এক মায়ের স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্প বাবা হারা এক মেয়ের জীবন যুদ্ধ।
এক মায়ের স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্প
বাবা হারা এক মেয়ের জীবন যুদ্ধ।
২০০৬ সালে ২৫শে ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু,,,
শুরু হয় আমার জীবনে নতুন করে যুদ্ধ, যে যুদ্ধে আমি পরাজিত হয়নি,বরং জীবনের মানে বুঝেছি।
বাবার মৃত্যুর পর মা ভেঙে পরেন, ভাই নিজের দ্বায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেরান,কারণে অকারনে আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন,আমার সমস্ত বই বিক্রি করে দেন,,,বাবার মৃত্যুতে আমি ও ভেঙে পরি,, কি করবো বুঝতে পারছিলাম না,,১ মাস পর আমি পাশের বাড়ি ভাবির সাথে বসে গল্প করছিলাম,এমন সময় একটা ছেলে আসে অই বাড়িতে
ভাবির বাপের বাড়ি এলাকায় ছেলেটার বাড়ি, আমি চিনিনা
ছেলে টি ভাবির কাছে আমার সম্পর্কে জানতে চাই, আমার পাশে বসে,, আমি তখন চলে আসবো ঠিক সেই সময় আমার ভাই সব দেখেন, আমাকে ভুল বুঝেন,এমনকি কোন কিছু না জেনেই অনেক মারধর করেন।
পরে মা ভাবির কাছে সব শুনে ভাইয়ের সাথে রাগারাগি করেন।
সেই থেকে ভাই ও আমার উপর আরো বেশি রেগে যান,,,ভাইয়ের যখন মন ভালো থাকতো তখন ই ভাইকে অনুরোধ করতাম আমাকে স্কুলে দেওয়ার জন্য, অনেক অনুরোধ করেছি পায়ে ধরে কেঁদেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি,তার কথা ছিলো একা রোজগার করে এত কিছু চালানো সম্ভব না,, আমার স্বপ্ন ছিল ssc পরিক্ষার পর নার্সের টেনিং করবো, সব স্বপ্ন ভেঙে গেলো,, স্কুল থেকে স্যারেরা আমাকে নেওয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে আসেন শুধু তাই নয় অর্ধেক খরচ ও তারা দিতে চেয়েছিলেন তবু আমার ভাগ্য হয় নি।
ভাইয়ার কাছে কিছু চাইলেই বলতেন কামায় করে নে আমার কাছে টাকা নেই।তখন খুব কষ্ট হতো আর মনে মনে ভাবতাম আমি ও টাকা রোজগার করবো।
বাবার মৃত্যুর ৩ মাস পর একদিন ভাইয়া মাকে বললো সে ভালো কিছু করতে চায়, তার ভবিশ্যতের প্রয়জন আছে, সে কাজ শিখতে চায়। মা ভাইয়াকে বলে ঠিক আছে তোর যা ভালো মনে হয় তুই তাই কর। ভাইয়া মার কাছে টাকা চায় ঢাকা যাওয়ার জন্য,,কিন্তু মার কাছে তখন টাকা ছিলো না, তাই আমাদের একটা ছোট গরু বিক্রি করে টাকা দেন।
ভাইয়া ঢাকা চলে যায়, আমি আর মা আরো অসহায় হয়ে পরি। দিন দিন অভাব বারতেই থাকে এক দিকে মায়ের ঔষধ, আরেক দিকে সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়,,আমার মা ব্রাক থেকে লোন নিয়ে বাড়িতে একটা ঘর দেন সেটা ও ভাইয়ের ইচ্ছে ছিলো।
ভাইয়া ঢাকা গিয়ে একটা কম্পানিতে ওয়াকসপের কাজ শিখতে জয়েন করেন।আমি আর মা বাড়িতে গাভির দুধ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছিলাম, কিন্তু আমাদের অনেক কষ্ট হতো। এভাবেই ৫ মাস কেটে গেলো ঘরে চাল নেই, মায়ের ঔষধ নেই দোকানে অনেক টাকা বাকি, দোকানদার আর সদাই দিতে চাইনা,,
