আজ এত ক্ষুদা লাগলো ক্যান?খাসনি কিছু আজ বাইরে?
কলেজ থেকে ফিরেই,
মা ও মা,জলদি ভাত দাও,খুদা লাগছে ভীষন।
----আজ এত ক্ষুদা লাগলো ক্যান?খাসনি কিছু আজ বাইরে?
না মা,টাকাগুলো একটা বাচ্চাকে দিয়ে দিছি।ও কাগজ কুরাচ্ছিলো।তাই
----হাত মুখ ধুয়ে আয়,আমি ভাত দিচ্ছি।
খাবার খেতে বসে আমি তো আরো অবাক।আমার পছন্দের আইটেমগুলো হয়েছে আজ।
রসুনমরিচ ভর্তা,ডাল,ও ঝাল দিয়ে মাছভাজা।দেখেই জিভে জল চলে এলো।জলদি খাওয়া শুরু করলাম।
কিন্তু একি?আমি গিলতে পারছিনা কেন?গলায় খাবারটা আটকে গেল।সাথে সাথেই কাশি শুরু হলো।প্রচন্ড ঝালে চোখে জল চলে এলো।আর গলা দিয়ে রক্ত।
তাকিয়ে দেখি মা পাশে নেই।ভয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলাম।
হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেল।পাশেই দেখি মা আর আব্বু বসে আছে।আমার চিৎকারে তাদেরও ঘুম ভেঙে গেছে।
মুখে হাত দিয়ে দেখি নাকে কিছুটা রক্ত চলে আসছে।
হাত দিয়ে সেটা মুছেই হেসে উঠলাম আমি।
স্বপ্নের মাঝেও কি একটু সুস্থ থাকতে পারিনা আমি?
পারিনা মনভরে একটু ভাত খেতে?
ভাতের স্বাদটাতো ভুলেই গেছি গত ৩বছরে।সেই মরিচ ভর্তা দিয়ে মাখানো ঝাল ঝাল লাল টুকটুকে ভাতগুলোও ভুলে গেছে আমায়।
শেষ ভাত খেয়েছিলাম ২০১৮সালের মার্চ মাসে সম্ভবত।ভাবতেই অবাক লাগে,যেই আমি একবেলাও ভাত ছারা থাকতে পারতাম না, সেই আমি গত ৩ বছর আছি ভাত ছারা।হাহাহাহাহাহাহা
২বছর চিকিৎসা চলার পর যখন জানতে পারি আমি কখনো সুস্থ হবোনা আর তখন খুব জোরে জোরে হেসে উঠেছিলাম।ডাঃ টিম খুব অবাক হয়েছিল আমার কান্ড দেখে।টেবিলের ওপারে ৬ জন ডাঃ বসা,এপারে আমি আর আম্মু।
আম্মু যখন এটা শুনলো তখন কান্নার রোল ফেলে দিয়েছিলো। কেননা গত ২ বছর তিনি আমার জন্য লেগে থেকেছিলেন যতটা একটা সন্তান জন্ম দিতেও এতটা কস্ট পায়নি তিনি।
তবে আমি ভীষণ হেসেছিলাম।তখন আমার সবচেয়ে প্রিয় ডাঃ আমায় এসে জরিয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়েছিলো।আর বলেছিলো আল্লাহ ভরসা।তিনি যেহেতু তোকে বাচিয়ে রাখছেন হয়তো এভাবেই তুই থাকবি।এর থেকে বেশী থেরাপি চললে এটা ক্যান্সারে পরিনত হবে।তখন সমস্যা আরো বাড়বে।এর চেয়ে এখন যেমন আছিস তেমনই থাক।
আম্মু শুধু একটা কথাই জানতে চেয়েছিলো,কোন উপায়ই কি নেই ভাল হওয়ার।উওর পেয়েছিলো ইন্ডিয়া থেকে অপারেশন করাতে হবে।অনেক খরচ পরবে তবে সেটাতেও রিক্স আছে।সুস্থ হবে কিনা জানিনা।
আমি তখন থেকেই নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম।হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসার পর কারো সাথে কোন কথা বলতাম না।একাকি থাকতাম।কোন শব্দই সহ্য করতে পারতাম না।চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম।আব্বু আম্মু ও তেমন কিছু বলতো না।যথেষ্ট কেয়ার করতো কিন্তু আমার কোন কিছুতেই কোন রিএক্টশন ছিলোনা তখন।
২৩কেজি ওজন,মাথায় ছেলেদের মত ছোট ছোট চুল,কংকালসার বডি।আয়নায় দাড়াতেও ভয় পেতাম।সোজা হয়ে দাড়াতে পারতাম কিন্তু হাটতে পাড়তাম না তখনও।হাটার জন্য কারো সাহায্য লাগলো। আম্মু ঘর থেকে আয়না সরিয়ে ফেলেছিলো যেন আমি কিরকম দেখতে সেটা দেখতে না পারি।প্রতিচ্ছবি দেখা যায় এমন কিছুই ছিলোনা আমার ঘরে।
