গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আগে (২) গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পরে
আমার জীবনের গল্প
আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ! আমিও ভালো আছি। আজ আমি আমার গল্পটা দুইটি ভাগে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো
(১) গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আগে
(২) গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পরে
গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আগে
আমি ২০১২-২০১৩ সেশনে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে অনার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। আনার্সের আগেও আমি স্বপ্ন দেখতাম। তবে কি স্বপ্ন দেখতাম তা নির্দিষ্ট ছিল না। তবে অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে যে স্বপ্ন গুলো দেখতে শুরু করলাম, তাতে বুঝতে পারলাম, আমার কারো অধীনে কাজ করতে মন চায় না। আমি নিজে কিছু করতে চাই। আমার নিজের একটি প্রতিষ্ঠান থাকবে। যেখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। অর্থাৎ মূল কথা আমি একজন উদ্দোক্তা হতে চাই।
আমি "প্রথম আলো " পত্রিকা নিয়মিত পরতাম। এই পত্রিকাটি যেহেতু পরিবারের সবাই পড়তো, তাই পত্রিকার বিল নিয়ে আমার কোন চিন্তার বিষয় ছিল না। আমি এই পত্রিকাটির পাশাপাশি আরও ২ টি ম্যাগাজিন পড়তাম নিয়মিত। প্রতিটি ম্যাগাজিনের দাম ছিল ১০ টাকা। দুটি ম্যাগাজিন ২০ টাকা। এটা ছিল সপ্তাহিক ম্যাগাজিন। অর্থাৎ আমার প্রতি সপ্তাহে ২০ টাকা থাকতেই হবে। টাকার পরিমাণটা অনেকের জন্য হতে পারে হাস্যকর। কিন্তু আমার জন্য এটাই ছিল বাস্তব। কারণ আমার এক টাকাও উপার্জনের কোন উৎস ছিল না। এবং আমার পক্ষে যে কয়টা কষ্টসাধ্য কাজ, তা হলো পরিবারের কাছে টাকা খোঁজা। তাই ২০ টাকা আমার জন্য অনেক টাকা।
এই দুটি ম্যাগাজিন ক্রয় করতাম এই কারণে যে, এই দুটি ম্যাগাজিনে দুইজন উদ্দোক্তার গল্প তুলে ধরা হতো। আর এই দুটি গল্পের জন্যই আমি প্রতি সপ্তাহে ২০ টাকা দিতাম।
এখন আসি "প্রথম আলো "র দিকে। প্রথম আলো তে 'স্বপ্ন নিয়ে' নামক একটি ক্রোড়পত্র ছিল। যেখানে প্রতি সপ্তাহে উদ্দোক্তাদের নিয়ে লিখা হতো। এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উদ্দোক্তা ও সফল ব্যক্তিদের বক্তব্য তুলে ধরা হতো। আমি প্রতিটি বক্তব্য কাট করে রাখতাম।
এবং এখন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এবং আমার ২ বন্ধু মিলে শুরু করে দেই। প্রত্যেকে ১০০০ করে টাকা নিয়ে আমরা ৩ জনে ৩০০০ হাজার টাকা দিয়ে ২ টি ছাগল কিনে আমেদের গ্রামের এলাকায় দিনে দেই। এবং আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে আমরা প্রত্যেকে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী প্রতি মাসে কিছু টাকা জমাবো। সেই অনুযায়ী আমরা একটু একটু করে অনেক টাকা জমিয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে আমরা বৈশাখ মাসে ধান কিনে রেখে দেই।পরবর্তীতে এগুলো ৫-৬ মাস পরে বিক্রি করি। ভালোই চলছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নিজেদের বোঝাপড়ার অভাবে এবং নিজেদের অদক্ষতার কারণে এগুলো আর বেশি দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
একদিন প্রথম আলো পত্রিকার স্বপ্ন নিয়ে অংশে দেখতে পেলাম যে, ফেইসবুক ভিত্তিক একটি গ্রুপ "চাকরি করবো না, চাকরি দিব"। আমি এটা লিখে সার্চ দেই। দেখলাম অনেক গুলো পেইজ এবং গ্রুপ আসলো। আমি সব কয়টিতে এড দেই। এবং উদ্দোক্তা লিখে সার্চ দেই। যে কয়টি পেইজ এবং গ্রুপ আসলো সব কয়টিতে এড দেই।এরিমধ্যে আমি নিজের বলার মতো একটি গল্প গ্রুপে যুক্ত হয়ে গেছি। কিন্তু মজার বিষয় হলো, আমি যে যুক্ত হয়েছি আমি নিজেও জানি না।
