যখন মাদ্রাসা নবম শ্রেনীতে পড়ি তখন
একটা সময় ছিলাম খুব দুরন্তপনা ছিলাম।ফটিকের মতন ছিলাম।পড়া লেখাতেও সমান পারদর্শি ছিলমা।সুন্দর হাতের লেখার জন্য যখন ক্লাশ ৫ম শ্রেনীতে কচুয়া পাইলট স্কুলে বৃত্তি পরীক্ষায় খাতায় লিখছি সব শিক্ষক মহোদয় এক নজর দেখেন না আমার হাতের লেখায় এমন কেউ ছিলনা।প্রচুর পড়ালেখা করেছি।ভোর রাতে ওঠেও পড়তাম।ক্লাস রোল ৩ থেকে ৫ এ রাখতে পেরেছি সব সময়।
উপরেই যে ছেলেটির এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখছি সেই আমি গোলাম মোস্তফা।
পরিবারে ৩ ভাই ২ বোন ও বাবা,মা সকলে আলহামদুলিল্লাহ জীবিত আছেন।বাবা মা বড় ভাইকে কওমি মাদ্রসায় ভর্তি করাইছিল কারন বড় ভাই তখন বলছে যে আমি ইংরেজী ও গনিত বুঝি না।আমি মাদ্রাসায় পড়ব।বাবাও খুশি ছেলে মাদ্রাসায় পড়বে।কয়েকদিন হুজুরদের বেতের পিটুনি খাওয়ার পর বলে যে আমি আর মাদ্রাসায় পড়বনা।এখন স্কুলে পড়ব।কি আর করা।আবার স্কুলে ভর্তি করায় এবং সফল ভাবে এইচ এস সি পাশ করেন।
এখন আবার নিয়্যাত এবার আমাকে নিয়ে। প্রাইমারি পাশ করার পর আলিয়া মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেনীতে ভর্তি করানো হলো এবং থাকি হলো লজিং বাড়ীতে।মানে যে ঘরে থাকব তাদের ছেলে মেয়ে কে পড়ানোর বিনিময়ে আমার খানাও থাকার বেবস্হা।এভাবে চলছে ক্লাস ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত।ছাএ হিসাবেও মোটামুটি ছিলাম তাই একটা নেশা কাজ করত যে ভালো মাদ্রাসায় পড়ব তাই সেই নেশায় অনেকগুলো মাদ্রাসা পাল্টাই। শুরুটা হলো রাগদৈল ইসলামিয়া আমিল মাদ্রাসা,কচুয়া,চাঁদপুর।আর শেষ মাদ্রাসা হলো সুলতানপুর ফাজিল মাদ্রাসা দেবিদ্বার,কুমিল্লা থেকে।
যখন মাদ্রাসা নবম শ্রেনীতে পড়ি তখন বড় ভাই বলে মাদ্রাসায় পড়ে আর কি হবে সাইন্স নিয়ে স্কুলে পড়লে জীবনে কিছু একটা করা যাবে।আমি তো খুব খুশি।একটা মাদ্রাসার ছেলে স্কুলে ভর্তি হলে যেমন খুশি হওয়ার কথা আমি সে রকম।এখন ক্লিন সেইভ করি ক্লাস রুমে মেয়েরা থাকে। পিউর সাইন্স নিয়ে গংগামন্ডল রাজ ইনস্টিটিউশন,জাফর গন্জ,দেবিদ্বার কুমিল্লা।এভাবেই চলছে লজিং বাড়ী থেকে পড়া লেখা।বড় ভাই যমুনা গ্রুপে ডাইরেক্টর সাহেবের গাড়ী চালক ছিল সেই সুযোগে সেনাকল্যান ভবনে একটু ছুটি পাইলে ঢাকা চলে যাইতাম। এস,এস সি প্রথম বিভাগে পাওয়ার পর এইচ এস সি তে ভর্তি হলাম হাছান পুর সরকরী ডিগ্রি কলেজ,দাউদ কান্দি,কুমিল্লা।
কলেজ জীবনঃ
প্রথম কলেজে যাই আর আমার শরীরের ওজন ও ৭০ কিলো।হাতের লেখার কারনে সবার কাছে আমার এই একটাই গুন জানত সকলে।কি সুন্দর দিনগুলো ছিল কলেজ জীবন।৩০ টাকার বাস ভাড়া দিতাম ৫ টাকা তাও আবার মাঝে মাঝে।ভলবো,হানিফ,গ্রীন লাইন সবাই আমাদের কে নিয়ে যাইত।১০ টাকা দিতাম বাস ভাড়া।দোস্তরা বলে দিত মামা ভাড়া নিবেনা,ঢাকা যাবে।মনে হত কিছু একটা হয়ে গেছি।
