মানুষের বিপদে আপদে ঝাপিয়ে পড়া ছিল আমার নেশা
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
🌻আসসালামু আলাইকুম 🌻
🌷সকলকে অনুরোধ করছি পোষ্টটি পড়ার জন্য। 🌷
✍️ শুকরিয়া জানাই মহান রব্বুল আলামিন কে যিনি আমাকে ও আমার পরিবারের সকল কে এই ভয়াবহ করুনার মাঝে ও সুস্থ সবল রেখে কাজ করে যাওয়ার তৌফিক দান করেছেন।
👉ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রিয় মনিটর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে যার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এবং সেই সাথে স্যারের সুস্থতা কামনা করছি।
👉 সকল মানুষের জীবনে গল্প থাকে, আমার জীবনের গল্প ও আমি আপনাদের শেয়ার করতে চাই।
👉আমার পারিবারিক পরিচয় 🌿; আমি মোঃ নাইমুল হাসান সোহেল, গ্রাম- আমগাছিয়া ডাঙ্গী, পোষ্ট - খরসূতি,থানা- বোয়ালমারী, জেলা- ফরিদপুর। আমি আমার পরিবারের ২য় সন্তান, আমার বড় ভাই সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ছোট ভাই ব্যাংক সিনিয়র অফিসার। আমার মাত্র ০১ টি বোন বিবাহিত,তাহার ঢাকার শহরে নিজস্ব বাড়ি আছে। আমার বাবা আলহাজ্ব শেখ জালাল উদ্দীন, প্রাক্তন সিনিয়র হাইস্কুল শিক্ষক, মুক্তি যোদ্ধা ও সমাজ সেবক।
👉আমার বাল্যকালঃ 🌿আমার বাল্য জীবনে আমি ছিলাম অত্যান্ত চঞ্চল টাইপের ছেলে। মানুষের বিপদে আপদে ঝাপিয়ে পড়া ছিল আমার নেশা। এলাকার যেকোন সামাজিক কার্যক্রমে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া ছিল আমার পারিবারিক শিক্ষা। কিন্তু সমাজের কিছু লোক আমার এই কার্যক্রম মেনে নিতে পারতে ছিলো না। আমি ছিলাম সাবেক এম পি আবদুর রউফ মিয়ার অনেক আদরের। তিনি যেখানে যেতেন উন্নয়ন মূলক কাজে আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন। যেমন যখন স্যার বঙ্গবন্ধু কলেজ করার উদ্যোগ নেন, তখন তিনি যেখানে যেতেন আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন। আমি তখন আই, এ পরিক্ষা দিয়ে এসেছি, রেজাল্টের অপেক্ষায় বসে আছি। একদিন বিকালে কলেজ প্রাঙ্গণে আমি ভলিবল খেলিতেছিলাম। এই সময় নামাজের সময় খুব নিকট বর্তি, স্যার আমাকে বললেন খেলা বন্ধ কর। আমি খেলা বন্ধ করে দেই। কিন্তু ঐ সময় স্যারের বাড়ির পাশে একজন প্রাইমারী স্কুলের মাষ্টার আমাকে বলে কেন খেলা বন্ধ করলি, আমি তাকে বললাম স্যার বলছে কিন্তু উনি মন হতে মেনে নিতে পারে নাই। ঐ মাষ্টার আমার উপর রাগান্বিত ছিল। এর কিছু দিন পরে এম পি সাহেব তার বাড়িতে একটা কাজের জন্য আমাকে ডাকেন কিন্তু তার বাড়িতে যাওয়ার সময় ঐ মাষ্টার আমাকে সাইকেল হতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে রক্তাক্ত করে মারধোর করে। এই অবস্থায় এলাকা গরম হয়ে যায়। আমার বড় ভাই আমাকে ঢাকা হতে এসে ঢাকায় নিয়ে যায়। আর সেখান হতেই আমার জীবন টা বদলে যায়।আমার পড়া লেখা বন্ধ হয়ে যায়। আমার পরিবারের সকলের অবহেলা শুরু হয় আমার উপর।