একদিন মা সিদ্ধান্ত নেন কাজে যাবেন,আমি কিছু ই জানিনা, সকাল বেলা মা ঝাকা আর কোদাল হাতে বেরিয়ে যাবে এমন সময় আমাকে বলে আমি যেনো বাড়ির বাইরে না যায় গরু, আর হাস মুরগী দেখে রাখি।
মায়ের হাতে ঝাকা কোদাল দেখে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে,, কারণ ডাক্তার বলেছে মা যেনো রোদে না যায়, এবং ভাড়ি কোন কাজ না করে।
আমি মায়ের থেকে সব কিছু কেরে নিয়ে জানতে চাই কার সাথে কাজে যাবে কেনো কাজে যাবে।
মা তখন বলেন ঘরে চাল নেই দোকানদার বাকি ও দিবেনা, আমি খুব সহজ সরল আর বোকা ছিলাম তাই কিছু বুঝতে পারিনি। কিন্তু মার কথায় সব বুঝতে পারি,আমার বুঝতে আর বাকি নেই কেনো মা কাজে জাবেন। আমি তখন মা কে বলি তোমার যেতে হবে না আমি যাবো এই বলে মায়ের থেকে ঝাকা কোদাল নিয়ে কাজের জন্য বেরিয়ে যেতে চাইলে মা আমার গালে কসে একটা থাপ্পড় মারে।
মা চান না আমি এসব কাজ করি, মায়ের থাপ্পড় খেয়ে আমি আরো শক্ত হয় আর মা কে বুঝায়, বাবা নেই মার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে, আমি আর মা সেদিন অনেক কেদেছিলাম, অবশেষে অনেক বুঝিয়ে মাকে রাজি করায়, কিন্তু দুরভাগ্য আমাকে কাজ দেন না সবাই বলে আমি ছোট পারবোনা।
আমাদের পাশের বাড়ির এক আপা আমাকে বুজিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।শুন্য হাতে একবুক কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।সারাদিন ঘরে শুয়ে চোখের পানি ফেলি আর ভাবি কি করা যায়,,অবশেষে আরেক আপার সাহায্য নিয়ে একটা টেক্সটাইল মিলে কাজ নেই,,
শুরু হয় আমার কর্ম জীবন, মা খুব কষ্ট পাচ্ছিল আর প্রতিদিন ই বাধা দিতো।কিন্তু আমার নিজের কাছে শপথ করি যা কিছু হয়ে যাক মা কে আর কাজ করতে দিবোনা।কথায় আছে যার কপাল পুরা সে যেখানেই যাবে কপাল সাথেই যাবে, আমার ও সেম অবস্থা, সপ্তাখানেক বাদেই কিছু বাঝে ছেলেদের নজর পরে, তারা পথে মাঝে দারিয়ে প্রতিদিন ইভিজিটিং করতে থাকে, আর আমি নির্লজ্জের মতো মুখ বুঝে সয়ে যায়,প্রতিবাদ করিনা,,
১ মাস কেটে গেলো এখন বেতন পাওয়ার পালা, অনেক আশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এই এক মাসে দুপুরে না খেয়ে ডিউটি করি রাতে ও পেট ভরে খেতে পারিনি। মনে মনে ভাবি বেতন পেয়ে মার জন্য কিছু ঔষধ নিবো আর মাছ কিনবো,
ডিউটি সময় শেষ সবার সাথে বেতন আনতে স্যারের রুমে যায় কিন্তু বেতন পাই না, স্যার বলেন আগামী মাসে দুই মাসের টাকা একসাথে দিবেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসি, বাড়িতে এসে মা কে কি বলবো বুঝতে পারিনা, মনে মনে অনেক কিছু ভাবি,কোন ভাবনায় যেনো কাজ করে না। অবশেষে চোখের পানি মুছে বুকে সাহস নিয়ে মা কে সব বলি, মা আর কি করবেন ১থেকে দের কেজি দুধ বিক্রি করে যা পায় তাই দিয়ে কোন মতে দিন চলতে থাকে, মায়ের ঔষধ না থাকায় মা ও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন আর আমার চিন্তা যেনো বেড়েই চলেছে,,হঠাৎ ভাইয়ার ফোন আসে, ভাইয়া যাওয়া আগে একটা মোবাইল কিনে দিয়ে