কেঁদেছি অনেক কেঁদেছি যখন,,,,,
আজ বলবো আমি আমার জীবনের সুখ-দুঃখের গল্প।
কেঁদেছি অনেক কেঁদেছি যখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি , পড়া না পারার কারণে স্যারের মার খেয়ে অনেক কেঁদেছি। কিন্তু অনেক কষ্ট পেলেও এটা ছিল আমার জীবনের একটা ছোটখাটো টার্নিং পয়েন্ট, কারণ এরপর থেকেই আমি ভালো ছাত্র হিসাবে স্কুলে পরিচিতি লাভ করতে পেরেছি।
একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি আমার কর্মজীবনের হাতে খড়ি । হঠাৎ করে চাকরিটি চলে যায়। শুরু হয় আমার বিভীষিকাময় জীবন। প্রচন্ড টেনশনের কালো ধোঁয়ায় আমার জীবন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তখন আমার বড় ছেলের বয়স দেড় বছর। বাচ্চার দুধ কেনার পয়সা পর্যন্ত আমার কাছে নেই। অনেক আপনজনদের কাছে বুক ভরা আশা নিয়ে ধরনা দিয়েছিলাম, কিন্তু রিক্ত হাতে ফিরে আসতে হয়েছিল। আমি পাগল প্রায়। সারাদিন এলোমেলো ভাবে ঘুরেসন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম শূন্য হাতে। আমি বাকরুদ্ধ । আমি একেবারে দিশেহারা হতাশ। কি করা উচিত নিজে ভেবে উঠতে পারছিলাম না।
যাই হোক হঠাৎ এমনি এক মুহূর্তে মনের সংকোচ ঝেড়ে ফেলে পরিচিত এক দোকানদারের কাছ থেকে বাকিতে একটি দুধ কিনে আনি।
অত্যন্ত বাজে ভাবে জীবনের মূল্যবান বেশ কয়েকটি দিন এভাবেই চলে যায়। শুরু করলাম ঔষধ ব্যবসা খুব সামান্য পুঁজি নিয়ে, সেখানেও লেগে থাকার অভ্যাস না থাকার কারণে সফলতা লাভ করতে পারিনি। এরপরে এক আত্মীয়ার পীড়াপীড়িতে প্যান্টের ব্যবসা চলে গেলাম। এই ব্যবসায় এসে আরো বেশি বেকায়দায় পড়ে গেলাম অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। অত্যন্ত কষ্টে যোগাড় করা সব পুঁজি নষ্ট হয়ে গেল। একেবারে শূন্য হাতে ঘরে ফিরলাম। এইবার শুরু হল জীবনের আরো বেশি ট্রাজেডি ময় অধ্যায়।
বেশ কিছুদিন খেয়ে না খেয়ে অত্যন্ত ডিপ্রেশনে কাটতে লাগলো আমার প্রতিটি মুহূর্ত। এই সময়ের অনুভূতি আমি লিখে এখনো প্রকাশ করতে পারছিনা।
সিদ্ধান্ত নিলাম বিদেশে চলে যাব। কিন্তু আমার নিজের তো টাকা নাই। অনেক কষ্ট করে বাবা-মা ও বড় ভাই কে ম্যানেজ করে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে যাওয়ার সুযোগ হলো। সেখানে গিয়ে চার বছর থাকার পর ওই দেশের কারেন্সির তথা অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়াতে চলে আসতে বাধ্য হলাম।
আবার কিছুদিন অত্যন্ত বাজে ভাবে কাটল জীবনের মূল্যবান সময়। এই সময়টাতো এটা-ওটা করে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলাম অর্থনৈতিকভাবে।
শেষ পর্যন্ত চলে আসলাম সৌদি আরবে। 6 বছর কাজ করার পরে কোম্পানির কন্ট্রাক্ট শেষ হয়ে গেল। আবার শুরু হল চরম দুর্দিন আমার জীবনে।
চলে এলাম কোম্পানি থেকে ফ্রি ভিসার জগতে। সেখানেও কাজের অবস্থা মারাত্মক খারাপ ছিল। সব সময় কাজ থাকত না। থাকা এবং খাওয়ার ভয়ঙ্কর খারাপ অবস্থার মধ্যে ছিলাম ।
