আজ এ প্লাটফর্মে না আসলে আমার জীবন বৃথা হয়ে যেতো,
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আসসালামুআলাইকুম
আমার প্রাণ প্রিয় ভাই ও বোনেরা সবাই কেমন আছেন? শুরুতেই সকল প্রশংসা জ্ঞাপন করছি মহান আল্লাহ পাকের প্রতি, যিনি আমাকে দয়া করে মায়া করে আপনাদের সকলের ভালোবাসার সান্নিধ্য পেয়ে ভালো মানুষ হওয়ার তৌফিক হয়েছে।
_______ আজীবনের কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা_______
অফুরন্ত ভালোবাসা ও নিরন্তর ও দোয়া কামনা করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর প্রতি। যিনি আমাদের নিজ পরিবারের পরেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও বৃহৎ পরিবার একটি পরিবার উপহার দিয়েছেন। নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
যাঁর পথ অনুসরণ করে প্রতিদিন অগণিত পরিবারের মুখে ফুটছে তৃপ্তির হাসি। প্রতিদিন হাজারো তরুণ তরুণীর বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বনির্ভর বা আত্মনির্ভরশীল হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য বয়ে আনছেন সম্মান আর বৈদেশিক মুদ্রা।
আমার দেশের হাজারো মোটিভেশনাল স্পিকারের মধ্যে আমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ মোটিভেশনাল স্পিকার শতাব্দীর সেরা মানব, তরুণ প্রজন্মের আইডল, তরুণ-তরুণীদের উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর প্রিয় Iqbal bahar zahid স্যার।
অনেকেই স্বপ্ন দেখাতে পারে, কিন্তু তা বাস্তবায়নে সঠিক, সহজ দিক নির্দেশনা এবং বাস্তব ভিত্তিক অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ আমাদের প্রিয় স্যার ইকবাল বাহারের দ্বারাই সম্ভব।
প্রিয় স্যারের প্রতিটি কথা, কাজ সবসময় আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে ভালো মানুষ হওয়ার।
স্যারের ব্যক্তিত্ব, নানাবিধ সামাজিক উদ্যোগ ও কর্মকান্ড অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও শিক্ষনীয়।
এই ফাউন্ডেশন এর দায়িত্ব প্রাপ্ত সম্মানিত প্রিয় ভাইবোনসহ আমার শুভাকাঙ্ক্ষী সবার প্রতি সম্মান, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও অফুরন্ত শ্রদ্ধা জানাই যাঁরা আমাদের আন্তরিকতার সঙ্গে দিন রাত সীমাহীন অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের কে উৎসাহ ও কাজ শিখিয়ে যাচ্ছেন।
আমি যা পেয়েছি ভালোবাসার এই ফাউন্ডেশনে
ফাউন্ডেশন এর প্রিয় ভাইয়া ও আপুদের লেখা পড়তে পড়তে নিজেকে নিজে বুঝতে পেরেছি, চিনতে পেরেছি, নিজের সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছি, যা আগে কখনো জানাতামই না। সাহস করে মুখে যা সবার সামনে বলতে পারতাম না, এখন আমার লেখার মাধ্যমে আমি যা জানি সবার সামনে উপস্থাপন করতে পারছি।
বিষেশ করে আমাদের সবার জীবনের গল্পই ভিন্নতা থাকে। আমি জীবনের কিছু শিক্ষার বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
__________________________________________________
আমাদের ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। যারা সেকেন্ড ধরে ধরে জীবনকে রাঙাতে পারে তারাই একসময় সাফল্যের শীর্ষে পা রাখে। প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের গল্প মানুষ আর মননভেদে নানা রকম। একেক জনের গল্প একেক রকম হলেও সবার জীবন সামনে এগিয়ে চলছে। কেউ বা ধীরে আবার কেউ বা দ্রুত-সবাই সামনে এগোনোর প্রচেষ্টায় প্রহর গুনছে।
জীবন থেকে কিছু বাস্তব বলতে চাই।
বিঃদ্র (কোনো উপদেশ নয়)যানা দরকার যানাতে চাই.............জানতে চাই............!
ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষিতে দেখবেন।
__________________________________________________
আমাদের জীবন সব সময়ই সচল।আমি আপনি এখন যে কর্মস্থলে কাজ করে যাচ্ছি ভাবছেন আমি আপনি ছাড়া সব অচল। আসলে কিন্তু না। আমি আপনি যদি আজ কাজ ছেড়ে দেই তাহলে কর্মস্থলে সাময়িক সমস্যা তৈরি হবে, কিন্তু খুব দ্রুত আমার আপনার উপস্থিতি সবাই ভুলে যাবে। তেমনি আজ আমি আপনি হয়তো বন্ধুমহলে বেশ জনপ্রিয়।আমাকে আপনাকে ছাড়া কোনো আড্ডাই জমে না। জেনে রাখুন, আমি আপনি না থাকলেও আড্ডার রং কোনো অংশেই মলিন হবে না।
আমাদের কোনো কিছুই জীবনে চিরস্থায়ী নয়। আবেগ, অনুযোগ কিংবা অভিযোগ-কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সামাজিক সম্পর্কগুলো সব সময়ই এক রকমের গাঢ় হবে না। আজ আমার আপনার কাছে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে আমার ও আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে। আজ যিনি প্রশংসা করছেন, কাল তিনি আমার আপনার কঠোর সমালোচক হতেই পারে।
কোনোদিন নিজেকে কখনোই অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করে নিজেকে নিজের সঙ্গে তুলনা করতে শিখবো। বন্ধুর ভালো চাকরির খবর শুনে নিজেকে হেয় করবো না, বন্ধু কে উৎসাহ দিয়ে নিজের পথ গোছানোর চেষ্টা আমি আপনি করবো।
আজ ধরুন আর্থিক স্বাধীনতা আমার আপনার জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়। ধার করার অভ্যাস কিংবা ঋণে নিজেকে জড়াতে যাবো না। চেষ্টা করবো নিজের হাতে আয় করতে। যতটা আয় করবো, তা বুঝে ব্যয় করতে শিখবো। প্রয়োজনের বাইরের ব্যবহারের জিনিসপত্র কেনা থেকে বিরত থাকবো। অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করবো। দামি মুঠোফোনে যতটা আনন্দ মেলে হয়তো মঞ্চনাটক দেখার অভিজ্ঞতা আরও আনন্দ দেবে। বস্তুগত আনন্দের চেয়ে অভিজ্ঞতা, স্মৃতি জমানোর দিকে মনোযোগ দিয়ে চলবো।
এই জগতে যত বড়ই দুঃখ আসুক না কেন, তা মলিন হবেই। প্রেমিককে হারানোর বেদনা, ভালো চাকরির সুযোগ বা পরীক্ষায় ভালো ফল-নানা কারণে ব্যর্থতা আর শোক জীবনে আসতে পারে। জেনে রাখুন, সব দুঃখই ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে। একদিন সব দুঃখ কাটিয়ে সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা।
আমাদের শুধু পরিশ্রমেই জীবনে সাফল্য আসে না। পরিশ্রমের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সৃজনশীলতাকে যোগ করতে হয়। বছরের পর বছর একই কাজ করতে করতে জীবনকে কখনোই একঘেয়েমির বৃত্তে আটকে ফেলব না। সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝুঁকি নিতে শিখবো। ঝুঁকি নেওয়ার একটা সুবিধা হচ্ছে, আমি আপনি জানি না সামনে কী আসবে। এই অচেনা আর অজানা পথ সামনে নতুন দ্বার খুলে দিবে।
আমাদের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতাই জীবনের সবকিছু না। সময়কে নান্দনিক উপায়ে রাঙিয়ে বেঁচে থাকাই জীবন।
