সৌদি আরব আসার জন্য উনাকে ৬০ হাজার টাকা
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ।
#আজ আমার প্রবাস জীবনের এবং ছাত্রর জীবনের কিছু বাস্তব ঘটনা আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম #
#সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর দরবারে । এই মহান পৃথিবীর মালিক, এই মহামারী চলা কালীন সময় আমাকে বেঁচে রেখেছেন ।
#কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর শিক্ষক, অভিভাবক,পথ চলার সহযোগি যোদ্ধা, ,যার শিক্ষা বুকে ধারণ করে,আমরা সামনে পথ চলতে শুরু করেছি ।তার অনুপ্রেরনা ও শিক্ষায় অনুপ্রেনিত হয়ে হাজার হাজার তরুণ প্রজন্ম নিজেদেরকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে ।যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন গুরুপ "। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ৮০ টি দেশ যার সদস্য সংখ্যা ৫ লাখের বেশি ।যার পুরা কৃতৃত্বের অধিকার এ প্রজন্মের আইকন জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ।
#আমি আজ দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সৌদি আরব প্রবাসী । এই ২২ বছরের মধ্যে আমার বাবা মা আত্বীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী , অনেককেই হারিয়েছি ।আজ
আমার বড় ভাই জনাব , আলহাজ্ব মোঃ মোখলেছুর রহমান , এই সুন্দর পৃথিবী থেকে না ফিরার দেশে চলে গেছেন । ২০০৮ সালে আমার জন্ম দাতা বাবাকে হারিয়েছি ।২০১৩ সালে জন্ম দাতা মাকে হারিয়েছি ।বাবা মা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর ,বড় ভাই আমাদেরকে বট গাছের ছায়ায় মতো আগলে রাখতেন ।তিনিও আজ আমাদেরকে ছেড়ে ,পর পারে চলে গেলেন । আমরা ভাই বোন সবাই এখন এতিম হয়ে গেলাম ।আজ কত বছর হয়ে যায়,বাবা এবং মা ডাক, ডাকতে পারি না । এই লেখাটি লেখার সময় আমি খুব কেঁদেছি । চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি । অঝোর ধারায় বৃষ্টির মতো সব সময় চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে । রুমের সবাইকে আমাকে শান্তনা দেন । আমাকে বুঝান , এই দুনিয়া থেকে একদিন না একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে ।আর কান্না করে লাভ নেই ।অল্প কিছু খেয়ে নেন , মনকে শক্ত করেন । বাবা হারা,মা হারা , এখন বড় ভাই হারানো , বেদনা সয্য করতে পারছি না । এখন আমি পাগলের মত হয়ে গেছি । চারিদিকে শুধু অন্ধকার দেখছি ।
#এখন আসি সংসার জীবনে#
#আমার বাবা একজন মসজিদের ইমাম ছিলেন । আমরা ভাই বোন ১১ জন ।আমরা ৬ ভাই ৫ বোন । আমাদের অনেক বড় সংসার । আমরা মধ্যম ঘড়ের সন্তান । আমাদের সংসারে সব সময় অভাব লেগেই থাকে । আমাদের ভাই বোনদের চাহিদা বাবা পুরন করতে পারেন না । ভালো জামা কাপড় কিনে দিতে পারেন না ।আমি যখন ছোট ছিলাম ,তখন আমাদের গ্ৰামে স্কুল ছিল না ।
#আমাদের বাড়ি থেকে স্কুল ১ মাইল দূরে । ১ মাইল দূরে যেয়ে , আমাকে ক্লাস করতে হয় । আমি ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত এই স্কুলে পড়া লেখা করেছি । ছাত্র হিসেবে বরাবর ভালো ছিলাম ।রোল নাম্বার সব সময় ১ থাকতো ।
#আমি যখন ক্লাস সিক্সে উঠলাম ,তখনি আমার ভালো ছাত্র জীবনের অবসান ঘটা শুরু হলো । আমাদের সংসারে বড় ২ভাই ৩ বোন বিবাহ হয়ে যায় ।বড় ২ ভাই বিবাহর কিছু দিন পর সংসার থেকে আলাদা হয়ে যায় । আমার থেকে যে বড় ভাই ছিল , উনি বিবাহ করেন । আমার জীবনে শুরু হয়ে যায় আরো হতাশা । চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করলাম ।