যান, কিন্তু ওনার কাছে কোন ফোন না থাকায় যোগাযোগ করতে পারিনা,,,ভাইয়ার ফোন পেয়ে একটু আশার আলো দেখলাম, ভাইয়া ফোন করে জানতে পারলেন আমি কাজ করছি, প্রথমে আমার উপর রেগে যান পরে আমি বুঝিয়ে বলি, তিনি আর রাগ করেন না, ১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন পোস্ট অফিসে সেটা জানাতেই ফোন দেন,, আলহামদুলিল্লাহ টাকা পেয়ে আমার চিন্তা কমে গেলো মায়ের জন্য ৩শ টাকার ঔষধ আর দুই শো টাকার বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়,, মা তো অনেক খুসি কত দিন পর মাছ খেতে পারবেন। বাকি ৫০০৳ মায়ের হাতে দিয়ে দোকানে টাকা দিতে বলি, মা ও সেদিন অনেক খুসি হয় আর বলে আজ কে আমরা চাউল আনবো খুদের ভাত ভালো লাগেনা,, আমি ও মিষ্টি হেসে বলি হ মা অনেক দিন ধরে চাউল দিয়ে ভাত রান্দোনা আজ কে চাউল আনবা।,
আলহামদুলিল্লাহ দোকান দার কে ৫০০৳ দিয়ে ১০ কেজি চাউল নিয়ে আসেন, এভাবেই কেটে যায় দুই মাস বেতন দেয় না, আরো একমাস কেটে গেলো ভাই ১ হাজার করে টাকা দেয় কিছু দোকানে দেই কিছু টাকার বাজার করি।
চাকরির বয়স ৪ মাস সামনে রমজান মাস এবার বেতন পেলাম তাও মাত্র ১২ শ টাকা,,
ভাইয়া ১ হাজার টাকা মোট ২২ শ টাকা, খুব খুসি হয়েছিলাম সেদিন। কষ্টের পরে যেনো একটু সুখের দেখা পেলাম, সেদিন মাকে বলেছিলাম বড় একটা মাছ কিনতে,, আসলে মাসে একবার ই মাছ কেনা হতো তাই
বড় মাছ কিনতে বলেছিলাম,, রমজান মাস এসে গেলো আমার ও আনন্দ বেশি লাগলো।মনে মনে ভাবলাম একটা নতুন ড্রেস নিবো মায়ের জন্য একটা নতুন কাপড় কিনবো, কতদিন মা নতুন কাপড় পরে না,, মা কে বললাম এখন তো রমজান মাস ইফতারের জন্য বাজার করবে না? মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু ক্ষন পর বলে না ইফতারের বাজার করবো না দুই শো টাকা রাখছি তোর গাড়ি ভারা এখন থেকে গাড়িতে চরে যাবি প্রতিদিন এত দূর হেটে যেতে হবে না, আমি আর কিছু বলিনা, মা প্রতিদিন ১০ টাকা দিতো আমি সকালে গাড়িতে যেতাম বিকেলে হেটে আসতাম, আর বাকি ৫ টাকা দিয়ে ইফতার কিনতাম, মা রাগারাগি করতো আমি কানে নিতাম না,, এভাবেই ঈদ এসে গেলো আমাদের বাড়ির সামনে অনেক কলা গাছ ছিলো মা কিছু কলা বিক্রি করে দেন। ৪০০৳ পাই কলা বিক্রি করে ১২০০৳ পাই বেতন মোট ১৬০০৳
আমি মায়ের থেকে ৮০০৳ চেয়ে নেই ভাই টাকা দেয় না কারণ সে বাড়িতে আসবে,,৪০০৳ দিয়ে মায়ের জন্য কাপড় কিনি আর ৪০০৳ আমার নিজের জন্য একটা থ্রি পিচ কিনি, ভাইয়া ঢাকা থেকে আমার জন্য কিছু কসমেটিক আর এক জোরা স্যান্ডেল নিয়ে আসেন আর মায়ের জন্য কিছু না কিনে ১০০০ ৳ দেন। গরীবের ঈদ মা বাড়ির মুরগী জবাই করেন আর বাজার থেকে পোলার চাউল সহ সেমাই কিনে আনেন,অনেক দিনপর মাংস পোলাও পেয়ে সবাই খুব খুসিতেই ঈদ পালন হলো,
ভাইয়া আবার ঢাকা চলে গেলেন
আমি ও আমার কাজ করতে শুরু করলাম, এবার শুরু হলো মিলের ভিতর ঝামেলা, সবাই রেগে গেলো, প্রতিটি শ্রমিকের বেতন বাকি আমার ও ৩ মাসের বেতন বাকি,, সবাই কাজ বন্ধ করে দিলো সময় মত এসে বসে থাকতো কেউ কাজ করতো না, আমি ও তাই করতাম,একদিন রাতে বাড়ি ফিরছি হেটে হেটে,, আমাদের বাড়ি থেকে ১ মাইল দূরে মিল ছিলো, আমার সাথে আরো একটি মেয়ে ছিলো দুজনেই কথা বলতে বলতে হেটে হেটেই বাড়ি ফিরছি, এমন সময়
