দীর্ঘ ১১ মাসের একদিনের জন্য হলেও আব্বুকে দেখতে আসে নাই
🤲আসসালামু আলাইকুম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
🍀মহান আল্লাহর কাছে প্রথমেই শুকরিয়া আদায় করছি কারণ তিনি আজ ও আমাকে এই সুন্দর ধরণীর মুক্ত বিশুদ্ধ স্নিগ্ধময় কোমল আলো বাতাসে লালন করছেন পরম যত্নে।
🌺এরপর ই মহান আল্লাহতালার কাছে প্রার্থনা করছি পিতা মাতার জন্য -"রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি সগীরা"।
🍂অতঃপর বিনম্র শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা নিবেদন করছি সেই মহান শিক্ষকের প্রতি যিনি না হলে আমরা পেতাম না এত সুন্দর একটি ভালো মানুষের বিশাল পরিবার , যিনি না হলে হাজারো তরুণ-তরুণী পেতো না তাদের জীবনের দিশা, এক কথায় যে মহান মানুষটি আমাদের অন্ধকারাছন্ন জীবনের উজ্জল আলোকবর্তিকা সেই জনাব " Iqbal Bahar Zahid " স্যারের প্রতি।
💞হৃদয়ের গহীন থেকে একরাশ শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা উৎসর্গ করছি প্রাণের গ্রুপের প্রিয় ভাই ও বোনদের প্রতি। উৎসাহ ভালোবাসা অনুপ্রেরণায় আমি সর্বদা স্নিগ্ধ মুগ্ধ অভিভূত বিমোহিত। এক কথায় তাদের শক্তিতেই আমি শক্তিধর তাদের বলে আমি বলিয়ান তাদের উৎসাহে আমি উৎসাহিত।
🌺আমার পরিচয়ঃলক্ষিপুর জেলার একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি।নাম নাসরিন আক্তার প্রিয়া। আমরা ৩ ভাই ও ৩ বোন।ভাই-বোনের ভিতরে আমি সবার ছোট ও আদরের।লক্ষিপুর জেলা হলেও আমার বেড়ে ওঠা ঢাকার তেজগাঁও এলাকায়।আমি বর্তমানে পড়াশোনা করছি মাস্টার্স গণিত বিভাগে। আমার আরেকটা পরিচয় হচ্ছে আমি একজন গৃহিণী ও উদ্যোক্তা। এখানে আমরা সবাই ভালো মানুষ আলহামদুলিল্লাহ।
#আজ আপনাদেরকে আমার দুঃখিনী মা ও বাবার জীবনের কিছু কথা শেয়ার করতে লিখতে বসলাম। আশা করি শেষ পর্যন্ত সবাই পড়বেন।
☘️১২ বছর বয়সে বাবার সংসারে আমার মায়ের পদার্পণঃ আমার মা ছিলেন ভাই ও বোনদের মধ্যে ছোট ও সবচেয়ে সুন্দরী।একদিন আমার দাদিমা আম্মুকে রাস্তায় দেখে নিজের মেজো ছেলের জন্য পছন্দ করেন। নানাভাই রাজি ছিলেন না কিন্তু ছেলে ভালো সরকারি চাকরি করে তার উপর দাদীমার জোরাজুরিতে মাত্র ১২ বছর বয়সে আম্মুকে বিয়ে দিয়ে দিলেন।বাবার সংসারে ছিলেন আমার দাদীমা, আমার বাবা, আমার এক চাচা ও এক ফুপি।মা যখন বাবার সংসারে আসলেন তখন আমার চাচার বয়স ছিল মাত্র ০৮ বছর ও ফুফির বয়স ছিল মাত্র ০১ বছর।
