ঢাকা চলে আশার পর সবাই মিলে বিয়ে দিয়ে দিলো আমাকে তখন থেকে
আমি খুব গরিব পরিবারের মেয়ে , বাবা মা দুই জনেই খুব ছোট বেলায় আমাদের রেখে না ফেরার দেশে চলে যান। তখন আমরা ৪ ভাই বোন ছিলাম , এর মধ্যে তিন বোন এক ভাই আমি ছিলাম সবার বড় তখন আমার উপর সংসারের পুরা দায়িত্ব পরে তখন আমি খুব ছোট ছিলাম তারপরও সংসারের হাল ছাড়িনি না খেয়ে
অনা হারে দিন কাটতে লাগলো জীবনটা দূর্বিষহ হয়ে পড়লো দিন দিন। কষ্ট করে দিন কাটছিলো তখন এতো সব ভালো বুঝি না। কোন কাজ কামও করতে পারি না অল্প বয়স ভালো মন্দ কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
একদিন জ্যাঠাত (বড় চাচার ছেলে) ভাই বললো ঢাকা চলে আয় ভালো একটা কাজে লাগায়ে দিবো তুই ভালো থাকবি পরে তোর ভাই বোনদেরো দেখতে পারবি।আমি ভালো মন্দ কিছু বিবেচনা না করে নিজের পরিবার ও ভাই বোনদের কথা চিন্তা করে চলে আসলাম ঢাকা কাউকে না জানিয়ে।সেটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।আমিতো চলে আসলাম গ্রামের সবাই ভাবলো চাচাতো ভায়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো তাই ভাইগা চলে আচ্ছি। এটা নিয়ে নানা কুচ্ছা রচনা হলো।
পরে শুরু হলো আমার উপর পরিবার ও সমাজের আরেক টা ভয়াবহ চাপ সবাই মিলে আমাকে সেই চাচাতো ভায়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো।
আমার হাসবেন্ড যখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়েদের নিয়ে ফূর্তি করতে গিয়ে সব টাকা শেষ করে ফেলে একটা জব করতো সেখান থেকেও তাকে ছাটাই করে দেয় তার বদস্বভাবের জন্য। তারপর থেকে শুরু হয় আরেক যন্ত্রণা আমার পাশে কেউ ছিলো না তারপরও সে আমাকে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করতে থাকে যৌতুক আনার জন্য বাবার বাসা থেকে। আমার আপন মা নাই বাবা নাই সে জানে সব তারপর আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। আমাকে বলে আমার বাবার জাগা জমি বিক্রি করে ওকে টাকা দিবার জন্যে এই দুনিয়াতে আমার আপনজন বলতে কেউ ছিলনা আমার ছোট ছোট ভাই বোন দের কে আমি বায়িং হাউজে কাজ করে কোন মতে চলার ব্যবস্থা করে ছিলাম যায়।আমার কষ্ট করে দিন কাটাছিলাম বুক ফেটে কান্না
বিয়ে হবার কিছু দিন পর এতো যন্ত্রণা ও মানসিক অশান্তির মাঝে খুশির সংবাদ নিয়ে আসলো আমার মাতৃত্ব। অজান্তেই আমার গর্ভে সন্তান চলে আসে। একবার ভাবছি যে আমাকে সহ্য করতে পারছে না সেকি আমার সন্তান কে ভালো ভাবে নিবে। আমি কি আমার সন্তানকে সুশিক্ষা দিয়ে সঠিক মানুষ বানাতে পারবো।আমি পারবো মায়ের ভালোবাসা ও বাবা৷ আদর দিয়ে নবাগত সন্তানের জীবন টা পরিপূর্ণ করে দিতে নানা চিন্তায় এক সময় ভাবলাম আমি পারবো সন্তান টা কে নষ্ট করে দিবো কিন্তু পরেখনে মনে হলো আমার সন্তান আল্লাহ তায়লার শ্রেষ্ট উপহার হয়তো ওর জন্য আমার জীবন টা সুন্দর হতে পারে। বদলে যেতে পারে আমার স্বামী
