প্রতি মাসে ১৫০০ করে টাকা হাতে আসতে শুরু হলো
আমার জীবনের কিছু প্রাপ্তি গল্প।
নিজের বলার মতো একটা গল্প
আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহ অশেষ রহমতে ভালো আছেন। প্রথমে আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, মহান স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি যিনি আমাদের মহামারীর মধ্যে সুস্থ রেখেছেন, এবং হালাল রোজী উপার্জন করার তৌফিক দান করেছেন।
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি "বাবা মায়ের" প্রতি যাদের মাধ্যমে আমরা সুন্দর পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করেছিতাদের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আমাদের ভালো শিক্ষা দিয়েছেন।
এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি, ভালো মানুষের বিশাল ১টি পরিবার যেখানে রয়েছে ৬৪ জেলার ভাই বোন ৫০টি বিদেশে থাকা প্রবাসী ভাই বোন।
আমি মোঃ সোহেল রানা। আামার বাবা একজন সরকারি চাকরি করে। আমরা চার ভাই-বোন। আমাদের পরিবারের উপার্জন করতো এক মাত্র বাবা।আমার পরিবারের চার ভাই-বোনদের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমি ২০০৭ SSC পাশ করি। আমাদের পরিবার একটি মধ্য বিত্ত পরিবার। SSC পাশ করার পর থেকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
কিছু দিন পরে আম্মু একটা ছাত্র ঠিক করে দিয়ে বলে। এখন থেকে তোমার খরচ ছাত্র দিয়ে চালানোর চেষ্টা করো।তার পরে ছাত্র পড়ানো শুরু করলাম।প্রথম মাসে একটা ছাত্র পড়াতে না পড়াতে দ্বিতীয় মাসে আরও একটা ছাত্র পড়ানো শুরু করলাম। এখন প্রতি মাসে ১৫০০ করে টাকা হাতে আসতে শুরু হলো।আম্মু বললো তুমি সব টাকা খরচ না করে ১০০০ টাকা জমানো শুরু করো।এলাকায় একটা সমিতি ছিল।সমিতিতে নাম দিয়ে দিলো। এর পর থেকে টাকা জমানো শুরু করলাম। এক বছর শেষ হলে।
এখন আমার ইনকাম মাসে ৭০০০ টাকা। এই টাকা থেকে কোচিং এর বেতন দিতে হবে আম্মু বলে দিল।বেতন দিয়ে পড়াশোনা এরমধ্যে আমার HSC exams চলে আসলো।২০০৯ সাথে পরীক্ষা দিলাম। রেজাল্ট ভালো হলো এরমধ্যে হেপাটাইটিস বি+ হলো।তারপর ডাঃ এক মাস রেষ্ট নিতে বলো।এর মধ্যে সব ছাত্র ছুটে গেল।
এর পর পরিবহনের চাকরি করতে হলো ১ বছর। পরিবহনে চাকরি করতে গিয়ে দেখি অন্য এক জগৎ। আমাকে শিকার করতে হবে। আমার অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম। প্রথম মাসে টিকেট কাউন্টারে বসতে হবে। প্রথম সপ্তাহে গেল প্রশিক্ষণ নিয়ে। দ্বিতীয় সপ্তাহে কাউন্টারে বসলাম। আমি জানতাম না জাল টাকা কেমন হয়। এক দিন ডিউটি করে।তারপরের দিন টাকা জামা দিতে হয়। জমা দিতে গিয়ে দেখি ২০ হাজার টাকার মধ্যে ৭ হাজার টাকা জাল।এখন আমার ২ মাসের বেতন টাকা কাটা যাবে। আমার মনের অবস্থা খুব খারাপ। অফিসের ভিতরে বসে আছি। তখন যে আমাকে চাকরি পেতে সাহায্য করেছে। সে এসে বলো কি হো ভাই। আমি বললাম যে ভাই গত কাল আমার কাউন্টারে ৭ হাজার টাকা জাল পরেছে। আমি কি করবো।সেই ভাই পরের দিন আমার কাছে এসে। আমার কাউন্টারে বসে সব জাল টাকা চালিয়ে দিল।আর আমাকে চিনিয়ে দিল এটা জাল টাকা। এভাবে চাকরি করতে হলো।
চাকরির ফাঁকে ফাঁকে ছাত্র পড়ানো শুরু করলাম। এর পর থেকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই ভাবে তিন বছর চলে গেছে। এর মধ্যে ২০১৩ আমি BBS প্রোগ্রামে ভর্তি হলাম। পড়াশোনা ও ছাত্র পড়ানো চলছিল। ২০১৪ এসে আমার সমিতিতে জমা হলো ১ লক্ষ ৩০ হাজার। আম্মু ২০১৪ জুন মাসে অসুস্থ হয়ে পরলো। আম্মুর চিকিৎসা হচ্ছিল বারডেম হাসপাতালে।২০১৪ সালের আগষ্ট মাসে ১ম বছরের পরীক্ষার সময় পরলো।আম্মু অসুস্থ হওয়ার কারণ এখন আমার বাসায় রান্না করতে হয়।ছাত্র পড়তে হয়।আম্মুর হাসপাতালে খাবার নিয়ে যেতে হয়।