৪ জন বখাটে ছেলে আমাদের ঘিরে ধরে, এবং তাদের মাঝ থেকে একটা ছেলে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়, আমি ভয়ে কিছু না বলে চুপ চাপ তার সব কথা শুনি, কিছু ক্ষন চুপ থেকে
তাকে বলি আমাকে সময় দিতে,
এভাবেই প্রতিদিন এরিয়ে চলি, কিছুদিন পর ছেলে টা একটা চিরকুট লিখেন,, সেটা পরে বুঝতে বাকি রইলনা সে খুব খারাপ ছেলে আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করবো,,,ভয়ে ভয়ে প্রতিদিন কাজে যেতাম তবে রাতে আর হেটে বাড়ি ফিরতাম না,, মাস শেষে বেতন নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেই মাকে সব খুলে বলি,,
আবার বেকার হয়ে গেলা কাজের জন্য এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলাম, কথায় আছে বিপদ যখন আসে সব দিক দিয়েই আসে, ভাইয়া কাজ করতে গিয়ে হাত কেটে যায়,, জন্ডিসে আক্রান্ত হয় প্রচুর জ্বর আসে ১৫ দিন কম্পানির মালিক চিকিৎসা করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়,,শুরু হয় আবার সেই অভাব, ভাইয়ার জন্য ঔষধ মায়ের জন্য ঔষধ খাবার কি করবো ভেবেই পাচ্ছিনা,,অবশেষে ইট ভাটায় ডেলির কাজ করি,, মানে ভাঙ্গা ইট এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া,, ৫ দিন কাজ করার পর আমায় মাঝায় ঘা হয়ে যায়,, আমি আর ঝাকা নিতে পারিনা,, আল্লাহ এক অশেস রহমত আমার সাথে একটা আপা কাজ করতেন তিনি আমাকে সাহায্য করেন,, তিনি সবাই কে বলে দিলেন যখন ঝাকা টানার পালা আমার আসবে তখন উনি টেনে দিবেন আমি শুধু ভরে দেবো,এভাবেই ১ মাস কাজ করি প্রতিদিন ৪০৳ করে দিতেন আমাকে, বেশ ভালো ই যাচ্ছিলো আমাদের দিন৷ ভাইয়া সুস্থ হলো, মা ও সুস্থ হতে লাগলো,, আমি ও ইট ভাটার কাজ ছেরে দিয়ে জুট মিলে কাজ নিলাম, সেখানে ৮ ঘন্টা ডিউটি করতে হতো, তবে ৭ দিন দিনে আবার ৭ দিন রাতে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো পরে আর কষ্ট হতো না,, ভাইয়ার হাত ভাল হতে দুই মাস লেগে যায়,,, সুস্থ হয়ে সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর ওখানে যাবেন না, রাজমিস্ত্রির কাজ করবেন,কারন মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ভাইয়া অই কাজ ই করতো। আসলে আমার ভাই আমার থেকে মাত্র ৫ বছরের বড় ওর বসয় তখন ২০
ভাইয়া জন্য আমার খুব কষ্ট হতো কারণ ও তো মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই কাজ করে।
ভাইয়া রাজমিস্ত্রীর কাছের জন্য ঢাকা চলে গেলেন,আর বলে গেলেন আমাদের রিন শোধ হলেই আমাকে আর কাজ করতে দিবেন না,,,, আমাকে আবার স্কুলে ভর্তি করে দেবেন।
