সবার জীবনেই নিজের বলার মত একটা গল্প থাকার দরকার
প্রিয় ভাই ও প্রিয় বোনেরা, সবাই কেমন আছেন? নিশ্চয়ই ভালো।💖
💐সবার জীবনেই নিজের বলার মত একটা গল্প থাকার দরকার। এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি না হলে কখনো জীবনের লুকানো কথা গুলো প্রকাশ করা হতো না, তাই আবার ও কৃতজ্ঞতা জানাই আমার প্রান প্রিয় মেন্টর_ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যার কারনে আজ আমার মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা কিছু কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি।🍁
🙍#মেয়ে_সন্তানঃ
আমি লুবাবা তুল জান্নাত, ফরিদপুরের একটি মধ্যেবৃত্ত পরিবারে আমার জন্ম।
আমার ছোটবেলায় বেড়ে উঠা জীবনের অধিকাংশ সময়টা কেটেছে ঘরবন্দী হয়ে কারণ আমি মেয়ে সন্তান এবং আমার আব্বু-আম্মু ইসলাম ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন দু-জনেই। আমারা তিন ভাইবোন এদের মধ্যে আমি মেজো, ভাইয়া সবার বড় এবং ছোট একটি বোন আছে। আসলে আমার সবথেকে বড় একটি বোন ও ছিল, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তিনি আমাদের ছেড়ে ছোট থাকতেই(০০) বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান পর জগতে ( বাবা- মায়ের নিকট শুনেছি) তার কথা শুনে বুকের ভিতর এ যেন এক হা-হাকার সৃষ্টি হয়। প্রচন্ড কস্ট অনুভব করি।বোনের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আল্লাহর এই নিয়তির ডাকে একদিন আমাদের ও সবাইকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। এই বোন যদি বেঁচে থাকতো তাহলে আমার জীবনটা মনে হয় বড় বোনের ভালবাসায় অন্যরকম হতো বলে সর্বদা অনুভব করি, আমি আমার বড় বোনকে অনেক বেশি মিস করি, ঘরের ছোট ছোট কাজ করতে গিয়ে মিস করি। কোন একটা কিছু যখন বুঝতে পারতাম না তখন মিস করি। ব্যক্তিগত কোন কথা বলার মত যখন কাউকে খুঁজে না পেতাম তখন মিস করি এবং আদৌ করি। আর সবচেয়ে বেশি মিস করেছি যখন আমার বিয়ে হয়েছে। তখন বারবার মনে হয়েছে যদি বড় বোন থাকতো তাহলে হয়তো এত তাড়াতাড়ি আমাকে বিয়ে করতে হতো না। বড় বোন হচ্ছে জীবনে একটা বড় আর্শীরবাদ অথবা এটাও বলা যায় আল্লাহর কাছে থেকে পাওয়া একটি বড় এবং মূল্যবান উপহার। যে উপহারটি পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি আমি। আজ ও আমার চোখে জল আসে ওর কথা ভেবে।অথচ ওকে কিন্তু আমি দেখি নাই। বাবা- মায়ের দু- জনের সহমতে প্রথম থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা তাদের প্রথম মেয়ে সন্তানের নাম রাখবেঃ# লুবাবা। তাই সেই বোন চলে যাওয়ার কারণে তার সৃত্মি ভুলতে না পেরে চিন্তা করে এই নাম আমরা কখনো ভুলতে পারবো না , তাই একই সিদ্ধান্ত আবার ও ঠিক করে আল্লাহ যদি আবার কখনো মেয়ে সন্তান দান করেন,ওই নামেই ডাকবো। সেই থেকে হয়ে উঠি আমি#লুবাবা ।যে নাম ডেকে বাবা- মায়ের তাদের প্রথম সন্তান হারানোর বেদনা থেকে কিছুটা হলেও সান্তনা পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছে আজো।ওর নামেই আমি, তাই হয়তো আমার সত্ত্বায় ও মিশে আছে।
এই সমাজে এখনো অনেক স্থানে মেয়ে সন্তানের কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না।সেখানে আমার পরিবার আমাকে নিয়ে গর্ব করে। যা আমার জীবনের পরম পাওয়া।