🌿দুঃখিনী মায়ের ও বাবার কষ্টের দিনগুলোঃ1965 সালে সময়টা আসলে সকলের জন্যেই কস্টের ছিলো। আমাদের সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয় কারণ হচ্ছে পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এসে পড়ে আব্বুর উপর। দাদা ও বড় চাচা না থাকার কারণে এ দায়িত্ব আব্বুকেই নিতে হয়।বাবার বেতন ছিলো মাত্র ২৫০০ টাকা।২০০ টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি টাকা দাদিমার হাতে তুলে দিতেন।যেহেতু অভাবের সংসার ছিলো যার কারনে মা আমার ঠিক মতো খেতেও পারতেন না😢😢।যা কয়টা খেতো অনেক সময় নাকি মরিচের ছোগলা দিয়ে না ভাতের মাড় খেয়ে দিনের পর দিন পার করতেন।হঠাৎ করে দাদিমা মারা গেলেন😭😭 ০৮ বছরের ফুফিকে রেখে।আমাদের সংসারে তখন ১ বোন ও ২ ভাইয়ের পরিবার।মা আমার ফুফিকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করতে লাগলেন।সবাই নাকি মা'কে বলতেন ও তো তোর ননদ না তোর মেয়ে এমন ভাবে মানুষ করছিস।চাচাকে বাবা পড়াশোনা করানোর অনেক চেস্টা করেছে।কিন্তু কিছুতেই চাচাকে পড়াশোনা করাতে পারেন নাই।শেষে বাবা চাচাকে ঢাকা নিয়ে একটা গ্যারেজে কাজ শিখানোর জন্য দেয়।দিন শেষে বাবা চাকরি করে ভাইয়ের জন্য নিজের দুপুরের ভাত না খেয়ে দিয়ে আসতো আর খরচ করার জন্য টাকা।অথচ নিজে আসতো হেঁটে হেঁটে🚶।চাচা যখন গ্যারেজের কাজ শেষ করলেন,টাকা ইনকাম করতে লাগলেন তখন চাচা পুরোপুরি বাবাকে না চিনার ভান করলেন।বাবার সামিনে দাঁড়িয়ে বললেন,আব্বু নাকি তার জন্য কিছুই করে নাই😢😢।সব নাকি চাচা নিজের চেস্টায় করেছে।এমনকি চাচা কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে চাচিকে শশুড় বাড়ি রাখে।
কেননা তার বউ নাকি অনেক সুন্দরী।আর আমাদের সংসারে আসলে নাকি কাজ করা লাগবে।চাচা বলেন,আমার মা সংসারে কাজ করেছেন কারন সেইটা নাকি আম্মুর দায়িত্বের ভিতর পড়ে।এইদিকে হঠাৎ করে আমার ২ ভাইয়ের একসাথে হামে আক্রান্ত হয়।তারা বাঁচবে এইটা কেউই আশা করে নি।আমার দুঃখিনী মা প্রতিনিয়ত কেঁদেই যাচ্ছিলো আর আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন।অন্যদিকে চাচার ও ফুটফুটে ১টা ছেলে সন্তান হলো। চাচা আব্বুকে বলে দিলেন,আমাদের বাড়ি থেকে কেউ যেন বাচ্চাকে দেখতে না আসে।যেহেতু ভাইয়াদের হাম উঠেছে তাই তার ছেলেরও হতে পারে।যার কারনে আম্মু আর বাচ্চাটিকে দেখতে যায় নি।ভাইয়াদেরকে নিয়ে আম্মু খুব অস্থিরতার ভিতর যাচ্ছিলেন কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না?কিছুদিনের ভিতর আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়ারা আল্লাহর রহমতে সুস্থ হতে শুরু করলেন।এদিকে চাচার শশুড় বাড়ি থেকে ফোন আসলো, বাচ্চাটি নাকি মারা গেছে😭😭।আম্মু-আব্বু ভাইদের মশারীর ভিতর রেখে বড় আপুর কাছে রেখে যান।চাচীদের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন,ঘরে নাকি কেউ ছিলো না সেই সময় লাল পিঁপড়া কামড়িয়ে বাচ্চাটিকে মেরে ফেলছে😢😢।?যাক দাফনের কাজ শেষ করে আম্মু দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন যেহেতু ভাইয়েরা পুরোপুরি সুস্থ হয় নাই।
