সৌদিতে যাবার পড়ে কোন কাজ নাই।তখন আমি ৫ মাসের প্রেগনেন্ট।
🌷🌷🌷বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম🌷🌷
🌿🌿আসসালামু আলাইকুম🌿🌿🌿
🙏🙏🙏সংগ্রামী জীবনের গল্প সকলকে পড়ার অনুরোধ রইল।।।।।
🌱🌱🌱শুরুতে শুকরিয়া জানাই মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমাকে এই মহামারি করনার মধ্যো এখনো আমাকে সুস্থ ও সবল রেখেছেন।আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। হাজার হাজার দুরুদ ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর রওজা মোবারকে।শুকরিয়া মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে যিনি আমাকে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ( সঃ) এর উম্মত করে এ দুনিয়ায়াতে পাঠিয়েছেন।
----------কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের সকলের প্রান প্রিয় স্যার লক্ষ্য তরুন তরুনীর আইডল, মানবতার ফেরিওয়ালা, প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় স্যার মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি আমাদের এতসুন্দর একটা ভালোমানুষের প্লাটফর্ম উপহার দিয়েছেন। অনেক অনেক দোয়া ও অভিনন্দন জানাই আমাদের নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের সকল আপু ও ভাইদের প্রতি।
-------আমি সংক্ষিপ্ত আকারে আমার পরিচয় বলি আমি মিতালী আক্তার মিতু। আমার পরিবার বড় একটি যৌথ পরিবার।আমরা ৮ ভাই বোন। আমি সবার বড়।আমি আগে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কথা শেয়ার করে ছিলাম।আমার জীবনে প্রথমে একটা ঘটনা ঘটে।আমার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হয় ২০১২ সালের শেষের দিকে। কিন্ত সেখানে আমার বেশিদিন সুখে সংসার করতে পারি নাই। ২০১৩ সালের শেষের দিকে আমি আমার বাবার বাড়িতে ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা দিতে গেলে সে আমাকে না বলে বিদেশে চলে যায়। তার পর আমার আর কোন খোজ খবর নেয় না।পড়ে জানতে পাড়ি সে আমাকে তালাক দিতে চায়।অনেক কাকতি মিনতি করে ওআমি সেখানে থাকতে পারি নাই।অনেক কেস মামলার পরেও সে আমাকে বাধ্য করে তালাক দিতে।তাছার আমার বাবা ও আমাকে অনেক বাজে ভাবে বকত মারত আর বলত জোর করে কারও ভাত খাওয়া যায় না। অবশেষে ২০১৪ সালের শেষের দিকে আমি ডিভোর্স দিতে বাধ্য হই।অনেক বড় ঘটনা সংক্ষিপ্ত করলাম।