এখন আমার বোনে দুটি কথা বলবো।আমার বড় বোনের বিয়ে হয় ২০০২সালে।আপু শশুর বাড়ি থাকেন।ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আম্মুর সেবা করার জন্য বোনকে নিয়ে এলাম। আম্মু ২০১৫সালে জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ মারা যায়। আম্মু মারা যাওয়ার পর আবার জীবনের নেমে এল আবার বিপর্যয়। এলাকার লোকজন বলবো ছাত্র পড়ানো বাদ দেওয়া যায়না? আমি বললাম যায়। এরপর আমি মার্কেটে চাকরি নিলাম ৩০০০ টাকা বেতনে। যে দোকানে ঢুকলাম সেই দোকানের মালিক পরিচত ছিলো। সে ঢুকতে না ঢুকতে অপরিচিত হয়ে ওঠে। তার কাছে থেকে অনেক নিয়ম কানুন জানতে পারলাম। তখন মেনে নিলাম জীবনে আমার অনেক শিক্ষা বাকি আছে। কারণ আমার কাছে ১৫০,০০০ টাকা আছে। আমি ব্যবসা করবো তাই। এই ভাবে ২ মাস গেল ৩য় মাসে আমার জ্বর আসলো। আমার ২দিন পরে তার ছেলের জ্বর আসলো। সে আমাকে ফোন দিয়ে বলে এখন দোকানে আসতে হবে অথবা চাকরি থাকবে না।আমি বললাম আমার শরীরে ১০২° জ্বর আমি বিছানা থেকে ওঠতে পারছি না কিভাবে আসবো। তিনি বলেন যে তোমার আর আসতে হবে না। আমি আর কোন কথা বললাম না।আব্বু কে ও বিয়ে করতে হবে। আব্বু ছোট ভাইকে পুলিশে ঢুকিয়ে দিয়েচ্ছেন।যখন প্রশিক্ষন দিতে যাবে তখন আব্বু ছোট ভাইকে সামনে বসিয়ে বললেন তুমি কি কবে।আমি বললাম যে ব্যবসা করবো।আব্বু বললো আমার কাছে যা ছিলো তোমার ছোট ভাইকে দিয়ে দিছি।এখন আমার কাছে কোন টাকা নাই। আমি বললাম আমার কাছে ১৫০,০০০ টাকা আছে। আব্বু বললো ১ বছর পরে দোকান নিতে পারবে। আব্বু সাথে কথা বলার আগে যে দোকানে ছিলাম তাঁর ছেলেকে বলছি আগামী ৩মাসের মধ্যে দোকান নিব।ওর বাবা আমাকে মীরপুরের মধ্যে দোকান নিতে দিবে না
ওকে বলছে। আমি আমার বড় বোন জামাইয়ের সাথে কথা বলে ১ লক্ষ টাকা নিলাম যে ১ বছর পরে দিয়ে দিব। ভাই বলো ঠিক আছে দোকান দেখ।আমি মনে মনে বললাম নতুন মার্কেটে অগ্রিম সেলামি কম হবে। একটা নতুন মার্কেটে দোকান দেখলাম আমাকে দিবেন না।করন আমি নতুন ব্যবসায়ি তাই।আমি কমিটির লোকজন এর সাথে কথা বলে রাজি করালাম। সাত দিন ঘুরে সফল হলাম। ৫০০০০ টাকা দিয়ে বুকিং করলাম আল্লাহর রহমতে।২.৫ লক্ষ টাকা অগ্রীম সালামী দেয় দিলাম। ডেকোরেশন করতে ১ লক্ষ টাকা বিভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করলাম। এখন দোকানে পন্য সামগ্রিই আনতে হবে।টাকার দরকার। বড় আপুকে বললাম কোন এন জি ও থেকে ১ লক্ষ টাকা তুলে দিতে পারবেন। সে এন জি ও কর্মীর সাথে কথা বলে ৫০০০০ টাকা নিয়ে দিতে পারবেন। আমি বললাম আচ্ছা ১৪ দিন পরে টাকা দিয়ে দিল।২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ দোকান খোলা শুরু করলাম। নিজের দোকান চালানো শুরু করলাম।৬ মাস ফ্রী ছিলো আলহামদুলিল্লাহ ২০১৭ মার্চে ভাইয়ার টাকা দিয়ে দিতে সক্ষম হলাম। প্রথম বোরকা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। তারপর ধীরে ধীরে ভিন্ন পন্য সংগ্রহ করলাম। ২০১৮ সালে এসে ব্যবসায় ধরন পরিবর্তন করতে শুরু করলাম। ওড়না, হিজাব, ব্লাউজ পেটিকোট আন্ডার গার্মেন্টস, প্লাজু,পায়জামা, ইত্যাদি নিয়ে কাজ শুরু করলাম ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে ইকবাল বাহার স্যারের একটা বই দেখলাম রকমারি ডটকম এর এড দিচ্ছে।বইটির নাম "নিজের বলার মতো একটা গল্প "। রকমারি ডটকম থেকে বইটি ক্রয় করলাম।বইটি পড়া শুরু করলাম। অনেক সুন্দর সুন্দর কথা জানতে পারলাম। বই থেকে যে শিক্ষা পেলাম। আমিও দেরি না করে অতি আগ্রহ নিয়ে চ্যানেলটি প্রথমে সাবস্ক্রাইব করে নিলাম।তারপর ভিডিও আকারে সেশন আর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প গুলো দেখতে লাগলাম।সেশন গুলো ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প গুলো দেখতে দেখতে আমার ভুল গুলো চোখের সামনে ধীরে ধীরে সংশোধন করতে শুরু করলাম।তার উপর ভিত্তি করে দোকান পরিচালনা শুরু করলাম। আমাকে আর পিছনে ফিরে আসে হয় নাই। ২০২০ সালে ০৫/০২/২০২০ তারিখে আল্লাহর অশেষ রহমতে আরও একটা দোকান নিলাম।