আমার ছোট্ট জীবনের এক অসমাপ্ত গল্প
❤️আমার ছোট্ট জীবনের এক অসমাপ্ত গল্প ❤️
আসসালামু আলাইকুম
জীবনের গল্প লিখতে আমার খুব ভালো লাগে।জীবনটাকে আবার তখন নতুন করে পড়ার সুযোগ হয়।আমাদের প্রত্যেকের উচিত জীবন কে পড়া,ফেলে আসা সময় গুলো কে মনে করা,ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া।এটা সব সময় হয়তো হয়ে উঠে না কিন্তু নিজের জীবন নিয়ে লিখতে বসলে সেটা খুব ভালো করে হয়।তাই জীবন নিয়ে লিখা আমার অনেক বেশি পছন্দের।
#আমার_স্বপ্নযাত্রা
✍️একটা সুন্দর সাজানো গুছানো জীবন কিছু মাসের মাঝে অগোছালো হয়ে উঠেছিলো।বাবার অনেক চাওয়ার,অনেক আদরের মেয়ে ছিলাম আমি।আম্মু বলে আমি পেটে ছিলাম সময় আব্বু নাকি মানত করেছিলো যেন মেয়ে হয়।সবার বড় মেয়ে আমি।ছোট থেকে অনেক বেশি আদরের ছিলাম।ছোট বেলা গ্রামে কাটলেও আমার আব্বু কখনো আমাকে মাটিতে বসতে দেয়নি আমার গায়ে মাটি লাগবে বলে এতো আদরে রেখেছিলো।এমন আদরে আদরে জীবনের সেরা ১৮ বছর কখন কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।স্টুডেন্ট হিসেবে মোটামুটি ছিলেও সবাই ভালোর খাতায় নাম দিয়েছিলো।এস এস সি রেজাল্ট ভালো ছিলো,ভালো কলেজে পড়াশোনা করেছি,আম্মু আব্বু খুব করে চাইতো মেডিকেলে পড়াশোনা করি আমি,আমারো সব সময় সেটাই স্বপ্ন ছিলো।কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পর বুঝতে পারছিলাম আশানুরূপ রেজাল্ট আসবে না।তখন থেকেই একটা ভয় কাজ করতো।তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছিলো।রেজাল্ট খারাপ হয়।আম্মু আব্বু অনেক হতাশ হয়ে পরে।রেজাল্ট এর উপর মেডিকেলে অনেক মার্কস তাই চান্স হলো না।তখন থেকে শুরু হয় সময়ের পালাবদল।
তারপর ভার্সিটি ৩/৪ টা তে পরীক্ষা দেই কিন্তু সব ওয়েটিং😥।আব্বু তখন আমার সাথে এক মাস কথা বলেনি আমার মনে আছে।সেই এক মাস ছিলো জীবনের সব থেকে খারাপ সময়।আমি ইন্টার পাস করার পরও আমার জামা কাপড় আব্বু আম্মু ধুয়ে দিত,আমি রাতে পড়াশোনা করতাম আব্বু চা করে দিত,রাতে মশারী না দিয়ে ঘুমিয়ে পরলে মশারী দিয়ে দিত,আম্মু কোথাও গেলে আব্বু রান্না করে খাওয়াতো,কোন কিছুই করতাম না পড়াশোনা ছাড়া।এতো কেয়ার করতো আব্বু।সেই আব্বু এক মাস আমার সাথে কথা বলেনি😥।মন ভেঙে গিয়েছিল সব দিক থেকে।তখন একটা কথায় মনে হতো #আমার_আব্বু_আমাকে_ভালোবাসেনি।#আমি_ভালো_পড়াশোনা_করতাম_সেটার_জন্য_আদর_করতো_ভালোবাসতো।#আমি_আদরের_মেয়ে_না। এই কষ্ট টা তখন এতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল আমার জন্য যে আমি অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম।একটা সন্তানের মনে বাবা মাকে নিয়ে এমন ধারণা হলে সেটার চাইতে কষ্ট হয়তো পৃথিবীতে আর নেই।
এই ভাবনাটা ভয়ংকর রকমের খারাপ।এখন বুঝি আসলে এটা বিন্দুমাত্র সত্য না,আমার আব্বু অনেক ভালোবাসে আমাকে।আসলে তখন আব্বুর স্বপ্ন টা শেষ হয়েছিল সেটাও আব্বু মেনে নিতে পারেনি তাই হয়তো।
কিন্তু তখন এটাই মনে হতো সারাক্ষণ।আর রাগ হতো।কান্না করতাম সব সময়।দিন গুলো খুবই কঠিন ছিলো।এতো বছরের চেনা আব্বু হঠাৎ করে অচেনা হয়ে গিয়েছিল সেই ধাক্কা টা সামলে নিতে পারছিলাম না।
তারপর আর কোথাও কোন পরীক্ষা দেয়নি।ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু সেখানে পড়ার কোন ইচ্ছে ছিলো না।তারপর সেকেন্ড টাইম দিব সেটার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি।ন্যাশনালের কোন খোঁজ খবর কিছুই রাখতাম না।পড়াশোনা করেছিলাম প্রচুর।একটা ভার্সিটি তে ফার্মাসি নিয়ে পড়াশোনা করার তখন খুব ইচ্ছে ছিল যেহেতু মেডিকেলে পারিনি।কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না।সেকেন্ড টাইম ও ৩ টা ভার্সিটি তে পরীক্ষা দেওয়ার পরও চান্স হয়নি 😥😥।
তারপর শুরু অন্য এক অধ্যায়।হঠাৎ করে যেন বড় হয়ে গেছি।চারপাশের মানুষের কটু কথা,নিজের না পাওয়ার হতাশা,স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া সব মিলিয়ে অনেক বেশি ভেঙে পরি।আম্মু আব্বু ও তখন আমাকে আর সার্পোট করছিলো না।তাই রাগ করে আছি তাদের থেকে আলাদা হয়ে একটা ফ্ল্যাটে কয়েকজন আপুর সাথে উঠি।আমার একটা ফ্রেন্ড শুধু সব সময় আমাকে তখন সার্পোট দিত,এখনো সব সময় সব কিছুতে আমাকে সার্পোট করে।তার সার্পোটেই আজকের আমি।
জীবনের প্রথম আব্বু আম্মুর থেকে আলাদা।নিজের ড্রেস গুলো ও ঠিক করে রাখতে পারতাম না কখনো রান্না তো র ও জানতাম না কিন্তু সেখানে নিজে রান্না করে খেতে হতো।আমি তো কখনো ডিম ভাজি ছাড়া কিছুই করতে পারতাম না।আমার এখনো মনে আছে আমি জীবনে প্রথম যেদিন আলু ভাজি করি সেদিন আমি যতটুকু আলু ছিল তার ডাবল পানি দিয়েছিলাম🙈,আমার আইডিয়া ছিলো পানি ছাড়া ভাজি সিদ্ধ হবে কি করে??😶
সেই ভাজি কেমন হয়েছিলো আশা করি বুঝতেই পারছেন🤭।তারপর থেকে আম্মু কে কল দিতাম কি করে কোনটা রান্না করতে হয়,নিজে আর কখনো এক্সপেরিমেন্ট করার সাহস হয়নি।কিন্তু সেই মেয়েটা এখন প্রায় সকল রান্না খুব ভালো পারে।কিছু রান্না আম্মুর থেকেও ভালো🙈🥰।প্র্যাকটিস করলে সকল কিছুই সম্ভব তখন বুঝেছিলাম।
বাড়ি থেকে চলে আসার পর সিদ্ধান্ত নেই আব্বু আম্মুর থেকে আর টাকা নিব না।টিউশন করানো শুরু করি।আমার এক ম্যাম ছিলো উনি তখন খুব হেল্প করেছে আমাকে।ততোদিনে এক ইয়ার লস হয়ে গেছে আমার।ন্যাশনাল কলেজেও।কিন্তু সেটা আমার কাছে তেমন কিছু ছিলো না।কলেজে খোঁজ খবর তখন থেকে নেওয়া শুরু করি।আমি বাড়ি থেকে আলাদা থাকার কিছু দিন পর থেকল ন্যাশনাল কলেজে ইনকোর্স পরীক্ষা শুরু হয়,দুটো টিউশনি তখন আমার।ময়মনসিংহ সদরে থাকতাম সেখান থেকে ৬৩কিলো যেয়ে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে পরীক্ষা দিতাম,এখনো জানিনা নেত্রকোনা কেন ভর্তি হয়েছিলাম😥।তারপর সেখান থেকে এসে দুটো টিউশন পড়িয়ে বাসায় আসতাম রাতে।প্রচুর কষ্ট করেছিলাম কয়েকটা দিন।তখন নিজেকে অনেক বেশি স্ট্রং মনে হয়েছিলো।মনে হয়েছিলো বাবার এই আদরের দুলালি মেয়ে যে বাহির থেকে বাসায় আসলে মা মুখে খাবার তুলে দিত সে এখন সারাদিন কষ্ট করে এসে রাতে রান্না করে তারপর খাবার খায়,তাহলে সে চেষ্টা করলে অনেক কিছু করতে পারবে।এই বিশ্বাস টা তখন অনেক পাকাপোক্ত হয়।কিন্তু তার কিছুদিন পর আবারো জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয় যেটা করোনা নামক অধ্যায়।
করোনায় আবারো বাড়িতে চলে যাই কিন্তু কিছুই করতাম না বাড়িতে।কোন কাজ ছিলো না।পড়াশোনাও করিনা তখন।খুব হতাশায় সময় কাটতো।তাই ইউটিউবে বিভিন্ন মোটিভেশান ভিডিও দেখতাম।সেখান থেকে স্যারের ভিডিও পাই একদিন।কয়েকটা ভিডিও দেখার পর বুঝতে পারলাম নিজের বলার মত একটা গল্প নামে কিছু একটা আছে ফেইসবুকে।তখন সার্চ করে পেইজ পাই আমাদের।তারপর সেখান থেকে গ্রুপ।কিছুই বুঝতাম না তখন।নতুন নতুন শুধু দেখতাম।স্যারের সেশন আমি ২দিনে পড়ে ফেলেছিলাম আগের ব্যাচের ৯০ দিনের গুলো।এতো ভালো লেগেছিলো। কিন্তু গ্রুপের তো কিছুই বুঝতাম না।তাই শুধু বুঝার জন্য একটু সময় দেওয়া শুরু করেছিলাম।তখন ফেইসবুক গ্রুপ নিয়ে আমার কোন আইডিয়া ছিলো না।
পাশাপাশি তখন কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে আমরা চিন্তা করি অনলাইন বিজনেস করবো যেহেতু সবাই বসেই আছি বাসায়।তো অনেক খোঁজ খবর করলাম,কোনরকম একটু হালকা পাতলা জানলাম।একজন আইটিতে খুব ভালো ছিলো সে পেইজ খুলে কিন্তু যখন প্রোডাক্ট কিনবো টাকা দিব সবাই তখন তারা আর আগায় না।সকল প্ল্যানিং বন্ধ হয়ে যায়।ততোদিনে #নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প_ফাউন্ডেশন নিয়ে মোটামুটি জানি,বুঝি কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন করিনি।বিজনেস করার একটা চিন্তা তখন আর মাথা থেকে বের হচ্ছিলো না।তারা বাদ দিছে আমিও বাদ দিব এটা পারছিলাম না।আমি একা হলেও কিছু একটা শুরু করবো এমন একটা জেদ হয়ে যায় তখন আমার।বাট আমার হাতে এক টাকা ও নাই।নতুন ফোন কেনার পর হাত ফাঁকা।একমাত্র আমার সেই ফ্রেন্ড তখন আবারো আমাকে সার্পোট করে।আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।তখন কয়েকটা পেইজে দেখতাম হাতের তৈরি সুন্দর সুন্দর গহনা বানায় আমার খুব ভালো লাগতো।কিন্তু জীবনেও করিনি সেগুলো আমি।তখন ইউটিউব ঘাটাঘাটি করতাম,আমার ফ্রেন্ড ও আমাকে তথ্য দিত,তখন সব মিলিয়ে একদম অল্প টাকায় বিজনেস শেখার জন্য এটাই ভালো অপশন মনে হলো আমার কাছে।আর চেষ্টা করলে সম্ভব এটা তখন বুঝেগিয়েছিলাম।তাই রিস্ক নিতে প্রস্তুত ছিলাম।
