অস্রুশিক্ত নয়নেও জ্বলে উঠতে পারে অগ্নশিখা
অস্রুশিক্ত নয়নেও জ্বলে উঠতে পারে অগ্নশিখা
এইতো ২বছর আগেও বেচে থাকার সমস্ত ইচ্ছা হাড়িয়ে ফেলেছিলাম।সারাক্ষণ মৃত্যু কামনা করতাম নিজের।এতটা পেইন আর যন্ত্রনা হতো যা সহ্য করতে পারতাম না।আর সবচেয়ে বেশি কস্ট হতো যখন কথা বলতে পারতাম না।মা কে মা বলে ডাকতে পারতাম না।যখনই চোখ খুলতাম মায়ের চোখের জলভরা মুখটাকেই দেখতাম।
অনেকবারই হাতের স্যালাইন খুলে ফেলতাম,অক্সিজেন নলটা খুলে রাখতাম যাতে মরে যেতে পারি।কিন্তু যখনই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতাম আম্মু ব্যস্ত হয়ে পরতো। নার্সদের ডাঃ দের ডেকে নিয়ে আসতো।আর তারা এসে সব ঠিক করে দিতো।আর আম্মুকে বকা দিতো,কেন খেয়াল রাখেন নি তিনি আমার?
তখন আবারও খারাপ লাগতো।কিন্তু কিছুই বলতে পারতাম না।
যখন ১বছর পর বাসায় ফিরি তখনও হোপলেস ছিলাম।মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খেতো যেহেতু সুস্থ হলাম না,মানে কয়েকদিন পর ঠিকই মারা যাবো।
সারাক্ষণ ঘরেই থাকতাম।বিশেষ করে অন্ধকারে।আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফোটানোর জন্য সকলের ব্যতিব্যস্ততা দেখে অবাক হতাম।ছোট ভাইটা দিনরাত মজার মজার জোকস বলতো,অভিনয় করতো মেয়ে সেজে,মেয়েদের মত কথা ও আচরন করতো,আব্বু আর মা খুনসুটি করতো,বোন ছোটবেলার মজার মজার স্মৃতি বলতো।
কিন্তু চোখে জল ছারা মুখে হাসি আসতো না।ওদের এগুলো দেখে আরো কস্ট হতো, যখন মরে যাবো তখন তো একা থাকবো,ওদের পাবো না।কিভাবে থাকবো একা একা।এগুলো ভেবে আরো মন খারাপ থাকতো
একটা শয়তানের হাড্ডি ফ্রেন্ড ছিলো।যখনই আসতো সবার আগেই ঠাস ঠাস করে দুগালে লাগাতে দুটা।মুখ গোমরা করে রাখতাম বলে।ও আর্মি ট্রেনিং প্রাপ্ত ছিলো।ইসস যা লাগতো ওর থাপ্পরগুলো।চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসতো।
আর ও বলতো জল চাইনা,কবে তুই এই থাপ্পরের বদলা নিবি সেটা বল?🥰
আস্তে আস্তেই পরিবর্তন আনি নিজের মাঝে।চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আসে হঠাৎ করেই যখন একটু সুস্থ হই।
সকলের অনুপ্রেরণায় ঘুরে দাড়ানোর কথা ভাবি।এতটা যন্ত্রণা, এতটা কস্ট, এত যুদ্ধ করেও যেহেতু মরিনি তাহলে হয়তো আমার কোন কাজ করা বাকি আছে এখনো।সম্ভবত সেটার জন্যই বেচে আছি এখনো।কিন্তু সেটা কি?