২০০১ সালে আমাদের উচ্চতর গনিত শিক্ষক বল্ল থানা ভিত্তিক প্রতিযোগিতা হবে এ ক্লাশে কে আছ সুন্দর হাতের লেখায় প্রতিযোগিতা করতে পারবে। সকলে কেবল আমাকে ইশারা দেয়, আমিও একটা ভাব ধরে আছি।স্যারের নজর পরল আমার উপর বল্ল বোডে কিছু একটা লিখ।আমি লিখলাম।স্যার ও আমাকে সিলেক্ট করল এবং আমি দাউদকান্দি থানায় কলেজ লেভেল প্রথম হই।পুরস্কার ছিল।সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস।জোস্নায় বর্ষায় মেঘ।
এখন তো কলেজে মোটামুটি সকলে চিনছে আমাকে।শুরু হলো একটু পএ লেখার অভ্যাস।জীবনে কোন মেয়েকে একটা পএ লিখেছিলাম এবং প্রথম পত্রেই সারা পেয়েছি।জীবনে সফল না হলেও প্রেমিক হিসাবে সফল।তবে যেহেতু কয়েকটা বছর মাদ্রাসায় পড়া লেখা করেছি তাই এসব লাইনে আর বেশী চেস্টা করেনি।
এইচ এস সি পরীক্ষায় ফেল করে ফেল্লাম।বড় ভাইয়ের যে শ্বপ্ন ছিল তা রাকতে পারিনা।ভাইয়ের মনে কস্ট।আর পড়ালেখা করাবে না।কোন চাকুরী করে সংসার চালাও।ওনি পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকব বাসাবো এলাকায়।
আমিও আর চেস্টা করলামনা ভাবছি বিদেশে চলে যাব কিন্তু ভাই টাকা দিবেনা এবং কোন সহযোগীতা করবেনা।ওনার কথা একটাই বিদেশ গিয়ে টাকা মাইর খাইলে আমার টাকা কে দিবে।তোমার বাবার এত জমি নাই বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবে।এভাবে ঢাকা কত রকমের কাজও চাকুরী করেছি সামাজিক কারনে লিখলাম না।বাড়ীতে মা একা তাই বিয়ে করাইবে আমাকে আমি বেকার তখন।বিয়ে করাইছে আমিও রাজি হলাম।২০০৪ সালে বিয়ে করি এবং ২০০৫ সালের মে মাসের ২৭ তারিখে আমার বড় ছেলে জন্ম গ্রহন করে। এভাবেই চলছে সংগ্রামী জীবন।বউটা ছিল আসলে গ্রামের সহজ সরল স্বামী ভক্ত তাই বেশী কিছু চাওয়া পাওয়া ছিলনা তাই বেচে গেছি।
প্রবাস জীবনঃ প্রবাসে আসলাম ৩ লাখ টাকা ঋন নিয়ে।ওমানে আসলাম দালালের মাধ্যমে।এসে পড়লাম মহা বিপদে।তাবুকের ভিসা দিয়েছে।প্রথম একটা চাকুর দিয়েছে ক্লিনার কোম্পানীতে পাউরুটী খেয়ে কাটাইছি ২৭ দিন ভাত কি জিনিস ঐ সময়ে টের পাইছি।কোন আত্বীয় নাই ওমানে।২৭ দিন পর যখন বেতন পেলাম তখন মনে মনে ভাবলাম এতদিন ভাত খাইনা আজকে হোটেলে গিয়ে বিরানি খাব এবং ২ টা লেগ পিছ অর্ডার করলাম কিন্তুু খেতে পারলামনা কারন পিওনালি সংকুচিত হয়েগেছে।আমি যখন বিদেশে আশি তখন আমার ওজন ৮২ কিলো।২য় চাকুরীতে গেলাম।মিশরি ফোরম্যান আমাকে বলে যে খজুর গাছের ডালা কাটতে হবে।একটা হাবিল(রশি বা দড়ি) মিশারা(কড়াত) এগুলো দিয়ে খেজুর গাছের খোচ ( ডালা)কাটতে হবে।
এমনি ওমানে নতুন তারপর কোন ট্রেনিংনাই কি করব।পারবনা বল্লে তো চাকুরী থাকবেনা।কি করব? রাজি হয়ে গেলাম বিসমিল্লাহ বলে কাজে লাগলাম।বাগানের যে বাংলাদেশিরা আছে ওনারা আমার শরীরের গঠন দেখে বলে যে ১ ঘন্টা কাজ করে পালাইবে।আসলে আমি একটা গেজুর গাছের ডালা কেটে এক বোতল পানি খেতাম গাছ থেকে নেমে এত গরম আর কস্ট।এভাবে একমাস করার পর চাকুরীটা চলে গেল কারন আমার চলাফেরা কাজের গতিতে মালিক রাজিনা।