কারুর মতামতকেই জীবনের সব বলে ভাববোনা। একই বই কারও কাছে ভালো লাগতে পারে, কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে। তেমনি আমার আপনার কাজ কারও কাছে ভালো লাগতে পারে, কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে-সব সময় নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে কাজ করাটা উত্তম।
আমাদের মুঠোফোন বা সামাজিক দুনিয়াই জীবনের সব না। বন্ধুর সাফল্যের ছবি ফেসবুকে দেখে মন খারাপ হতেই পারে আমার আপনার। আবার দিনের অনেকটা সময় মুঠোফোনের পেছনে ব্যয় করার ফল কিন্তু ইতিবাচক হয় না। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করে নিজের শখকে গুরুত্ব দিবো।
আমাদের নিজের পথ নিজেকেই চলতে হয়। অন্যরা আমাকে আপনাকে দারুণ পছন্দ করে হয়তো, কিন্তু দিন শেষে আমার আপনার পথ আমার আপনাকেই অতিক্রম করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের এগিয়ে চলার গল্প, কষ্টের গল্প ভিন্ন হয়-তাই আমাকে আপনাকে কেউ এগিয়ে নেবে তা ভেবে কখন যেন আমরা বসে না থাকি।
_____________এই জগতের চরম বাস্তবতা_______________
যদি চোখে বালি পড়লে কেউ চোখকে নষ্ট করে না। পানি দিয়ে চোখকে পরিষ্কার করে সামনে এগোয়। এটাই বাস্তবতা।
যদি বৃষ্টির ঝাপটা যেদিকে আমি অাপনি ছাতাটাকে ঐ দিকেই ধরি। কেউ আমাকে অাপনাকে তা বলে দিতে হবে না। এটাই বাস্তবতা।
কোনো প্রেমিকা তার প্রেমিককে ছেড়ে চলে গেছে। কিছুটা সময় খুব কষ্ট হবে। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগবে কিন্তু জীবন থেমে থাকা চলবে না। এটাই বাস্তবতা।পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার পর কেউ থেমে থাকে না। উঠে দাড়িয়ে অাবার পথ চলা শুরু করে এটাই বাস্তবতা।
-কেউ অাপনজনকে হারিয়ে ফেলার পর কেউ তার জন্য সারাজীবন কাঁদে না। কারন, কাঁদার জন্য ভাবনা দরকার। ভাবনার জন্য সময় দরকার। সেই সময়টুকু তখন হয়ে উঠেনা। এটাই বাস্তবতা।
বারবার ব্যর্থ হবার পরেও কেউ চুপটি করে বসে থাকে না। সফলতা পাওয়ার অাসায় অাবার চেষ্টা করে এবং সফলতা নিয়েই ফিরে এটাই বাস্তবতা।
পাগলা, বাস্তবতা নিয়েই তো চলতে হবে। তাহলে কেন আমি আপনি এখনো অাবেগ নিয়ে থেমে অাছি। উঠে দাড়াই। দেখিয়ে দেই আমার আপনার দ্বারাও সম্ভব বাস্তবতাকে মেনে এগি চলতে।
করোনা থেকে শিক্ষা
__________________________________________________
আমাদেরকে মৃত্যুর ভয় করোনা চিনিয়ে দিল আপন পর গভীর রাত জনৈক ব্যক্তি মারা গেলে করোনা আতঙ্কে যেখানে নিকট আত্মীয় ও পাড়াপড়শি কেউ কাছে যায় না। দাফন কাফন কি কে দিবে?হঠাৎ মোবাইল ফোনে অনবরত কল। রিসিভ করতে জানতে পারলাম করোনা সন্দেহে মৃতব্যক্তির কাছে কেউ যায় না
কেন আমরা পারিনা
দূর থেকে শুধু দেখছে।মৃত ব্যক্তির দালান-কোঠা, সম্পত্তির ওয়ারিশ হয়ে একটু সাবধানতার সহিত (সুরক্ষা সামগ্রী) কি এ কাজগুলো করা যায় না?আসলেই শেষ বিদায়ে কেউ কারো নয়।
জীবিত থাকলে মানুষ ভয়ে অথবা স্বার্থের কারণে আমার কথা শুনবে। কিন্তু মারা গেলে আমার কি হবে?তা কি ভেবে দেখছি আমরা?
ঈমান নিয়ে শেষ বিদায় নিতে পারলে তো, আলহামদুলিল্লাহ!এর ব্যত্যয় ঘটলে আমার কি হবে? ভেবে দেখেছি কি কখনো?