কিন্তু ঢাকা গিয়ে ভাইয়া অনেক বদলে গেলেন ঠিক মত টাকা দিতেন না আমাদের সাথে যোগাযোগ ও করতেন না, আমি মিলে ডিউটি শেষ করে বেশি টাকার লোভে অভার টাইম ডিউটি করতাম,,দিন দিন টাকার প্রতি আমার নেশা এসে গেলো তাই সপ্তাহে ৫ দিন অভার ডিউটি করতাম,, এভাবে ই কেটে গেলো ৭ মাস,, আমি সব রিন শোধ করলাম, সংসারে অভাব ও কমে গেলো আমাদের আরো একটা গরু হলো,,
এবার ভাই বাড়ি ফিরে এসে সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে দেবেন, পাত্র পক্ষ দেখতে আসলো,,, কিন্তু বিয়ে হলো না, কারণ আমার ভাই যৌতুকের টাকা দিতে রাজি হয় না,,, এভাবেই প্রায় ৮/১০ জন পাত্র পক্ষ দেখে আর যৌতুক চাইতে থাকে,,তারা বলে আমি কালো তার উপর মিলে কাজ করি যৌতুক ছাড়া কে বিয়ে করবে আমাকে,,আমার ভাইয়ার প্রতি খুব রাগ হয়, একদিন আমি বলেই দেই, আমাকে বিয়ে দিতে হবে না আমি বিয়ে করবো না, সেই দিন থেকে ভাই আমার উপর রাগ,, তার পর থেকে আমার বিয়ে নিয়ে আর কথা বলে না,,, আমি আবার মিলে কাজ শুরু করি,,, আমার বেতন বেরে যায়, আমি হেলপার থেকে মেশিন ম্যান হই,,,, দুঃখের বিষয় আমাকে প্রতিদিন কোন না কোন ছেলে ইভিজিটিং শুনতে হয়,, ২০০৮ সাল একদিন ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরছি হঠাৎ একটা ছেলে আমার হাত টেনে ধরে আমাকে প্রপোজ করে,, আমি কোন কিছু চিন্তা না করে ছেলে টিকে ফিরিয়ে দেই,,তারপর থেকে সে নিয়মিত আমার পিছু নিতো আর একটা কথাই বলতো ভালবাসি,, আর আমার খুব বিরক্ত লাগতো,একদিন মাকে সব খুলে বললাম, মা ছেলে টিকে ডেকে এনে বললো তার বাবা মাকে আমাদের বাড়িতে বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে আসতে,, ছেলে টি তারপর থেকে আমার পিছু ছেরে দিলো, আমি নিশ্চিত ভাবে কাজ করতে থাকলাম।
আমার ৩০ হাজার টাকা জমা হলো সংসারে উন্নতি হলো
মা সুস্থ হয়ে গেলেন,,, কিন্তু ভাইয়া খারাপ হয়ে গেলেন, আমাদের থেকে দূরে সরে গেলেন বাড়িতে ঠিকমত থাকতেন না কোন টাকা ও দিতোনা,, মা ও আমার উপর ভরসা করে রইলেন,, আমি হলাম মার সব কিছু,, শুরু হলো গ্রামের মানুষের মাথা ব্যাথা,, মায়ের কাছে সারাক্ষণ পিন দিতে শুরু করলো আমার বিষয়ে কিছু লোক তো আমার বিয়ে দিতে উঠে পরে লেগে গেলো, মা ও বিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পরলে, কিন্তু আমি একটা কথাই মা কে বলি আমি তাকেই বিয়ে করবো যে আমার মনের মত হবে, এক সময় মা রেগে গেলেন আমার অনুমতি ছাড়া বিয়ে ঠিক করলেন।নিরুপায় হয়ে বিয়ের জন্য রাজি হলাম ২০০৯ সালে নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে কাবিন হলো
কথা ছিলো কিছু দিন পর তুলে নিবেন,,ছেলে সাথে আমার কথা হতো মাঝে মাঝে, আমার ও ভালবাসা জন্ম নিলো তার প্রতি,,
কারণ সে যৌতুক ছাড়া ই আমাকে বিয়ে করবে।কিন্তু বিয়ে হলোনা আমার ২ মাস পর যখন আমাকে তুলে নেওয়ার কথা বলা হলো তখন তারা ৪০ হাজার টাকা ১ ভরি স্বর্ন দাবি করলো। মা টাকা দিতে রাজি হলেন কিন্তু স্বর্ন দিতে রাজি হলেন না কারণ মায়ের কাছে টাকা ছিলো না গয়না কেনার,, কিন্তু আমার কানে দুল ছিলো পায়ের নুপুর ছিলো, তবুও তারা মানলো না, আমি এসব জানতাম না, কিন্তু যখন জানতে পারি ছেলে কে ডেকে অনেক কিছু বলি, এবং বলি যে কোন লোভি ছেলে আমার জীবন সাথী হতে পারেনা,, কাবিন তুলে নেওয়া হলো,, ২০১০ সাল আমি মিল পরিবর্তন করে করিমজুট মিলে চাকরি নেই।সেখান সর্ব প্রথম মহিলা শ্রমিক নিয়গ দেয় ২০১০ সালে,, বেতন ও অনেক বেশি।
