বাজার থেকে এসে তড়িগড়ি করে স্কুলে যেতাম, প্রতি সাপ্তাহে মিনিমাম চারদিন না খেয়ে স্কুলে যেতে হতো,
এই ধারাবাহিকতায় পঞ্চম শ্রেণীতে ফেল করি।
এবং সংসারের অভাবের তাড়নায় আর স্কুলে ভর্তি হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি, টেক্সটাইল মিলের একটি কাজে আমাকে দিয়ে দেয় আমার পরিবার যেখানে পেটেভাতে কাজ শিখার জন্য কোন বেতন ছিল না।
দশ মাস কাজ করার পর আমার কাজটি আর ভালো লাগেনা এখানে ভবিষ্যৎ হবে এরকম কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
তাই এই কাজ থেকে চলে আসি, এবং আমার মামার ছোট একটি মশারির কারখানা ছিল যেখানে কাজ করা শুরু করি, ওখানেও কোন বেতন ছিল না পেটে ভাতে শিখতাম, আমাদের পরিবারটা ছিল একটি ঋণগ্রস্ত পরিবার, যেখানে আমার মামার কাছে এক বছর কাজ করার পরেও, আমার কাছে মাসে 400 টাকা বেতন দাবি করলো মামা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তারপর মামার এখান থেকে চলে আসি, ভুলতা গাউছিয়া মার্কেট, বাজারের পাশেই ছিল আমার খালার বাসা, খালার বাসায় থেকে লক্ষচ্ছিল মশারির কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা করা, তখন আমার মার্কেটের বারান্দা দিয়ে হাঁটতে ভয় করত যদি কেউ কিছু বলে এই কথা ভেবে, একদিন এক ছেলে ছবি সুন্দর কর বড় মশারী সেলাই করছিল আমি তার সামনে গিয়ে আপন-মনে দাঁড়িয়ে থাকে কাজ দেখতে লাগলাম, সে বুঝতে পারে আমি কাজ করতে আগ্রহী, আমাকে বলে তুমি কি কাজ করবে, আমি এক কথায় রাজি হয়ে যাই,
তারপর ও আমাকে বলে হলে এখানে তোমার আপন কে আছে উনাদের কে নিয়ে আসো আমাদের এখানে থেকে খেয়ে কাজ শিখবা, আমি সাথে সাথে বাসায় চলে যাই আমার খালু কে নিয়ে আসি খালু কথা বলে আমাকে কাজে লাগিয়ে দেয়।
এখানে কাজ করি নিয়মিত থাকা-খাওয়া মহাজন এখানে, এখানেও প্রায় দশ মাস কাজ করি কখনো অন্যের কাজ ভেবে কাজ করতাম না, ভাবতাম এই কাজটাই আমার নিজের, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখান থেকেও কাজ ছেড়ে দেই, এখানে থাকা অবস্থায় মোটামুটি আমার অনেক কাজ শিখা হয়ে যায়, তখন আমি আলাদাভাবে মশারী সেলাই কাজ শুরু করি।
মোটামুটি প্রতি সাপ্তাহে 500 থেকে 600 টাকা কাজ করতে পারতাম। পুরো টাকাটাই বাসায় দিয়ে দিতাম মায়ের হাতের, এখানে প্রায় ৮ বছর মশারি সেলাইয়ের কাজ করি, কিন্তু সংসারের কোনো কূল-কিনারা এখনো পর্যন্ত পারছিলাম না, আমার চিন্তার সাথে আমার ফ্যামিলির চিন্তার মিল পেতাম না কখনো, রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, হাতে আমার 590 টাকা, চলে গেলাম চট্টগ্রাম, সেখানে অনেক কষ্ট করে চার মাস কাটিয়েছি, টিকতে না পেরে চলে আসি নারায়ণগঞ্জ নিজের বাসায়, আবার বছরখানের বাড়িতে থেকে,
চলে যাই কুমিল্লাতে, ওখানে পরিবহনে চাকরি করি 6 বছর, 6 বছর আমি অনেক কিছু শিখতে পারি, জন পাবলিক ফাংশন কন্ট্রোল করা, মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে বুঝানোর একটা কৌশল পরিবহনে চাকরি করার সময় নিজের আয়ত্ত করতে পারি, এটাই আমি মনে করি আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট, তারপর খুবই বড় এক দুর্ঘটনায় কবলিত হই অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়, পরিবহনে চাকরি ছেড়ে চলে আসে ঢাকায়,
ঢাকায় এসে একটি কাপড়ের দোকানে তিন বছর চাকরি করার সৌভাগ্য অর্জন করি, সেখানে অনেক কিছু শিখতে পারলাম, এবং তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই চাকরিটি ছেড়ে দেই, ওই অবস্থায় আমি বিবাহিত এবং আমার একটি ছেলে ও এক বছরের একটি মেয়ে আছে, তখন আমি খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি মানসিকভাবে ভেঙে পরি, তখন আমার ওয়াইফের অনুপ্রেরণায় আমি আমাদের গ্রামের বাজারে চটপটির দোকান দেই, দোকান দেওয়ার পর থেকেই মোটামুটি আমার জীবনের পরিবর্তন করতে শুরু করে, তাহলে কি সেকেনাল মোবাইল কিনার সৌভাগ্য অর্জন করি টাচ মোবাইল, এবং লক্ষ্য ছিল জীবনে ভালো কিছু করব ভালো কিছু শিখব, ইউটিউবে অনেক অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও গুলো দেখতাম এই ভিডিও দেখতে দেখতে আমার প্রিয় শিক্ষক আমার প্রিয় মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের একটি ভিডিও আমি ওর চোখে পড়ে, তখন স্যার এর সবগুলো ভিডিও একসাথে দেখতে শুরু করি, শুরু হয় নতুন কিছু শেখা জানা এবং নতুন কিছু নিয়ম, এই ধারাবাহিকতায় চটপটির দোকান যখন আস্তে আস্তে পরিচিতি হতে থাকে আমার সংসারের দুঃখ গুলো আস্তে আস্তে ডাকতে শুরু করে,
