আমার বড় ভাইয়েরা আমাকে টাকা দিতে গেলে আমার ভাইয়ের সাথে ভাবির মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়
আমাদের পরিবারে আমরা ছয় ভাই তিন বোন মোট নয় ভাই বোন মিলে অনেক বড় একটি পরিবার ।
____আমার আব্বা ছিলেন একজন দর্জি এবং ঝুট কাপড়ের ব্যবসায়ী । আমার আব্বা অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ শুধু তার বোঝার একটু ভুল ছিল ।আমি আমার কাকার কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে ক্লাস ওয়ান থেকে আমার লেখাপড়া শুরু করি তখন থেকেই আমার মেধা খুবই ভাল ছিল এবং খুব ভালো একজন ছাত্র ছিলাম এবং আমার লেখা অনেক সুন্দর ছিল সকলেই প্রশংসা করত এবং সকলেই আমাকে অনেক ভালবাসত ।
____আমার বড় ভাইদের লেখাপড়া খুব বেশি হয়নি । আসলে আমার আব্বা লেখাপড়া খুব একটা পছন্দ করত না এবং চাইত না যে কেউ স্কুলে যাক । আমার আব্বা শুধু বলতো লেখাপড়া করে কোন লাভ নেই অতএব আমার সাথে বাড়িতে বসে কাজ করো সংসারের উন্নতি হবে । কিন্তু আমার বড় আপার লেখাপড়া আসলে আমার কাকা গাইড করতো বলে আমার আব্বা কিছু বলতে পারতোনা এই জন্য আমার আপা এসএসসি পাশ করার পরে প্যরামেডিকেলে ভর্তি হয় এবং প্যারামেডিকেল পাশ করার পর সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি নিতে সক্ষম হয় এবং বর্তমানে একজন নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
_____এরপর আমার বড় ভাইদের লেখাপড়া যখন আর হয়ে ওঠেনি তখন আমার বাবার সাথে যখন ব্যবসায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তখন ব্যবসা বেশ ভালই চলতেছিল এবং তখন আমার বড় ভাইরা চাচ্ছিলেন যে আমরা ছোট দুই ভাই যেন লেখাপড়া করে বড় হতে পারি এবং সেজন্যই আমার বড় ভাইকে আমার আরেক বড় ভাই মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছিল এবং মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করেন আর আমি কিন্ডারগার্ডেনে লেখাপড়া করতে থাকি এবং সেখান থেকে যখন আমি ফাইভ পাশ করলাম তার কিছুদিন পর যখন ক্লাস সিক্সে হাই স্কুলে ভর্তি হলাম তার কিছুদিন পর থেকে আমাকেও আমার আব্বা বলা শুরু করল যে আমি যেন তার সাথে থেকে সেলাই মেশিনের কাজ করে আমার আব্বাকে সহযোগিতা করি । আমাদের পরিবারে আমার আব্বার কথার উপর কারো কথা বলার সাহস ছিল না তাই বড় ভাইয়েরা আর কিছুই বলল না । তবে গোপনে বলতো লেখাপড়া চালিয়ে যেতে ।
___তারপর আমি স্কুলে একদিন যাই একদিন যাই না যেদিন স্কুলে না যাই সেদিন বাড়িতে সারাদিন কাজ করি এবং বিকেলে আমার বন্ধুরা খেলাধুলা করে কিন্তু আমি খেলাধুলা না করে গোপনে অন্য বাড়িতে কাজ করে নিজের পকেট খরচের জন্য চেষ্টা করি । এভাবে চলতে শুরু করলাম মাঝে মাঝে অবশ্য আমার আব্বা বুঝতে পারত আমি অন্য বাড়িতে কাজ করি এবং সেখানে গিয়ে আমাকে অনেক মারধোর করতো আর আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসতাম এবং তারপর বাড়িতে এসে আমার মাকে অনেক মারধোর করতো ।
____তারপর এভাবে চলতে থাকে আমার লেখাপড়া জীবন এবং আমি যখন ক্লাশ সেভেন শেষ করে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হই কিন্তু অষ্টম শ্রেণীতে না পড়ে তখনই সরাসরি কারিগরি স্কুলে গিয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয় এবং মোটামুটি একটা রেজাল্ট নিয়ে এসএসসি পাস করি তারপর আমার বড় আপা চাচ্ছিলেন যে আমি যেন তার শ্বশুরবাড়িতে থেকে লেখাপড়া করি এবং তাদের বাড়িঘর দেখাশোনা করি এখানে তার শ্বশুর বাড়ীতে দেখাশোনা করার মত কেউ ছিল না তাই আমাকে সেখানে রাখার চেষ্টা করেছিলেন । এদিকে আমার পরিবারের মধ্যে তখন দুটো দল হয়ে গিয়েছিলো আমাকে নিয়ে, কারন আমার মা এবং বড় চাচ্ছেন আমি যেন আমার আপা শ্বশুর বাড়িতে যাই এবং আমার আরেক ভাই এবং আমার আব্বা চাচ্ছেন না যে আমি সেখানে থাকি কিন্তু তখন আমি কোন কূলকিনারা খুঁজে না পেয়ে আমি তখন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই যে আমি সেখানে যাব এবং কিছুদিন থাকার পর আবার বাড়িতে চলে আসব যেন তাদের মাঝে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন না থাকে ।