বাড়িতে আসার পর পাশের ঘরের নানী আম্মুকে ডেকে বলেন,এই বাড়িতে তোর দেবর বউকে নিয়ে আসে নাই ছেলেকে নাকি হামে ধরবে।কিন্তু আল্লাহ কাকে কখন কি করে দেখলি?আম্মু উত্তর দিলেন,চাচী এইসব বলে লাভ নাই,খুব খারাপ লাগছে একজন মায়ের বুক খালি হওয়াটা খুবেই কস্টের।আমার দরদী মা অনেক কস্ট করে ভাইয়াদের পড়াশোনা করাচ্ছিলেন।বাড়ির অনেকেই ভাইয়াদের দেখিয়ে তাদের ছেলেদের বলতেন,দেখ মান্নানের টাকা কম তাও ছেলেদের পড়াশোনা বন্ধ করে নাই আর তোদের পিছনে এতো টাকা খরচ করিয়েও পড়াশোনা করাতে পারলাম না।এই ভাবেই কস্টে আমাদের সংসার চলতে লাগলো।এর মধ্যে ফুফিও বিয়ের উপযুক্ত হয়ে উঠলেন।মা-বাবা ভালো পরিবার দেখে ফুফিকে বিয়ে দিয়ে দিলেন সাথে আমার মার শেষ সম্বল বাবার দেওয়া বিয়ের গয়না ফুফির বিয়েতে দিয়ে দিলেন।এতো কিছু করেও দুঃখিনী মা কিছুই পেলেন না😭😭।দিন দিন ভাইয়াদের পড়াশোনার খরচ বেড়েই চলছিলো। যার কারনে বেশির ভাগ সময় বাবা আমার না খেয়ে থাকতেন আর দুঃখিনী মা সারা বছরে ২ টা কাপড় দিয়ে চলতো।এতো কস্টের মাঝেও বাবা-মা ফুফির শশুড় বাড়িতে যা যা দেওয়া লাগতো সবই পাঠাতেন।যেহেতু ফুফির স্বামীর তখন মোটামুটি ভালোই টাকা ইনকাম করতেন।একদিন ফুফি আমাদের বাড়িতে আসলেন অনেক ফলমুল ও কিছু জামা-কাপড় নিয়ে।সেই গুলো নিয়ে বড় জেঠিমার ঘরে চলে গেলেন।ভাইয়া ও আপু নাকি ফুফিকে দেখার জন্য গেলে তাদের হাতে শুধু ২ টা চকলেট ধরিয়ে দিলেন।
বড় জেঠিমার জন্য কাপড় ও তার মেয়ের জন্য জামা আনলেন।কিন্ত আমার আব্বু -আম্মুর জন্য কিছুই আনলেন না।কি দোষ ছিলো আমার আব্বু-আম্মুর তাকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করে বিয়ে দেওয়াটা😭😭?ফুফিকে আমাদের বাড়ির এক দাদিমা বললেন,তোর মেজো ভাবীর জন্য কিছুই আনলি না যে কিনা তোকে বড় করার জন্য কতো কষ্ট করেছে? আমরা নিজের চোখেই দেখেছি নিজের খাবারটাও তোর জন্য রেখে দিতো।আমরা যখন তোর মেজো ভাবীকে বলতাম তুই নিজে একটু খেয়ে নে। তখন সে উত্তর দিতো,খালা আজ আমার শাশুড়ী থাকলে কি মেয়েকে না খাইয়ে নিজে খেতে পারতো?এইসব কথা প্রতিউওর ফুফি দিলো না শুধু শুনে গেলেন।দাদীমা আরও বললেন,তুই একটু দেখতো ছেলেদের মানুষ করার জন্য নিজের জন্য কিছুই কিনে না।একটা ভালো ব্যালাউজ ও নাই তোর ভাবীর।ফুফি শশুড় বাড়ি যাওয়ার আগে মাকে ডেকে বললেন, ভাবী আমি আপনার জন্য আলনায় একটা ব্যালাউজ রেখে গেছি ওটা আপনি পইড়েন।ফুফি যাওয়ার পর আম্মু ব্যালাউজটা নিতে গিয়ে দেখে পুরো ব্যালাউজ জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া।সেই দিন দাদীমাকে ব্যালাউজটা দেখিয়ে আম্মু অনেক কেঁদেছিলেন।