কাজের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে পকেটের পয়সা একেবারে শূন্য হয়ে গেল। না খেয়ে কাটাতো হলো পুরো একদিন। কর্মের সন্ধান নেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে গেলাম। গাড়ি ভাড়া দেওয়ার পর আমার কাছে আর টাকা নাই একটিও। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ব্যেগের পকেট এ এক টাকা পেলাম।
সৌদি আরবে এক টাকার বিনিময়ে বিশাল বড় একটা রুটি পাওয়া যায় এই দেশে এটাকে তমিজ বলে।
গতকাল সকালে হালকা নাস্তা করার সৌভাগ্য হয়েছিল এরপরে আর খানা জোটেনি। এই অবস্থায় এই রুটি কিভাবে খাব পানি ছাড়া। অপরিচিত জায়গা তাই এক পথচারী ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম মসজিদ কোথায় তারমানে মসজিদের কাছে পানি খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সামান্য একটু দূরে মসজিদ ছিল সেখানে গিয়ে বই পানির কাছে দাঁড়িয়ে ওই রুটি খেতে চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না সামান্য একটু খেয়ে ওখান থেকে হাতে পোস্ট করে পানি পান করলাম।
কি করব কোন উপায়ান্তর পাচ্ছিলাম না। মোবাইলের তেমন ব্যালেন্স ও নাই। একই সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে পরিচিত আমাদের শরীয়তপুরের এক ছোট ভাইয়ের কাছে মিস কল দিলাম, ভাইটি সাথে সাথেই কলব্যাক করল । সংক্ষেপে অবস্থার বিবরণ দিলাম। এই ভাইটি বলল গাড়ি ভাড়া করে আমার কাছে এসে পড়ুন এখানে আসলে আমি ভাড়া দিয়ে দিব। অনেকদূর ছিল এই ভাইটি। তাই করলাম।
এই ছোট ভাইটি টাকা দিল। আবার গন্তব্যস্থানে আসলাম।
এটা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দুঃখময় স্মরণীয় সময়।
এরপরের দিনগুলো আলহামদুলিল্লাহ প্রবাসে ভালই কাটছিল। এভাবেই দিন চলতে লাগলো। এখন তো প্রবাসে প্রায় 22 বছর চলছে। আর কত থাকবো সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে চলে যাব হয়তোবা দু-এক বছরের মধ্যেই। মাথায় চেপে বসল আর এক নতুন টেনশন। দেশে গিয়ে বসে বসে খাওয়ার মত অর্থনৈতিক অবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি এতদিনেও। সারাক্ষণ প্রতি মুহূর্তেই শুধু একই টেনশন চেপে আসে দেশে গিয়ে কি করবো।
#জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। দীর্ঘদিন হলো প্রবাসে। প্রবাস জীবন ত্যাগ করার সময় টি যেন খুব কাছাকাছি চলে আসছে।
বিচিত্র জগতের বিচিত্র চিন্তা ভাবনা ও জল্পনা-কল্পনা
হৃদয়ের মাঝে ভয়ংকর যন্ত্রনাময় তরঙ্গের সৃষ্টি করছে
প্রতিনিয়ত ।
#প্রবাসীদের মধ্যে অনেক কেই বলতে শুনি, প্রবাসে পা রাখলেন তো খোড়া হয়ে গেলেন,। শুধু শুনাই নয় বাস্তব আমার চোখের সামনে কয়েকটি ঘটনা আমি দেখেছি।। প্রবাস থেকে একবারে দেশে চলে গিয়ে ব্যবসা করে সফল হতে পারেননি। দেশের পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে দীর্ঘদিন পরে গিয়ে এডজাস্ট হওয়াটা প্রবাসীদের জন্য আসলেই অনেকটা কঠিন হয়ে যায়। বড় সমস্যা হলো, প্রবাসীরা ব্যবসা না বুঝেই অন্যের উপর ভরসা করে ব্যবসা শুরু করে দিতে হয়।