তাই আগের জায়গা থেকে ওখানে যাই।সবার জীবনে প্রেম আসে, আমার ও আসলো তবে ভুল মানুষের প্রেমে পরলাম,,ওখানে চাকরি নিতেই দুই টা ছেলে প্রপোজ করলো,দুজন ই খুব সুন্দর, কিন্তু ভাল লাগলো একজন কে,
আমি আমার জীবনের সব কথা খুলে বললাম তাকে, আমাদের মাঝে ভাল সম্পর্ক গরে উঠলো,,
প্রতিদিন ফোনে কথা হতো মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতাম আসে পাশে ই। মাত্র দুই মাস তারপর ই জানতে পারলাম আমি ছাড়া আরো দুইটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক শুধু তাই নয় একটি মেয়ে পেগনেট।আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো এদিকে আমাদের সম্পর্কের কথা ভাইয়ার কানে পৌঁছে যায়,আমাকে খুব মারধর করে, এমন কি বাড়ি থেকে বের করে দেয়,মা বাধা দিলে মার সাথে ও খুব খারাপ ব্যাবহার করে। আমি বুঝতে পারি ভাইয়া কেনো আমার সাথে এমন ব্যবহার করে,, ভাইয়াকে ভুল বুঝানো হয়,, আমি মা কে বুঝিয়ে বলে একটা বাসা ভারা নিয়ে চলে যায় ভাড়া বাড়ি,,
এক দিকে প্রেমিকের প্রতারণা অন্য দিকে ভাইয়ার ভুল বুঝা, তবুও কাজ বন্ধ করিনি, ডিউটি শেষ করে বাসায় এসে দরজা লাগিয়ে কত দিন যে কেদেছি আমি ছাড়া কেউ জানেনা,, কষ্ট আমার পিছু ছারবে না বুঝতে বাকি রইল না,প্রতি শুক্রবার মা এসে দেখে যেত আর রান্না করে খাওয়া তো, আমি আগের মত সব টাকা মা কেই দিতাম শুধু বাজারের টাকা রাখতাম, ঘর ভাড়া মা এসে দিয়ে যেতেন এমনকি বাজার ও মা করে দিতেন।
অবশেষে দেখা পেলাম আমার জীবন সাথী। যিনি বর্তমানে আমার স্বামী, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ২ মাস পর তিনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন,, তিনি সেই ছেলে টি প্রথমে যে দুজন প্রপোজ করেছিলো এবং যাকে অবহেলা করেছিলাম তিনি সেই ছেলে,।আমার সব কিছু যেনে তিনি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হন শুধু তাই নয় আমার সব সর্ত মেনে নেন।আমি তাকে বিশ্বাস করতে পারিনি প্রথমে কিন্তু তার ভালবাসা এত টায় প্রবিত্র আর এতটায় মজমুদ ছিলো যে আমার ঘৃণা কে সে ভালবাসায় পরিনিত করে।
২০১০ সালে আগষ্ট মাসে কত তারিখ আমার মনে নেই, পরিবারের অনুমতি ছাড়া আমরা কোটে গিয়ে বিয়ে করি।বিয়ের আগে আমার সর্ত থাকে আমি বিয়ের পর ও চাকরি করবো এবং অর্ধেক টাকা মায়ের হাতে দিবো। শুধু তাই নয়
আমার মা যতদিন বেচে থাকবে মায়ের সব খরচ আমি বহন করবো,এবং আমি কোন দিন তার মা বাবার সাথে খারাপ ব্যাবহার করবোনা সে ও আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করবো না,,
জীবনে যত ঝর আসুক কেউ কাউকে ছেরে যাবো না, বাচতে হলে একসাথে বাঁচবো মরতে হলে এক সাথে ই মরবো,এভাবেই আমরা একে অপরের সাথে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে বিয়ে করি,
