জীবনের সংক্ষিপ্ত ৩১ বছর
আসসালামু আলাইকুম।
👉জীবনের সংক্ষিপ্ত ৩১ বছর
মেহেরবানি করে পড়বেন আশা করি।
👉আমি কামরুন্নাহার সায়মা। আমার জন্ম ঢাকা বিক্রমপুরে লৌহজং থানায় জন্ম। আমার জন্ম ১৯৮৯ সালে ১০ জানুয়ারি। আমি নাকি জন্মের আগেই নাকি পৃথিবীতে আসতে চাচ্ছিলাম না এটা আমার মার কথা। অনেক হুজুর, ডাঃ দেখানোর পর আল্লাহ অশেষ রহমতে পৃথিবীতে আসি। আসার পরওনাকি চলে যেতে চেয়েছিলাম। এর পর বেশ ডায়রিয়া হয় তাতে মরার মত হয়ে যাই। আমার মাকে বলতে শুনছি আমাদের এলাকায় একজন বুজুর্গ লোকের উছিলায় আল্লাহ আমাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। চার বছর পর আমার একটা ভাই হলো ওর আর আমার তখনকার দিনে খুসপাচরা হলো মানে শরীরে ঘা হলো। গ্রামের কোন ডাক্তার ভালো করতে পারলো না। আমার বাবা তখন ঢাকাতে বিজনেস করে। আমাদের ঢাকা নিয়ে যাবে এই সিদ্ধান্ত হলো। আমার আফসা কিছু মনে পরে নৌকা করে রওনা হলাম। এরপর আর মনে পরে না। ঢাকাতে তখন আমার দাদা ও চাচাতো দাদাও থাকতো আমার বাবার সাথে। আমাদের জন্য একটা বাসা ভাড়া নিলো নবাবগঞ্জ এ। ওখানে ছিলাম কিছুদিন এরপর বাবা আবার নারায়ণগণ্জ চলে আসলো। ওখানে কলাচিপা নামে একটা জায়গাতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকলাম। আমার স্কুল জীবন শুরু হলো সাড়ে চার বছর বয়সে। ওখানে রেলস্টেশনের পাশে একটা স্কুলছিলো নামটা সঠিক মনে নেয়। আমার জীবনে প্রথম স্কুল ব্যাগ ছিলো টিনের খুবই সুন্দর একটি বক্স। জানি না এটা কেউ ব্যবহার করেছেন কিনা। এর দুই বছর পর আমার একটি বোন হলো।হঠাৎ বাবা পরে যে পা ভেঙে গেলো। বিজনেস এর অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো। আমাদের আবার গ্রামে চলে আসতে হলো। বাড়িতে বড় চাচা ও আমাদের মধ্যে দন্দ শুরু হয়ে গেলো আমাদের বাড়ি ছাড়তে হবে। আমার বাবার একটা ধানের জমি ছিলো সেটা বিক্রি করে আমাদের বসবাস করার জন্য একটি জমি কিনলো বাড়ি তৈরি করলো ১৯৯৬ সালে। নতুন বাড়ি গাছ পালা কিছুই নেই খুবই কষ্ট হতো। আমি ও আমার ভাই ছোট বেলায় অনেক পরিষ্কার ছিলাম এই রৌদের তাপে পুড়ে কয়লা হয়ে গেলাম।আর আমার মত সমবয়সী কেউ ছিলো না। তারপরও দিন যাচ্ছে আমার। ঐ সময় আমাদের বাসা ২৬" কালার টিভি ছিলো। ওটাই আমার ছোট বেলা সাথী ও বিনোদনে একমাত্র সঙ্গী। ৯৮ তে আমাদের বিক্রম পুরে বন্যা হলো। আমাদের বাড়ির চারপাশে পানি আমি তেমন সাঁতার কাটতে পারতাম না শুধু ডুব সাঁতার কাটতে পারতাম তাও আবার কোনরকম। একদিন আমাদের বাসায় আমার ১০ মাসের বড় চাচাতো বোন আসলো বেড়াতে। ও তেমন সাঁতার কাটতে পারতো না। আমি একদিন গোসলে গিয়েছি ঘাটে ওখানে কিছুদূরে একটি বাঁশ গাঁথা ছিলো পানিতে। এক ডুব দিয়ে ঐ বাঁশ টাকে ধরে কিছুক্ষণ পর আবার ঘাটে ফিরে আসতাম। আমার দেখাদেখি ও করতে গিয়েছিলো। আমি যখন বাঁশ ধরে ফিরে আসতে ছিলাম ঐ সময় ও আমাকে জরিয়ে ধরে।আমি ওকে নিয়ে ফিরে আসতে পারছিলাম না। আমার মা তখন ঘাটেই কাজ করছিলো। আম্মু বুঝতে পারিনি ওখানে পানি গভীর। একবার ও পানি খাচ্ছে আর একবার আমি ডুবে যাচ্ছি। আম্মু মনে করছে আমরা মজা করছি। যখন বুঝতে পারে যে না আমরা ডুবে যাচ্ছি আম্মু সাঁতার দিয়ে আমাদের ঘাটে নিয়ে আসে।