#বিবাহঃ-
তখন আমি এইচ এস সি পরিক্ষার্থী।বাবার বাড়িতে রাজকন্যা। এই এত বড় হয়েছি আমি,আজ অব্দি রান্না করে নি কখনো। একবার রান্নাঘরে বসে থাকতে দেখে বাবার কি রাগ -" এখানে কি করছো? তোমার কাজ পড়া শোনা করা পড়তে বস গিয়ে যাও।"মাথা নিচু করে চলে আসলাম পড়ার টেবিলে।যখন এই আমাকে বিয়ে দেয়া হলো তার কিছু দিন আগেও মা খালাদের কথার মাঝে যাওয়া বারণ ছিলো। ছোট মানুষ কেন বড়দের গল্প শুনবে।বিয়ের আগ মুহূর্তে পর্যন্ত নিতান্তই ছোট মানুষ হিসেবে ট্রিট করা হতো আমাকে হঠাৎ-ই আমার বিয়ে দেয়া হলো একটা বাড়ির বড় ছেলের সাথে। আমি হয়ে গেলাম বাড়ির বড় বৌ। বড় বৌ মানে যার দায়িত্বের শেষ নেই। যে দায়িত্ব পালন করতে
আমাকে হাজার ও হিমসিম খেতে হতো প্রতিনিয়ত মুখে ছিল না বলার ভাষা সবসময় ভয় হতো, বুকে ছিলনা কোন সাহস তারপর ও শুশুড় বাড়ির সবাইকে আপন নেওয়ার প্রচেষ্টা আমাকে কিছু সাহস দিতো যে ভাবেই হোক এখানে সবাইকে আমার আপন করে নিতে হবে। তাই নিশ্চুপ শব্দে মনে মনে শুরু করলাম সবাইকে আপন করার প্রচেষ্টা।সম্পুর্ন ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন নিয়ম নীতিতে মানিয়ে নেয়া আমার জন্য ছিলো খুবই কষ্ট সাধ্য বিষয়।
যেদিন ছেলে পক্ষ দেখতে আসলো সেদিন ছেলের এক বোন জিগ্যেস করলো কি কি রান্না করতে পারেন? আমার সহজ শিকারক্তি কিছুই রান্না করতে পারি না।এই কথা শুনে সবার চোখ যখন ছানাবরা হওয়ার উপক্রম তখন প্রেমে পরে যাওয়া ছেলেটা তাড়াতাড়ি বললো - রান্না পারতে হবে না, আমি রান্নার জন্য লোক রাখবো।
আমি পরম ভরসা পেলাম এভাবেই বিয়েটা হয়ে গেলো।এভাবেই শুরু হলো বাবার রাজকন্যার বিবাহিত জীবন।সম্পুর্ন ভিন্ন একটা পরিবেশ, ভিন্ন চিন্তার লোকের সাথে বসবাস,সব কিছুই অন্যরকম। এভাবেই কাটতে লাগলো আমার দিন,সপ্তাহ,মাস,বছর।
আমাদের কিছু কথোপকথনঃ
আমি যখন গর্ভবতী আনন্দে উৎফুল্ল স্বামী আমাকে যেন তার বাচ্চার জন্য অধিকতম ভালবাসা বাড়িয়ে দেয় যদিও এমনিতেই কম নয়। আমি আমার স্বামীকে জিগ্যেস করলাম “তোমার কি মনে হয়, ছেলে হবে না মেয়ে হবে ?”
স্বামী বললেন– যদি ছেলে হয় তাহলে ওকে আমি অঙ্ক পড়াবো, ওকে নিয়ে রোজ খেলতে যাবো, মাছ কিভাবে ধরতে হয় সেটা শেখাবো…
আমি বললাম- আর যদি মেয়ে হয় ?
তখন তিনি বললেন - আর যদি মেয়ে হয় তাহলে তাকে কোন কিছু শেখানোর দরকার নেই।
আমি বললাম- কেন ?
স্বামী বললেন - কারন, আমার মেয়ে আমাকে দ্বিতীয়বার নতুন করে সবকিছু শেখাবে… কি পরতে হবে…কিভাবে খেতে হবে… কোথায় কি বলতে হবে না বলতে হবে… একদিক থেকে দেখলে সে আমার দ্বিতীয় মায়ের মতই…আমি তার জন্য কিছু করতে পারি আর নাই পারি সে আমাকে চিরদিন নিজের হিরো মনে করবে… … যখন আমি কোন কিছু করতে তাকে নিষেধ করবো সে আমাকে বুঝতে চেষ্টা করবে। আর সবসময় তার স্বামীর সঙ্গে আমার তুলনা করবে। সে যে বয়সেই পৌঁছাক, সারাজীবন এটাই চাইবে যে আমি তাকে একটা Baby Doll এর মতই ভালবাসি। মেয়ে বলেই সে আমার জন্য পুরো সংসারের সাথে লড়াই করবে, যখন কেউ আমাকে দুঃখ দেবে সে তাকে কোনদিন ক্ষমা করবে না।
আমি বললাম, তার মানে হচ্ছে, তোমার মেয়ে তোমার জন্য যা কিছু করবে তা তোমার ছেলে করতে পারবে না ?