--------ডিভোর্সের পরে আমি মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়েি।বলে রাখি আমি আমার মামা বাড়িতে বড় হইছি ওপড়াশুনা করছি। আমার মামাদের অবদানের কথা অন্য আরএকটা পোস্টে বলব।মামা আমাকে সাহস দেয়।আমার মামার সাভার কাঠগড়া একটা বাড়ি আছে।আমি সেখানে চলে আসি। অনার্সে কোথায় ভর্তি হব তা নিয়ে দেখতে সাভারে যাই একদিন।আমি তখন শারিরীক ভাবে এত দূর্বল ছিলাম যে আমি সাভারের সিটি সেন্টাররের সামনে থেকে এক প্লেট ফুসকা কিনি।কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমার দারাতে কষ্ট হচ্চে।ফুসকাটা একটা ছোট ছেলেকে দিয়ে দিলাম।রোডের ওপারে আমার মামার বন্ধর বাসা ছিল। ভাবলাম মামির কাছে যাই একটু বিশ্রম নিয়ে বিকেলে বাসায় যাবো।অভার ব্রিজের সিড়িগুলো উঠতে ছিলাম। হঠাৎ মাথা ঘুরতে লাগলো আর কিছু দেখতে পেলাম না।যখন একটু হোষ হলো শুনতে পাই অনেক মানুষের কথা কিন্ত চোখ খোলতে পারছিলাম না।একটা ছেলে চায়ের দোকানে বেন্সে শুইয়ে আমার মাথায় পানি ঢালছে।আমার ইচ্ছে করছিল ঔ ভাইকে আমি চোখ খোলে দেখব কিন্তু চোখ খুলতে পারছিলাম না।ছেলেটা বলছে আমার তারা আছে । আমার মার বয়সী কিছু মহিলা ছিল।তাদেরকে বলল আন্টি মেয়ে মানুষ আমি আর কতক্ষণ ধরে রাখব আপনারা কেউ ধরেন।আমার মোবাইল পারস টাকা সবকিছুই তাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল আর বলল ওকে হাসপাতালে নিয়ে যান।আমি ঔ ভাটির জন্য অনেক অনেক দোয়া করি।আন্টিরা আমাকে সাভার এনাম মেডিকেলে ভর্তি করল।তখন আমি পুরো সুস্থ।আমার কা থেকে শুনে আমার মামার কাছে ফোন দিল।ছোট মামা এসে আমাকে বাসায় নিয়ে গেল।ডাক্তার বলল খাওয়া দাওয়া ঠিকমত না করার কারনে এমন হইছে।কতগুলো ভিটামিন ঔষুধ দিয়ে দিলেন।
-------আমি ঢাকা ফার্মগেট তেজগাঁও কলেজে ইংলিশ অনার্স ভর্তি হই।সাভার থেকে এসে নিয়মিত ক্লাশ করি। আমি দেশে বেড়াতে যাই।আমার নানী আমাকে বিয়ের জন্য যেখানে সেখানে ছেলে দেখে।আমি বলি জীবনে আর কোন দিন বিয়ে করব না। আমি আর কোন ছেলেকে বিয়ে করব না সবাই একরকম। তখন সুমন নামে একটা ছেলে আমাকে বিয়ে করতে চায়। তখন আমি তাকেও মানা করি।সে আমার সবকিছুই জেনে শুনে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি রাজি হইনা। কিন্তু আমার একজন কাকি বলল এছেলেটা ভালো হবে।তুইতো তোর পছন্দে বড়লোক বাড়িতে গেছিলি।তারাতো তোরে আদর করে নাই।আমি রাজি হলে সে তার পরিবারে লোকজন নিয়ে আসে।আমার ও তার পরিবারের মিলিত ভাবে বিয়ে হলো।সেই বর্তমানে আমার স্বামি।কিন্ত আসলে সে অনেক ভালো সে আমাকে অনেক আদর করে।কিন্তু এখানে দেখা দিল আর্থিক সমসা।আমার স্বামির বাবা মা আছে কিন্ত তাদের ২ সংসার।শ্বাশুড়ি আর একটা সংসার আছে। তাকে কোলে নিয়ে আমার শ্বশুরের সাথে তালাক হয়ে যায়।আমার নানা শ্বশুর আর নানী শ্বাশুরি তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়।আমার স্বামি নানা নানীর কাছে বড় হইয়েছে। সেও খুব অভাগা।যে বাবা মা ২জনের আদর থেকে বঞ্চিত।