সন্তান যখন গর্ভে তখন ও আরো বেশি নির্যাতন শুরু করলো।আমাকে মানসিক নানা ভাবে মাঝে মাঝে শারীরিক নির্যাতনও করতো। গর্ভা অবস্থায় না ভালো খারার, না একটু ভালোবাসা, না স্বামীর থেকে পাওয়া সামান্যতম যত্ন, আদর, দয়ামায়া।সামান্য তমথাকতাম।কিছু বলতে পারতাম না আমার আপন বলতে কেউ নাই ধৈর্য্য ধরে ছিলাম একদিন ঠিক হবে সুখের সংসার করবো।সন্তান পাবে তার বাবা কে আমি পাবো আমার স্বামী কে একান্ত ভাবে। সব নারীরাই স্বপ্ন দেখে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার করবে কিন্তু আমার সংসার ও সন্তান হলেও সংসার নামের সোনার সংসার হয়ে উঠে না কোন দিন।
যত্ননা ভোগ করে কাটতে থাকে প্রায়ই ৪ বছরের মতো।
নারী হয়ে জন্মানো যেন আমার আজীবনকার পাব হয়ে দ্বারায়।সহ্য করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। নিজে গার্মেন্টস কাজ করে যা বেতম পেতাম তাও সে তার ভোগ বিলাসে ব্যয় করে ফেলতো।
কোন কূল কিনারা পাচ্ছিলাম না। কি করবো আর কত দিন এভাবে সহ্য করবো। তারপর একদিন কোন একটা কথা প্রতিবাদ করতে আমাকে অনেক মারধর করে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।পরে আমি চিন্তা করলাম আমি যখন ছোট ছোট ভাই বোন আর আমার এতটুকু ছোট বেবি নিয়ে কাজ করে চলতে পারি নিজের সব কিছুই নিজে করি তাহলে স্বামী নামের বর্বর অত্যাচারীর সঙ্গে কেন থাকবো অনেক তো সহ্য করলাম আর কত।অনেক তো আশায় স্বপ্ন দেখলাম আজ নয় তো কাল ঠিক হবে।সুখি হবো আমি আমার ছোট ছোট ভাই বোন আর সন্তান ভালো থাকতে পারবো স্বামী কে নিয়ে কিন্তু সে দিন আর আসলো না তখন। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আর এভাবে মার খাবো না আমি আমার ছোট ছোট ভাই বোন সন্তান কে নিয়ে একা একা ভালো থাকার চেষ্টা করবো।এক সময় চলে আসলাম স্বামীর সাথে রাগ করে মানে (বাবার বাসায় ) কিন্তু সেখানে বেশি দিন থাকতে পারলাম না।এক আত্মীয়ের সহযোগীতায় পারি জমালাম বিদেশ নামের বন্দী জীবনে।
সংসার নামের কঠিন যন্ত্রণা থেকে বের হয়ে প্রবাস জীবনে পারি জমালাম সুখের আশায় ২০০৪ সালে।