__________________________________________________
আমার জীবন
আজ লিখতেপারি নাই নিজের জীবনের গল্প স্মৃতি গুলো খুঁজে দেখি সুখ অনেক অল্প।
পরম করুনাময় মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া।
সবার প্রতি রইল প্রীতি ও ভালোবাসা।
সকালের সতেজ, শীতল বাতাস আর সন্ধার উষ্ণ বাতাসের পার্থক্যটা তখনও বুঝতে শিখিনি। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অর্ধ-নিমজ্জিত সূর্য এবং রক্তিম আকাশের মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও অনেকটাই যে অমিল রয়েছে তা তখনও শিখিনি।
আমার বয়সটা তখন ৭ বা ৮, প্রতিদিন ভোরে
আমার আবার সঠিক সময়েই মক্তবে উপস্থিত থাকার অভ্যাস। কিন্তু এই অভ্যাসের ব্যাতিক্রম হল সেদিন, ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার রুমের সবগুলো জানালা খোলা, জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে সূর্যের রক্তিম আভা, আজ যে সূর্যিমামা আমার ঘুম থেকে উঠার আগেই উদয় হয়ে গেছেন সেটা আর বুঝতে বাকি রইল না। সাধারণত মক্তবে যাওয়ার সময় ভাইয়াকে ঘুমে রেখে যাই। কিন্তু আজ ভাইয়াও ঘুম থেকে উঠে গেছে অনেক আগেই। আজ যে আমার সাথে কি হতে যাচ্ছে সেটা আর বুঝতে বাকি রইল না। সেই ছোট মাথা যে তখনও কোনো অযুহাত বানাতে শিখেনি।
তখন আমার হাত-মুখ ধুয়ে সময় নষ্ট করার মত কোনো সময় নেই, এক হাতে লুঙ্গি নিলাম, অপর হাতে শার্ট ও টুপি, ইচ্ছে দৌড়ে যাবার সময় রাস্তায় সুযোগ বুঝে পরে নিব।
আমার পরনে তখন হাফ প্যান্ট ও স্যান্ডো গ্যাঞ্জি, তাই রাস্তায় লুঙ্গিটা পরে নেয়ার মধ্যে কোনো অসুবিধে নেই।ঘর থেকে বের হয়ে কয়েক কদম যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম পায়ে জুতা নেই, আবার দৌড়ে এসে জুতা জোড়া পরে নিলাম।
আমি সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় যাওয়ার পর, আমার চোখের সামনে দেখা দৃশ্যটাকে কেন যেন মানতে পারছিলাম না।
তখন আমার সমবয়সী দুই চাচাতো ভাই তখন রাস্তায় দাড়িয়ে খোশমেজাজে গল্প করছে, যা আমার কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছিল না, কারণ তারাও যে আমার সাথে মক্তকে পড়ে, এই সময়ে ত তাদের এখানে থাকার কথা না।
তবেঁ তারা মক্তবে কেন যাচ্ছে না সেটা জিজ্ঞাসা করতে দুজনই মুচকি হাসছিল, মেজাজটা তখন খারাপ হতে চলছিল, কিন্তু আমার যে মেজাজ খারাপ করে ইচ্ছে মত কিছু বলার সময় নেই। আরো কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে বলল, তারা নাকি আজ মক্তবের হুজুরের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছে।
সেই সময় আমার আর কোনো কিছু চিন্তা করার সময় তখন আর নেই, আমি আবার দৌড়াতে শুরু করলাম। কিন্তু কেন যেন ওদের মুচকি হাসিটা আমার পিছু ছাড়ছিল না। হঠাৎ কিছুদিন আগে হুজুরের বলা একটা কথা মনে, ওনি বলেছিলেন আগামী বা তার পরের সপ্তাহে আমাদের একদিন ছুটি থাকবে। তাহলে আজ কী সেই দিন? তখন আস্তে আস্তে তাদের হাসির কারণটা কিছু বুঝতে পারছিলাম। মনের ভয়টাও আস্তে আস্তে কাটতে তে শুরু করেছে তখন।