পরবর্তীতে ৫-৬ মাস পরে আমি ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটা ভিডিও ফেইসবুকে আসলো। ভিডিও পুরোটা দেখলাম। এই ভিডিও তেই এই গ্রুপের নাম জানলাম এবং গ্রুপটা খোঁজে বাহির করলাম। দেখলাম আমি গ্রুপে যুক্ত আছি। গ্রুপের নিয়মনীতি পড়লাম এবং অনেক গুলো পোস্টও পড়লাম। বুঝতে পারলাম যে, এখানে ব্যাচ ভিত্তিক মেম্বার যুক্ত হয়। আমি গ্রুপে পোস্ট করলাম যে, "আমি কততম ব্যাচে যুক্ত আছি? "। একজনে কমেন্টে বললেন যে, আপনি ৫ম ব্যাচ থেকে যুক্ত আছেন। একজনে কমেন্টে করলেন যে, আপনি গ্রুপ থেকে লিভ নেন।পরে আবার এড দেন। এড হলে আপনার ব্যাচ হবে ৭ম। আমি ওনার কথামতো কাজ করলাম। এবং সপ্তম ব্যাচ থেকে নিয়মিত আছি।
গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পরে
গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পরে আমি নিয়মিত স্যারের পোস্ট পড়ি।কিন্তু কমেন্ট করতে অনেকটা ভয় পেতাম। কারণ কিভাবে কমেন্টা করবো,কি লিখবো, এরকম কমেন্ট করা কি টিক হবে,ইত্যাদি। পরে ইনশাআল্লাহ এগুলো কেটে গেছে।
প্রিয় স্যারের অনুপ্রেরণা পয়ে আমি একদিন আমার আইডি থেকে চা পাতা নিয়ে সেল পোস্ট করলাম। কিন্তু পরেরটা ইতিহাস। শত শত কল আর Messenger এ শত শত মেসেজ এ আমার মোবাইল Hung হয়ে গেছে।
এরকম আমার নতুন ব্যাবসা চলছিল ভালোই। একদিন হটাৎ আমি দেখতে পেলাম যে, আমাদের সুনামগঞ্জ থেকে ৬ জনে মিলে একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন। উদ্যোগের নাম "সুনাম শপে" আমি ওনাদের ৬ জনের একজন মোহাম্মদ রাজুল চাঁদ ভাইয়ের সাতে যোগাযোগ করলাম। এবং ওনাদের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। উনারাও আমাকে পেয়ে অনেক খুশী। কারণ ওনাদের একজন চলে যাবে,এবং এই খালি অংশে আমাকে যুক্ত করবেন।পরে ৫-৭ দিনের মধ্যে আমি যুক্ত হয়ে গেলাম।
আমার নতুন করে কাজ শুরু হলো "সুনাম শপ"কে নিয়ে। নামটা আমরা ট্রেডমার্ক করাই। এই নামে ডোমেইন আরো আগেই নিয়ে রাখা হয়েছিল। সুনাম শপ নামক এই উদ্যোগটা কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ জয়েন স্টক কোম্পানির অধীনে নিবন্ধিত হয়ে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। নাম দেওয়া হয় " সুনাম শপ লিমিটেড "। আমরা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সুনাম শপ লিমিটেডর নামে একটা অফিস নেই। এবং শ্রীমঙ্গল পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স করি। এই অফিস থেকেই আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়। এখান থেকে আমরা সমগ্র বাংলাদেশে চা পাতা সরবরাহ করি। আমাদের ৯৫% সেল শুধু গ্রুপে হয়। আমাদের প্রথম মাসে সেল হয় ৩০০ টাকা। দ্বিতীয় মাসে ৫০০০+। তৃতীয় মাসে ৭০০০+। চতুর্থ মাসে ৭৫০০০+। বর্তমানে আমাদের শুধু চা পাতা সেল হয় ৫-৬ লক্ষ টাকা প্রতি মাসে।
আমাদের আরও একটি প্রডাক্ট আছে,তুলশী মালা চাল। এটা আমরা সরবরাহ করি সুনামগঞ্জ থেকে। তুলশী মালা চালও আমরা ভালো সারা পেয়েছি। আমরা স্যারের কথা মাথায় রেখে বাজারের অন্যান জনের চেয়ে কম দামে বিক্রি করি। আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে নিজস্ব মিলে প্রক্রিয়া করণ করি।
আমরা গত ৬-৭ মাস অগে কৃষিতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি এবং ৪ মাস পরে প্রায় দ্বিগুণ লাভ করি। বর্তমানে আমাদের ৪-৫ টা প্রজেক্টের প্রক্রিয়া করণ চলছে।
বর্তমানে আমার সরকারি চাকরি করার বয়স এখনো আছে। কিন্তু আমি কোন আবেদন করতেছি না। অনেক আগে আমি কিছু আবেদন করেছিলাম। কিন্তু একটিও পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করিনি। যে আবেদন গুলো করেছিলাম, সেগুলোর এসএমএস আসে। প্রত্যেকটা এসএমএস আমার মনের মধ্যে নারা দেয় যে,আমি কি সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছি। জানি না সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছি কি না কিন্তু আমি আমার মনের কথা শুনছি। আমার এ সকল কার্যক্রম ২-৩ মাস অগে পরিবার অনিচ্ছায় সত্ত্বেও মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তার চান আমি যেন সরকারি কোন চাকরি করি। তারা অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু সব প্রচেষ্টা বিফলে গেছে।
ধন্যবাদ সবাইকে, ধন্যবাদ প্রানের প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
Kaysar Ahmed
Batch:07
Reg: 5105
Present Add:Sreemangal, Moulvibazar
Permanent Add:Tahirpur, Sunamganj