এবার সংগ্রাম শুরু হলো আমার মায়ের
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আজ আমি আপনাদের আমার নিজের ঘটনাবহুল জীবনের সামান্য গল্প শোনাবো ইনশা আল্লাহ্।
আমি একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। আমরা ৭ ভাই ও ২ বোন।ভাইদের মধ্যে আমি তৃতীয়, আমার বড়জন বোন,বাকীরা আমার ছোট।
##আমার বাবা একজন আলেম ছিলেন এবং ছিলেন ভাল ব্যাবসায়ী।আর সমাজ সেবাতেও ছিলেন গ্রামের সবার ছেয়ে এগিয়ে।বাবা শহরে কাপড়ের দোকান করতেন। বাড়ি থেকে প্রায় ৯ কিলো পথ ফজরের নামাজের পর হেটে যেতেন এবং রাতে কখন আসতেন আমি জানতাম না,কারণ বাবা যখন যেতেন আমি ঘুমে এবং যখন আসতেন তখনও আমি ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন
থাকতাম। আমার বাবা খুবই ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। যখন বিচার আচার করতেন সারা সমাজের মানুষ যদি একদিকে থাকতেন আর বাবা একাই হকের পক্ষে ফয়সালা দিতেন।বাবা সর্বদা আমাদেরকে হক কথা বলা ও হকের পক্ষে থাকার আদেশ দিতেন।আর তিনি ছিলেন খুবই আমানতদার, এলাকার প্রায় মানুষ বাবার কাছে তাদের টাকা পয়সা আমানত রাখতেন।বাবা বলতেন তুমি যদি আল্লাহর হক নষ্ট কর তবে তিনি চাইলে মাফ করবেন অথবা শাস্তি দিবেন,কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করলে সেটা আল্লাহ মাফ করবেন না।আর সরকারী ১টাকাও যদি আত্বসাত কর তবে দেশের সকল মানুষের কাছে হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে।
বাবার কথা লিখতে গেলে লিখে শেষ করা যাবে না।এক কথায় তিনি ছিলেন একজন পূর্নাঙ্গ ও আদর্শ বাবা।
১৯৯৫ সালে বাবা হজ্ব করে ব্যাবসা ছেড়ে দেন।বড় ভাই তখন বিদেশে, মেঝো ভাই সংসার দেখাশোনা করেন। অামি ছাত্র হিসেবে ভালই ছিলাম জিবনে খুব কমই রোল ১ ছাড়া ২ হয়েছে। মেঝো ভাই নানান রকম কৃষি কাজ করতেন সাথে আমাকেও মাঠে নিয়ে যেতেন। একদিন বাবা আমাকে বললেন তুই বাড়ি থাকলে পড়া - লেখা হবে না তুই লজিং এ চলে যা।বাবার কথায় এত ছোট বয়সেই আমি লজিং এ চলে গেলাম।
আমি ক্লাস সেভেনে আমার লজিং ছাত্র ক্লাস ফোরে, ছাত্রের বাবা বললেন এত ছোট মাষ্টার পড়াতে পারবেতো? আমি বললাম পারবো। লজিং থেকে অামি ১ম বিভাগে এস এস সি পাশ করি।১৯৯৮ সালে হঠাৎ আমার বাবা মারা যান।
## এবার সংগ্রাম শুরু হলো আমার মায়ের। মা অতি ফরহেজগার ছিলেন।আমি আমার জিবনে এত স্বামী ভক্ত এবং সন্তানদের প্রতি এত স্নেহময়ী ও মানুষের প্রতি দয়ালু মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি।অনেক সময় নিজের খাবার না খেয়ে গরীব মানুষকে দিয়ে দিতেন।
##বাবার মৃত্যুর পর এতবড় সংসার মেনেজ করা মায়ের পক্ষে কষ্টকর হয়ে উঠল।বড় ভাই সংসারের তেমন কেয়ার করতেন না।আমি চিন্তা করলাম আমি যদি কিছু না করি তবে ছোটরা লেখা পড়া করবে কিভাবে।সংসারের চিন্তা করতে করতে একসময় আমি মেন্টালি ডিজঅর্ডার হয়ে গেলাম।প্রায় এক ববছর পর আল্লাহর রহমতে আমি ভাল হই।এর মধ্যে আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাইটা মামার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করছে বাকীরা বাড়িতে পড়ছে।
যে চিন্তা সে কাজ বন্ধুদের সাথে গিয়ে সেনাবাহিনীতে পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হলাম এবং ভর্তি হয়ে গেলাম।
সেনাবাহিনীর ট্রেনিং যে কি কষ্টের সেটা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।কষ্ট বেশী হলে ভাবতাম পরিবারের কথা ছোট ভাইবোনদের পড়া লেখার কথা।দীর্ঘ ছয় মাসের অসহনীয় কষ্টের ট্রেনিং শেষ করলাম। আমার খরচের টাকা না রেখে প্রায় পুরো টাকাটাই সংসারে দিয়ে দিতাম। এভাবেই অনেকটা কষ্টেই চলছিল আমাদের সংসার।আমার ভাই ইয়াকুব ইন্জিনিয়ার হয়ে কাতার গেল। ছোট আরো দুজন বিদেশ গেল।সবার ছোট ভাইটি ইন্জিনিয়ার হলো।ছোট বোনটির বিয়ে হয়ে গেল।
##২০১২ সালের কোরবানির ঈদের পুর্বের দিন হঠাৎ আমার মমতাময়ী মা মৃত্যু বরণ করলেন।মা আমাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দেখে যেতে পারেননি।
## দীর্ঘ ২২বছর সামরিক বাহিনীতে চাকুরী করে এখন অবসরে যাচ্ছি। অবসরে যাবার পরে কি করবো ভাবছি। এরই মধ্যে ছোটভাই ইয়াকুব খন্দকারের পরামর্শে এই গ্রুপে রেজিঃ করলাম।বাবা ব্যাবসায়ি হওয়ায় ব্যাবসায়ি হওয়ার একটি বাসনা দীর্ঘ দিন অন্তরে লালন করছিলাম।আল্লাহ্ যেন আমার এ বাসনা পূর্ণ করেন। সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী। আল্লাহ হাফেজ।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৬৫
Date:- ২/০৭/২০২১
আমি ইছহাক খন্দকার।
রেজিঃ নং ২১৫৩৬
ব্যাচ ১১।
জেলা: ফেনী।