দাদীমা ও সেইদিন আম্মুকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুজে পায় নি শুধু বলেছিলেন একদিন আল্লাহ তোদের অনেক দিবে।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কখন কার কথা কবুল করেন সেইটা আল্লাহ এ জানেন।যাক এর ভিতর সংসারটা ঠিক মতো পরিচালনা আম্মু করতে পাচ্ছে কি না সেইটা দেখার জন্য একজন বিচারক দরকার ছিলো🤔🤔? যার কারনে আর ও ১ জন সদস্য পরিবারে যুক্ত হওয়া খুবেই দরকার মনে করে আমি এ চলে আসলাম পরিবারের ছোট্র সদস্য হয়ে😇😇😇।আমাদের পড়াশোনার জন্য মা আমাদের সবাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসলেন।হয়তো বা আমার আপন চাচা,ফুফি আব্বু-আম্মুর আত্নত্যাগকে অস্বীকার করে স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়েছিল।
কিন্তু মানুষের দোয়ায় ও রাব্বুল আলামীনের রহমতে আমাদের পরিবারটি স্বচ্ছতার মুখ দেখতে শুরু করে।আব্বু আমার মাত্র ০৮ বছর বয়সে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়।যেহেতু আব্বু বয়সে খুবে ছোট্র ছিলো তাই অফিসিয়াল কাজে আব্বুকে না দিয়ে অফিসারদের বাড়িতে গরু পালা,বাগান দেখা-শোনা করা এমনি যখন যেইটা লাগতো এনে দেওয়ার কাজ করতেন😢😢।কারন এতো কম বয়সে সরকারি চাকরি পাওয়ার কথা না।বড় অফিসার অফিস থেকে আব্বুর বেতন তুলে আব্বুকে দিতেন।বাবার যখন ১৮+বয়স হয় তখন আব্বুকে অফিসিয়াল কাজ দেওয়া হয়। কম বয়সে চাকরি করলে চাকরির সময় আব্বুর বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো যার কারনে বয়স থাকা সত্বেও সরকারি লিস্টে আব্বুর বয়স ৬০ বছর হওয়ায় তাঁকে অবসরে যেতে হয়।আসলে যারা সারাজীবন কাজ করে হঠাৎ অবসরে যায় তারা কেন বেশি দিন বাঁচতে পারে না😭😭?আব্বুকে মাঝে মাঝে কান্না করতে দেখতাম তার নিজের ভাই-বোনদের কথা ভেবে কিভাবে তারা আব্বুর সাথে প্রতারণা করতে পারলো 😢😢😢।
আলহামদুলিল্লাহ এই দিকে বড় ভাইয়ের ব্যাবসা খুবেই ভালো যাচ্ছিলো। অপরদিকে মেজো ভাইয়া ও P.W.D তে অফিসার পোস্টে সরকারি চাকরি পেলেন।যদিও আমি সবার ছোট হওয়ায় অভাবটা কখনও দেখি নি বা বুঝিও নাই।পড়াশোনায় অনেক ভালো থাকার কারনে আব্বু-আম্মু ও ভাইয়াদের খুব আদরের ছিলাম।এইভাবেই চলতে লাগলো আমাদের সুখের পরিবার।যেই দুঃখিনী মা বছরে ১ টা কাপড় কেনার সামর্থ্য ছিলো না সেই মা'র আজ কাপড়ের অভাব হয় না।বরং মানুষকে সব সময় দেওয়ার চেস্টা করে।আম্মু সব সময় বলেন,আজকে আমার যেই অবস্থা সেইটা আল্লাহর রহমতে ও মানুষের দোয়ায়।আমি যতটুকু পারি সবাইকে দেওয়ার চেস্টা করে যাব।আব্বু সব সময় আমাদের বলতেন,কখনো কাউকে খালি হাতে ফিরাবে না।তোমার যতটুকু আছে তার থেকেই কিছু দেওয়ার চেস্টা করবে আর যদি দেওয়ার মতো না থাকে তাহলে বলে দিবা আমার আছে কিন্তু আপনাকে দিলে আমি নিজে চলতে পারব না তারপর ও মাফ করে দিয়েন বা পারব না এই কথাগুলো কখনোই বলবা না।আলহামদুলিল্লাহ আব্বুর সেই কথাগুলো সব সময় মনে রেখে মানুষকে সাহায্য করে যেতে চাই।মানুষকে সাহায্য করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাকে সাহায্য করবেন।
