নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের শিক্ষা হচ্ছে , নিজেকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে
................বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম.................
শুরুতে হাজার কোটি শুকরিয়া আদায় করছি মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট,,, যার দয়ায় এই প্যানডেমিক সিচুয়েশনের মধ্যে ও আমাকে সুস্থ রেখেছেন, নিরাপদে
রেখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
আস্সালামু আলাইকুম
ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সন্মানিত প্রিয় বন্ধুগন ----- --কেমন আছেন সবাই ?
আশা করছি এই মহামারী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ও যার যার অবস্থানে সকলেই এখন পর্যন্ত সুস্থ ও নিরাপদে আছেন। আপনাদের সকলের জন্য মন থেকে অনেক অনেক দোয়া রইলো আল্লাহ যেন এই প্লাটফর্মে সবাইকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন। আমীন।
আমি শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করছি " নিজের বলার মতো একটা গল্প " ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর, প্রিয় শিক্ষক, তরুণ প্রজন্মের আইডল,,, শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারকে,,, যার শিক্ষায় ও অনুপ্রেরণায় লাখ তরুন তরুনী জীবন পালটে যাচ্ছে,,, নিজে অধরা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার স্বপ্ন দেখছে,,,, সে স্বপ্নবাজ তরুন তরুণীদের মধ্যে আমিও একজন।
স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে
কাজের সাথে আঠার মতো লেগে আছি।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের শিক্ষা হচ্ছে , নিজেকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে,,, জীবনে একজন ভালো মানুষ হয়ে বেচে থাকার কোন বিকল্প নেই। তার পাশা পাশি আমাদের জীবন জীবিকার জন্য প্রতিদিনই কর্ম করতে হয় । সেটা হতে পারে চাকরি হতে পারে বিজনেস। উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর আমাদেরকে শিখিয়েছেন কি ভাবে একজন সফল উদ্যক্তা হওয়া যায়।
প্রিয় স্যারের একটা স্লোগান মনে পরে গেলো,,, 👉
চাকরি করবো না..... চাকরি দিবো,,, নিজের বলার মতো একটা গল্প " নিজের জীবনে তৈরী করবো ইনশাআল্লাহ,
আসলে পরের অধিনে চাকরি করা আমার ভালো লাগে না, অনেক সময় ভালো না লাগলে ও জীবিকার তাগিতে চাকরি করতে হয়,,,,। চাকরির পাশাপাশি প্রিয় স্যারের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজে ছোট পরিসারে একটা বিজনেস শুরু করেছি। আমার
স্বপ্ন অনেক বড়,,, তাই ছোট স্বপ্ন টা ধীরে ধীরে অনেক বড় হবে।
বাস্তব জীবনের গল্পটা সব সময়ই অনেক করুন হয়।আমার বাবা চাচারা মিলে তারা চার ভাই এক বোনের মধ্যে আমার আব্বু সবার বড় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই আমার আব্বু খুব সহজ সরল একজন মানুষ। বাবার মুখে গল্প শুনতাম আমার আব্বুর যখন ১২বছর বয়স,,, তখন নাকি আমার দাদি মারা যায়। দাদি যখন মারা যায় আমার ফুফি তখন খুব ছোট।তাই দাদা আবার বিয়ে করেন ফুফি-কাকাদের দেখাশুনার জন্য।