--------কথায় আছে না অভাগা যে ডাল ধরে সে ডাল ভেঙে পড়ে। আমি এ বাড়িতে এসে দেখি আমার স্বামির থাকার ঘর নাই।নানা নানীর ছোট একটা দোচালা পাটকাঠির বেড়া দেওয়া।তা আবার একপাশে আমার ছোট মামা শ্বশুর তার বৌ পোলাপান নিয়া থাকে।আর এক পাশে তার নানাননি থাকে। তার পরে শুনলাম সে বিয়ের আগে ব্যবসা করতে গিয়ে কিছু টাকা ঋন আছে। আমার পড়া শুনা বন্ধ করে দেই। কিছুদিন বাপের বাড়িতে থাকি। কিছুদিন পড় আমরা কিস্তি থেকে টাকা নিয়ে একটা টিনের দোচালা ঘর দেই। প্রায়ই ৭০০০০ হাজারের মত টাকা লাগে।সেখানে আমার স্বামির ছিল মাত্র ১০০০০ হাজার টাকা। আগের টাকা দিয়ে আর ঘরের টাকা দিয়ে অনেক টাকা ঋন হয়ে যাই।এর মধ্য নানি বলে তোর মামারা সৌদি আরবের ভিসা দিব। যদি তোর জামাইরে দেস তাহলে টাকার গোছ কর। আমি শ্বাশুড়ি কে জানালাম তাতে কোন সাড়া পেলাম না। অবশেষে নানী মামার নামে আমাকে আমাকে ৬০০০০০ টাকা তুলে দিল।ভিসার দাম ৫ লাখ আর খরচ দিয়ে সাড়ে ৫ লাখ পরল।কিন্ত ভিসা আসার আগে মামা ৩লাখ টাকা নিয়ে নিল। ভিসা আসতে আসতে ৩ মাস সময় লেগে গেল।প্রথমে ৪ লাখ টাকা উঠায় দেয় ওখান থেকে৩ লাখ মামারে দেয় আর ১ লাখ কিস্তি দেওয়ার জন্য রাখে।বিদেশ যাবার সময় আবার ২লাখ কিস্তি উঠায়ে মামারে আবার দেয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে স্বামি সৌদিআরব যায়।তখন আমার মাসে ৬০০০০ হাজার টাকার কিস্তি। আর আগের ঘরের ঋন তো আছে। ভাবছিলাম বিদেমে গেলে সবার টাকা দিয়ে দিতে পারবে।
-------সৌদিতে যাবার পড়ে কোন কাজ নাই।তখন আমি ৫ মাসের প্রেগনেন্ট। মামার সাথে মামার হোটেলে কাজ করে মামা ২০০০০ হাজার টাকা বেতন দেয়। আমার মাসে কিস্তি ৬০০০০ হাজারের উপরে কিস্তি। তখন আমি সুদের টাকা এনে কিস্তি চালাতে থাকি।ছোটো কিস্তি উঠায়ে বড় কিস্তি চালাতে থাকি। এভাবে ঋন দিগুন হারে বাড়তে থাকে। আমি যে প্রেগনেন্ট তা আমার নিজের প্রতি নিজের কোন খেয়াল ছিল না
শুধু একটাই কাজ ছিল টাকা পাবো কোথায় গেলে কিস্তি কিভাবে দেব।যার হাতে না ধরছি টাকার জন্য ধরেছি তার পায়।আমার মলিন মুখটা দেখে কেউ খেতে ও বলেনি। আমার বাবা কখনো বলেনি কিভাবে চলোস।মেয়েরা প্রেগনেন্ট থাকলে অনেক কিছু খেতে মনে চায়। আমাকে আমার বাবা বা কেউ বলে নি তো কি কিছু খেতে মনে চায়।আমার মা অসহায় তার কথা বাদ।মামার সাথে মনমালিন্য হয়ে আমার স্বামি চলে গেল মরুভূমির জিজান শহরে সাপ্লাই কাজে।সেখানে তিন মাস পরে বেতন দেয়। আমি এখানে টাকার জন্য ছোটাছুটি করি কিস্তি আসতে আসতে বাকি পড়তে থাকে। এদিকে আমার ডেলিভারির সময় হয়ে যায়। মহিলা ডাক্তার বাড়িতে আনলে বলে বাচ্চা উল্টা আছে ও পানি শুকিয়ে গেছে।কালকে সিজার নাকরলে বাচ্চা মা ২জনের জন্য ই মারাত্মক। আমি শুনে কান্না করতে লাগলাম কোথায় পাবো টাকা।