সেই সময়টা ততক্ষণে মক্তবটা দেখা যাচ্ছিল, খুব কাছে চলে এসেছি। ভাবলাম এসেই যেহেতু পড়েছি একবারে নিশ্চিত হয়েই যাই।
তখন আমার ঘুম ঘুম ভাবটা ততক্ষণে চলে গিয়েছে, মক্তবের পাশে এলাকার দুইজন মুরুব্বীকে কথা বলতে দেখলাম। তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে কথাটা শুনলাম তাতে আর বুঝেত বাকি রইল না কেন ওরা দুইজন হাসছিল।
সেই সময়টা আমি যে তখন একনায়কতন্ত্রীক সরকার আর গণতান্ত্রিক সরকারের পার্থক্যটা জানতাম না, আমি যে জানতাম না সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অর্ধ-নিমজ্জিত সূর্য এবং রক্তিম আকাশের মধ্যে থাকা পার্থক্যটা। আমি যে ভুলেই গিয়েছিলাম আমি রাতে নয় গুমিয়েছিলাম দুপুরে খাওয়ার পর।
তখন সেদিন এই ঘটনার পর আমার মনের ভাবটা কেমন ছিল তা মনে পড়ছে না, তবে বড় হওয়ার পর যতবারই মনে পড়েছে ততবারই মনের কোণে একটা অদ্ভুত ভাললাগা অনুভব করেছি, একাই হেসেছি। আর যদি এটা পড়ার পর আপনার হাসি না পেয়ে থাকে তাহলে কিন্তু আমি কোনো ভাবেই দায়ী নই।
যাইহোক এবার মূল আলোচনায় আসি।
গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হই, ১ম শ্রেণিতে রোল হল ১০৯ এই রোলের মানে কি বুঝতাম না। মনে করতাম রোল যার যতবেশি সে তত ভালো। যাইহোক দ্বিতীয় শ্রেণির পরীক্ষার পর মেধাতালিকা হল ১৪ তম। এরপর তৃতীয় শ্রেণির পরীক্ষার মেধাতালিকায় ২য় হলাম। আমরা ৩ ভাইবোন, বাবা যেহেতু কৃষক কোনোমতে চাষের কাজ করে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা তখন।
আর আমরা ১ বোন, আমি আর আমার ছোটভাই একই স্কুলে পড়ায় হেডস্যার আমাদের অনেক ছাড় দিত, আর তারাও ক্লাসে ৩য় ছিল। একই পরিবারের ৩ জন একসাথে ৩য় হওয়ায় স্যারেরা আমাদের বাড়িতে আসে দেখার জন্য।
সেই সময় বাড়ির অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। হেডস্যার সহ সকল স্যারেরা বলল তোমরা পড়াশোনা কর তোমাদের বেতন বা পরীক্ষার ফি, খাতা কলম যা লাগে আমরাই দিব।
এরপর সাধারণ বৃত্তি পাই। সেই সূত্রে হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বেতন মওকুফ করেছে। কিন্তু পরীক্ষার ফি দেওয়ার টাকা ছিল না।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার সময় ফি না দিয়ে ১ সাবজেক্ট পরের দিন আরেক সাবজেক্ট প্রবেশ পত্র ছাড়াই পরীক্ষা দিলাম। যেই স্যার গার্ডে ছিল তিনি বললেন প্রবেশ পত্র সংগ্রহ করে নিও।
তৃতীয় পরীক্ষার দিন একটু কড়া ছাড় আসল নো এডমিট নো পরীক্ষা। খাতা দিল না। অনুরোধ করার পর যখন খাতা দিল না তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে আসব ভাবলাম। পরীক্ষার ফি দিতে পারি না পড়াশোনা করব না।