গল্প পড়া শুরু করেছিলাম তখন।প্রচুর গল্প পরতাম।বেশি থাকতো অনুপ্রেরণামূলক।কিভাবে একটা অন্ধকার জীবন/সময় পার করে নিজেদের আলোকিত করেছে সফল ব্যক্তিবর্গ সেগুলো পরতাম।ইন্সপায়ার ও হতাম।
আমার এক স্যার বলেছিলো,তিনি যা আয় করতেন লেখাপড়ার পাশাপাশি সবটাই তিনি ব্যবসায়িক জ্ঞান অর্জনের পথে ব্যয় করেছেন।বই পরেছেন,বিজনেস সেমিনার এটেন্ট করেছেন,।দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীদের ফলো করেছেন,তাদের বিসনেজ পদ্ধতি জেনেছেন।সবকিছু জেনে শিখে আজ তিনি নিজেও একটা লিমিটেড কোম্পানি চালু করেছে।
আমিও পড়া শুরু করলাম।হয়তো আমিও সবকিছু জেনে বুঝে শিখে কিছু করতে পারবো তাই।সফলতার গল্প নয়,ব্যর্থতা থেকে সফলতার গল্পগুলো পরতাম বেশি।
ভাবতে শুরু করলাম,তারা যদি এত কস্ট করার পরও সফল হতে পারে তাহলে আমি কেন নয়।কস্ট তো আমিও করলাম,তাহলে কস্টটাকেই কাজে লাগাই।দেখি তাদের মত আমার জীবনও আলোকিত করতে পারি কি না।
শুনতে আযব মনে হলেও এমন অদ্ভুত ভাবনা মাথায় চলে আসলো।
আমিও পারবো কিছু করতে,যতদিনই বেচে থাকিনা কেন?চেস্টা তো করে দেখতেই পারি।যদি পেরে যাই আমি🥰🥰🥰
যারাই সফলতার খাতায় নাম লিখিয়েছেন প্রত্যেকেই একটা কঠিন ও জটিল,কস্টকর সময় পার করেই সফলতার পথে এগিয়েছেন।
জয়েন হলাম এই প্লাটফর্মে।জয়েন হলাম কেরানীগঞ্জ জোনে।স্যারের সেশন ও ভিডিও গুলো,জোনের ভাই বোনদের এত এত অনুপ্রেরণা, সাপোর্ট পেয়েছি যে সত্যি কিছু করার সাহস পেয়েছি।
যদিও আমার কাজটা ছোট আকারে।আর এতে লাভের অংশ নেই বললেই চলে।তবুও আমি করছি ভালবেসে কাজটা।কেননা আমি তো আয় করতে আসিনি।একটা পরিচয় পেতে এসেছি।নিজের একটা পরিচিতি।
আশাকরি পরিচিতির সাথে সাথে আমার কাজের পরিধিও বাড়বে।জন্ম মৃত্যু তো আল্লাহর হাতে।তাই যতদিন বেচে আছি,প্রতিটা ঘন্টা, প্রতিটা মিনিট,প্রতিটা সেকেন্ড কাজে লাগাতে চাই।
সফলতা নাই পেতে পারি জীবনে,কিন্তু জীবনটাকে উপভোগ তো করতেই পারি।পরিবারের সাথে, প্রিয় প্লাটফর্মের সকলের সাথে একটা হাসিখুশি সুন্দর জীবন কাটাতেই তো পারি।
এখন আমি হাসতে পারি!সকলের সাথে মিশতে পারি।অল্পকিছু কাজও করছি।কান্না করাটা বলতে গেলে ভুলেই গেছি।মন খারাপ ও হয়না এখন আর।সবকিছুকেই পজিটিভ ভাবে নিতে পারি।
জানিনা জীবনে কতটুকু কি করতে পারবো?তবে ৩বছরেরও বেশি সময় অসুস্থ থাকার পরও যদি বেচে থাকতে পারি,নিজ হাতে যদি নিজের Death Certificate ছিরে ফেলার মত সৌভাগ্য হয় থাকে আমার,তারমানে আমার দ্বারাও কিছু করা সম্ভব।যার জন্যই আমার বেচে থাকা।
আর ইনশাআল্লাহ আমি পারবো।যে চোখে একসময় অস্রু ঝরতো,সেই চোখে আগুন জলবেই একসময়।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮১
Date:- ২৭/০৭/২০২১
সকলের দোয়া ও সহযোগিতা প্রার্থী
সোনিয়া সালমান
ব্যাচ নংঃ১৩
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৫৭২১৪
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
লাইভ সাপোর্ট টিম মেম্বার
কেরানীগঞ্জ জোন
নবাবগঞ্জ ঢাকা
কাজ করছি "ইসলামিক গিফট প্যাকেজ" ও Luttow currier নিয়ে।