🌼কয়েক বছর পর আমাদের বাসায় ফুফির আগমনঃফুফি আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলেন সাথে নিজের বড় ছেলেকে নিয়ে।আমরা সবাই খুশি এতো দিন পর ফুফিকে দেখতে পেয়ে।কিন্তু কে জানতো ফুফির মনে অন্য কিছু ছিলো। সে তার বড় ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন আমার মেজো আপুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করিয়ে নেওয়ার জন্য যাতে করে আম্মু ও আব্বুর উপর নাকি প্রতিশোধ নিবেন তাকে নাকি অনেক জ্বালিয়ে ছিলো😭😭?একদিন বাড়ি থেকে ফুফি আপুকে ফোন দিয়ে বলেন,তুমি আগামীকাল স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বের হইয়ো সাথে কিছু টাকা ও স্বর্ণ অলংকার নিয়ে এসো আমার ছেলে স্কুলের সামনে থাকবে।ফুফি ফোন কেটে দিতে ভুলেই গিয়েছিলেন আর ভাগ্যক্রমে আপু শুনতে পারলেন,ফুফি তার ছেলেকে বলছিলেন ওকে বাড়িতে আনার যত ইচ্ছে ওর ভাইদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া যাবে সাথে ওর উপর অত্যাচার ও করতে পারব।আপু সাথে সাথে আম্মুকে সব জানাইলো।আম্মু ফুফিকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করাতে ফুফি কথাগুলো অস্বীকার করলেন। সেই থেকে ফুফির সাথে আমাদের যোগাযোগ কম হতো।
🍁আব্বুর অসুস্থতার সময়কালঃফুফির এই সব বিষয় আব্বু জানতে পেরে এই গুলো নিয়ে সারাক্ষন ভাবতে ভাবতে একসময় ভেঙ্গে পড়েন। যার দরুন আব্বু ০৫ জানুয়ারি ২০১১ সালে প্রথম স্টর্ক করেন।স্টর্কে আব্বুর বাম পাশ অবশ হয়ে যায়😭😭।শুরু হয় আব্বুকে নিয়ে আম্মুর সংগ্রাম।আব্বুর প্রতি আম্মুর সেবা দেখে আমরা ভাই-বোন সবাই আম্মুর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সত্যি আম্মুকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না স্বামীর জন্য কোন স্ত্রী এতোটাও করে।একদিনের জন্য ও আম্মুকে বিরক্ত হতে দেখতাম না।আমাদের বাসায় যারাই আসতেন সবার মুখে একটাই কথা ছিলো, আপনাদের বাসায় রোগী আছে বুঝার উপায় নাই।আমাদের পাশের ২ বাসা পরে এক কাকা ছিলেন সরকারি চাকরি করা সত্বেও ঢাকা আসার পর কেউ তাকে থাকার জায়গা দেয় নাই।কিন্তু আমার আব্বু তাকে জায়গা দিয়েছিলেন,খাইয়েছিলেন।সেই কাকা ও এক সময় বাসা পাওয়ার পর আব্বুর সাথে আর যোগাযোগ করেন নাই।এমনকি একেই কোয়াটারে থাকার পরও আব্বু অসুস্থ হওয়ার পর সবাই দেখতে এসেছিলেন শুধু সেই কাকা ছাড়া। আব্বু মারা যাওয়ার কিছুদিন পর সরকারি চাকরি করা সেই কাকা এক্সসিডেন্ট করে পায়ে অপারেশন করানো লাগে যার কারনে বাথরুমে যেতে পারতেন না।তখন আমার আব্বুর অসুস্থতার সময় বাথরুম করার জন্য যেই চেয়ার ব্যাবহার করা হয়েছিলো সেইটা সেই কাকাকে দিয়ে দেন। যাক এখন আবার আব্বুর অসুস্থতার সময়ে আসি। আব্বু যখন অসুস্থ ছিলেন তখন আমার চাচাতো বোন চাকরি করতেন আমাদের বাসার পাশে নাবিস্কুটের পাশে বায়িং হাউজে। যার কারনে প্রতিদিন আমাদের বাসার সামনে দিয়েই যাওয়া আসা লাগতো।
কিন্তু দীর্ঘ ১১ মাসের একদিনের জন্য হলেও আব্বুকে দেখতে আসে নাই😭😭।আব্বু অসুস্থ হওয়ার পর আমাদের পরিবারের অবস্থা অন্য আরেকদিন আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ। আব্বুর অসুস্থতার সময় আমাদের পরিবারের ঢাল হয়ে দাঁড়ায় আমার দুই ভাই।২০১১ সালে ২৪ শে ডিসেম্বর ঠিক রাত ১১.৪৫ মিনিটে প্রিয় আব্বু আমাদের ছেড়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন😭😭😭😭।সেই দিনটা কখনো ভুলার নয়।বাবাহীন এতিম হয়ে গেলাম মুহুর্তের মধ্যে 😭😭।"বাবা গো তুমি কেন চলে গেলা?আমি বুঝি নি বাবা তুমি ছাড়া বাস্তব কতোটা কঠিন।তুমি সব সময় ছায়া হয়ে সব বিপদ-আপদে আগলে রেখেছিলা"😭😭।তুমি ছাড়া সত্যি আমাদের পৃথিবীটা শুন্য😭😭।আব্বু মারা যাওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে করে আব্বুকে নিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা হলাম।রাস্তায় হঠাৎ চাচা চিৎকার দিয়ে উঠলেন,যেই মারা গেছে তো গেছেই এতো কান্না করলে কি ফেরত আনতে পারবি।আমি যে সকাল থেকে এখনো খাই নাই খেয়াল আছে তোদের। তাড়াতাড়ি আমাকে কিছু খাবার এনে দেয়।এই কথা গুলো শুনে চাচাকে কিছু বলতে চেয়েও পারলাম না সবাই কান্না করছে।আমার দুঃখিনী মা'র তো জ্ঞানে নেই।ভাইয়া চাচাকে কিছু বিস্কুট আর কলা এনে দেওয়ার পর উনি শান্ত হলেন।আব্বুকে যখন কবরে নামানো হচ্ছিলো সবাই দোয়া পড়ছিলো আর আমার চাচা বলতে লাগলেন,খা মাটি খা,মাটির শরীর মাটিকেই দিলাম।রাব্বুল আলামীন আমার আব্বুকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক আমিন।আমার দেখা সেরা বাবা ছিলো। এখনো কারও সাথে দেখা হলে সবার মুখে একেই কথা তোদের আব্বু আম্মু ভাই-বোনদের ও তোমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন।তোমার বাবার মতো মানুষ এ হয় না সব সময় হাসি মুখে কথা বলতেন আর মানুষের উপকার করার চেস্টা করতেন।আমি নিজেকে ধন্য মনে করি এমন বাবা-মায়ের সন্তান হতে পেরে।