স্বামী বললো সেটা না… এমন হতে পারে আমার ছেলেও এসব করতে পারে… কিন্তু সে শিখবে। আর মেয়ে এই সব গুন নিয়েই পৃথিবীতে জন্ম নেবে।
আমি বললাম- কিন্তু সে তো চিরকাল আমাদের সাথে থাকবে না।
স্বামী বললো- কিন্তু আমরা তার মনের ভেতরেই থাকবো। এতে কোন কিছু যায় আসে না সে কোথায় গেল না গেল…কারন মেয়েরা সবসময় বিনাশর্তে ভালবাসা আর দেখাশোনার জন্যই জন্ম নেয়। একটা কথা মনে রাখবে মেয়ে ভাগ্য সবার হয় না… যে ঘর সৃষ্টিকর্তার পছন্দ সে ঘরেই মেয়ের জন্ম হয়। যাইহোক
হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লাম। হসপিটালে এডমিট করা হলো। কাছের আত্মিয়রা সবাই চলে আসছে নতুনকে স্বাগতম জানাতে। যথা সময়ে ওটিতে ঢুকানো হলো। সিজার করে জন্ম হলো ফুটফুটে একটা মেয়ে। নার্স বেবিকে নিয়ে বাইরে গেলো, আর বললো নানি দাদি কই মিস্টি খাওয়ান।আপনাদের মেয়েকে নেন। বাচ্চার নানি এক দোড়ৈ নাতনি কোলে তুলে নিলো। এভাবে হলে গেলাম সন্তানের মা, আপনাদের দোয়ায় ভালোই চলছে
আমাদের জীবন।
#উদ্যোগতাঃ
জীবনের প্রতিটি বাঁকে, স্বপ্ন নতুন করে সাজে
পুরোনো স্বপ্ন সাজব আমি, আমারই মাঝে।
অনেক নারীকে পারিপার্শ্বিক কারনে নিজের স্বপ্ন বা ইচ্ছেকে বিসর্জন দিতে হয়। আমার আম্মুকেও তার স্বপ্নগুলো ভুলে যেতে হয়েছে। আর আমার নানুর তো স্বপ্ন দেখা নিশেধ ছিলো।
আম্মু অনেক সুন্দর ড্রেস ডিজাইন করতে ও তৈরি করতে পারে।তার ইচ্ছে ছিলো এই লাইনে সে কাজ করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে কিন্তু পারি নাই।কারন তখন তো" নিজের বলারমত একটা গল্প ফাউন্ডেশন ছিলো না।আম্মু কোন হেল্প বা পথ প্রদর্শক পায়নি স্বপ্ন পুরনের জন্য।
হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন সব নারীর পুরন হয় না।কিন্তু সন্তানের সফলতার মধ্য দিয়ে অনেক মা খুজে পায় আত্মতৃপ্তি। মাকে যত কিছুই দেই না কেন সবই কম মনে হয়।তবে আম্মুর স্বপ্নটা যদি পুরন করে দিতেপারি সেটাই হবে সার্থকতা।
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনকে পেয়ে আমি সাহস পেয়েছি মায়ের স্বপ্ন পুরনের উদ্যোগ নিতে।আমি জিতলে জিতে যাবে আমার মা।
অন্তরের অন্তস্তল থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে।
এই গ্রুপে যুক্ত হয়ে মনে হয় স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যটা পূরণ হবে, এই প্রত্যাশায় লেগে আছি লেগে থাকব। #নিজের_বলার_মত_একটা_গল্প_ফাউন্ডেশনে,লেগে থেকে নিজেকে একজন উদ্যোক্তার সফলতার মুখে দাঁড় করাবো আমার জন্য দোয়া করবেন।☘️
🌱অবশেষে আমার জীবনের গল্প লিখতে খুঁজে পেলাম "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" আমি #জনাব_ইকবাল_বাহার_জাহিদ স্যারের প্রতিটি কথা বুকে ধারন করে চলছি ৷ সবার কাছে আবার ও দোয়ার আহবান করছি ।🌱
#শেষপ্রান্তেঃ-
যারা ধৈর্য সহকারে আমার এই লেখাটি সম্পুর্ন পড়েছেন তাদের প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা ও অসংখ্য ধন্যবাদ।সেই সাথে সকল ভাই ও বোনদের সুস্থতা কামনা করছি সুস্থতার কোন বিকল্প নেই। 🌱
🍁সপ্ন দেখুন
🍁সাহস করুন
🍁শুরু করুন
🍁এবং লেগে থাকুন.......
🍁সাফল্য আসবেই ইনশাআল্লাহ
______________ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার🌿
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮১
Date:- ২৭/০৭/২০২১
🍁আমার পরিচয়🍁
🙍নামঃ লুবাবা তুল জান্নাত।
⚛️গ্রুপঃনিজের বলার মত একটা গল্প
✍️রেজিস্ট্রেশনঃ৬৫১০২
💉ব্লাড গ্রুপঃ (A+)
👮ব্যাচঃ ১৪
🌐নিজ জেলাঃ ফরিদ পুর
📧 Email:lubabancf@gamil.com