আমার শ্বাশুরিকে খবর দেওয়া হল। সে এসে আমাকে ফরিদপুর সৌদিবাংলা মেডিকেলে ভর্তি করলেন। আমার ছেলে বাবু হলো তাতে বাড়ির সবাই খুশি।আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। ১থেকেদের ঘন্টা আমি খিচতে লাগলাম ওটি থেকে বের করার পর।আমার মা গেছে সে কিছুই বুজে না অযথা আরও আমার শ্বাশুড়ি র কথা শুনতে হয়।রাগ করে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম।হাসপাতালের টাকা না দিলেতো আমাদের আসতে দিবে না।। আমার শ্বাশুড়ি বাড়িতে গেল টাকা আনতে। আমি একাআমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে রইলাম।টাকার জন্য আমার শ্বাশড়ি বাড়িতে গিয়ে জোরেজোরে চিৎকার করে কান্না করছে আর বলছে আমার নাতিন বেটারা রাইখা দিব আর আমার বৌ তারায় দিব। বাড়ির আত্নীয় স্বজন যে যা পারছে তারে টাকা দিছে।তারপর আমার সন্তান নিয়ে আমি শ্বাশুরির ঔ বাড়িতে উঠি।আমার বাবা বা মামা বাড়ি থেকে কোন হেল্প পায়নি। আর আমার বাবা আমার ছেলেকে দেখতে আসেনি।
------আমার ছেলের বয়স যখন ১৪ দিন তখন আমাকে টাকার খোজ করতে বের হতে হয়।প্রতিদিন কিস্তির স্যারেরা৪জন ৫জন করে বাড়িতে আসতে থাকে। বলে যেখান থেকে পারেন টাকা নিয়া আসেন আমরা বসে রইলাম। আমি টাকার খোজে চলে গেছি আমার শ্বাশুড়ির কাছে ছেলেকে রেখে। আমি সারাদিন টাকার জন্য যার তার কাছে ঘুরছি এদিকে আমার দুধের শিশু খুদায় কান্না করছে। আমার শ্বাশুড়ি মানুষের বাড়িনথেকে ছাগলের দুধ আর ভাতের মার খাওয়াইয়া আমার মানিকরে রাখছে। এদিকে আমার বাচ্চার খাবারে বুকের জামা ভিজে গেছে। আমি তাকে সময় মত দুধ পান করাতে পারি নাই।আমার বোনেরা যারা মা হয়েছেন তারা জানেন কিছুক্ষন পড় পড় আল্লাহ মার কাছে সন্তানের রিজিক দেন।আমার মাসুম শিশু সে খাবার থেকে বঞ্চিত হয়েছে আর আমি যন্তনায় কান্না করেছি দুর থেকে। বাড়িতে রাতে গিয়েছি কিস্তির স্যারদের ভয়ে।কিছুদিন পড় বাবুর বাবা সৌদি রিয়াদ যায় । তখন ভালো টাকা দেয় ১বছর। আমাদের কিছু খরচ ও দেয় আর মানুষের টাকা আস্তে পরিশোধ করতে থাকি। আবার আসে করনা তার পড় কিছুদিন কাজ করে আবার কিছু টাকা দেয়।আকামার মেয়াদ নাথাকার কারনে ধরে নিয়ে যায় জেলে। ১মাস জেল খেটে গত জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে বাড়িতে আসে এক ডিউটির পোশাকে। আমার ছেলের জন্য ১টা চকলেট ও আনতে পারে নাই।এখনো আরো প্রায় ৩ লাখ টাকার মতঋন আছে। পড়ে আবার লিখব।
সকলের সুস্থতা কামনা করছি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮৩
Date:- ২৯/০৭/২০২১
🎀🎀🎀মিতালী আক্তার মিতু।
ব্যাচ ১২
রেজিষ্ট্রেশন ৪৯৪৬৮
জেলা ফরিদপুর
সদর পুর উপজেলা।