৬০০তম স্টেটাস অব দ্যা ডে হওয়ার_অনুভুতি প্রকাশ
ছোট বেলায় আমার অনেক জ্বর হয়েছিল তখন মোটামুটি বুঝতেছি বা বুঝার মত বয়স হয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনা শুরু করিনি তখনো।
ত জ্বর বা অসুস্থ হওয়ার কারনে আমার দাদি আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় পেরার পতে আমি আইসক্রিম খাওয়ার জন্য অনেকে কান্না কাটি করি। সাথে আমার দাদাও ছিল।দাদা কোনভাবেই আইসক্রিম খেতে দিবেনা কিন্তু আমার দাদি আমার কান্নাকাটি দেখে আর সহ্য করতে না পেরে আইসক্রিম একটা কিনে দিল। আমিও খেতে লাগলাম। শরীরে তখন প্রচন্ড জ্বর। মিরাক্কেলের বিষয় হচ্ছে প্রচন্ড জ্বরের মধ্যেও আইসক্রিম খেয়েও আমার জ্বর উধাও হয়ে গেল অথচ তখনও ডাক্তারের দেয়া ঔষুধও খায়নি। এই মিরাক্কেলের কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।বাই দ্যা ওয়ে আমার দাদি দাদি এই দুনিয়াতে আর নেই। উনাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ সুবহান ওয়া তায়ালা আমার দাদা দাদি কে জান্নাতের উঁচু মর্যাদা দান করেন।
আমরা ২ ভাই এক বোন। আমি সবার বড়, আমার পরে বোন, তারপরে আমার ছোট ভাই #Mohammadjobaerislam যার কারনেই এই বিশাল প্লাটফর্মের একজন গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। আমার আব্বু একজন ব্যাবসায়ী এবং আমার আম্মু গৃহিনি।
আমার পড়াশোনা শুরু হয় নূরানী মাদ্রাসা থেকে। ছোট থাকতে অনেক দুষ্ট এবং চঞ্চল ছিলাম। পড়ালেখা করতেই চাইতাম না। পিটিয়ে পিটিয়ে আমাকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসত।তখন অনেক শাসন করত মাদ্রাসাতেও ১৯-২০ হলেই শাস্তি,তাই যেতে চাইতাম না। সকাল ৬ টা-১ টা পর্যন্ত ক্লাস চলত, আবার মাগরিবের নামায পড়ে এশা পর্যন্ত ক্লাস চলত।সকালে না গেলে সন্ধ্যায় শাস্তি দিতেন, সন্ধ্যায় না গেলে সকালে শাস্তি দিতেন।মোটামুটি সবসময় একটা চাপের উপর ছিলাম।
ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলাম না, ভালই ছিলাম। পবিত্র কুরআন শরিফের ৩০ থেকে ৪০ টির ও বেশি সূরা মূখস্ত ছিল এবং ১৪৪ টিরও বেশি হাদিস মূখস্ত ছিল বাংলা অনুবাদ সহ (ছোট ছোট হাদিস)।
মাদ্রাসার তৃতীয় জামাত পর্যন্ত শেষ করে প্রাইমারিতে ভর্তি হলাম শুরু হল স্কুল লাইফ।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে প্রাইমারিতে গিয়েও সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতাম কারন সেখানেও ছিল অনেক রাগী একজন শিক্ষক।সবসময় মারধরের মধ্যে রাখেন শিক্ষার্থীদের। কিছু হলেই বেত্রাঘাত করতে দেরি করেন্না।
সেই শিক্ষকের ভয়েও স্কুলে যেতে চাইতাম না। আর স্কুলে না গেলে বাসার মধ্যেও চলতো উত্তম মাধ্যম। একজন ছাত্র এতটা মানসিক চাপ কিভাবে সহ্য করবে।
এখানে শেষ না, বাসায় প্রাইভেটের জন্য টিচার রাখা হল। প্রথম যিনি ছিলেন তিনি অনেক ভাল ছিলেন। আদর করে পড়াতেন। দ্বিতীয় জনও অনেক ভাল ছিলেন। শাস্তি কি জিনিস উনি কোনদিন দেন্নি। এমনি ভয় লাগাত।উনারা এই দুনিয়াতে আর নেই। উনাদের যেন আল্লাহ জান্নাতের উঁচু মর্যাদা নসিব করেন,আমিন।
কিন্তু এরপর যাকে হোম টিচার হিসেবে রাখা হল তাকে মাইরের উস্তাদ বললে ভুল হবেনা।যদিও আমি উনাকে সব সময় শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি। কারন ছোট থাকতে আমি সবাইকে তুই তুকারি করে বলতাম।সেটা শুনে সেই টিচার আমাকে এক মাইরেই আমার মুখের ভাষা চেইঞ্জ করে দিয়েছেন। তুই থেকে আপনি বলা শুরু করে দিলাম।
একদিন আমি কি করলাম আমাকে যে টেবিলে পড়াত সেই টেবিলের উপর উঠে আমি বসে ছিলাম এবং সেই টেবিলের চেয়ারে আমার এক চাচা বসা ছিল। ঠিক সেই সময়ে আমার টিচার এসে হাজির এবং দেখতে পেল সেই দৃশ্যটা।বেস শুরু হয়ে গেল পিটুনি।যা বলার ভাষা রাখেনা।