আব্বুর মুখে শুনেছি আমার নতুন দাদি নাকি নাকি হিংসুটে ছিল। আমার ফুফি-আব্বু কাকাদের তেমন দেখতে পারতোনা। সৎ মা যেমন হয় আর কি,,,, যদিও কাকাদের মোটামুটি বুঝ হয়েছে কিন্তু ফুফিতো ছোট অবুঝ, সেজন্য সমস্যা ছিল বেশি ফুফুকে নিয়ে ।
দাদি যখন মারা যায় তখন আমার ফুফি বুকের দুধ খেত। তাই দাদি মারা যাওয়ার পর আব্বু ফুপির জন্য অনেক রিস্ক নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে গরুর দুধ আনার জন্য যেত। একদিন নাকি ফুফির জন্য দুধ আনতে যাওয়ার সময় আব্বু কে তৎকালীন বিএসএফ খুব জোড়ে একটা বেতাঘাত করেছিল। যার ব্যাথা টা নাকি এখনো আব্বু অনুভব করে।
যাইহোক কষ্ট করে আব্বু নিজের সন্তাদের মতো ফুফি+কাকাদের বড় করেছে।এরই মধ্যে নতুন দাদির ঘরে জন্ম নেয় একে একে তিন ছেলে সন্তান(পাঁচ ভাই-বোনের থেকে হয়ে যায় আট ভাই-বোনের সংসার)। তাদেরকেও আব্বু খুব যত্ন সহকারে মানুষ করেছে।কিন্তু দিনশেষে ঘরের সুখটি আব্বু কখনো পায়নি। বাবার বড় ছেলে হলে যা হয়,,,, আব্বু এখনো মাঝে মাঝে কষ্ট বুকে নিয়ে বলে --- আমি এই সংসারের জন্য কি না করেছি - ধানের ভাড় নিয়েছি এক কাঁধে আর আমার ভাইদেরকে নিয়েছি এক কাঁধে।
আমার কাকারা খুব স্বার্থপর ছিলো । যদি ও বাবা সবাইকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে এখন বড় হয়েছে নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝে না।
আব্বুর যখন বিয়ের সময় হয়েছে, আব্বুকে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছে। বর্তমান ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চৌব্বাশ গ্রামে। বলেন তো কনে টি কে ? তিনি আর কেউ নন বর্তমানে আমার মা-জননী🥰
আব্বুর মুখের কথা আম্মু নাকি দেখতে খু্ব কিউট ছিল। যার ফলে দেখতে গিয়েই বিয়ে করিয়ে নিয়ে আসে। তখন আম্মুর বয়স ছিল নয় বছর(আগের দিন বলে কথা)। তারপরেও আমার আম্মু খুব সুন্দর করে সংসার টাকে আগলে রেখেছে।
কিন্তু আমার নতুন দাদি ছিল খুব বধের হাড্ডি ও খারাপ মানুষ । তিনি সর্বদা আমার আম্মুর পিছনে লেগেই থাকতো। শুধু তাই নয় । যে ফুফিকে আমার আব্বু ছোটবেলা খু্ব কষ্ট করে বড় করেছে। সেই ফুফিও আমার আম্মু কে খুব জ্বালাতো। আমার আম্মু খুব সহজ-সরল ছিল তাই সব মেনে নিত। কতো যে মাইর খাইয়েছে এই ফুফি আর দাদির তা এক মাএ আল্লাহ ভালো জানে।দুজনে মিলে আম্মুকে মারতো😭
তবে আমার কাকারা খুব ভালো ছিল।কখনো আম্মুকে জ্বালাতোনা। কোন কটু কথা ও বলতোনা।
আমার দাদাও নাকি অনেক খারাপ ছিল😭দাদির কথা ধরে ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করতো।
আমার আম্মুকে চাউল মেপে দিত দাদা। সংসারে সদস্য সংখ্যা বেশি থাকায় অনেক সময় নাকি সবাইকে খাইয়ে আম্মুর পেটে ভাত জুটতনা😭আমার আম্মুর চুল খু্ব বড় আর বেশি ছিল। তাই দাদা মাথার তেল দিতনা ।দিলেও একটু একটু মেপে দিত।😭
এছাড়াও অনেক কষ্ট করেছে আমার আম্মু।