এক বড় ভাই উপরের ক্লাসে পড়ে আমার কান্না দেখে বলল তোমার কি হয়েছে, আমি বললাম পরীক্ষার ফি দিতে পারি নাই, তাই পরীক্ষা দিতে দেয় না। বলল তুুমি হেডস্যারের কাছে যাও। এরপর হেডস্যারের কাছে গেলে হেডস্যার ছোট একটা কাগজে লিখে দিলেন, আজকের পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হল। আমি বললাম, স্যার আজকের পরীক্ষার অনুমতি দিলেন, তার মানে কি আগামীকালের পরীক্ষা দিতে পারব না? তিনি বললেন আগামীকাল পরীক্ষার ফি দিয়ে এডমিট নিয়ে পরীক্ষা দিও।আমি বললাম আগামীকাল টাকা দিতে পারব না, বলে কেঁদে দিয়েছিলাম। আপনি যদি অনুমতি সকল পরীক্ষার না দেন আমি আর পড়াশোনা করতে পারব না, তবে আজকের ১ টা পরীক্ষা দিয়ে কি হবে।পাশের এক ম্যাডাম সুপারিশ করল দিয়ে দেন স্যার, সকল পরীক্ষার অনুমতি দিয়ে দেন। সেই স্যারের ও ম্যাডাম প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি।
এভাবে ৮ম শ্রেণিতে সাধারণ বৃত্তি পাই।
নবম শ্রেণিতে উটে বেতনও ঠিক মতো দিতে পারিনি, এত বড় সংসারের খরচ বাবার একার পক্ষে খরচ বহন করা কঠিন ছিল।আমার বাবার একটা স্বপ্ন ছিল, আমি পড়ালেখা করতে পারি নাই, আমার সন্তান যেন পড়ালেখা করতে পারে। সমাজের উপকার করতে পারে। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা করছি।এর মধ্যে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে, হাসপাতালে নিলে ডাক্তার ব্রেইন স্ট্রোক করেছে জানায়।এর কিছুদিন পরেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান।😥😥আমাদের প্রতি তিনি ত্যাগ ও পরিশ্রম করে গেলেন।আমাদের সফলতা দেখে যেতে পারেন নি।
এখন মালদ্বীপ জব করছি। পাশাপাশি আমি "ফ্যামিলি ষ্টোর নামে একটি প্রতিষ্ঠতান করেছি সেই প্রতিষ্ঠটানে ৪জন লোকের কর্ম সংস্থান করার সুযোগ করে দিয়েছি। আরেকটি মুড়ির কারখানার জন্য কাজ চলছে আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে চালু করতে পারবো ও কমপক্ষে ৫০জন এর কর্ম সংস্থান করে দিতে পারবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। তাছাড়া আমি সামাজিক বিভিন্ন কাজ করে থাকি। সম্রতি করোনাকালে যখন করোনা আক্রান্ত দের পরিবারে কেউ আগায়নি তখন আমিসহ কয়েকজন কয়েকজন মিলে করোনায় আক্রান্ত ব্যাক্তির পরিবারে সাধ্যমত সহযোগীতা করেছি রাতের আধারে। যাতে কেউ দেখেনা।
আর যেকোনো ভালো কাজে শরীক থাকি।
আজ আমার সব থাকলেও যার আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম ফসল আমার অভিভাবক, আমার স্বপ্নদ্রষ্টা, আমার সব আমার পিতা আমার কাছে নেই। নিয়তি কি এই ছিল! পরপারে ভালো থাকুক আমার পিতা। মা ও খুব অসুস্থ আল্লাহর রমতে এখন খুবী ভালো আছে।আমার পিতা মাতার জন্য দোয়া চাই আপনাদের কাছে।
আমি এই ফাউন্ডেশন না আসলে হয় তো কোনো দিন যানতাম না।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যোগদান প্রাপ্তি ও সফলতা।
আজ এ প্লাটফর্মে না আসলে আমার জীবন বৃথা হয়ে যেতো, আমি শিখেছি কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়, কিভাবে মানুষের উপকার করা যায়! কিভাবে মা-বাবা কে ভালোবাসতে হয়! এগুলোর অপূর্ণতা থেকে যেতো আমার জীবনে।
কি শূন্য হাতেও বিজনেস শুরু করা যায়, কাস্টমার কে।
আজ নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন না থাকলে হয়তো এমন মধুময় সম্পর্কগুলো কখনোই জীবনে পেতাম না। হ্যাঁ, বলছিলাম নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের কথা!