বিয়ের পর আমার শাশুড়ী আমাকে মেনে নিতে পারলেন না কিন্তু আমার শশুর আমাকে মেনে নেন, আমি নতুন বাবা পেলাম, কিন্তু মা পেলাম না,
আমার শাশুড়ী সব সময় খারাপ ব্যাবহার করতেন, আমার স্বামী আমার শশুর প্রতিবাদ করতেন তাই আমার খারাপ লাগতো না।
আমি আমার কথা মত অর্ধেক টাকা মা কে দিতাম অর্ধেক টাকা স্বামীর হাতে দিতাম, আমার ভাই আমার বিয়ে মেনে নিতে পারেন নি, তিনি খুব রাগ হয় আমার উপর, আমার স্বামীর একটায় অপরাধ তিনি আগে বিয়ে করেছিলেন দুইটা বাচ্চা ও আছে, কিন্তু বউ নেই,আমি সব জেনেই বিয়ে করি আর তাই ভাই আমার উপর খুব রেগে যান,
আমাকে বাড়িতে আসতে দিতেন না, এমনকি মায়ের সাথে দেখা করতে দিতেন না, আমি আর মা চুপি চুপি দেখা করতাম,ভালোই যাচ্ছিল আমার দিন,হঠাৎ আমার শশুর স্টক করে মারা যান,আমার জীবনে আবার অন্ধকার নেমে আসে, শাশুড়ী সারাক্ষণ আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে,, আর স্বামী কে ভুল বুঝাতে থাকে, একসময় বিরক্ত হয়ে আমি চলে আসি বাবার বাড়িতে, স্বামী ও কিছু বলে না, কারণ তিনি ও তার মাকে বুঝাতে পারেন না। আসলে আমার শাশুড়ী আমার চাকরি করা মা কে টাকা দেওয়া মেনে নিতে পারেন না।
কখনো হাসি কখনো কান্না এভাবেই কেটে গেলো ২০১০
২০১১ সালে আমার স্বামীর ঢাকা একটা হসপিটালের চাকরি হয়, তিনি চলে যান ঢাকা আমি ভাড়া বাড়িতে একা হয়ে গেলাম, ঢাকা গিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন,
৩ মাস কোন খোঁজ নেই, আমি পাগলের মতো হয়ে যায়, অনেক চেষ্টা করি যোগাযোগ করতে কিন্তু সম্ভব হয় না, কিছু মানুষ বলতে থাকে তিনি আগের বউ নিয়ে ঢাকা নতুন সংসার পেতেছে, এসব শুনে আমি পাগল হয়ে যায়, কষ্ট আমাকে ঘিরে ধরে, অসুস্থ হয়ে পরি, মা ভাইকে বুঝিয়ে আমাকে ভাড়া বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে,,আমার অবস্থা দেখে ভাই আর কিছু বলেনা, ৩ মাস পর আলহামদুলিল্লাহ আমার স্বামী ফিরে আসেন, এবং তিনি সব খুলে বলেন,আসলে ভাই যাতে আমাকে মেনে নেয় সে জন্যই তিনি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।আমাকে মেনে নিলেও আমার স্বামী কে মেনে নিতে পারলেন না আমার ভাই।
ভাইয়া এবার তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করলেন, শুরু হলো আবার অশান্তি, ভাবি আসতেই আবার আমাদের মাঝে অশান্তি শুরু হলো।
আমি তখন পেগনেট অনেক অসুস্থ, প্রতিদিন সংসারের সব কাজ মা একা করতেন ভাবি কোন কান করবেন না।
আমার খুব খারাপ লাগতো তাই আমি ও মায়ের কাজে হাত লাগিয়ে সাহায্য করতাম, একদিন মা বাজার করতে গিয়ে একসিডেন্ট করেন।মায়ের মাথায় আঘাত খান পায়ে ব্যাথা পায়, আরও অনেক সমস্যা হয়। মাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। আমি অসুস্থ মা ও অসুস্থ তাই সংসারের কাজ ভাবিকে করতে বলা হয়, কিন্তু ভাবি নিজের কাজ করতো আমাদের কোন কাজ করতো না এমন কি ঘর ঝাড়ু দিতে বললে শুধু নিজের রুম।ঝাড়ু দিতো
