এরকম একজন বাবার মেয়ে হতে পেরে।
........... বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম................
গল্পের জীবন নয়,জীবনের গল্প তৈরি করতে চাই।। প্রাণপ্রিয় ভাইবোন, বন্ধু,সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
শুরুতেই মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।এই করোনা পরিস্থিতিতে আমাকে ভালো রেখেছেন তারপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সবার প্রিয় স্যার জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি।
যিনি আমাদের সবার প্রিয় স্যার। প্রিয় আইডল। সুদক্ষ মানুষ তৈরি করার কারিগর। সেই সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের মডারেটর এবং এডমিন প্যানেলের প্রতি।
তারসাথে আমার ছোট একটা পেইজ Jahan Fashion এর পক্ষ থেকে সবাইকে প্রীতি-শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করছি।
আমাদের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা শব্দ হচ্ছে সফলতা।এই সফলতা নামের সোনার হরিণ অর্জন করতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। শেষ হাসি তারাই হাসে যারা ধৈর্য্যের সাথে কঠোর পরিশ্রম করে এবং সততার সাথে লেগে থাকে।
.......আজ আমি আমার নিজের গল্প শেয়ার করতে চাই। আমার ছোটবেলা থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প.....
আমি পটুয়াখালী জেলার মেয়ে।
আমার বাবার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল
থানার নওমালা গ্রামে।
আমার বাবা ছিলেন একজন চাকরিজীবী।আমার বাবা একজন ভালো মানুষ ছিলেন।একনামে সবাই তাকে চিনতেন।এখনো বাউফলে কাশেম পঞ্চাইতের নাম বললে অধিকাংশ মানুষই তাকে চিনে। এদিক থেকে আমি খুব লাকি এরকম একজন বাবার মেয়ে হতে পেরে। বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। বাবার যখন লিভার ক্যান্সার ধরা পড়লো তখন মনে হলো দুনিয়া অন্ধকারবাবাকে বাচানোর জন্য সকল ধরনের চেষ্টা করা হলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। দুনিয়ার সকল জায়গা থেকে খবর আসে কিন্তু আমার বাবার খবর আর আসে না।
আমার বাবার জানাজা হয় নওমালা আব্দুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজের মাঠে। আলহামদুলিল্লাহ বাবার জানাজায় ৩-৪ হাজার লোক হয়েছিলো। কতটা ভালো মানুষ হলে তার জানাজায় এত লোকের সমাগম হতে পারে। আমার বাবারা ৪ ভাই ছিলেন।বাবা ছিলেন বড়।বাবা মারা যাওয়ার পড়ে একে একে আমার দুই চাচাও মারা যায়...সেই একই মরণঘাতী ক্যান্সারের ছোবলে।
বর্তমানে আমার ছোট চাচা আমাদের মধ্যে আছে।আমার ছোট চাচা আমার মধ্যমনি। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। তিনিও আমাকে ছোটবেলা থেকে অনেক ভালোবেসেছেন।তার ভালোবাসা আমি কখনোই বোঝাতে পারবো না। আল্লাহর দরবারে দোয়া করি যাতে আল্লাহ ওনাকে সবদিক থেকে ভালো রাখে
আমার জীবনে আর একজন প্রিয় মানুষ হচ্ছে আমার খালু।যাকে আমি কাকা বলে ডাকি।আমার বাবা এবং আমার খালু দুই পরিবারের দুইজন। কিন্তু তারা দুইজন প্রায় একইরকম দেখতে ছিলো। তাদের দুইজনের গায়ের রঙও একইরকম ছিলো যেনো মনে হতো তারা দুইজন দুইভাই। আমার খালুর মাঝে আমি আমার বাবাকে খুঁজে পাই।সেও আমাকে তার মেয়ের মতই ভালোবাসে
আমার খালা আর আমি ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছি। খালা আর আমি ছিলাম প্রায় ৬-৭ বছরের ছোট বড়। কিন্তু আমরা দুইজন ছিলাম বান্ধবীর মতো।খালা আমাকে প্রচন্ডরকম আদর করতো আমিও আমার খালাকে অনেক ভালোবাসি
আমার মায়ের বাড়ি ছিলো ঢাকায়।আমার মা ছিলেন ঢাকার স্থানীয় মেয়ে।আমার ছেলেবেলা কেটেছে ঢাকাতে।ঢাকাতে আমাকে আমার নানু বড় করে তুলেছেন। নানু-নানার অনেক আদরের নাতনি এবং মামাদের আদরের ভাগ্নী ছিলাম আমি। এতো আদর আমার মামারা আমাকে করেছে আমি হলফ করে বলতে পারি...যে কোনো ভাগ্নীরা এতো আদর পায় না।।।।
ছয় বছর বয়সে প্রথম স্কুলে ভর্তি হতে গেলাম। নতুন একটা কিন্ডারগার্টেন নাম ছিলো সান-সাইন কিন্ডারগার্টেন স্কুল।স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মেজোমামা আমাকে কাধে নিতো এবং ব্যাগটা হাতে নিতো তারপরে স্কুলে পৌছে দিতো৷ স্কুলে যখন কারও সাথে ঝগড়া লাগতো... তখন দৌড়ে এসে ছোট মামাকে সাথে করে নিয়ে যেতাম। মামা আয় ওরা আমাকে মারছে মামাও সাথে সাথে চলে আসতো। মামা যখন স্কুল থেকে চলে আসতো তখন বান্ধবীরা বলতো....ও একটা মটু আর নিয়েও আসে ওর একটা মটু মামাকে।
ক্লাস থ্রি পর্যন্ত ওই স্কুলে পড়ি৷ তারপরে ভর্তি হই... এ.কে.স্কুল & কলেজে। ক্লাস ৮ পর্যন্ত ওই স্কুলে পড়াশোনা করি। এরমধ্যে ১৯৯৩ সালে আমার নানা মারা যায়।বড়মামা এবং ছোটমামা বিদেশে চলে যায়।
