আমাকে বলতো লেখাপড়া সাথে তুমি অন্য কিছু করার ব্যবস্থা করো
আমি রবিউল হোসেন। আমি আমাদের পরিবারের প্রথম সন্তান। আমরা দুই ভাই এক বোন। আমি যৌথ পরিবারের বড় হয়ছি। আমার বাবা ব্যবসায়ি মা গৃহিনী। আমার চাচা ও দাদা আমাকে অনেক আদর করতো। চাচা যেরকম আদর করতো তেমনি শাসন করতো। আমার সকল আবদার দাদার কাছে করতাম। দাদা সকল আবদার পূরণ করতো। আমার জন্মের সময় আমার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। আমার মায়ের কাছ থেকে শোনা। আমার ছোটবেলা কেটেছে হাসি আনন্দে। অভাব কি আমি জানতাম না।
আমি লেখ-পড়াই তেমন ভালো ছিলাম না।খেলাধুলা করে সময় পার করে দিতাম। যখন নবম ক্লাসে উঠি তখন একটু গুরুত্ব দিলাম যাতে একবারে এস এস সি পাশ করতে পারি। কলেজ জীবন ছিল স্বাধিন জীবন। এতো স্বাধীনতা ভোগ করেছি যার ফল এইচ এস সি রেজাল্ট খারপ। এরপরে সবাইর চোখে খারাপ হয়ে গেলাম। আবার পড়াশুনা শুরু করলাম। পাশ করলাম। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নিজেকে রেডি করলাম। কিন্তু কোথাও চান্জ পেলাম না। আমার বাবা আমাকে আর পড়াতে চাই না। পরে আমি বিকমে ভর্তি হয়। আমার অনিচ্ছা শর্তে কুয়েতে চলে আসি বিকম কমপিলিট না করে।
আমার বাপ চাচারা ছিল দুই ভাই।আমাদের ছিল যৌথ ফ্যামিলি বাপ এবং চাচা একসাথেই থাকতো। আমার দাদা একজন ব্যবসায়ী ছিল হাটে হাটে কাপড়ের ব্যবসা করত এর পরে দাদার চাউলের দোকান দিয়েছিল সেখান থেকে আমার দাদা সংসার কোন ভাবে চলে যেতে পরে চাচা ও বাবা বড় হতে থাকে এবং আমার দাদা সংসারের খরচ ও বাড়তে থাকে থেকে আমার বাবা ব্যবসা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায়।বিহারির কাছ থেকে সে সবসময় পরামর্শ নিতে কিভাবে ব্যবসা করা যায় । আমার বাবা চিনি শিল্প কর্পোরেশন এর ডিলারশীপ পান এর পর থেকে আমাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা আসতে থাকে। আমার বাপের এবং চাচার দিন ঘুরতে লাগল এরপর থেকে আমার বাবাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
আমি ছাত্র হিসাবে তেমন ভালো ছিলাম না। ১৯৯৯ সালে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এস এস সি পাশ করি। ২০০১ সালে এইচ এস সি খারাপ হয়। ২০০২ এ এইচ এস সি পাশ করি।
২০০১ সালে আমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা কিছুটা কমতে শুরু করে আমার বাবার যে গাড়ি ছিল সেটা বিক্রি করে দেয় এবং অন্যান্য সম্পত্তি বিক্রি করতে থাকে।
২০০১ সালের পর থেকে যখন আর্থিক অবস্থা ভালো নেই তখন বাবা চুপচাপ থাকতো। আমাকে বলতো লেখাপড়া সাথে তুমি অন্য কিছু করার ব্যবস্থা করো । এক সময় বাবা বললো লেখা পড়া করতে হবে না। এরমধ্যে বাবা মামার সাথে আলাপ করে আমার বিদেশের ব্যবস্থা সম্পন্ন করে ২০০৫ সালে আমি কুয়েতে চলে আসি এরপর থেকেই আমার বিদেশে কর্মজীবন শুরু হয়ে গেছে এখানে এসে নতুন পরিবেেশে সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল।কোন কিছু দোষ না করলেও নিজের উপরে দোষ আসতো। এভাবে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম।দুই মাস ধরে কাজ করছি বেতন পাচ্ছি না।দুই মাস পরে জিজ্ঞাসা করলাম বেতনের কথা । তখন বলে যত তাড়াতাড়ি ভাষা এবং কাজ শিক্ষতে পারবা তত তাড়াতাড়ি বেতন পাবে তখন আবার নিজেকে শুরু করলাম তাড়াতাড়ি কাজ শেখার জন্য ছয় মাস লেগে গেল। ছয় মাস পরে বেতন পেয়ে সে পুরো টাকাটা মায়ের হাতে দিলাম। আম্মা টাকা হাতে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে এবং পুরো টাকাটাই মাদ্রাসায় দান করে দিছে। এরপর থেকে সবার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম এবং নিজেকে মানিয়ে নিলাম সবার সাথে । আস্তে আস্তে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়তে লাগল। এর মধ্য ৪ বছর পার হয়ে গেলো।