#তাহলে প্রবাস থেকে একবারে দেশে চলে গিয়ে আবার সেই বেকার ! বেকার শব্দটি আমার কাছে এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কময় শব্দ। এই শব্দটি আমার কাছে একটি বিষাক্ত বুলেটের মতো মনে হয়। এই শব্দটি এক সময় আমার বুক কে ঝাজড়া করে দিয়েছিল। আবার সেই বুলেটের বিষাদময় পরিস্থিতি আমার চারপাশে যেন ঘুরপাক খাচ্ছে। মন মানসিকতা আর চরম অবনতি। দিনের পর দিন ঘুম হচ্ছে না এই টেনসনে।
#হতাশার কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন জীবনের এমনি চরম বিক্ষিপ্তময় অবস্থায় তন্দ্রাচ্ছন্ন এক গভীর রাতে শুয়ে শুয়ে এলোমেলোভাবে মোবাইল টিপছি, কখনো ইউটিউব কখনো কারো পোস্ট । হঠাৎ করে চোখের সামনে এসে উপস্থিত হল একটি ইউটিউব ভিডিও। শুদ্ধ ভাষায় ও শুদ্ধ উচ্চারণে বলিষ্ঠ কণ্ঠে কেউ একজন বলছে---#আপনি_ই_পারবেন_আপনাকে_দিয়েই_হবে
#একটু গা আগলী দিয়ে নড়েচড়ে বসলাম। আরেকটি ভিডিও দেখলাম একই ব্যক্তির। এখানে বলতেছে হতাশ হওয়া যাবে না ,হাল ছাড়া যাবে না, এবার পুরো নড়েচড়ে উঠে বসলাম। আমার তন্দ্রাভাব কোথায় যেন পালিয়ে গেল। ভিডিওতে কথা বলার ব্যক্তিটি ছিলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। উনার কথা গুলো সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে আমার হৃদয়ে কতটা যে শক্তির সঞ্চার করেছিল তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার এমন মনে হল, আমি দীর্ঘদিনের ম্যালেরিয়ার রুগি, কেউ আমাকে কোরামিন খাওয়ায়ে দিল, আমি চক্ষু মেলে এদিক ওদিক তাকিয়ে পানি পান করতে চাইলাম , আসলে সত্যি আমি ওই মুহূর্তে পানি পান করেছিলাম।
#চিন্তাকরলাম কিভাবে এই গ্রুপের সদস্য হতে পারি। নিজের বলার মত একটা গল্প ফেসবুকে সার্চ করতেই পেয়ে গেলাম । প্রথম চেষ্টাতেই রেজিস্ট্রেশন ফরম পেয়ে গেলাম, ফিলাপ করলাম, সেন্ড করলাম। কি যেন একটা মেসেজ আসলো বুঝতে না বুঝতেই মেসেজটি চলে গেলো। রেজিস্ট্রেশন হলো কি হলো না আমি কনফার্ম হতে পারছিনা। ঠিক তখনই একটি পোস্ট আমার সামনে আসলো, ওই পোস্টটা তো আমি কমেন্ট করলাম, যে আমি রেজিস্ট্রেশন করেছি, কিন্তু সফল হয়েছে কিনা তাতো বুঝতে পারছি না, এ গ্রুপের নিয়ম কানুন কি। সাথে সাথেই আমাকে সহযোগিতা করার জন্য এক ঝাক ভালো মানুষ হাত বাড়িয়ে দিল। ইনবক্সে লিংক পাঠালো একাধিক ভাই ও বোন। কেউ কেউ ডাইরেক্ট ইনবক্সে এসে আমাকে পরামর্শ দিচ্ছে। দুটি নাম আমার খেয়াল আছে আর গুলো খেয়াল নেই। মুস্তাক আহমেদ মৃধা এবং সায়মা আক্তার শায়মা । মুস্তাক আহমেদ ভাই আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে আমার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বাহির করে স্ক্রিনশট পাঠাইলেন।
আমি এক কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম এই প্ল্যাটফর্মের ভাই ও বোনদের ব্যবহার দেখে। তাদের আন্তরিকতা দেখে আমি গ্রুপের প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হয়ে গেলাম। আমার মনে পড়ে সারারাত আমি গ্রুপের পোস্ট দেখেছি। এই দিন থেকেই আমি"নিজের বলার মত একটা গল্প"গ্রুপের যেন পাগল হয়ে গেলাম।