_____তারপর আমি সেখানে চলে গেলাম আমার আব্বাকে না বলে কারণ আমার আব্বার পারমিশন ছিলনা । আমি যাওয়ার পরে আমি শুনলাম আমার আব্বা এবং আমার বড় ভাই কান্নাকাটি করছে তারপর আমার আর ভালো লাগেনি তাই একমাস কোনরকম থাকার পরে আবার বাড়িতে চলে আসলাম বাড়িতে আসার কিছুদিন পরে আমার এসএসসি রেজাল্ট হয়েছে এবং পাশ করার পরে আমার কাকার পরামর্শে আমি জেনারেল কলেজে একাউন্টিং এ ভর্তি হই এবং ভর্তি হয়ে একাউন্টে লেখাপড়া শুরু করি । কিন্তু অ্যাকাউন্টিং এর হিসাব বিজ্ঞানের প্রাইভেট ছিল এবং প্রাইভেটের অনেক খরচ ছিল যেটা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিলনা তাই অনেক কষ্ট নিয়ে তখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার আগে বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে গিয়েছিলাম ।
_____তারপর আমার সেই বছর এইসএসসি পরীক্ষা দেওয়া আর হলো না । পরের বছর পরীক্ষার আগে আমার এক বন্ধু বলল যে পরীক্ষাটা দাও তখন আমি বললাম যে আমি তো পড়াশোনা করিনি আমি কিভাবে পাশ করব কিন্তু আমার বন্ধু বলল পড়াশোনা কর নাই কিন্তু এখন করবা এখনও যেটুকু সময় আছে পড়াশোনা করলে অন্তত একটা সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারবা তোমার মেধা ভালো আছে তোমার পড়াশোনা করার বেশি প্রয়োজন হবে না ।
_____তারপর আমার বন্ধুর কথাগুলো শুনে আমার নিজের মধ্যে একটা সাহসের জন্ম নিল এবং বাড়িতে গিয়ে ফরম ফিলাপ করে ঢাকায় চলে আসলাম এবং পরীক্ষার আগে আবার বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা দিলাম এবং প্রথম চান্সে পাস করতে সক্ষম হলাম । তারপর ডিগ্রিতে ভর্তি হলাম হয়ে আবার ঢাকায় গেলাম চাকরি করতে তখন গিয়েছিলাম আমার বড় ভাইয়ের বাসায় আমার বড় ভাই তখন চাকরি করতো গার্মেন্টসে এবং ওখানে থেকেই অন্য একটা কোম্পানিতে চাকরি নিলাম । কিন্তু সকাল বেরিয়ে যখন বিকেলে বাসায় আসি তখন প্রত্যেকটা দিন আমার বড় বলতো যারা লেখাপড়া কর লেখাপড়া কর তখন আমি একদিন বললাম লেখাপড়া করতে টাকা লাগে কিন্তু আপনারা তো কোন টাকা দেন না সে ক্ষেত্রে আমি কিভাবে লেখাপড়া করব তখন উনি বললেন এখন থেকে আমি টাকা পয়সা দেবো তুই লেখাপড়া কর । এবং বললেন কারিগরি ইঞ্জিনিয়ারিং কিছু শিখতে এবং আরও বললেন বড় ভাইকে একটু বল উনি যেন আমাকে হেল্প করে তাহলে তোকে টাকা দিতে আমার সুবিধা হবে ।
_____তারপর আমি আমার বড় ভাইকে বললাম এবং উনি টাকা দিতে রাজি হলেন এবং তারপরে আমি গিয়ে নাটোরে টেসটাইল ইঞ্জিনিয়ারগিয়ে ভর্তি হলাম । তারপরে আমার মা আমার নানাবাড়ি থেকে কিছু টাকা নিয়ে আসছিলেন এবং সেখান থেকে আমাকে 35000 টাকা দিয়েছিলেন । যদিও আমার আব্বা টাকা দিতে রাজি ছিলেন না তারপরও আমার মা অনেক বলে সেখান থেকে ব্যবস্থা করেছেন সেই টাকা দিয়ে আমি প্রথম সেমিস্টার অর্থাৎ 6 মাস ভালোভাবে চলতে সক্ষম হলাম । তারপর আমি প্রচুর মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করেছি এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভিতরে প্রথম স্থান অধিকার করলাম । কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার রেজাল্টে কেউ তেমন একটা খুশি হয়নি ।
____তারপর আমার বড় ভাইয়েরা আমাকে টাকা দিতে গেলে আমার ভাইয়ের সাথে ভাবির মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় ভালোভাবে মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করে আবারও কলেজের ভিতরে প্রথম স্থান অধিকার করলাম কিন্তু ততক্ষণে কলেজে আমার অনেক টাকা বাকি পড়ে গেছে । আমি অনেক চেষ্টা করেছি টিউশনি করার জন্য কিন্তু অনার্স কলেজ থাকায় সেই ছাত্রদের কেই সবাই ছাত্র দেয় কিন্তু টেকনিক্যালের ছাত্রদের সেরকম ভাবে দেয় না । তাই অনেক কষ্ট ভরা মন নিয়ে আমাকে এক বছর পরে সেখান থেকে আমাকে বিদায় নিতে হয়েছে ।
___তারপর আবার ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি করতে লাগলাম এবং চাকরি অবস্থায় ডিগ্রি পড়াশোনা চালিয়ে যাই এবং অবশেষে ডিগ্রী পাস করতে সক্ষম হই এবং এখানেই লেখাপড়ার ইতি টানতে হয়েছে আর লেখাপড়া করা হয়নি । আসলে আমার ইচ্ছাশক্তিই আমাকে ডিগ্রী পাস করতে সক্ষম করে দিয়েছে ।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
___আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের একজন গর্বিত কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
ব্যাচ নাম্বার :-12
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার:- 42845
জেলা: সিরাজগঞ্জ
বর্তমান অবস্থান: মরিসাস প্রবাসী