🌷আমার দেখা পৃথিবীর সেরা ভাইঃবাবার অবর্তমানে ভাইয়েরা আমাদের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে সংসারটা খুব সুন্দরভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন।কোন কিছু চাওয়ার আগেই সেইটা ভাইয়েরা নিয়ে হাজির হয়েছে।মা'র কখন কি লাগবে সব সময় খেয়াল রাখে।আলহামদুলিল্লাহ ভাবীরা ও খুব ভালো। নিজের বোনের মতো ভালোবাসেন।বড় ভাই সরকারি কন্টাক্টর ও বিজনেস ম্যান,বড় ভাবী বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে অফিসার পোস্ট এ আছেন।মেজো ভাই সরকারি অফিসার ও মেজো ভাবী ঢাকা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার হিসেবে আছেন।ছোট ভাইও ঢাকা ব্যাংকে অফিসার হিসেবে কর্মরত।আলহামদুলিল্লাহ আজকে আমাদের সবার এই অবস্থানে আসার পিছনে আল্লাহর পর যাদের অবদান সব চেয়ে বেশি তারা আমাদের আব্বু-আম্মু।আমাদের এই পরিবারে সুখের মুখটা আব্বু দেখে যেতে পারলেন না😭😭।মা ও সুখের মুখ দেখলেও বাবা বিহীন মার পৃথিবীটা শুন্য😢😢।
🌾বর্তমানে ফুফি ও চাচার অবস্থাঃ দীর্ঘ ৩ বছর ধরে ফুফি স্টর্ক করে বিছানায় অবস্থান করছেন।নিজে নিজে খেতেও পারেন না😢।৩ ছেলে তাদের বউ নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছে।ফুফির সেবা করতে করতে শুনলাম ফুফা ও নাকি এখন বিরক্ত।মাঝখানে ফুফির চিকিৎসার জন্য ভাইয়া ফুফাকে টাকা পাঠান।শত হোক আমাদের রক্ত আমার আব্বুর নিজের বোন।উনি যা করেছেন আমাদের আব্বু-আম্মু আমাদের সেই শিক্ষা দেন নাই যে কেউ আমার ক্ষতি করলে আমাকেও যে তার ক্ষতি করতে হবে।মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
👉👉আর চাচার ৫ মেয়ে।কোন ছেলে সন্তান নেই।মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে।মেয়েরা টাকা দিলে চাচাদের সংসার চলে,খেতে পারে।টাকা না দিলে চলে না।
আমরা আমাদের স্বার্থমতে চেস্টা করছি সবাইকে সাহায্য করার।
একটা কথা সব সময় শুনে এসেছি-------"আজকে তুমি রাজা,কালকে তুমি রাস্তার ফকির হতে কতক্ষন"
প্রবাদেই আছে---"অহংকার পতনের মুল"।
❣️আমরা যে যার অবস্থান থেকে সব সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব।নিজের আত্নীয়-স্বজনদের কখনো হেয় করে দেখব না।আল্লাহ কখন কাকে কি করেন সেইটা আল্লাহ এ ভালো জানেন।
⭕⭕অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে কষ্ট করে জীবনের গল্পটা পড়ার জন্য। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের মানুষ করতে তারা অনেক কষ্ট করেছেন জীবনে। আমার আব্বুকে যেন আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন আমিন।
সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮৩
Date:- ২৯/০৭/২০২১
ধন্যবাদান্তে
👩🎓আমি নাসরিন আক্তার প্রিয়া
🇧🇩 জেলা লক্ষিপুর
🏚️ বর্তমানঃ চাঁদপুর
🎈রক্তের গ্রুপঃ ও পজেটিভ
🏆কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
🏅টপ টুয়েন্টি ক্লাবের সদস্য
💁♀️ হাট মনিটরিং টিম মেম্বার
🩸সদস্যঃব্লাড টিমের সদস্য
👩✈️১১তম ব্যাচ
✍️রেজিস্ট্রেশন ৩২৯২৫
🛍️পেজ জাহানারা সুলতান ট্রেডার্স