এরই মাঝে স্যারের ভিডিও দেখতে দেখতে আমি নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এর ফেসবুক গ্রুপ টি পেয়ে যাই, সাথে সাথে যুক্ত হয়ে যায় এবং আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার বর্তমান মডারেটর Engr Mehedi Hasan ভাই এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করি।
৭ ব্যাচে, থেকে আমার নতুন জীবন শুরু হয়, যেখানে আমার লুকিয়ে থাকা স্বপ্ন, যে স্বপ্ন ছিল অধিক লোকের কর্মসংস্থান নিজের ফ্যামিলিকে স্বাবলম্বী করা, পাশাপাশি আল্লাহর বান্দাদের সেবা করা, কিন্তু এই স্বপ্নের শুরুটা কিভাবে করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না নিয়মিত শিখে যাচ্ছি গ্রুপ থেকে সাড়ে দশ দিক নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করছিলাম নিজেকে, আমাদের নারায়ণগঞ্জ এর এক ভাই ও বোনের উসিলায় আচার নিয়ে কাজ শুরু করি, আলহামদুলিল্লাহ আমিও খুঁজে পাই আমার স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম , আলহামদুলিল্লাহ এখন নিজের হাতে তৈরি আচার বাংলাদেশের বেশকিছু জেলায় সুনামের সাথে বিক্রি করতে পারছি, এবং আমাদের গ্রুপে পাইকারি সেল করছি অনেক ভাই বোনের কাছে, আচারের সুনাম দেখে আমার অনুপ্রেরণা এবং কাজের প্রতি সাহস অনেক বেড়ে যায়, লক্ষ ঠিক করে ফেলি একটি কোম্পানি করার, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা থেকে উদ্যোক্তা বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করি, আলহামদুলিল্লাহ অল্প কয়েকদিন আগে সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটি অর্জন, এবং যুব উন্নয়ন থেকে আরেকটি কোর্স কমপ্লিট করেছি ওটার সার্টিফিকেটও আলহামদুলিল্লাহ হাতে পেয়েছি।
আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে যে কাজ আমি করে যাচ্ছি তা হলো নিজের হাতে তৈরি করছি সব রকম আচার, এর ধারাবাহিকতায় আমি এখন বিশেকের নিবন্ধিত একজন উদ্যোক্তা, এখন আমার লক্ষ আগামী 2022 সালের মধ্যে আমি বিএসটিআই নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে ছোট্ট করে হলো একটি কোম্পানিতে আত্মপ্রকাশ করা।
একজন জেলের ছেলে হিসেবে আজ আমি গর্বিত, কারণ আমরা অতি নিম্ন এর সন্তান হলেও আমার মা এবং বাবা কোনদিন অন্যায় কে প্রশ্রয় দিও না।
তাদের দেওয়া শিক্ষাই আজ আমি সৎ ভাবে নিজেকে পরিচালিত করতে পারছি, আচ্ছা ভাই আমার মা বাবার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন আমার মা-বাবাকে সেবা যত্ন করতে পারি আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমার একটি দরখাস্ত আল্লাহ যেন আমার মা-বাবাকে সেবা করার তৌফিক দান করেন এবং আমার সফলতা আমার মা-বাবা যেন দেখে যেতে পারেন।
পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই সত্যের জয় অনিবার্য
আজ আমি গর্বিত আজ আমি অনেক আনন্দিত কারণ আমি এরকম একটি পরিবার পেয়েছি এখানে লক্ষ লক্ষ ভাই বোন অনেক ভালোভাবে পজিটিভ ভাবে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়, অনেক অনুপ্রেরণা পাই এই ভাই বোনদের মাঝে।
আমার প্রিয় প্ল্যাটফর্ম এর সকল ভাই বোনদের কে জানাই আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং সালাম আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
এখন আগামীর লক্ষ্য হচ্ছে আমি আমার নিজের হাতে তৈরি আচারগুলো বাংলাদেশ তথা বিশ্বের 100 টি দেশে পৌঁছে দেওয়া সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমার কোম্পানির যেন অধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারে, আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি লক্ষ পথে যদি এগিয়ে যেতে পারি যদিও সময় লাগবে সফল হবো ইনশাল্লাহ।
পরিশেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি এবং আমার প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
আমি মোহাম্মদ নবী হোসেন
আপনাদের আচারওয়ালা ভাই
ব্যাচঃ৭, রেজিঃ ২৭২২, রেজিঃ টিম মেম্বার
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার, রূপগঞ্জ উপজেলা এম্বাসেডর
জেলা নারায়ণগঞ্জ, মোবাইল নাম্বার,01404-657562