আমি কি জানতাম যে মুরুব্বিরা যদি চেয়ারে বসে আমি টেবিলে বসতে পারবনা সেটা যে বেয়াদবি হয়। তখন থেকে আস্তে আস্তে পিটুনি খেয়ে খেয়ে শিখতে লাগলাম কিভাবে বড়দের সম্মান করতে হয় এবং ছোটদের স্নেহ করতে হয়। একদিন সেই টিচার ব্যস্ততার কারনে আমাকে আর পড়াতে পারবেনা বলে দেন। তাই তিনি তার ছোট ভাইকে আমাকে পড়ানোর দায়িত্ব দিলেন। আমি ত মহা খুশি কিন্তু কে জানত যে আমার কপালে শনি আছে!উনি আরো বেশি রাগি এবং কথায় কথায় পিটুনি দিতেন। আপনারা হয়ত মনে করবেন কিরে টিচারের বদনাম করতেছি।মোটেও বদনামি নয়।আমাকে যদি তখন না পেটাত তাহলে আমি মানুষের মত মানুষ হতে পারতাম না। তাই আমি আল্লাহর দরবারে আমার দুই টিচারের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের নেক হায়াত বাড়িয়ে দেন, আমিন।
ছোট বেলা থেকেই আমি ক্রিকেট অনেক পছন্দ করতাম। ক্রিকেট যেন রক্তে মিশে গেছে। ক্রিকেট খেলার লোভ সামলাতে পারিনা।তাই স্কুল ফাকি দিয়েও অনেক ক্রিকেট খেলেছি।পাডা মহল্লায় এমনকি অনেক দূরে দূরে গিয়েও ক্রিকেট খেলেছি।
বাইরে রোদের মধ্যে খেলতে খেলতে গায়ের কালার উগান্ডার নাগরিকদের মত হয়ে গেছিলো। একদিন ঈদের সালামি জমা করে আমার জীবনের প্রথম ক্রিকেট ব্যাট কিনি। তখন নিজের একটা ব্যাট থাকা মানে অনেক কিছু।সবাই ডেকে ডেকে খেলতে নিয়ে যেত। কারন আমার কাছে ব্যাট আছে।খেলার প্রতি এমন আসক্ত হয়ে গেছিলাম পড়াশোনা মোটেই করতাম না।সবসময় ফাকি দিতাম। শুধু ক্রিকেট নিয়েই পরে থাকতাম।আমার এসব আর মেনে নিতে না পেরে আমার আব্বু আমার চোখের সামনে আমার সেই ঈদের সালামির জমানো টাকা দিয়ে কেনা ক্রিকেট ব্যাটটি দা দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে দিল।সেই সিন টা এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে।
যাই হোক এবার একটু বড় হলাম প্রাইমারি শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলাম। শুরু হল পড়াশোনার চাপ। আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম। জীবনের গতিও চেইঞ্জ হতে লাগল। অনেক কিছু শিখতেছি প্রিয় শিক্ষকদের কাছ থেকে। নতুন নতুন বন্ধু হতে লাগল। অনেক মজার একটা সময়। বলতে গেলে আমার লাইফের সেরা সময় হল আমার স্কুল লাইফের সময়। সেই সময় গুলু এখনো চোখের সামনে স্পষ্ট ভাসতেছে। স্কুলে যাওয়া আবার লাঞ্চের টাইমে বাড়ি এসে খেয়ে যাওয়া, সাদা শার্ট কালো প্যান্ট, স্যারের বকা শুনা, এসেম্বেলি করা, আরো কত কি। অনেক মিস করি সেই সোনালী দিন গুলোকে।
২০০৬ সালের এস এস সি পরিক্ষার্থী ছিলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে পড়ালেখার সমাপ্তি ঘটিয়ে ২০০৭ সালে প্রথম বারের মত বিদেশের মাটিতে পা রাখি।বলতে গেলে অনেক অল্প বয়সে প্রবাসী হয়ে গেছি। সংসারের বড় ছেলে বলে কথা।
অনেক উত্তান পথনের মধ্যে দিয়ে এখনো বিদেশে আছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি।
মনে হয় পরিবারের বড় ছেলেদের অনেক তাড়াতাড়ি সংসারের হাল ধরতে হয় সেটার জন্য আমি মোটেই অসূখি নয় বরং আমি অনেক অনেক হ্যাপি। কয়জনে পারে সংসারে কন্ট্রিবিউট করতে যা আমি এস এস সির পরপরই করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। যদিও আমার প্রথম ইনকাম ক্লাস টেন থেকেই একটা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করে ৪৩ হাজার টাকা পায়। তখন থেকেই টাকা কামানোর ভূতে ধরেছিল।
দেখতে দেখতে প্রবাস জীবনের ১৪ টি বছর হয়ে গেল।
এখন ডিজিটাল যুগ সবাই ফেইসবুক ইউ টিউব চালায়। আমিও চালায়। হঠাৎ একদিন ছোট ভাই বলল ফেইসবুকে একটা গ্রুপ আছে নিজের বলার মতো একটা গল্প নামের। যদি ভাল লাগে তাহলে গ্রুপে জয়েন হতে পার। মনে মনে ভাবলাম কি হবে গ্রুপ দিয়ে শত শত গ্রুপে অলরেডি জয়েন হয়ে আছি।তারপর একদিন গ্রুপে কৌতূহল বশত গ্রুপে জয়েন করে ভিজিট করলাম এবং প্রথম দিনেই গ্রুপের প্রেমে পড়ে যায় কারন আমাদের গ্রুপের প্রিয় মেনটর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার বিনামূল্যে টানা ৯০ দিনের ভিডিও এবং লিখিত সেশন করাচ্ছেন। তাই আমি আর দেরি না করে গ্রুপে আজীবন সদস্য হওয়ার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০০
Date:- ১৯/০৮/২০২১
মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বাবলু
ব্যাচ নং ১৪
রেজিষ্ট্রেশন নং ৬৫৪২০
জেলা চট্টগ্রাম
কাতার প্রবাসী