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন-
মাসকাট এয়ারপোর্টে কাজ নিলাম হেলপার,ঝাড়ু মারা সামান দেওয়া এসব আর কি ২ দিন কাজ করার পর তুর্কি ইন্জনিয়ার এর নজরে পড়লাম কারন আমি ইংরেজি বুঝি এবং কথা বলে সুন্দর করে বুজাইতে পারি।এখন আমি আর কাজ করতে হয়না ।সকালে আমাকে কাজ বুঝাইয়া দেয় এবং আমি লেবার দিয়ে কাজ করাই।৫ মাস পর আমাকে ২০ জনের টীমের ফোরম্যান বানায়।এবং যে সাপ্লাইয়ে চাকুরী করি ওনার এ পুরা সাইটের লোকদের টাইমসিট দেখাশোনা করি এবং ৭৮ জন ফোরম্যানের জেনারেল ফোরম্যান হিসাবে আমি ছিলাম।১৭০০ শ্রমিকে আমি চালাইছি।আলহামদুলিল্লাহ সব ঋন পরিশোধ করলাম।এবং ভালো টাকা ইনকাম করলাম।
ওমানে একজন বন্ধুর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্কগড়লাম।এমন কোন একটা বলা নাই যে একসাথে না খানা খাইছি।দুইজন মিলে একটা দোকান চালু করলাম সব ঠিক মতন চলছে।আমি দেশে গেলাম ৩ মাস ছুটি শেষে ওমানে আসলাম। এখন আমার হাতে কোন টাকা নাই।আর যে পাড়টনার আছে ওনিও এখন দেখছে যে দোকানে লস হয় তখন সে আর এক টাকাও ইনভেস্ট করেনা।এদিকে আমিও কোন সিদ্যান্ত নিতে পারিনা কি করব বেতন ভাড়া সহ ৩৫০ রিয়াল প্রতি মাসে খরচ।
আমাদের স্যার যে বলে পার্টনারে কোন কিছু করলে আপনার স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না।আমিও আজকে এই পার্টনারের কারনে ১৫ লাখ টাকা দুই জনের লস করলাম।আজকে আফছুছ করি এই জন্য যে আর আগে থেকে স্যারকে ফলোকরতাম তাহলে আজকে এত বড় লস খেমাম না।একটা বাকালা( মুদি) দোকান দিয়ে আজ প্রবাস থেকে এই মনের দুঃখটা কাউকে শেয়ার করতে পারিনা। নিজের বউকেও বলিনি কারন মেয়েরা টেনশন করবে তাই নিজে একাকী কস্টটার কথা কাউকে বলিনা।আজকে আমার মনটা অনেক হালকা হয়েছে। এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম উপহার দিয়েছেন আমাদের প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।আমার মতন হাজারো একবুক কস্টে চাপা থাকা সদস্যকে এই প্লাটফর্ম এ উদ্যোগতা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।দোয়া করি আল্লাহ যেন স্যারের ভাল ও জন কল্যানমুলক নেক কাজের উছিলায় আল্লাহ ওনাকে এবং ওনার পরিবারকে করোনা থেকে মুক্ত করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। এই প্লাটফর্ম এর সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৭২
Date:- ১৩/০৭/২০২১
নামঃ গোলাম মোস্তফা
গ্রাম+পোস্টঃ সিংআড্ডা
থানাঃ কচুয়া।
জেলাঃ চাঁদপুর।
ব্যাচ ঃ ১২
রেজিষ্ট্রেশন ঃ৪১৬৫৪
বর্তমান ওমান,মাসকাট,সীব সারাদি থাকি।
একজন প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা।