আমি অন্য ১০টি নারীর মতো স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি।
আমি আমার জীবনের ক্ষুদ্র একটি অংশ আজ আমার প্রিয় ফাউন্ডেশন এর ভালোবাসার ভাই বোনদের সাথে শেয়ার করলাম।
🌻🌻 আমি অন্য ১০টি নারীর মতো স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। কিন্তু আমার স্বপ্নটা সবার থেকে একটু ব্যতিক্রম ছিল। যদিও আমি এমন একটি পরিবার থেকে বিলং করে যেই পরিবারে নারীরা কখনো বাইরে গিয়ে কাজ করার অনুমতি নেই। আমি সেই হতভাগা মেয়ে, যে বিয়ের আগে স্বপ্ন দেখেছিলাম অনেক কিছু করবো। জীবনটাকে নিজের মনের মতো করে সাজাবো এবং কিছু অসহায় দুঃস্থ মানুষদের নিয়ে কাজ করব। যাদের কাছে থেকে আমি মন খুলে হাসতে পারি, তাদের জন্য কাজ করতে পারি, তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি এবং তাদের দুবেলা-দুমুঠো খাবার দিয়ে একটা নিশ্চিন্ত লাইফ সেটেল করতে পারি। সেই স্বপ্ন গুলো প্রতিনিয়ত ছোটবেলা থেকে মনের মধ্যে লালন করে আসতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। পরিবার থেকে কখনো কোন সাপোর্ট পাইনি বললেই চলে। তাই মনে মনে ভাবলাম, নিজে কিছু একটা করব। অন্তত নিজের একটা পরিচয় হবে, নিজে একটু স্বাবলম্বী হবো আর পরিবারের পাশে দাঁড়াবো। কিন্তু আমার সেই স্বপ্নটাও পূরণ হলো না। এক প্রকার নিজের স্বপ্নটাকে গলা টিপে হত্যা করে, নিজেকে এক পাথররূপে তৈরি করে সংসার জীবন করতে লাগলাম। এভাবেই কিছুদিন যেতে না যেতেই হঠাৎ একসময় আমার শ্বশুরের সাপোর্ট নিয়ে আমি আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। তিনি আমাকে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলেন এবং আমার স্বপ্নগুলোকে সার্থক করার জন্য আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং আমাকে নিজ উদ্যোগে বুটিকস এর ট্রেনিং কোর্স করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। প্রায় ৩ মাস বুটিকস কোর্স শেষ করার পরে আমি বাসায় বেশ কয়েকটি গরীব অসহায় মেয়েদের নিয়ে কাজ করা শুরু করি। তখন থেকে আমি প্রিয় শ্বশুরের সাপোর্ট ও ভালোবাসায় সাহস করে টুকটাক অর্ডার নিয়ে কাজ করা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই সাড়া পাচ্ছিলাম।
🌐🌐 ঠিক তার কিছুদিন পরেই আমার জীবনে নেমে এলো বিশাল এক কালো মেঘ। হঠাৎ করে আমার প্রিয় শশুর আমাদের সবাইকে ফেলে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর সাথে নিয়ে গেলেন আমার জীবনের সমস্ত উজ্জীবিত স্বপ্নগুলো। তারপর থেকে আমি আবার একা ও নিস্তেজ হয়ে গেলাম। এরপর থেকে আর কোনো সাপোর্ট পাইনি, নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এক কথায় বলা চলে, আবারো আমার স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। কেননা উনার সাপোর্টে সাহস করেই নিজে আবার উদ্যোক্তা জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমার কপালে সেই সুখটুকু বেশিদিন আর সইলো না। এর কিছুদিন পরে পরিবারের সবার সাথে আমার উদ্যোক্তা জীবনের বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছিলাম। কিন্তু কেউ কোন সাপোর্ট করেনি। উল্টো সবাই বলেছে, বউদের এত কাজ করতে নেই। তখন আমি হতাশ হয়ে আবারো আমার বাপের বাড়িতে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছিলাম। কিন্তু তারাও কোন সাপোর্ট করেনি। উল্টো নিরুৎসাহিত করেছে আমাকে। তাই স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। প্রতিজ্ঞা করেছি - আর কখনোই কিছু করবো না। এর পরে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় - আমিও ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনে চলে যাই। কারণ আমার সব সময় একটাই লক্ষ্য ছিল, অন্যের জন্য কাজ করা। যেমন গরীব দুঃস্থ অসহায় বৃদ্ধা, এদের জন্য জীবনে অন্তত কিছু না কিছু করে যাওয়াই ছিল আমার স্বপ্ন। কিন্তু না পাওয়ার বেদনাতেই একসময় নিজেকে নিস্তেজ করে দিতে লাগলাম। কিন্তু সবার সামনে মুখে হাসি রেখে কথা বলতাম। কখনো নিজের কষ্টটুকু কাউকে বুঝতে দিতাম না।