ওমরা করে আসার পর বাড়িতে যাওয়ার জন্য মনটা ঝটপট করলো। আমি বাড়ি যাব আমার কোন জমানো টাকা নাই মাসে যা বেতন পেয়েছে সব বাড়িতে পাঠিয়ে দিছি। মা - বাবা কে জিজ্ঞাসা করলাম যে টাকা কি করছো? বাবা বলছে ব্যবসা করে লোকসান হয়েছে। টাকা শেষ হয়ে গেছে। তখন মাথায় আরেকটি টেনশন উঠলো অল্প বেতনে এখানে থেকেই বা কি করব বেতনও বাড়তেছে না এবং পরিশ্রম ও বেশি। বেলা ১১ টার সময় এসে কোন কোন দিন কোন কোন দিন ১২ ঘণ্টা ১০ ঘণ্টা করে ডিউটি করছি। যার আন্ডারে কাজ করতাম তার খানা পাকানো ও কাপর ধোয়া ও আয়রন করা ছিল আমার প্রতিদিনের কাজ।
৫ বছর পর সিদ্ধান্ত নিলাম একবারা দেশে চলে যাব। দেশে গিয়ে দেখলাম আমার বাবার ব্যাবসা ভালো চলছে না। আমার আকামা ছিল। ২ মাসের মধ্যে আবার কুয়েতে আসলাম। এখন বেতন বাড়ছে। দেশে বাড়ির কাজে হাত দিলাম।বাড়ির কাজ সম্পুর্ন হয়নি। ছোট ভাই কি কিছু টাকা দিয়ে কাপড়ের দোকান করে দিলাম। এর মধ্যেই ৫ বছর হয়ে গেছে। দেশে গিয়ে বিয়ে করলাম।
এখন আমার নতুন জীবন শুরু হল। সবাইকে চিনতে শুরু করলাম সবাই আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে । বেতন জায়গায় এসে বেতন বাড়াতে বললে বলে বেতন বাড়বে না বরং তারা খারাপ ব্যবহার করে । এরপর থেকে নিজেকে চাকরি পরিবর্তন করার চেষ্টা করি। একটা পর্যায়ে তারা আমার গায়ে হাত তোলে এবং থেকে বের করে দেয়। তারপরও ধৈর্য্য ধরে ছিলাম। যার সাথে কাজ করতাম সে ছিল বাংলাদেশী। মা কে সব কিছু শেয়ার করতাম। মায়ের কাছে যখন আমি আমার দুঃখের কথা বলতাম তখন মা সবসময় আমাকে সান্ত্বনা দিতে আর বলতে বাবা তোমার একদিন সুখের দিন আসবে তুমি একটু ধৈর্য ধরে এভাবে করতে করতে আমার যখন ১০-১২ বছর পার হয়ে গেল তখন সেই সুখের সন্ধান কিছুটা বাতাস খেতে থাকলাম।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে একজনের সাথে পাটনারে দোকান নিলাম কিন্তু পার্টনারের সাথে মনোমালিন্য হয় এবং পরে আমি সেই দোকানটি নেই। যেদিন থেকে আমি নতুন ব্যবসা শুরু করেছি তার একদিন পর আমার মা মারা যায় মাকে আমার ব্যবসায়ের কথাটি আর জানানো হয়নি আর কোনদিন জানাতে পারবো না কিন্তু মার দোয়া টা আমার জীবনে পরিবর্তন করে দিয়েছে কারণ মা বলেছিল যে ইনশা-আল্লাহ তোমার একদিন সু দিন আসবে।
"নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের" ভাইয়া এবং আপুদের জন্য রইল অনেক অনেক ভালোবাসা এবং শুভকামনা।
সেই সাথে ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রিয় বড় ভাইকে যিনি আমাকে এই পরিবারের সাথে সংযুক্ত করেছেন। তিনি হলেন এনআরবি কুয়েতের "নাহিদুল ইসলাম" ভাইকে।
শ্রদ্ধা ভালবাসা এবং সালাম জানাচ্ছি এনআরবি কুয়েতের মডারেটর "মাহমুদ ভাইকে" কান্ট্রি এম্বাসেডর" রনি গমেজ " 'সাহাব" মোশারফ " খাইরুল" শামসুল ইসলাম"ও আদনান টিপু ভাই সহ সকল "কমিউনিটি ভলান্টিয়ার "ও সদস্য আপু ভাইদের কে।
শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমার "চুয়াডাঙ্গার" ভাইয়া ও আপুদের কে।
"নিজের বলার মত গল্প প্ল্যাটফর্ম "একটা পরিবারের মতই। আমরা একে অপরের ভাই- বোন।
আমি দুঃখিত এবং ক্ষমা প্রার্থী আপনাদের কাছে, আপনাদের মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করার জন্য। আমার লেখার ভিতরে যদি কোন ভুল করে থাকি আমাকে ক্ষমা করবেন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি একজন"" নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন "এর সদস্য।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০০
Date:- ১৯/০৮/২০২১
রবিউল হোসেন
ব্যাচঃ- নবম
রেজিস্ট্রেশন নাম্বারঃ- 9402
রক্তের গ্রুপঃ- ও পজিটিভ
জেলাঃ- চুয়াডাঙ্গা
এন আর বি - কুয়েত।