এরকম আরো একদিন হয়েছে আমাদের বাড়ি থেকে রাস্তায় যেতে গেলে মাঝে খাল পাড় হতে হয়। এবং খাল পাড় হওয়ার জন্য সবসময় বাঁশের সাঁকো পারি দিতে হয়। আমি যাচ্ছিলাম হঠাৎ পরে গিয়েছি ঐ সময় রাস্তা দিয়ে আমার চাচাতো ভাই যাচ্ছিলো ও একটা পানিতে পরার শব্দ হলো দেখে আমি নাই। ও সহ অনেকেই পানিতে নেমে আমাকে খুজছে কিন্তু পাচ্ছি না সবাই মনে করছে আমি ডুবে গিয়েছি। কিন্তুু ডুব সাতার কেটে পাড়ে একটা গাছের আড়ালে চলে গিয়েছিলাম।৯৯ প্রথম দিকে আমার আরো একটি বোন হলো। এরপরও জীবন চলছে জীবনের নিয়মে।এরপর থেকে আমার জীবনের মোড় ঘুরতে লাগলো। ২০০০ এ আমার মেঝো খালামনি ব্রেস্টক্যান্সার মারা গেলেন। ২০০১ তার বড় ছেলে আমাদের নানুবাড়ি এক বিয়েতে গেলো। আমি খাটে বসে আছি ও নিচে বসে কাজ করছিলো। হঠাৎ করে বললো তোর মত পেত্নী কার ঘাড়ে যাবে তার খবরই আছে। ২০০১ আমার দাদাও মারা গেলেন। ২০০৩ সেই ঐতিহাসিক বছর। আমার ৯ নাম্বার খালার বিয়ে ফেব্রুয়ারিতে। আমার সেই মেঝো খালো গেলেন বিয়েতে আমাকে দেখে সে বললো এটা আমার বৌ মা। আমি ত একটু দুষ্ট ও বদল টাইপের ছিলাম আমিও বললাম সমস্যা নাই আপনি আমার শশুড় মশাই। আমি ত আর বুঝতে পারিনি এটাই সত্যি হয়ে যাবে। তখন আমার বয়স মাত্র সাড়ে ১৩ বছর। এর পর একদিন খবর আসলো আমার মামার বিয়ে যশোরে যেতে হবে। আমি আসতে রাজি হয়নি কারন আমার ৯ ম শ্রেনীর রেজিষ্ট্রেশন ও প্রথম সাময়িক পরিক্ষা। তারপর আসতে হলো।আসলাম নতুন যায়গা মজাও করছিলাম। আমি আমার বিয়ের দিন জানতে পারি আমার বিয়ে ২১ বছরে সেই খালাতো ভাইয়ের সাথে। ওরা তেমন নানুবাড়ি যেতো না ১/২ বছরে ১ বার।আমার যেদিন আংটি পরানো হলো সেইদিন আমারও বিয়ে হলো। আবার রাতে বর নিয়ে রাতে চলেও গেলাম ঢাকার উদ্দেশ্য।
ছেলে বিয়ে করে বৌ নিয়ে আছে আর আমারটা উল্টো।
এর বাড়ি যেয়ে মানুষের লাঞ্ছনা ও বাজে কথায় আমার আর গ্রামে থাকা হলো না। চলে আসলাম আমার শশুড় বাড়ি।
আমার খালু আর বিয়ে করবে না তাই ছেলে বিয়ে দিয়ে দিছে। এরপর শুরু হলো সংসার ধর্ম। সংসার করতে গেলে কত ঝড়ঝাপটা আসে অত্যাচারও হয়। তখন আমার সাপোর্ট হয়ে দাড়ালো আমার দেবর। ২০০৪ এ আমাকে কারেন্ট এ ধরলো লোহার মই, গ্রিল লোহার পা খালি। কিন্তুু আল্লাহ পাকের মনে হয় আমার উপর রহমত আছে। আমাকে কথা বলার শক্তি দিয়ে দিলো। আমি আমার বাড়ির কাজের লোককে বললাম চাচি আমাকে কারেন্টে ধরেছে মেইন সুইচ বন্ধ করেন।
ওনি বন্ধ করে দেওয়াতে বেঁচে গেলাম। লাখো কোটি আল্লাহ দরবারে।
২০০৬ আমার বড় মেয়ে পৃথীবিতে আসলো।২০০৯ আমার দাদী মারা গেলো। ২০১২ সাল আমার জীবনে অনেক ভয়াবহ বছর আমার দ্বিতীয় বেবি আমার পেটেই মারা গেলো সাথে সাথে আমার মাইগ্রেন ও ধরা পরলো। আমি ঢাকাতে চলে গেলাম আমার মায়ের সাথে ৬ মাস ওখানে থেকে আবার যশোর এ চলে আসলাম। ১৩ আমার সাহেব অসুস্থ হয়ে থাকলো কয়েক বছর। এর মধ্যে ১৪ তে আমার দেবরকে বিয়ে দিলাম। শুরু হলো নতুন অত্যাচার। আমার দেবর দোকান দেখতো আমারদের তাই ওর বৌ হলো বাড়ির মালকিন। আর আমি হলাম কাজের মহিলা। আমার প্রতি ঐ কয়টা বছর অনেক অত্যাচার করেছে দেবর ও দেবরে বৌ। আমি কখনো এরকম খারাপ সময় অতিবাহিত করিনি আমার বাবাবাড়ি ও আমার শশুড়বাড়িতেও।