মনে অনেক কষ্ট ছিলো আমার স্বামীর সংসারে যখন ছিলাম তখন ও আমাকে কখনো এক টাকার সখের জিনিস কিনে দিতো না কিন্তু ও অনেক গুলো স্বর্নের জিনিস পড়তো দুই হাতের ১০ আঙ্গুলে ১০ টা আংটি পড়তো। গলায় মোটা চেন পড়তো।কিন্তু সে আমাকে বিয়ের পর একটা নাকফুল কিনে দেয় নাই।খুব কষ্ট লাগতো। সে একটু সন্ত্রাসী টাইপের ছিলো তাই ভাবে চলতো সব সময় কিন্তু পরিবারের স্ত্রী সন্তানের দিকে তার কখনো খেয়াল থাকতো না।সেই থেকে কষ্ট জন্মাতো মনে আমি তখন থেকে স্বপ্ন দেখতাম অনেক টাকা ইনকাম করবো আমার সখের সব জিনিস আমি করবো। সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য পারি দেই প্রবাসে লেবাননে।নিজের সেই ছোট ছোট ভাই বোন এবং মেয়েটা কে এক দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়র কাছে রেখে চলে এলাম লেবাননে।
লেবাননে যাওয়ার পর শুরু হলো চরম যন্ত্রণার জীবন। কাউকে চিনতাম না, জানতাম না,ভাষা বুঝতাম না। কি করবো বুঝতে পারছি না। কাজের চাপে নিজের দিকে তাকানোর সময় পাচ্ছিলাম না।
দেশে রেখে আশা আমার ছোট ছোট ভাই বোন এবং মেয়ের সাথে সময় করে কথা বরতে পারছিলাম না।কিন্তু আস্তে আস্তে আমি সব কিছু বুঝতে পারি। সব কিছু খুব সুন্দর ভাবে গোছায়ে নিয়ে আসি। আমার যখন টাকা হয় তখন আমার কাছের মানুষ যারা এক সময় পর করে দিয়েছিল তারা আমাকে অনেক কদর করতে থাকে।
আমার সন্তান আমার কলিজা ধন আমার মেয়ে টা ছোট থেকে বড় হলো বাবার আদর ছাড়া। মায়ের সঙ্গ ছাড়া।খুব ছোট বেলায় ওকে দেশে রেখে চলে আসি এর মাঝে ওর বাবাও কোন দিন মেয়ের খোঁজ খবর নেয় নাই। আমার মতো কষ্টের দিন আমার মেয়ের শৈশব ও কৈশোর কাটলো বাবা _ মা ছাড়া।
আমি আজ ১২ বছর ধরে বিদেশে পরে আছি।কিন্তু দেশে যেতে পারছি না স্বামীর ভয়ে। আমার স্বামীর সাথে আমার ডির্ভোস হয় নাই। শুধু ওকে ছেড়ে চলে আচ্ছি। কিন্তু খুব অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় কোন কাবিন নামা হয় নাই।লিখিত কোন ডুকমেন্ট নাই।যার কারনে ওকে আমি ডির্ভোস দিতে পারছি না।ডির্ভোস দেওয়ার জন্য কয়েক বার চেষ্টা করছি লেবাননে কিন্তু পারি নাই।আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমি আমার জন্মভূমি, আমার জন্মস্থান আমার সেই ছোট ছোট ভাই বোন দের কে এবং আমার মেয়ে কে দেখতে পারি না , ছোট বেলার বেড়ে উঠার প্রিয় সেই গ্রামে যেতে পারছি না।কারণ আমার স্বামী আমার সব চেয়ে বাধার কারণ। সে আমাকে হুমকি দিচ্ছে আমি যদি তার সামনে পরি তাহলে মেরে ফেলবে।আমার চেহারায় এসিড ছুড়বে।
আমি আমার জীবনের একটা ভুলের জন্য সারা জীবন মাশুল দিচ্ছি। কিছু করতে পারছি না তখন অসহায় ছিলাম আজও তার কাছে অসহায় হয়ে কাটাতে হচ্ছে। কত দিন নিজের দেশের নিজের গ্রামের আলো বাতাশ নিতে পারি না।কত দিন, কত রাত কেটে গেলো আমি পারলাম না। আমার কলিজার ধন মেয়ে কে কোলে করে আদর করতে।বুকের কান্না