আমার আম্মুর কষ্ট দেখে পাড়া-পড়শীর সবাই বলতো আমার আম্মু হয়তো এই সংসারে থাকবেনা।আমার আম্মুর কষ্ট দেখে পাড়া-পড়শীরাও নাকি কান্না করতো।সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়তো তখন নাকি আমার প্রতিবেশী রা চুরি করে আমার আম্মুর জন্য খাবার এনে আম্মুকে খাইয়ে ভোর হবার আগেই প্লেট গুলো নিয়ে যেত।
তবে আমার দেখা বেস্ট মানুষ হলো আমার বাবা।যদিও প্রথম প্রথম দাদি+ফুফির কথা শুনে(ওদের উপর রাগ করে) আমার আম্মুকে জ্বালাতো।পরবর্তী তে সবার অত্যাচারে আমার আব্বু আম্মুকে নিয়ে এক কাপড়ে আলাদা হয়ে যায়।
আলাদা হওয়ার পর বেশ চলছিল আমাদের সংসার।কিন্তু আমার আব্বু-আম্মুর সুখের সংসার দেখে আমার দাদার খুব হিংসে হলো। তাই দাদা নাকি আব্বুকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আব্বুর গরু-ছাগল অন্যান্য সব বিক্রি করিয়ে দাদার থেকে জায়গা দিয়ে ঘর তুলে দিবে বলে বাড়িতে নিয়ে আসে,, বাবা সহজ সরল বিদায় তাদের চালাকি বাবা বুঝতে পারেনি 😭
বাবাকে চালাকি করে নিয়ে আসার পর আবার সেই আগের অশান্তি শুরু হয়ে যায় । তাই আব্বু বাধ্য হয়ে নানার বাড়ি চলে যান । নানার বাড়ি যাওয়ার পর নানা আমার দাদার ভয়ে আম্মু-আব্বু কে নিজ বাড়িতে জায়গা না দিলেও নানার বাড়ির থেকে একটু দূরে আম্মুকে নিয়ে থাকার মতো একটা ব্যবস্থা করে দেন ।
সেখানে নতুন করে সংস্যার জীবন শুরু করলো,,,তখন ছিলো খুবই অভাবের দিন । তাই নানু ১০-১৫ দিন পর পর আমার খালামনিদের কে দিয়ে চাল-ডাল পাঠাতো মেয়ের জন্য।
আমার খালামনিরা সেই কতোদুর হেঁটে হেঁটে যেত বোনের জন্য😭(শুনে রাখা ভালো আমার আম্মুরা ৫বোন চার ভাই যার মধ্যে ভাইয়েরা সবার ছোট)।তাই আম্মুর কষ্টের দিনগুলোতে আমার খালামনিরাই ছিল আম্মুর পাশে 🥰 এইমি করে চলতে থাকলো দিনের পর দিন।
এরি মাঝে হঠাৎ একসময়,,,
আমার নানুর ভাইয়েরা কোনো এক উপায়ে খাগড়াছড়ি তে এসে জায়গা কিনে ঘরবাড়ি করে।যার সু-বাদে আমার দাদাও একসময় ব্যবসার জন্য খাগড়াছড়ি তে আসে।এসেই উঠে তৎকালিন হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের গঠিত শিবিরে।দাদা আসার পর আব্বুও চলে আসে।সেই সাথে আমার অন্যান্য কাকারাও চলে আসে।
খাগড়াছড়ি তে আসার পর একে একে আমার সব কাকারাই বিয়ে করে এবং ফুফিকেও বিয়ে দেয়া হয়।
শিবিরে জন্ম নেয় আমার বড় বোনটি।খুব খুশি পুরো পরিবারে।কিন্তু খুশিটাও প্রায় নিভে গেছিল।কারন আমার আপু ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিল।ভাগ্যক্রমে অনেক খোজাখুজির পর আপুকে ফিরে পেয়েছে।
যাইহোক,আপুর আড়াইবছর পর আবারো আমার আমার একটি ভাই হয়।
ভাইয়া হওয়ার পর আব্বু শিবির থেকে নেমে নিজে জায়গা কিনে ঘর-বাড়ি করে।ভাইয়া দেখতে যেমন সুন্দর-সুদর্শন ছিল,তেমনি ছিল স্বাস্থ,তেমনি ছিল মেধাশক্তি।সবাই খুব আদর করতো ভাইকে।আমার আপু আর ভাইয়া ছিল পরিবারের সবার চোখের মণি।
ভাইয়াকে পেয়ে খুব খুশি পুরো পরিবার।কিন্তু খুশি টা বেশিদিন টিকলোনা😭
ভাইয়ার তখন আড়াই বছর।এই আড়াই বছর বয়সী ভাই আমার কাজে খুব পটু ছিল।