একটা টাকার জন্যও আমাকে ওদের কাছে হিসাব দিতে হতো। অসুস্থ থাকলেও আমাকে বাড়ির কাজ ওনার বাবাবাড়ি মেহমান এর কাজ সবই করতে হতো। আমি শুধু ঘরে এক কোনে বসে চোখ ভিজিয়েছি সেটা আমার সাহেবও জানতো না। আমি কোন দিন জামা রিপু করে পরেনি ঐ কয়টা বছর পরতে হয়েছে। অনেক সময় বলতো তুমি মিষ্টি বেঁচে খাবে তুমি কেক বেচে খাবে। তুমি লোন তুলে খাবে। তখন বুকটা ফেটে যেতে। আরো অনেক কষ্ট দিয়েছে যেগুলো লেখলে অনেক বড় হয়ে যাবে। আমার শশুড় বললো আমাদের সেপারেশন করে দিবে ১৭তে।১৭তে আমার হাড় ক্ষয় ধরাপরলো। মাসে ৬ হাজার টাকা দিবে।আমি আমার সাহেবকে বললাম ৬ হাজার টাকায় আমাদের সংসার কি চলবে। ও বললো আমি কাজ করবো। আমি বললাম ঠিক আছে।আমি বললা আমি ত হাতের কাজ জানি।তুমি আমাকে দুইটা ওয়ান পিছের কাপুড় আর অল্প সুতা কিনে দিতে পারবে? আমার সাহেব বললো তুমি অসুস্থ ডাঃ বলছে নিচের অংশ প্যারালইড হয়ে যেতে পারে। আমি শুয়ে শুয়ে সেলাই করবো আল্লাহ ভরসা। ১৭শেষের দিক থেকে শুরু হলো। এরপরও আমার জা এর অত্যাচার বন্ধ হলো না। আবার আমার সাহেব তার হারানো জায়গা ফিরে পেলো।আমার শশুড়মশাই দোকানের দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দিলো। আমার দেবর শুধু লস দেখাচ্ছিলো তাই। ১৯ সালে আবার আমি প্রেগনেন্ট হলাম এটা শুনে আমার জা র আকাশ ভেঙে পরলো। মনে করলো আমার এইবার ছেলে হবে তাই অত্যাচার আবার শুরু করলো। মানুষসিক ও শারীরিক। আমি শুধু মনে করি আল্লাহ আছেন সে ত সব দেখছেন।
আর প্রকৃতি তার নিজেস্ব গতিতে চলে। যেটা সে নিবে সেটা সে ফেরত দিবে।
আর একটু এত অত্যাচারের কারন হলো আমাকে আমার এলাকার কমবেশি সবাই ভালোবাসে ও আমার শশুড় মশাই।
মাঝে মাঝে আমার বিজনেস জিনিস নষ্ট করে দেয়।অনেক কষ্ট পর আল্লাহ আমাকে আবার একজন মা দিলো। ২০ সালে আমার শশুড় মশাই ব্রেনস্ট্রক করলো। এরপর ত সাবাই জানে পৃথিবীতে করোনা আসলো। ২১ সালে জুলাই এর ১ তারিখ এ করোনা আক্রান্ত হলো। এখন সুস্থ আল্লাহ রহমতে। আপনাদের দোয়াতে।
এর মাঝে আমি আমাদের এই প্রিয়গ্রুপের সন্ধান পাই এক আপুর থেকে। এই গ্রুপে আমি প্রথম থেকে ছিলাম। তখন থেকে
স্যারের কথাগুলো আমাকে সাহস যুগিয়ে আসছে।
এরপর ইসমাত হাসান ভাইয়াকে বলে ৯ ম ব্যাচে রেজিষ্ট্রেশন করলাম। শুকরিয়া জানাই আমাদের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে এত সুন্দর একটি প্লাটফর্ম দেওয়ার জন্য। তার দীর্ঘ আয়ু কামনা করছি
আমি কাজ করছি হাতের কাজের ড্রেস, ব্লক,টাই ডাই, হ্যান্ডপেইন্ট ও শোপিছ নিয়ে।
আমার পেইজ ঃ Shopnodesignfairs.
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮৩
Date:- ২৯/০৭/২০২১
কামরুননাহার সায়মা.
ব্যাচ ৯ ম
রেজিষ্ট্রেশন ১২০০৪
যশোর সদর।