আমি নানা মূখী যন্ত্রণা যখন দিমে হারা তখন আমি খুজে পেলাম। নতুন প্রানের আমার আলো। খুঁজে পেলাম #নিজের_বলার_মতো_একটি_গল্প_ফাউন্ডেশন । লেবাননের কান্ট্রি এম্বাসেডর এর মাধ্যমে গ্রুপে যুক্ত হলাম রেজিষ্ট্রেশন করলাম।আমি গ্রুপে যুক্ত হয়ে কাজের ফাঁকে সময় দিতে থাকলাম।বিভিন্ন সময় দেখতে পেতাম সবাই #স্ট্যাটাস_অফ_দ্যা_ডে হয়।
আমি আসলে জানি না এটা কি বা হলে কি লাভ কিন্তু এ বিষয় টা ভালো লাগলো আমার কষ্টের গল্প গুলো শেয়ার করা জায়গায় ছিলো না আজ পেলাম।তাই আমি আমার কষ্ট গুলো শেয়ার করলাম। আপনাদের কাছে। সবার গল্প গুলো আমি সময় পাইলেই পড়ি প্রবাসে থাকি অনেক কষ্টের কাজ করি প্রচুর সময় দিতে হয় কাজে তারপর যখন আমি সময় পাই গ্রুপে সবার পোস্ট পড়ি। স্যারের সেশন চর্চা করি। নিজের কিছু টা কষ্ট হলেও আমি কমাতে পারি এই প্লাটফর্ম সময় দিয়ে।
অভাবে বিদেশ পারি জমাতে না হয়।বিদেশ নামের কঠিন জীবন যারা আছে তারা বুঝে কি যন্ত্রণা। আমি চাই না আমার মতো আর কেউ এরকম অসহায় দিন কাটাক।আমার পাশে কেউ ছিলো না এটা আমার অনেক বেশি কষ্ট দেয়।বাবা ছিলো না, মা ছিলো না
,স্বামী নামের কশাই আমার পাশে কখনো ভালোবাসা নিয়ে পাশে ছিলো না, নিজের কাছে রাখতে পারি নাই। নিজের কলিজার টুকরো মেয়ে কে। সেই ছোট বেলায় তাকে দেখেছি আদর করছি আজ ১২ বছর আমার কলিজার ধন কে কাছে নিয়ে আদর করতে পারি নাই। তাই আমি সমাজের অবহেলিত নারীদের নিয়ে কাজ করতে চাই।আমার মতো আর কেই যেন এতো ভোগান্তিতে না পড়ে।
আমার ইচ্ছে আছে নারীদের নিয়ে একটা প্রশিক্ষন কর্মোশালা করতে।সকল প্রকার আর্থিক সহযোগিতা আমি করে তাদের কাজ শিখাবো। আর নারীদের বিদেশি কসমেটিকস নিয়ে একটা শোরুম করবো। আমার নিজ জেলায়। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। জীবনে অনেক কষ্ট ও দুঃখ ভোগ করছি। এখন যেন একটু শান্তি পাই। দেশের জন্য দেশের অবহেলিত নারীদের জন্য কাজ করতে পারি।
প্রিয় প্লাটফর্ম যুক্ত হয়ে প্লাটফর্মের এতো ভাই বোন পেয়েছি যে আমি আমার সব কষ্ট গুলো ভুলে গেছি। সবার সাথে কথা বলে অনেক সাহস পাচ্ছি সামনে এগিয়ে যেতে। দেশে যায় না ১২ বছর ধরে স্বামীর ভয়ে। দেশে যেতে পারছি না সে আমাকে প্রাণহানির হুমকি দেয়।আগে অনেক ভয় পেতাম কিন্তু স্যারের শিক্ষা থেকে শক্তি ও সাহস নিয়ে ও প্রিয় ভাই বোনদের অনুপ্রেরণা খুব তারাতারি দেশে চলে আসবো।আমার পাশে সবাই থাকবেন আশা রাখি।এরকম একটি প্লাটফর্ম পেয়ে আমি গর্বিত। আমি সাহস ও শক্তি পাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই আমি যেন আমার স্বপ্ন গুলো পূরন করতে পারি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৬৮
Date:- ০৭/০৭/২০২১
আমি
জাহানারা সাথী
ব্যাচঃ নং ১৪
রেজিঃ নং ৬৪৪৪৬
জেলাঃ নোয়াখালী
থানাঃ বেগমগঞ্জ
বর্তমান অবস্থানঃ
লেবানন বৈরুত