তারপর এইটের পর নাইনে এসে ভর্তি হলাম নিজ জেলা পটুয়াখালীর বাউফল থানায়।বাউফল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে এস.এস.সি পাশ করি।
এস এসসি পাশ করার পরে চলে আসলাম আবার ঢাকায়। সেই আবার ভর্তি হলাম এ.কে.স্কুল এন্ড কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করলাম ২০০০ সালে।
আমার সেজোমামা শহিদুল ইসলাম ওই স্কুলের ই গনিতের সিনিয়র শিক্ষক এবং আমার মামিও ওই স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা। আমার সেজোমামা আমার কাছে একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি।আমি আমার জীবনে যদি কাউকে সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়ে থাকি তাহলে সেটা হচ্ছে উনি।এতো বড় হয়ে গেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত ওনার সামনে দাড়িয়ে কথা বলতে ভয় পাই। দোয়া করি আমার মামার জন্য আল্লাহ যেনো ওনাকে নেক হায়াত দান করে।
২০০২ সালে আমার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ে হয় আমাদের নিজের আত্মীয়র সাথে। আমার বড় ফুপুর সেজো ছেলের সাথে।
আমার হাজব্যান্ড পল্লী বিদ্যুৎ এ চাকরি করে। ২০০২ সাল থেকে আমি শরীয়তপুরে আছি। ২০০৫ সালে আমার বড় মেয়ের জন্ম হয়।
আমি আমার সংসারে সব সময় কিছু না কিছু করে করে যেতাম বাচ্চাদের পড়াতাম মেশিনে সেলাই কাজ করতাম।
তার পর আমি ২০০৭ এসে শরিয়তপুরের একটা লোকাল এনজিও এস.ডি.এস এ চাকরি করি। ২০১৩ সালে আমার আবার একটা কন্যা সন্তান হয়।তখন মেয়েকে রাখবো কার কাছে কাজের লোকের কাছে মেয়েকে রাখবো না। সেই ভেবে চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। চাকরি ছাড়ার পর আবার ঘরে বসে সেলাই কাজ করতাম।
২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে আবার নতুন করে সপ্ন দেখতে শুরু করলাম উদ্যোক্তা হওয়ার।আমাদের শরিয়তপুরের সালমা আপুর সহযোগিতায় আমি এই সুন্দর ফাউন্ডেশনে যুক্ত হলাম।সে আমাকে রেজিষ্ট্রেশন করতে সাহায্য করলো। তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নিজের জমানো বারো হাজার টাকার প্রডাক্ট কিনে আমি আমার বিজনেস শুরু করি।আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আমার পরিবারের কোন সাপোর্ট আমি পাইনি। অনেক আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকেও নানান ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। তো কারে কথাই আমি শুনিনি।
নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনের জয়েন করে দেখতে পেয়েছিলাম সেই সব ভাইবোনদের যারা প্রকৃতপক্ষে ভালো মানুষ।তারা সপ্নের পিছনে ছুটে তাদের অনেক কে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই।এই সুবিশাল পরিবার পেয়ে আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার চেষ্টা করি। এবং ১৩ তম ব্যাচের প্রতিটা সেশন নিজের জীবনে লালন করি।
ধারাবাহিকভাবে আমি নিজ জেলা সাগরকণ্যা পটুয়াখালী এবং বর্তমান অবস্থান শরিয়তপুর জেলার সেশন চর্চা ক্লাস গুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করি। আমাদের শরিয়তপুররের মডারেটর জাহাঙ্গীর খান ভাইয়া।ভাইয়ার প্রতি আমার সালাম এবং অজস্র ভালোবাসা রইল। তারপরে আছে সুপার একটিভ ফজিলাতুন্নেছা রাবেয়া আপু, দুলাল আংকেল, সিরাজ আংকেল, মাঝি সওকত ভাইয়া,সালমা আক্তার আপু, আলি আকবার ভাইয়া এবং আরও সকল ভাই-বোন দের প্রতি আমার অজস্র ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রইল...যাদের সহযোগিতায় আমি এখনে আসতে পেরেছি।
তাছাড়া আমি আরও কৃতজ্ঞতা জানাই আমার নিজ জেলা সাগরকণ্যা পটুয়াখালী জেলার সাথি আক্তার আপু,আলতাফ হোসেন ভাইয়া কে। যারা আমাকে কমিউনিটি ভলান্টিয়ার হওয়ার জন্য লড়তে সাহায্য করছে।
আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার ভিতর অনেক পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারি, নিজের পিছনের ভুলগুলো শুধরে প্রচন্ডভাবে লেগে থাকা শিখে গিয়েছি এবং আমার কাজের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
একজন উদ্যোক্তার জীবনে আলো অন্ধকার উথান-পতন আসবেই।তবে ধৈর্য্যের সাথে সবকিছু মোকাবেলা করতে হবে। হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। ভেজাল দিতে হবে তাছাড়া লাভবান হওয়া যাবে না...এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সফল হতে গেলে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে। কেননা অসৎ লোক সাময়িক ভাবে লাভবান হলেও চূড়ান্তভাবে সফলতা অর্জন করতে পারে না।
নাজমুন নাহার নেলি
ব্যাচঃ ১৩ তম
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ ৫৯৬৮৮
জেলাঃ পটুয়াখালী
বর্তমানে কাজ করছি শরিয়তপুর থেকে......