ঠিক গতবছর করোনা মহামারীতে আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। যেই অসুস্থতায় জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে ঝুলছিলাম আমি। তবে আল্লাহ তায়ালা আমার হায়াত রেখেছে বলেই হয়তো আমি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। ঠিক সেই সময় আমি অসুস্থতার মাঝে শুয়ে শুয়ে সারাক্ষণ মোবাইলে বিজি থাকতাম। দেখতে দেখতেই হঠাৎ একদিন প্রিয় স্যারের একটি ভিডিও আমার চোখের সামনে পড়ল। স্যারের ভিডিও দেখার পর মনে মনে ভাবলাম, এই কেমন গ্রুপের নাম ! শুনতে একটু অন্যরকম লেগেছিল আমার। "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" গ্রুপ। তারপরের দিন আমি এক ভাইয়ার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে নিয়েছিলাম। তারপর থেকে আমি স্যারের প্রত্যেকটা ভিডিও দেখা শুরু করলাম। এবং যখনই স্যারের প্রিয় স্লোগান আমার চোখের সামনে পড়ল। স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই - এটা শোনার সাথে সাথে আমার মধ্যে এমন একটা স্পিড কাজ করলো, মুহূর্তেই আমি নিজেকে তৈরী করে নিলাম। আবারো আমি আমার স্বপ্নটাকে পূরণ করতে পারব। মনে মনে ভাবছি, আমি হয়তো এতদিনে ঠিক জায়গায় এসে পৌছালাম। তারপর আমি ধীরে ধীরে আমার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নটাকে দেখতে শুরু করলাম আবারো। এবং সাথে সাথে সাহস করে আমি আমার নিজ হাত খরচের টাকা জমিয়ে অল্প পরিসরে শুরু করে দিলাম আমার উদ্যোক্তা জীবন। তারপর থেকে আমি প্রতিনিয়ত এই ভালোবাসার ফাউন্ডেশন এর সাথে লেগে আছি। এইবার বলব লেগে থাকার পর আমি কি পেয়েছি....
🍁🍁 আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের সকলের দোয়ায় আমি হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি। এবং জানুয়ারি মাসে আমি ফার্স্ট টপ টুয়েন্টিতে ২০তম স্থান অধিকার করে কমিউনিটি ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পেয়েছি। তারপরে ফেব্রুয়ারি মাসে আমি আবারও টপ টুয়েন্টি ক্লাবে ৭তম স্থান অধিকার করেছি। এবং একই মাসে আমি আমার বাবার জীবনের কাহিনী লিখে প্রথমবারের মতো SOD হয়েছি। মার্চ মাসে আমি আবারও জীবনের গল্প লিখে দ্বিতীয়বারের মতো SOD হয়েছি। এর পরবর্তী আমি গল্পে গল্পে সেল পোস্ট লিখে তৃতীয়বারের মতো আবারো SOD হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।
🌀🌀 তার পরবর্তী আমার অর্জন ছিল ৩০ দিনের কথা বলার জড়তা কাটানোর ভিডিও সেশন গুলো। এর পরবর্তী আমি অনুভূতি প্রকাশ করে একটা গল্প লিখেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি আবারও চতুর্থবারের মতো SOD হয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ এত কিছুর মাঝেও আমি প্রতিদিন প্রতিনিয়ত নিজের এক্টিভিটিস এর মাধ্যমে প্রিয় প্লাটফর্ম এর সাথে লেগে আছি। আলহামদুলিল্লাহ গত কিছুদিন আগে আপনাদের সকলের দোয়ায় আমি হাট মনিটরিং টিম মেম্বার এর নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। সত্যি আসলেই এই ফাউন্ডেশন থেকে আমি শুধু প্রতিনিয়ত পেয়েই যাচ্ছি। তার একমাত্র অন্যতম কারণ হচ্ছে, লেগে থাকার সুফল। আসলেই সত্যি এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। তাই প্রিয় স্যারের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ ও ভালোবাসা জানাই। কেননা আজ তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই প্রিয় ফাউন্ডেশন এর জন্ম হয়েছে।এরই ধারাবাহিকতায় আমি আরো বেশি কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় আপু ভাইয়াদের প্রতি, যারা আমাকে প্রতিনিয়ত পাশে থেকে সাপোর্ট ও সাহস যুগিয়েছেন। তাদের সকলের প্রতি আমি আবারো জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অবিরাম।
💞💞 আমি কাজ করছি লেডিস আইটেম, বিভিন্ন রকম বেডশীট ও বালাচাও নিয়ে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আর আমার পাশে থাকবেন।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
ধন্যবাদান্তে
*****************
🌹 শিরিন সুলতানা
🌹 কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
🌹 টপ টুয়েন্টি ক্লাব মেম্বার
🌹 হাট মনিটরিং টিম মেম্বার
🌹 এই প্ল্যাটফর্মের একজন গর্বিত সদস্য
🌹 ব্যাচ - ১২
🌹রেজিস্ট্রেশন - ৪৬৫৩৮
🌹 জেলা চট্টগ্রাম
🌹 স্বত্বাধিকারী - Shirin's Collections