#আমি ঠিক মতো স্কুলে যেতে পারি না ।পড়া লেখা করতে পারি না । নানান ধরনের চিন্তায় পড়ে গেলাম । আমি সব সময় ভাবি কি করব, কোথায় যাব । কোনহালে ক্লাস সিক্স এবং সেভেন পাস করলাম ।যখন ক্লাস অস্টম শ্রেনিতে উঠলাম ।তখন আমি বাবাকে বললাম । আমি সংসারে কাজ করতে পারব না । সংসারে কাজ করে পড়া লেখা করতে সমস্যা হচ্ছে । আমাকে ঠিক মতো পড়া লেখা করাবে ,না হলে অন্য কোথাও আমাকে রেখে পড়া লেখা করাবে ।
#বাবা আমার কথা শুনে , বাবার ফুফাতো ভাই , আমাদের বাড়ি থেকে ৪ মাইল দূরে গ্ৰাম , সেখানে লজিং হিসেবে রেখে দিলেন । আমি সেখানে গিয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হলাম । এই বার আমি মনে করলাম আমার জীবনের হয়তো বা পরিবর্তন হবে । এখন সুন্দর ভাবে স্কুলে যেতে পারবো এবং মন দিয়ে পড়া লেখা করতে পারবো । কয়েক দিন ভালোই যাচ্ছিল । কয়েক দিন যাওয়ার পর আমাকে দিয়ে বাড়ির কাজ করানো শুরু করে দিল ।
#আসলে কোথায় আছে না ,অভাগা যে দিকে যায় , সাগর শুকিয়ে যায় । সেটাই হয়েছে আমার জীবনে । যে কাজের জন্য বাড়ি ছাড়লাম , এখানে এসে সেই কাজ আমাকে করতে হচ্ছে ।হায়রে নিয়তির খেলা ।
#অস্টম শ্রেনি পাস করলাম । নববম শ্রেনিতে উঠলাম । নববম শ্রেনিতে উঠে সাইন্স নিলাম ।কারন ছোট বেলা থেকে আমার ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হব । ডাক্তার হওয়ার চিন্তায় আমি সাইন্স নিলাম । নববম শ্রেনি থেকে দশম শ্রেণিতে উঠলাম । আবার নতুন করে আমার জীবনে সমস্যা দেখা দিল । আমাদের সংসারে আবার নতুন করে অভাব দেখা শুরু হলো । আমি স্কুলের ফিস দিতে পারি না । প্রাইভেট পড়তে পারি না । ঠিক মতো জামা কাপড় নিতে পারি না । অনেক সমস্যায় পড়ে গেলাম ।
#সাইন্সে পড়তে হলে অনেক টাকা পয়সা লাগে ,আগে যদি ,আমি জানতাম , তাহলে আমি সাইন্স নিতাম না ,আর্স নিতাম । আমি মনে করছিলাম বা আমার বাবার ধারনা ছিল , আমার ছেলেকে যেখানে রেখে এসছি ,পড়া লেখা করতে তেমন অসুবিধা হবে না । ভালো থাকবে এবং টাকা পয়সার অভাব হবে না, টাকা পয়সার সহযোগিতা পাবে । জামা কাপড়ের অভাব হবে না । ভালো ভালো খেতে পারবে । কিন্তু আমার বাবার চিন্তা,ভাবনা ,আসা সব গুড়ে বালি । আমি কিছুই পাইনি , সেই পরিবার থেকে । পেয়েছি শুধু লাঞ্ছনা ।
#আমার বড় চাচার একটু পরিচয় দেয়
#আমার বড় চাচা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন । উনার ৭ ছেলে ১ মেয়ে ।
১ নাম্বারবড় ছেলে রাজশাহী বিভাগের কৃষি ব্যাংকের বড় অফিসার ।
২ নাম্বার ছেলে MBBS ডাক্তার বিসিএস ।
৩ নাম্বার ছেলে ইন্জিনিয়ার ।
৪ নাম্বার ইন্জিনিয়ার ।
৫ নাম্বার এস আই দারোগা ।
৬ নাম্বার বর্তমানে কলেজের প্রিন্সিপাল ।
৭ নাম্বার সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ।
#এতো বড় বড় সরকারি চাকরি জীবি থাকার পরেও আমি , সেই পরিবার থেকে এক টাকা পয়সা সহযোগিতা পাইনি । কারণ আমার বড় চাচা, চাচী খুব হিসেবি ছিলেন ।আমি কয়েকটি ঈদ সেখানে করেছি । কিন্তূ ঈদের কোন জামা কাপড় পাইনি । কোন টাকা পয়সা বকসিস পাইনি । এই সমস্ত কথা আমার বাবা মাকে আমি বলিনাই। কারন আমার বাবা মাকে বললে , আমাকে যদি বাড়িতে নিয়ে যায় ,এই ভয়ে বাবা মাকে আমি বলি নাই । কারন এখানে থাকলে যত কষ্ট হোক , আপাতত তিন বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পাই । খাওয়ার কোন কষ্ট হয় না ।
