ছোট বেলা থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতাম কিছু একটা করবো।
আমার জীবনে যদিও সেরকম কোন গল্প নেই।তবুও হৃদয়ের কিছু গল্প, কিছু আবেগ,অনুভূতি শেয়ার করবো।না বললে হয়তো ভালো লাগা কাজ করবে না।সকলের জীবনের গল্প পড়ে আমিও লিখতে বসে গেলাম,নিজের জীবনের গল্প।
কখনো নিজের সম্পর্কে কিছু লিখা হয়নি।তাই লিখতে বসে ভাবছিলাম যে শুরুটা কিভাবে করবো।এরপর নিজেকে প্রশ্ন করলাম কি হতে পারে আমার জীবনের গল্প?স্যারের কথা মতো নিজের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম।অবাক কান্ড আমি আমার উত্তর পেয়ে যাচ্ছি।
আমার জন্ম মানিকগঞ্জ জেলার এই ছোট্ট শহরে।জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠা, বিচরন করা এই জেলার মাটি,পাখি,প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে।আমি মুগ্ধ এই প্রানের জেলাতে জন্মে।শেকড়ের প্রতি ভালোবাসা ছোট বেলা থেকেই ছিল।আমি পরিবারের অনেক আদরের,অনেক আদর যত্নে বড় হয়েছি,সকলের ভালোবাসায়।
ছোট বেলা থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতাম কিছু একটা করবো।খুব ইচ্ছা জন্ম নিতো আমার মাঝে।আমাকে কিছু একটা করে দেখাতে হবে।এই ইচ্ছা শক্তি আমার একদিনে জন্মে নি।এর পেছনে বেশ কিছু কারন রয়েছে আর তা হলো আমার মা।মা হলো আমার আদর্শ,আমার সব।আমার মাও একজন সাবলম্বী নারী।মাকে দেখে দেখে ইচ্ছা গুলো জন্ম নিতে থাকে।
মাকে দেখে আমিও চিন্তা করি আমাকে কিছু একটা করতে হবে।আমার মধ্যে জেদ কাজ করে।আমার এখনো মনে আছে আমি যখন নবম শ্রেনীতে পড়াশোনা করি।তখন আমি একজন প্লেতে পড়ে এক ছাত্রীকে পড়াই টিউশনি করি।তখন বেতন ছিল ৫০০ টাকা।এই ৫০০ টাকাই ছিল আমার কাছে জীবনের সেরা অর্জন,সেরা সফলতা,আর এটাই আমার কাছে মনে হতো নোবেল।স্যারের একটি সেশন পড়েছিলাম যে পার্টটাইম কাজ করে মানি সেফিংস করতে হয়,রেস্টুরেন্ট,ডেলিভারি,টিউশানি ইত্যাদি।এটা ছাত্র জীবনে বেশ কাজে দেয়।নিজের হাত খরচ নিজে বহন করার আনন্দই আলাদা।এখান থেকে সেভিংস করাও সহজ যদি কেউ ইচ্ছা করে, বাজে খরচ না করে।
যেদিন প্রথম বেতনটা হাতে পাই, তখন সবাইকে ফোন করে জানাই খুশিতে।নিজে থেকে প্রথমবার উপার্জন করলাম আনন্দ কাজ করছিল সে সময়ে।আজ আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি।আমার স্বপ্ন এগিয়ে যাওয়া,সফলতা অর্জন করে পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়া।বর্তমানে আমার পাঁচ জন ছাত্রী।তাদের শুধু পাঠ্য বই না।বাস্তব জীবন সম্পর্কে ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করি,স্বপ্নবাজ হতে সাহস দিয়ে থাকি।খুব ভালোই কাটছিল দিনগুলো।কিন্তু হঠাৎ এই দুর্যোগ, করোনা মহামারি চলে এলো।শুরু হলো মানুষের জীবিকা সংকট,ঘরে বন্দি মানুষের স্বপ্ন।চলে এলো পরিবারে অস্বচ্ছতা। কথায় আছে বসে খেলে রাজার গোলাও শেষ হয়ে যায়।
আমার কলেজ অফ,সারাদিন বাসায় বসে দিন দিন বরিং হচ্ছিলাম।কেমন যেন সময় পার করছিলাম হঠাৎ করে। আইডিয়া খুজছিলাম কি করা যায় ঘরে বসে যেহেতু বরিং লাগছে।অবশেষে আমার মামা আমকে বুদ্ধি,সুপরামর্শ দিয়ে বললেন অনলাইন ভিত্তিক কিছু একটা করতে।কিন্তু আমার তো সেভাবে কোন ধারন নেই।আমি নতুন এই জগতে।সাহস করে ফেসবুকের বিভিন্ন রকমের পেইজ,গ্রুপে অ্যাড হলাম,ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখা শুরু করলাম।একটু একটু করে নিজেকে তখন স্কিলস করছি।আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আমাকে কি করতে হবে।
পরবর্তী কিছু ধারনা নিয়ে শুরু করে দিলাম।একটা ফেসবুক পেইজ খুললাম,নিজের পছন্দ মতো নাম দিলাম শপিং ব্যাগ।তখন থেকে বিভিন্ন ড্রেস এর ছবি পোস্ট করতাম,লিখা দিতাম।একমাস দুইমাস যাবার পর কাস্টমার নক করা শুরু করলো।নিজের মধ্যে একটা সাহসের জন্ম নিলো নতুন করে।এখন আমার পেইজের বয়স ৪ মাস।
বিশেষ দিক হলো যখন আমি পেইজ খুলে অনলাইন বিজনেস শুরু করি।তখন আমার খালামনি আমাকে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সন্ধান দেন।পরবর্তীতে জয়েন করি, রেজিষ্ট্রেশন করি।দেখি এ এক ভিন্ন জগৎ। ভালো মানুষের মিলন মেলা।সবার এগিয়ে যাওয়া, সুন্দর লিখা দেওয়া,আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করে।বিশেষ সবাই অনেকে হেল্পফুল।
প্লাটফর্মে জয়েন করার পর খুব ভালো নিয়ম কানুন জানতাম না,বুঝতাম না।কিন্তু স্যারের যে সেশান গুলো আমার খুব ভালো লাগতো।একদম হৃদয়ে গেথে যেত।বেশি ভালো লাগে স্যারে প্রিয় স্লোগান স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন,শুরু কবং লেগে থাকুন সফলতা আসবেই।তখন থেকেই একটা সাহসের জন্ম দেয়।
সন্ধান করি নিজ জেলার মানুষদেরকে।অনেক খোঁজার পর পরিচিত হই মানিকগঞ্জ জেলার উপজেলা অ্যাম্বাসেডর সুমন আহমেদ হৃদয় ভাইয়ের সাথে।শুরুর সম্পর্ক্টা মনে হয়নি নতুন।ভাইয়া অনেক সাহায্য করেন আমাকে।সব কিছু বুঝিয়ে দেন, কিন্তু একটুও বিরক্ত হননি।কিভাবে কি করতে হবে আমাকে গাইডলাইন দিলেন।পর্যায়ক্রমে জেলা মেসেঞ্জারে অ্যাড হওয়া।জেলার সকল ভাই বোনের সাথে পরিচিত হওয়া আমাকে বেশ মুগ্ধ করে।ফিরে পেলাম এক নতুন পরিবার।এখন নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন আমার ভালোবাসার জায়গা।
শেখার সুযোগ হয়েছে বেশ কিছু স্কিলস
এখান থেকে আমি যে স্কিলস গুলো অর্জন করার সুযোগ পেয়েছি
১। বিজনেস চালানোর দক্ষতা
২। মার্কেটিং এবং নেটওয়ার্কিং – সেলস স্কিলস
৩। লিডারশীপ স্কিলস
৪। কথা বলার জড়তা কাটানো, প্রেজেন্টেশান স্কিলস
৫। কমিউনিকেশান স্কিলস
৬। ইমোশানাল ইন্টিলিজেন্স স্কিলস
৭। বেসিক আইটি ট্রেনিং ও ই-কমার্সে বিজনেস করার ট্রেনিং – আইসিটি দক্ষতা
৮। ইংরেজিতে কথা বলা, বোঝা ও লিখার দক্ষতা
৯। উদ্যোক্তাদের জন্য বেসিক অ্যাকাউন্টিং স্কিলস
১০। মেয়েদের বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষণ
১১। কৃষি উদ্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ।
নিজেক দক্ষ করে তুলছি সেশন থেকে।বেশির ভাগ সময় কাটে প্রিয় ভাই বোনদের সাথে।শিখতে থাকি আনন্দ নিয়ে।কোন সমস্যায় কাছে পাই এই ফাউন্ডেশনের ভাই বোনদের।সেই করোনার মহামারি সময়ে যদিও কঠিন ব্যাপার ছিল নতুন ভাবে,প্রথম কোন উদ্যোগ গ্রহন করা। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।উদ্যোগ গ্রহন করার পর কিছুদিন পরেই এই প্লাটফর্ম এর সন্ধান মিলে।
যদিও আমার মা আমাকে খুব সাপোর্ট করেছেন এ বিষয়ে।আমি সঠিক গাইড লাইন পাই নিজের বলার মতো একটা গল্পের সেশন থেকে,স্যরের কথা শুনে।এটা ওষুধের মতো কাজ করেছে আমার জীবনে।আর সেই শিক্ষা নিয়েই আমি আমার বিজনেসে প্রয়োগ করছি।আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন বেশ ভালো সারা পাচ্ছি কাস্টমারের।
আমরা নারী আমরাই পারি,আমিও শুরু করে এগিয়ে যাচ্ছি লেগে থাকার মাধ্যমে।নিজের হৃদয়ের অন্তরালে লালিত স্বপ্ন আমকে ঘুমাতে দেয় না।এগিয়ে যাওয়া,বদলে যাওয়ার উদ্দীপনা আমাকে ঘুমাতে দেয় না,এটাই বুঝি স্বপ্ন।নিজের জীবনের কিছু একটা অংশ আমি আজকে উপস্থাপন করলাম সবার মাঝে।সকলের দোয়া চাই যেন একটা সফল উদ্যোক্তা হয়ে নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি করতে পারি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৬৮
Date:- ০৭/০৭/২০২১
ফারিনা আফরিন অন্তি
রেজিষ্ট্রেশন নং ঃ৬২৯৯১
ব্যাচ নং ঃ১৪
জেলা ঃ মানিকগঞ্জ
ব্লাড গ্রুপঃবি+