একদিন হঠাৎ ভাইয়ার পেটে ব্যাথা উঠলে আম্মু ভাইয়াকে কুলে শুইয়ে তরকারি কাটতেছিল।
তরকারি কাটা শেষ হলে আম্মু দেখতেছে ভাইয়া আর নাই😭
পরিবারের শোক..... আম্মু আব্বু খুব ভেঙে পড়েছে।
ভাইয়ার শোক কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লেগেছে।।ভাইয়া মারা যাওয়ার পর আব্বু সেই বাড়ি আমার সেজো কাকাকে দিয়ে অন্যস্থানে জায়গা কিনে সেখানে ঘর-বাড়ি করেন।
ভাইয়ার আড়াই বছর পর আমার আরেক আপুর জন্ম হয়।এরপর আরেক আপুর।
এরপরেই জন্ম হয় আমার।আমার জন্মের পর আব্বু অনেক জায়গার মালিক হন।আমার আব্বু খাগড়াছড়ি তেই গ্রামে বড় পরিসরে জায়গা কিনে।যেখানো আদৌ আমরা আছি।আমাদের কোনো ভাই নাই তাই ছোটবেলা থেকেই আমরা কষ্ট করে আসছি।
আমার আব্বু জন্ম থেকেই দুঃখী।আরো দুঃখী হয়ে যায় যখন আমার আপন দাদি মারা যায়।কারন সেই দাদী ছিল একমাত্র আমার আব্বুর আপনজন।আমার আব্বু এখনো মাঝে মাঝে কান্না করে বলে আমার মা পেটে গামছে বেঁধে ক্ষিদা মেটাতো।কিন্তু মায়ের ভাগের খাবার টাও আমাকে খাওয়াত।কারন আমি তার বড় ছেলে ছিলাম😭এরপর থেকে দাদার সংসারের বোঝা আর আব্বুর ভাই-বোনের বোঝা বইতে বইতে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। যার খেসারত এখনো আব্বুকে দিতে হচ্ছে।আব্বু খুব সহজ-সরল ছিল যার ফলে সবাই আব্বুকে ঠকাতো😭
বাপের সংসারের বোঝা টানতে টানতে আব্বু নিজের সংসারে এসেই অসুস্থ😭তারপরও মন পায়নি কারো।আমার কাকারা আজো আমার আব্বুর একটু খোঁজ-খবর নেয়না😭
কি খোঁজ নিবে তারাতো আশায় আছে কবে আব্বু মরবে আর কবে আমাদের সম্পত্তির ভাগ ওরা নিতে পারবে।কারন,সংসারে কোনো ছেলে না থাকলে নাকি সেই সম্পত্তি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ভাইয়ের ছেলেরা পায়😭
তাই আইন অনুযায়ী কাকারাও ছোবল মারার অপেক্ষায় আছে।
আব্বুর জীবনটা কষ্টে কষ্টেই গলে,,, যাকে জীবন সঙ্গী করে নিয়ে আসলো তাকে ও বৃন্দু পরিমান সুখ দিতে পারেনি।
বাবার সরলতার সুযোগ নিয়ে দাদা + সৎ দাদী আর ফুফু - কাকারা যা করেছে সেটা মেনে নেওয়ার মতো নয়।
আমার আম্মুর বিয়ের পর থেকে বাবার সংসারে এসে জীবন ভর কষ্ট-ই করে গেলো, তার বিনিময়ে শুধু ফুফু আর দাদা দাদীর অপমান অপদস্ত সহ্য করতে হয়েছে। আল্লাহ যেন তাদেরকে হেদায়েত দান করেন। আমীন।
সন্মানিত প্রিয় বন্ধুগন আজকের মতো এই পর্যন্তই,,,, পরবর্তীতে আবার ও জীবনের গল্প নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্যে ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
শত ব্যস্ততার মাঝে ও একটু সময় নিয়ে ধৈর্য্য ধরে আমার গল্পটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি সব সময় পাশে থেকে আমাকে উৎসাহিত করবেন।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮১
Date:- ২৭/০৭/২০২১
ধন্যবাদান্তে......
আমি আমেনা আক্তার।
ব্যাচ নাম্বারঃ১৪
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারঃ৬২৭৮৩
পূর্বপুরুষদের অবস্থান....
জেলাঃকুমিল্লা,
উপ+থানাঃবি.পাড়া।
বর্তমান অবস্থান...
জেলাঃখাগড়াছড়ি।
উপ+থানাঃমানিকছড়ি।
ব্লাড গ্রুপঃও পজিটিভ