#আমি এসএস সি পরিক্ষা দেওয়ার জন্য টেস্ট পরিক্ষা দিলাম । ফাইনাল পরিক্ষার আগে আমাদের স্কুলের সাথে এস এস সি সেন্টার স্কুলের গেনজাম দেখা দিল । আমার সেখান থেকে এস এস সি পরিক্ষা দেওয়া হলো না । অনেক চিন্তা ভাবনার মধ্যে পড়ে গেলাম । এখন আমি কি করবো কোথায় যাব । খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম ।
#তখন ছিল 1991 সাল । আমি প্রাইভেট স্কুল থেকে আর্স থেকে পরিক্ষা দিলাম । কয়েক মার্কের জন্য ফেল করলাম । 1992 সালে এস এস সি পাশ করলাম । 1994 সালে ইন্টার মিডিয়েট শেষ করলাম । তারপর আর পড়া লেখা করতে পারি নাই । আমার পড়া লেখা সমাপ্তি হলো ।এর পর থেকে শুরু হলো, আমার জীবন সংগ্রাম ।
#সংসারের অভাব অনটনের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে গেলাম ঢাকা শহরে । কাজের জন্য অনেক ঘুড়া ঘুড়ি করলাম । কোন কাজ কাম পেলাম না । বাধ্য হয়ে রাজ মিস্ত্রী এবং রং মিস্ত্রীর হেলপার হিসেবে কাজ নিলাম । এই ভাবে আমার ২ বছর ঢাকা শহর কেটে যায় । ২ বছর পর গ্ৰামে আসি । গ্ৰামে কয়েক দিন থাকার পর ,সবার কথা শুনা শুরু করে দিলাম ।আমি মনে হয় ,সবার কাছে বোঝা হয়ে গেছি ।কেউ আমাকে সয্য করতে পারে না । সবাই দুর দুর করে তারিয়ে দেয় । আবার চলে গেলাম চিটাগাং । সেখানে গিয়েও কোন কাজ কাম পেলাম না । আবার শুরু করে দিলাম রাজ মিস্ত্রী এবং রং মিস্ত্রীরির হেলপারি কাজ । এই ভাবে আমার ২ বছর কেটে গেল চিটাগাং ।২ বছর পর আবার গ্ৰামে চলে আসলাম । আবার সবাই আমাকে খারাপ চোখে দেখা শুরু করলো ।
#আমাদের দুর সম্পর্কের এক ভাই সৌদি আরব থাকতেন ।উনি একদিন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলেন । বাবার সাথে অনেক আলাপ আলোচনা হলো ।এক পর্যায়ে আমাকে বিদেশ নেওয়ার প্রস্তাব দিলেন ।উনি আমাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলেন । আমি ও বিদেশ আসার জন্য মত প্রকাশ করলাম । উনার বাড়ি ছিলেন ,টাংগাইল নাগর পুর । সৌদি আরব আসার জন্য উনাকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয় ।৭/৮ মাস চলে যায় , ভিসার কোন খোঁজ নাই । আমি এবং বাবা খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম । এতো টাকা দেওয়া হয়েছে কোন রেজাল্ট আসে না । শুধু দিন দেই । কোন ভালো খবর আসে না । টাংগাইল শকিপুর অন্য দালাল ধরে , আবার ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়ে সৌদি আরব আসি । তখন ছিল ১৯৯৯ সাল ।
#দালাল আমাকে যে ভিসা দেওয়ার কথা ছিল , সেই ভিসা দেই নাই । আমাকে দিয়েছে বলদিয়া ভিসা ।আমি সৌদি আরব আসার পর , সকালে আমার হাতে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার জন্য ,, হাতে ঝাড়ু তুলে দেওয়া হয় ।আমি ঝাড়ু মাটিতে ফেলে দিয়ে রুমে চলে যায় । রুমের অনেকে আমাকে বুঝান , অনেক টাকা খরচ করে সৌদি আরব এসেছেন,এখন চিন্তা করে লাভ নেই ।যা হওয়ার হয়ে গেছে ।কাজে জয়েন্ট করেন ।কাজে জয়েন্ট না করলে কোম্পানী আপনাকে দেশে পাঠিয়ে দিবে ।তখন কি করবেন । দেশে গেলে কি করবেন । টাকা গুলো নষ্ট হয়ে যাবে । আপনার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে । তাদের কথা শুনে আবার কাজে জয়েন্ট করলাম । কয়েক দিন যাওয়ার পর ময়লা আবর্জনা ফেলানোর গাড়িতে ডিউটি নিলাম । ২ বছর পর কোম্পানীর কাজ বন্ধ হয়ে গেল । কোম্পানী কাজ পাননি ।অন্য কোম্পানি কাজ পেয়েছেন । কোম্পানী আমাদেরকে বললেন , আপনারা দেশে যাওয়ার জন্য রেডি থাকবেন ।যে কোন মুহুর্তে আপনাদের ফ্লাইট হতে পারে ।আমরা সেই ভাবে , ফ্লাইটের অপেক্ষায় বসে রইলাম ।
Hapij rohoman
Batch :7
Reg:16658