জীবনেও বিজনেস নিয়ে কিছু না জানা আমি তখন শুরু করার সিদ্ধান্ত ফাইনাল করি।আম্মু আব্বু কে কিছু জানাইনি।আমার কিছু টাকা লাগবে কেনাকাটা আছে বলে টাকা নিয়েছিলাম।প্রথম দিন মনে হয় আমি ৩৫০টাকার জিনিস কিনেছিলাম বিজনেসের জন্য😁।তখন সেভাবেই শুরু করা।তারপর অল্প অল্প করে শেখা।গ্রুপে রেজিষ্ট্রেশন করা।একটিভ হওয়া।তারপর দেখতাম স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে দিত খুব ভালো লাগতো।কিন্তু লেখার সাহস হতো না।একদিন অনেক সাহস করে একটা গল্প লেখে ছিলাম এবং সৌভাগ্য বসত সেটা SOD হয়েছিলো।আমি কমিউনিটি ভলান্টিয়ার হয়েছিলাম।তারপর থেকে নিয়মিত লেখার চেষ্টা করি।এখন পর্যন্ত ২৫+ SOD হয়েছে আমার লেখা।এটা অনেক বড় পাওয়া আমার জন্য।কমিউনিটি ভলান্টিয়ার হওয়ার কিছুদিন পর আমি ক্যাম্পাস এম্বাসেডর হয় নেত্রকোনা সরকারি কলেজের এবং গ্রুপের একজন নিয়মিত ভলান্টিয়ার হয়ে যায়।প্রিয়ণিকা কে সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা শুরু করি।আলহামদুলিল্লাহ আমার সেই ছোট্ট অবুঝ ভাবনায় শুরু করা প্রিয়ণিকা এখন মোটামুটি আমার জন্য অনেক বড়।আমাকে না চিনলেও প্রিয়ণিকা-prionika কে চিনে অনেকে।এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া।আব্বু আম্মু এখনো সার্পোট না করলেও এখন আর কিছু বলেনা,কারন তারা অনেক বলার পরও বন্ধ করিনি আমি তাই বুঝে গিয়েছে আমাকে বলে লাভ নাই।
গ্রুপ থেকে স্যারের শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য।এখন আলহামদুলিল্লাহ বিজনেস নিয়ে অনেক কিছু জানি,অনেক কিছু বুঝি।অনেক মানুষের সাথে পরিচয়।নতুন নতুন অনেক কিছু শিখছি,জানছি।ইনশাআল্লাহ নতুন স্বপ্ন পূরনের লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছি।আমার একটাই লক্ষ #নিজেকে_এমন_একটা_অবস্থানে_নিয়ে_যাওয়া_যার_জন্য_আমার_আব্বু_একবার_হলেও_যেন_বলে,#আমার_মেয়ের_সেদিন_মেডিকেলে_চান্স_হয়নি_ভালো_হয়েছে,#ডাক্তার_হলে_হয়তো_আজ_তাকে_আমি_এই_অবস্থানে_দেখতাম_না।শুধু এটাই লক্ষ আমার।
সবাই দোয়া করবেন।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
আমি হিজাব ইমতিয়াজ সায়মা
ক্যাম্পাস এম্বাসেডর
টপ টুয়েন্টি ক্লাব মেম্বার
ব্যাচ-১২,রেজি-৩৮২৮২
জেলা-ময়মনসিংহ
কাজ করছি হাতের তৈরি গহনা নিয়ে
পেইজ---- প্রিয়ণিকা
#প্রিয়কে_সাজাই_প্রিয়ণিকা