এখানে এখন আরেক যুদ্ধে রণক্ষেত্র।
জীবন থেকে নেয়া না বলা কথা গুলো......
শুরু করিতেছি মহান সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ তায়ালার নামে যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও মহান,
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশান এর সকল প্রাণপ্রিয় ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ,
আশা ও বিশ্বাস সকলে মহান সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ভালোই আছেন?
প্রথমে শুকরিয়া আদায় করছি মহান রাব্বুল আলামিনের এর দরবারে যিনি আমাকে এখনো সুস্থ রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ,
১৯৯৬ সালের ২১ নভেম্বর মায়ের কোল আলোকিত করে আমার জন্ম।
বাবা মায়ের কলিজার টুকরা হয়েই জন্ম নিয়েছি। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান অম্ল কিছুক্ষন সময় দুনিয়ার আলো দেখেছিলো। তাই আমার আগমন তাদের কাছে অনেক খুশির ছিলো।
যদিও বাবার আদর ছোট বেলায় আমরা ৩ ভাই কেউ ই তেমন একটা পাইনি। বাবা ৪/৫ বছর পর একবার দেশে আসতেন। স্বল্প আয়ের মানুষ ছিলেন। তাই যখন তখন দেশে আসা সম্ভব ছিলোনা। মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ায় বাবা দেশে আসলে সংসার চলবে কিভাবে? পরিবারের সবাই না খেয়ে যে মরতে হবে এসব ভেবে আর দেশে আসা হতোনা বাবার।
দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলাম বাবা মা সখ করে মাদ্রাসায় ভর্তি করালেন।
ক্লাস ৫ম পর্যন্ত গ্রামের নূরানী মাদ্রাসায় সুনামের সাথে পড়ালেখা করে নিজ গ্রাম থেকে একটু দূরে একটি বড় মাদ্রাসায় ভর্তি হই।
সেখানে ও খুব আলোচনায় ছিলাম। সবার কাছেই ছিলাম প্রিয় পাত্র।
যখন ৮ম শ্রেণিতে তখন থেকে জীবনের কালো অধ্যায় শুরু। থাকতে শুরু করলাম হোস্টেলে। ভালো খারাপ সব রকমের ছাত্র থাকে সেখানে। তাদের মধ্যে আমিও একজন।
ধীরে ধীরে কিছু বাজে অভ্যাস গড়ে উঠে আমার আচরণে।
একসময়ের হিরো এখন আর আগের জায়গায় নেই।
তারপর ও নিজেকে পরিবর্তন করতে শুরু করি এবং প্রায় অনেকটা পরিবর্তন কিন্তু আগের অবস্থান কি আর ফিরে পাওয়া যায়?
দেখতে দেখতে S.S.C পরীক্ষা। কিন্তু আমি অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে।
পড়া লেখার কাছেও আমি নেই। কিন্তু প্রিয় শিক্ষকের আস্থা ছিলো তাই কোনভাবে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।
আলহামদুলিল্লাহ রেজাল্ট ও ভালো ছিলো।
পরীক্ষা শেষ করে ঢাকায় চলে আসি দিনের বেলা একটা কলেজ এ স্টোর রুম সামলানোর দায়িত্ব নেই। রাতে কম্পিউটার এর কাজ শিখি।
কিন্তু বাবার স্বপ্ন ছিলো বড় আলেম হবে তার ছেলে তাই ঢাকার একটি স্বনামধন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন।
কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হয়নি ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আমার দু পা অচল হয়ে যায়😭😭
বাবার আদর তখন পেয়েছিলাম। কিভাবে আমাকে কোলে করে বাহিরে নিয়ে যেতেন, খাওয়াতেন আরো কতকি।