আসলে এই ফাউন্ডেশন আমাকে যা যা উপহার দিয়েছে সেগুলো যদি আমি বর্ণনা করতে যাই বা ব্যাখ্যা করতে যাই তাহলে বলে শেষ করা যাবে না। কারণ এ ফাউন্ডেশনের অবদান অপরিসীম। তাই আমি সবসময় আমার প্রিয় স্যারের কাছে চিরঋণী ও কৃতজ্ঞ দোয়া করি অন্তরের অন্তরস্থল থেকে আল্লাহপাক যেন আমার স্যার কে খুবী দ্রত সুস্থ করে তুলেন আমিন🤲
আসলেই আমার জীবনে এ ফাউন্ডেশনের অবদান অনস্বীকার্য তা না বললেই নয়। জব এর ফাঁকে আমি মালদ্বীপে ছোটখাটো সবজির ব্যাবসা করছিলাম ও আলহামদুলিল্লাহ্ জীবন ভালোই চলছিল।
কিন্তু কাল হয়ে দাড়াল, বৈশ্বিক মহামারী করোনা, করোনার কারণে সব বন্ধ। চলছে লকডাউন আর আতঙ্ক।
এখন ব্যাবসা বন্ধ জীবনে নেমে এল মেঘের মতো কালো অন্ধকার। জীবনে বেঁচে থাকাটাই বিস্ময়কর ও ভয়ানক হয়ে উঠেছিলো। আতঙ্ক আর ভয় আর অভাব, সামাজিক মর্যাদা কোনো কিছু চাপা রাখতে পারছিলাম না। যেন জীবনের নৌকার পাল ছিঁড়ে গেছে, দিকবিদিক হয়ে যাচ্ছিলাম।
তখনই আমার মালদ্বীপ একভাই মেসেঞ্জারে আমাকে এই ফাউন্ডেশনের লিংক দিয়ে জয়েন হতে বলেন।আমি তৎক্ষনাৎ জয়েন হয়ে দেখি, অনেক বড় পরিবার, সবাই সবার জন্য হেল্পফুল।
আমি দশম ব্যাচে যুক্ত হয়ে সব গুলো ক্লাস দেখি এরপর দেশে আমি বিজনেস শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ আমি নতুন হলেও সকলের সাড়া পাই। গ্রুপেই অনেক ভাই বোন আমার পাশবর্তি এলাকার যাদেরকে আমি আগে কোনো দিন চিনতাম না এই গ্রোপে এর মাধ্যোমে পরিচয় হয়েছে
এখন তারা ও আমার দোকান থেকে প্রডাক্ট কিনে নিচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক টাকা সেল হয়। আমি ছোট বেলা থেকেই অন্তর্মুখী ও প্রচার বিমুখ মানুষ তবুও আমাকে বিশ্বাস করে আমার থেকে পণ্য
কিনে।
আমাদের মৌলভীবাজার বেশিরভাগ পাহাড়ি অঞ্চল ও হাওরবাওর এলাকা এখানের জমি উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এতে কৃষি পণ্য উৎপাদন বাড়ে, আমাদের বাড়ির কাছাকাছি রয়েছে বড় দুইটি পাইকারি হাট মৌলভীবাজার হাট ও কমলগঞ্জ রয়েছে শ্রীমঙ্গল হাট। আমার এখানে কৃষক অনলাইন বুঝে না তারা পাইকারি হাটে দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়।
আমি চেষ্টা করছি আমার এলাকার কৃষক যাতে তার কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়। গ্রুপের আমি চারলক্ষ ভাইবোন পেয়েছি। যারা আমাকে খুব ভালোবাসে খুবই আন্তরিক।
আলহামদুলিল্লাহ এখন এ গ্রুপে এসে ব্যবসা করবো ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। এ ফাউন্ডেশনে না আসলে হয়তোবা আমার জীবন বিপথগামী হয়ে যেতো।
এভাবে একইসাথে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার প্রশিক্ষণ, ভালো মানুষ হওয়ার চর্চা, ভলান্টিয়ারিং করা, বিশাল নেটওয়ার্কিং সবকিছুই আজ একজন মহান মানুষের থেকে এই ফাউন্ডেশন থেকে আমি পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ এখন খুব ভালো আছি।
কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও দোয়া নিবেদন করছি প্রিয় মানুষটির প্রতি।
এতক্ষণ ধরে আমার এই লিখা গুলো দর্য্য সহকারে দেখার জন্য আপনাদের নিকট কৃতজ্ঞ।আজ এই বলেই এখানেই বিদায় নিলাম,সবার সুসাস্থ্যতা কামনা করছি।
__________________________________________________
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮৩
Date:- ২৯/০৭/২০২১
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর আমি
মোঃ মোতালেব, কমিনিউটি ভলেন্টিয়ার, দশমঃ-ব্যাচ রেজিঃ
১৫৩৪৯.জিলাঃ মৌলভীবাজার, উপজিলাঃ কমলগঞ্জ
বিভাগঃ সিলেট। বর্তমানে আছি মালদ্বীপ, রেমিটেন্স যোদ্ধা।
প্রতিষ্ঠতাঃ ফ্যামিলি ষ্টোর।