আমার সবচেয়ে খুব কষ্টের কথা। আমার সবচেয়ে নিকট মতো লোকজন এর কাছে টাকা সন্ধান করেছি। তখন একজন ব্যেক্তি টাকা দেয় নেই বরং একটা উক্তি করেছে যা আমাকে অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করবে। উক্তি টি হলো " হাটতে পারনা দৌড়াতে চাও কেন "কথাটি আমার মনে কাটা হয়ে পুশ করছে। এখানে আর একটা কষ্টের কথা আছে । করেনা ভাইরাস এসে আমাকে থামিয়ে দিল।আজকে ২০২১ সালে এসে আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক ভালো আছি। হঠাৎ এক দিন মোঃ আশরাফুল আলম ভাই একটি পোস্ট করলো। নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন গ্রুপে দেখে আমি ভাইয়াকে ইনবক্সে নক করলাম। ভাই আমি রেজিষ্ট্রেশন করবো।তারপর আমি নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে রেজিষ্ট্রেশন করে নিলাম।
নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে রেজিষ্ট্রেশন করে যুক্ত হওয়ার পর,নিজেকে ধন্য মনে করি।অতীতে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলছি শুধুমাত্র এরকম একটি প্লাটফর্ম এর সন্ধান না পাওয়ার কারণে। এই প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছি কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যাই,কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায় এবং উদ্যোক্তা হতে অনেক টাকা লাগবে মাথায় যে ভুল ধারণা টা ছিল ওটাও চলে গেছে, এই প্লাটফর্ম থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস শিখতে পারছি কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যাই কারণ ভালো মানুষের বিকল্প নেই, ইন শা আল্লাহ ভবিষ্যতে স্বপ্ন হলো একজন উদ্যোক্তা ও একজন ভালো মানুষ হয়ে নিজের বলার মত একটা গল্প তৈরি করব।যতদিন জীবিত থাকি প্রিয় প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত থাকব ইন শা আল্লাহ।
ধন্যবাদ প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে আমাদেরকে বিশাল ১টি পরিবার উপহার দেওয়ার জন্য।সেই সাথে ধন্যবাদ জানাই প্রিয়, আশরাফুল আলম ভাই কে।যে আমাকে এরকম একটা প্লাটফর্মে যুক্ত করিয়ে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।প্রতিনিয়ত আমাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন রেজিষ্ট্রেশন করলাম। ৯০ দিনের সেশন শেষ করলাম। নতুন অনেক বড় ভাই বোন দের সাথে পরিচয় হলো । আজকে আমর নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখছি। জীবনে কখনো ভাবি নি যে নিজের জীবনের গল্পগুলো আমি কারো সাথে এইভাবে শেয়ার করবো।
কিন্তু আমাকে সেই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমাদের সকলের প্রিয় জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার,স্যার আপনার অনুপ্রেরণা পেয়ে জীবন এর গল্প লিখলাম। আমার দু চোখে শুধু পানি ঝরতেছে কিন্তু দেখার কেউ নেই,মহান আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন।
পরিশেষে আমি আবারও শ্রদ্ধা ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেছি, প্রিয় মেন্টর প্রিয় শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আপনার প্রতি"
আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া করি মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাদের মাঝে অতি দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে আসুক,আমিন।আপনার সুস্থতার খবর শুনে সত্যিই অনেক ভালো লাগতেছে দুইদিন যাবত।
আপনারা যারা আমার জীবনের এই গল্পটি এবং অনেক লম্বা লেখাটি ধৈর্য সহকারে পড়ে এসেছেন, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব, এবং আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য ,আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। অনেক অনেক দোয়া থাকলো আপনাদের জন্য, সবাই যে যার নিজ জায়গাতে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮২
Date:- ২৮/০৭/২০২১
————★————★★————★★★————
নাম মোঃ সোহেল রানা
ব্যাচ নাম্বার ১৪
রেজি নাম্বার ৬২০৫৪
জেলার নাম পটুয়াখালী ও সাভার
বর্তমান অবস্থান মীরপুর ।