নিজের বলার মত গল্প গ্রুপ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি কিছু একটা করার অসিম সাহস সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছি। একটি ফেসবুক পেজখুলে গার্মেন্টস আইটেম নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছি ইনশাল্লাহ। আমার পেজের নাম ইউনিক কালার্স।
এখন আমি প্রচন্ড আশাবাদী, ইনশাল্লাহ আমি কিছু করতে পারবো । এই গ্রুপ থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনকে বদলাতে পারবো। ইতিমধ্যে এই গ্রুপ থেকে আমি যা পেয়েছি ------
***ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা লাভ করেছি
*** বিনয় ব্যবহার শিখেছি
***ভলান্টিয়ারিং শিখেছি
***সামাজিক দায়বদ্ধতা বুকে ধারণ করতে শিখেছি
***বাবা মাকে কিভাবে আই লাভ ইউ বলতে হয় তা শিখেছি.।
*** কিভাবে নেটওয়ার্কিং সৃষ্টি করতে হয় সেই শিক্ষা অর্জন করেছি
***জীবনে সফল হতে হলে পজিটিভিটির বিকল্প কিছু নেই এই শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছি।
*** আশেপাশের সব মানুষ গুলো নিয়ে কিভাবে ভালো থাকা যায় সেই নৈতিক শিক্ষা লাভ করতে পেরেছি।
***বুকে হাত দিয়ে এখন বলতে পারি আমি একজন ভালো মানুষ।
***শিখেছি ব্যবসা এবং ব্যবসার মূলধন কিভাবে জোগাড় করতে হয়।
***এই গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও আমি স্বপ্ন দেখতে শিখেছি। ইনশাআল্লাহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত থাকবো এবং আরো শিখব।
এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে যত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আমি পেয়েছি আজ অবধি আমি আর কোথাও থেকে এতো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাইনি । আসলে এত এত ভালো মানুষ দুনিয়াতে যে এখনো আছে তাএই প্লাটফর্মে যুক্ত না হলে বুঝতেই পারতাম না।
দোয়া করবেন, স্বপ্ন দেখছি, উদ্যোক্তা হব।
আমার মত মানুষ এই বয়সে স্বপ্ন দেখতে পারলে আপনারা কেন পারবেন না?
#স্বপ্ন_দেখুন
#সাহস_করুন
#শুরু_করুন
#লেগে_থাকুন
আমি যেন এই শ্লোগানের ছায়া তলে আমার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারি সেই জন্য দোয়া করবেন।
আসুন আমরা সবাই প্রিয় স্যারের এই শ্লোগান বুকে ধারণ করি।, ইনশাল্লাহ সফলতা আমাদের জীবনে আসবেই।
***বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমার এই লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ.। লেখায় ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইল।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
মোহাম্মদ দুলাল
কান্ট্রি অ্যাম্বাসেডর সৌদি আরব মক্কা।
নবম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশন---১১২৫৫
রক্তের গ্রুপ-বি+
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
জেলা -------শরীয়তপুর
বর্তমান ----টঙ্গী গাজীপুর
সৌদি আরব মক্কা প্রবাসী
ফোন:+৯৬৬-০৫৫৯৩৬৯৯২৪