তখন ২০১৬ H.S.C পরীক্ষা। তখন ও ঠিক একই ভাবে পরীক্ষা দিয়ে আসলাম প্রিয় মানুষের সহায়তায়। তিনি অনেক দূর থেকে সারাদিন মাদ্রাসায় ক্লাস অধ্যক্ষ এর দায়িত্ব শেষ করে আমাকে রাতে সময় দিতেন। আবার নিজ বাড়িতে যেতে ৩/৪ ঘন্টা মোটরসাইকেল চালাতেন।
রেজাল্ট এ উনি অনেক খুশি ছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি। আবার ঢাকায় সদরঘাট এ একটি বই দোকানে কাজ নিলাম।
কিন্তু বাবার আর একার পক্ষে সংসার কত চালাবেন তাকে সহযোগিতা করা এখন খুবই প্রয়োজন। সেখান থেকে আমি পাড়ি জমালাম সৌদি আরব।
কিন্তু কপাল আমি আসার পরে এখন বাবা ও বেকার আমিও বেকার৷ তখন শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। টিকে থাকার যুদ্ধ।
প্রায় ১ বছর পর একটি পার্মানেন্ট চাকরি পাই আলহামদুলিল্লাহ।
দু বছর থেকে দেশে যাই কিন্তু ভাগ্যের কি খেলা ৪ মাসের ছুটি ১০ মাস কাটালাম। করনা মহামারী তে আটকা পড়ি দেশে।
এখানে এখন আরেক যুদ্ধে রণক্ষেত্র।
কিন্তু আমি কি করবো কিছুই জানা ছিলোনা।
কিভাবে চলবে আমার জীবন। সংসার পরিবার নিয়ে এক অসহায় অবস্থা। সবাই ভাবে বিদেশি বাপ বেটা দু জন বিদেশ করে।
কিন্তু আমাদের অবস্থা তো শুধু আমরাই জানি।
যাইহোক একদিন উপর ওয়ালার দয়া হলো আমার উপর।
তার বিশেষ রহমত হিসেবে আমার কাছে আসে নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনের খবর।
এড হয়ে দেখতে থাকি সব সফলতার গল্প।
এখানে শিক্ষিত অশিক্ষিত বলে কোন কথা নেই।এখানে ধনী গরীব কোন কথা নেই। এখানে সাদা কালোর কোন ব্যবধান নেই।
সবাই এক হয়ে কাজ করছে। ছোট থেকে বড় বড় কোম্পানির মালিক এখানে সাধারণ মানুষ এর মতোই সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে।
এখানে এসে একজন স্বপ্নহীন মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। এখানে মানুষ নতুন করে বাঁচতে শিখছে।
আর আমি তাদের মধ্যে একজন।
রেজিষ্ট্রেশন করে সেশন শেষ করলাম।
কিন্তু প্রতিদিনই মনে হয় আমি আজকেই শুরু করলাম মাত্র।
শুরু করলাম মধু নিয়ে কাজ করা কারণ আমি নিজেই মধু কিনে ঠকেছি কিন্তু এই মূল্যবান খাবার যদি ভেজার হয় তাহলে মানুষ যে আস্থা হারিয়ে ফেলবে তাই নিজে উদ্যোগ নিলাম আমি খাঁটি মধু নিয়ে কাজ করবো।
শুরু করে দিলাম।
হঠাৎ নজরে আসে স্যারের একটা সেশন জাতে স্যার বলেছিলেন সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা নয় বরং যখন যেখানে যে পরিমাণ দরকার ততটুকু সময় দেয়া
সেখান থেকে শুরু চা পাতা বিক্রি। সকাল থেকে রাত ৮/৯ টা একটা ধার করা সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম।
একদিন ঘোষণা আসলো গ্রুপের ১০০০ তম দিন উদযাপন হবে৷ সেখানে উপস্থিত হলাম। সবার আলোচনা শুনলাম।
বিশেষ করে আমাদের বাহার উদ্দিন ভাই (সৌদি প্রবাসি)
এর আলোচনা শুনে মনে হলো উনি যখন পারলেন দেশের বাহিরে থেকে দেশে কিছু করার তখন আমি কেন পারবো না।
দীর্ঘ ১০ মাস পর আমার আবার সৌদি আরবে আসার ব্যবস্থা হয়।
এখানে এসে নিজের আগের চাকরি হারাই বেকার বসে থাকি কিন্তু একদিন একটি অফিসে ক্লিনারের কাজ পাই।
কিন্তু আমার স্বপ্ন গুলো মুছে যায়নি। নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছি।
