জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়
জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। কোন কোন সময় কল্পনাকেও হার মানায়। জীবনের গল্প লিখতে হয়তো ৩০ - ৬০ মিনিট লাগে,, বলতে আরও কম, কিন্তু চড়াই উৎরাই পার করে কঠিন সময় যে কীভাবে পার করে সেটা শুধু ব্যক্তিটাই বুঝে। আমাদের এই প্লাটফর্ম নিজের গল্প বলার একটি সুবর্ণ সুযোগ।
বারবার লিখতে বসে কেটে দিয়েছি। আসলে কিছু কথা থাকে যা বলা যায় না। হয়তো পরিবার বা আপন জনের খাতিরে।
গল্প বলি পড়ালেখার
আমি খাদিজা ছোট বেলায় বাবা অনেক কষ্টে আমাকে পড়ালেখা করিয়েছেন। বাবার ছিল সরকারি চাকুরী। অল্প বেতন। আমি ৬ বছর বয়সে চট্টগ্রামে এ আসি। ঘরভাড়া,সংসার খরচ সব মিলিয়ে হিমসিম খাওয়া আমার বাবা আমাকে ভর্তি করিয়ে দেন চট্টগ্রামের এক ভালো স্কুলে। আত্মীয় স্বজন খুব বকাবকি করত। সরকারি স্কুলে কেন দেয় নি এই সেই। বাবা সেদিকে কর্ণপাত করে নি। আমাকে পড়ানোর দিকে কোন কমতি রাখেনি। ১২ টা মাস আমাকে প্রাইভেট পড়াইছে। আর আমার মা ইংলিশ পারতনা তবুও বানান করে করে শিখাতো। মোটামুটি ভালই চলছিল, আমার পড়ালেখা। আমি কখনও কোন সাবজেক্ট এ ফেল করিনি। ক্লাস নাইনে সায়েন্স নিয়ে পড়াতে গিয়েও আমার জন্য বাবা অনেক কথা শুনছে।
আমি কিন্তু নাছোড়বান্দা আমি পড়লে সায়েন্স নিয়ে পড়ব।প্রায় সব স্যার আমাকে নিয়ে আশাবাদী ছিল। আমার টেস্ট এর রেজাল্ট ও ভালো ছিল। কিন্তু এসএসসিতে সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা যেটা ছিল সেটাতেই পেলাম A-. আমি তো রেজাল্ট দেখেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। আমার স্যারেরা বাবাকে কল দিল বাবাও সেদিন অফিস থেকে এসেছিল রেজাল্ট দেখার জন্য এমনকি মিষ্টি কিনার টাকাও নিয়ে এনেছিল ধার করে।
পড়ে আমি বাবাকে ধরে অনেক কেঁদেছি।বাবাও কাঁদছে অনেক। রাতে বাবার ডিসিশন আমাকে আর পড়াবে না। কিছুতেই পড়াবে না। এখন আমি কি করি। হেডস্যারকে কল দিলাম। তিনিও বাবাকে রাজি করানোর চেষ্টা করে।আসলে ভালো মানুষ রাগ করলে সহজে মানানো যায় না।
আমি নিজে অনেক কলেজের দুয়ারে ঘুরেছি। সায়েন্স থেকে ওয়েটিং সব জায়গায়। বাবা আমাকে ভর্তি বেলায় কোন হেল্প করবে না। আমিও সায়েন্স ছাড়ব না। পরে চট্টগ্রামে আগ্রাবাদ মহিলা কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু এখন আমার পড়ালেখায় অনীহা চলে আসে। এমনি নিয়মিত কলেজে ক্লাস করতাম।
আমার ফাস্ট ইয়ার ফাইনালের রেজাল্ট এ ফেল। এবার আর কি শুরু হল ছেলে দেখা। টেস্ট কিছুদিন আগে বিয়ে হল। এবং টেস্ট এও ফেল। কিন্তু ইন্টারে আমি কোচিং, প্রাইভেট কিছু করিনি। বাসর রাতের হাজবেন্ড এর দেওয়া টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপ করি। আবার পরীক্ষা দিয়ে টেস্ট পরীক্ষায় উওীর্ণ হই।
কিন্তু আমি কনসিভ করি। এবং অবরোধের সময় তিন মাস ধরে চলে এইচএসসি পরীক্ষা। আমার হাজবেন্ড প্রবাসী। সে চলে যায়। বাবা আমাকে সিনজি করে হলপ দিয়ে আসত। আবার নিয়ে আসত। উচ্চতর গণিত প্র্যাকটিক্যাল এর সময় বাবা যেতে পারেনি।হঠাৎ গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল গরমে হলে গিয়ে কি লিখছি জানিনা।
আমি পরীক্ষা দিতে চাইনি আমার হাসবেন্ড বলেমএত কষ্ট করছ অন্তত পরীক্ষা দাও। দিলাম পরীক্ষার এক মাস পর আমার বড় মেয়ে হয়।
এবার রেজাল্ট এর দিন আমার খবর নাই। বাবা কল দিয়ে বলে তোর মেয়েকে মিষ্টি খাওয়া। আমি অবাক কিরে কেন এই কথা।
হুম আমি পাস করেছি। ৩.৯ পেয়ে। সেদিন বাবা কিন্তু মিষ্টি এনেছে।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
খাদিজা আকতার
ব্যাচ ১২
রেজিষ্ট্রেশন নং৪৮৯০৪
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
লক্ষ্মীপুর, রায়পুর।