ঘরবন্দী একাকি থাকতে থাকতে অন্যরকম হয়ে গেছিলাম প্রায়।আম্মু তখন একটা ফোন কিনে দিলো।টুকটাক গল্প পরতাম আর ২একটা ফ্রেন্ড ও ডাঃ দের সাথেই কথা।২জন ডাঃ নিয়মিত খোজ নিত আমার,অবশ্য এখনো নেয়।(এখনো ফোনটা যদি আমি রিসিভ করি তাদের প্রথম কথা থাকে "তুই এখনো বেচে আছিস" আমি আরো তোর চল্লিশার দাওয়াত পেতে ফোন করলাম।আমি তখনি হেসে উঠি।সাথে ডাঃও হেসে ওঠি আর বলে এভাবেই হাসিখুশি থাকিস সবসময়।)
বিকেল হলেই ছোট বোন কোলে করে অনেকদুরে নিয়ে যেত।আসার সময় হাটিয়ে আনতো।মা আর বোনের হাত ধরেই বাড়ি ফিরতাম।
একজন ফিজিশিয়ানের কথামত খাবারগুলো আপডেট করা হলো।প্রকৃতি,আলো বাতাস সাথে নামাজ +কোরআন তিলাওয়াত। কেন জানিনা কয়েকমাসেই বেশ রিকোভার হলো শারিরীক অবস্থা। ওজন হলো ৪৫ কেজি।
আমি তো অবাক।তবে বেশ খুশিও লাগলো।।জীবনটাকে নতুন করে শুরু করবো ভাবলাম।
যেই ভাবা সেই কাজ।ডাঃ কে ফোন করে জানালাম সবটা।বললো মনে আত্মবিশ্বাস থাকলে সবই সম্ভব।যা ইচ্ছে করো তুমি।মানুষের মৃত্যু তো সৃষ্টিকর্তার হাতে,তাই এটা নিয়ে ভেবো না।ভালো থাকার চেষ্টা করো।
শুরু করলাম নতুন পথচলা।অসুস্থতা থেকেই গেল কিন্তু মন থেকে মেনে নিলাম আমি সুস্থ।
পড়াশোনা শুরু করলাম আবার।কোন এক অজানা ব্যক্তির মাধ্যমে সন্ধান পাই এই প্লাটফর্মের।শুরু হয় আরেক পথচলা।
রেজিষ্ট্রেশন, মেসেঞ্জার টিম,স্যারের সেশন ও কিছু লোকের জীবনের গল্প শুনে নিজের সব কস্ট ভুলে যেতে শুরু করলাম।
কেরানীগঞ্জ জোনটা আমার কাছে বিশাল একটা পাওয়া।সকলের সাথে কথা বললে মন এমনিতেই ভাল থাকে সবসময়।জোনের প্রতিটা সদস্যই আন্তরিক ও ভাল মনের মানুষ।
প্লাটফর্মের সবার কাজ করা দেখে আমার নিজেরও ইচ্ছে হয় কিছু করার।কিন্তু কি নিয়ে করবো সেটাই ঠিক করতে পারছিলাম না।
ভাবলাম এমন কিছু নিয়ে কাজ করবো যেটাতে লস হওয়ার সম্ভাবনা নেই।সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে করা হয়।আর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য আল্লাহর আমল ছারা আর কিছুই হতে পারেনা।
তাইতো কোরআন শরীফ, জায়নামাজ ও তসবিহ দিয়ে তৈরি করে ফেললাম আমার "ইসলামিক গিফট প্যাকেজ"। যেটাতে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাসের সাথে কাজ করতে পারছি ইনশাআল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ ভাল সারাও পেয়েছি এই প্যাকেজটা থেকে।এটাতেই আরো বেশী ভাললাগা আমার।
জানিনা কখনো সুস্থ হবো কিনা,জানিনা কখনো ভাত খেতে পারবো কিনা,বা জানিনা আর কতদিন বেচে থাকবো।তবে যতদিনই আছি ততদিনই ভাল থাকার প্রচেস্টা চলবে আমার।
আমি এমন কিছু করে যেতে চাই যাতে আমি না থাকাকালিন ও আমার কথা সকলের মনে থাকে।সোনিয়া নামের একটা মেয়ে ছিলো সকলের হৃদয়ে যেন গাথা থাকে এটা।
কখনো কোরআন শরীফ জায়নামাজ তসবিহ একত্রিত দেখলেই যেন বলতে পারে, ইস,সোনিয়া সালমান নামে একটা মেয়ে ছিলো যে এগুলো দিয়ে একটা গিফট প্যাকেজ তৈরী করেছিলো।
সোনিয়া নামটা কখনো শুনলেই যেন আমার কথা সকলের মনে পরে।
জানিনা কতজনের কাছে আমি পরিচিত।তবে একজন ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করতে পারবো আমি ইনশাআল্লাহ।
সকলে দোয়া করবেন আমার জন্য। আমি
কাজ করছি " ইসলামিক গিফট প্যাকেজ"ও Luttow currier নিয়ে।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৬২
Date:- ২৯/০৬/২০২১
সকলের শুভকামনায়
সোনিয়া সালমান
ব্যাচ নংঃ১৩
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৫৭২১৪
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
কেরানীগঞ্জ জোন
নবাবগঞ্জ ঢাকা