কাজ করছি এখানে থেকেও। দেশের মধ্যে আমার মধু এবং চা পাতা সহ কিছু প্রোডাক্ট রয়েছে।
এখানে বাবা একটি কৃষি খামার নিয়েছে কাজ করছেন।
আমি নিজে দোকান দেয়ার চেষ্টায় আছি।
আমার যুদ্ধ জয়ের প্রবল ইচ্ছা শক্তি ছিলো কিন্তু সেনাপতি না থায় রণকৌশল ছিলোনা। কখন কিভাবে কি করতে হবে সে পরামর্শ দেয়ার কেউ ছিলোনা।
কিন্তু এখন আমার একজন যোগ্য সেনাপতি আছেন।
না শুধু আমার নয় বরং দেশ কিংবা দেশের বাহিরে হাজারো যুবক যুবতীর জীবন যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
কোন বিনিময় ছাড়াই নিজের শ্রম মেধা দিয়ে তিনি আমাদের টিকে থাকার লড়াই য়ে পথপ্রদর্শক এর কাজ করছেন।
জীবন যুদ্ধ চলছে ইনশাআল্লাহ এই যুদ্ধে আমি বিজয় অর্জন করবোই ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন করতে পারেন এ গ্রুপ থেকে আমি কি পেলাম।
অনেক কিছু পেয়েছি যা বলে শেষ করতে পারবোনা
এখানে এসে কিছু এমন মানুষের দেখা পেয়েছি যাদের সাথে পরিচয় না হলে হয়তো জানতে পারতাম নে যে এখনো মানুষ বিনা সার্থে কারো উপকার করতে পারে৷
নিজের মূল্যবান সময় আরেকজন কে দিচ্ছে বোঝাচ্ছে, যাকে দেখেনি চিনেনা জানেনা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে৷
যেখানে মানুষ চায়না মার্কেটে তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না আসুক আর এখানে সবই আলাদা বরং নিজেই শ্রম ঘাম দিয়ে আরেকজন ব্যবসায়ী তৈরী করছে। আরো অনেক কিছু। এই গ্রুপের একটা দিক হলে কিছু বলে বুঝানো যেতো কিন্তু এই গ্রুপ টা একজন মানুষের ভালো মানুষ হয়ে উঠা থেকে তার জীবনের পথ চলার পাথেয়। তাই আলোচনা করতে হলে একজন মানুষের জীবন নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে৷
তবে আমি এক কথায় বলবো এই গ্রুপ থেকে আমি নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস পেয়েছি। নিজের মতো করে বাঁচতে শিখেছি।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের প্রিয় মেন্টর প্রিয় শিক্ষক হাজার হাজার তরুণ তরুণী দের আইডল জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে, যিনি আমাদের এতো বিশাল একটা প্লাটর্ফম তৈরি করে দিয়েছেন, নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশান,
আমি স্যার এবং পরিবারের সবাই সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি আমীন,
হাজারো সালাম সে প্রিয় দোয়ায় মনে পড়ে আপনাকে। অন্তর থেকেই দোয়া আসে আপনার জন্য।
বেঁচে থাকুন হাজার বছর।
পরিশেষে সবার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি সুন্দর হোক আপনাদের সবার আগামী জীবনের প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষণ এই শুভ কামনায় আজকের মতো এখানে বিদায় নিলাম,
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৬০
Date:- ২৭/০৬/২০২১
আমি কামরুল হাসান
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার।
প্রশিক্ষকঃ- এসো কুরআন শিখি
১১তম ব্যাচ
রেজিঃ ২৯২৭৪,
উপজেলা চাটখিল
জেলা নোয়াখালী
বর্তমান অবস্থান আভহা সৌদি আরব,