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না, এক দিন ভাই কে সব বললাম, ভাই জানতে চাইলে ভাবি মিথ্যা কথা বানিয়ে বলে, শুধু তাই নয় প্রতিদিন আমার আর মায়ের নামে বদনাম করতে থাকে,দুই মাস পর ভিন্ন হয়ে যায়,মা আমার মাঝেই থাকেন,
আলাদা করে ঘর তুলি বাড়ি ভাগাভাগি করে দেয় গ্রামের লোকেরা,,, আমার জমানো টাকা সব খরচ হয়ে যায়, আমার স্বামী যা দেয় তা দিয়ে কোন রকম দিন চলতে থাকে আমি আর চাকরি করতে পারি না
একদিন আমি বাজার থেকে ফিরছি আর ফোনে কথা বলতেছিলাম আমার স্বামীর সাথে, আমি অটোরিকশায় ছিলাম, একটা বাস এসে পিছন থেকে অটো ধাক্কা লাগে আমি সহ সবাই ছিটকে পরে যায়, আমার মাথা কেটে যায় বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পাই,ডাক্তার আমাকে ব্যান্ডিস করে দেন কিন্তু ঔষধ দেন না কারণ আমি পেগনেট,আমার স্বামী খবর পেয়ে ছুটি না নিয়েই চলে আসেন, যার ফলে চাকরি চলে যায়,,,দুজনেই বেকার, আবার শুরু হয় অভাব ২০১২ সালে ১ লা জানুয়ারি আমার কোল জুরে আসে আমার বড় ছেলে। অভাবের সংসারে ভালোই কাটছিলো আমার জীবন, কিন্তু দিন দিন আবার অভাব বেড়ে যায় আবার রিন হতে থাকি। ২০১৩ সালে সংসারে অভাব দূর করতে দের বছরের ছেলে রেখে পারি জমায় লেবানন, ৩ বছর ৩ মাস প্রবাশ জীবন কাটিয়ে দেশে আসি, ৬ মাস দেশে থেকে আবার চলে যায় সৌদি আরব সে খানে ১ বছর কাটিয়ে অসুস্থ হয়ে ফিরে আসি বাংলার বুকে।
প্রবাশে থেকে যে টাকা আমি দেশে পাঠাই, সে টাকা আমার স্বামী খরচ করতেন না, তিনি মিলে কাজ করতেন। আর তার মায়ের কাছে থাকতেন, মাঝে মাঝে এসে আমার ছেলে কে কিছু খরচ দিয়ে যেতেন, দু এক রাত ছেলের সাথে কাটাতেন। মা অনেক হিসাবি মানুষ
তাই অনেক হিসেব করে চলতেন। আমি লেবানন থেকে আসার আগেই বাড়িতে বড় একটা ঘর দেন, বিদ্যুৎ ছিলো না, বিদুৎ আনেন,ঘর সাজানো সব কিছু কিনে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলে।।
দেশে এসে এসব দেখে খুব আনন্দ হচ্ছিল আমার
তবে আমার ৬ মাস দেশে থাকার কারণ মা আবার অসুস্থ হয়ে যান ৫০ হাজার টাকা খরচ করে মাকে সুস্থ করে তবেই সৌদি যাই আমি।
দেশে এসে ৩ মাস পর স্বামী কে পাঠিয়ে দেই মালদ্বীপ, ২০১৯সালে আমি আবার ও ছেলে সন্তানের মা হই,
খুব অসুস্থ হয়ে পরি আমার বেষ্ট অপরেশন করার হয়
তার পর থেকে প্রতি মাসেই আমাকে ব্লাড নিতে হতো
২০২০ সাল আমার জীবন বিষের মতই কেটেছে।৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু আমার ক্যাশ ছিলো মাত্র দের লাখ বাকি টাকা রিন হয়ে চিকিৎসা নেই।
আমার স্বামী কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ মাস ঘর বন্ধি থাকেন সেখান থেকেই আমার উদ্যোগ তা জীবন শুরু।
আমার উদ্যোগ তা জীবনের গল্প আমি আমার শোনাবো কোন একদিন। আজ এ পর্যন্ত
সবাই দোয়া করবেন ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৬৫
Date:- ২/০৭/২০২১
আমি রিতা আক্তারী
কমিনিউটি ভলেন্টিয়ার নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন
ব্যাচ ১৩
রেজিঃ ৬০৯৭৮
জেলা ফরিদপুর