👉আমার সাথে আমার দাদার স্মৃতি🌿 ;আমার দাদা, মানে আমার বাবার, বাবা ছিলেন এক নিম্ন মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান। পড়া লেখা জানতেন না মোটেও
কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যান্ত সৎ, ধার্মিক ও কর্মঠ। আমার দাদার ছিলো ০৮ জন ছেলে মেয়ে।আমার দাদার এক মজার ঘটনা আছে। আমার দাদা জমির দলিল দেখানোর জন্য এক শিক্ষিত ভদ্রলোকের কাছে গেল,ভদ্রলোক ছিল অনেক বিজি সে আমার দাদাকে দেখে গরম হয়ে গেল এবং গালি দিয়ে বললো হারে মিয়া এত গুলো ছেলে মেয়ে জন্ম দিয়েছো, একটা কে ও লেখা - পড়া করাও নাই।দাদা কেঁদে দিল এবং তার সামনে কান ধরে তওবা করে বললো, আজ হতে আমার যত গুলো সন্তান আছে, সবগুলো কে আমি পড়ালেখা শিখাবো।দাদা আমার করিয়েছেন ও তাই। আমার বড় ফুফি দুটা আগেই বিবাহ হয়ে গিয়েছিল। এর পর আমার,বাবা বিএ, বিএড পাস, আরো ০২ কাকা বি,এ পাস, ০১ কাকা আই, এ পাস এবং ছোট ফুফু আই, এ পাস। দাদা ছিলেন ধার্মিক আগেই বলেছি। দাদা প্রতিবছর বিশ্ব ইসতেমায় যেতেন। একবার তিনি এসতেমায় যাওয়ার পরে পকেটমার তার সবগুলো টাকা নিয়ে চলে যায় আর দাদা অনেক কষ্ট পায়। কষ্ট পেয়ে, দাদা বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। টাকার শোকে শোকে দাদা একদিন ষ্টক করে মাত্র ৫০ অথবা ৫২ বছর হবে এই বয়সে তিনি চলে যান।দাদার জন্য আমার খুব মায়া লাগে, আমি তখন মাত্র ৬ / ৭ বছরের, তিনি যেখানে যেতেন, আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন। হাটে,বাজারে, ঘাটে সব সময় আমি থাকতাম তার সাথে। আজ দাদা কে আমি বড় মিস করি। দাদা তুমি যেখানে থাকো, ভাল থেকো। আমি তোমার জন্য দোয়া করি।
👉আমার প্রতি আমার দাদীর ভালোবাসা ;🌿 আমার বড় ভাই যখন আমাকে বাড়ি হতে ঢাকায় আমার সেজে কাকার বাসাই পাঠিয়ে দেন।আমি তখন অসহায় হয়ে পড়ি, ওরা আমার উপর রেগে আমাকে পানিশমেন্ট দেওয়ার জন্য গার্মেন্টসের চাকুরিতে ঢুকিয়ে দেয়। আমার পরিবারের সকলের কাছে আমি অবহেলার পাত্র হয়ে যাই। আমার দাদী ঐ সময় চাচার বাসায় থাকতেন। আমি যখন চাকরি করতাম। আমার ডিউটি ছিল ১২ ঘন্টা। কিন্তু গার্মেন্টসে একটা সমস্যা আছে ওরা যদি দেখে আপনি একটু লম্বা,চওড়া আপনার ১২ টা বাজিয়ে ছাড়বে। আমার বেলায়ও হলো তাই। আমার ডিউটি ছিল ১২ ঘন্টা কিন্তু আমি কোন দিন ১৫ ঘন্টা বা কোন কোন দিন ১৮ ঘন্টার আগে বাসায় আসতে পারতাম না। আর নাইট হলে তো কথায় নাই। আমি সবার আগে নাইটে। এভাবেই চলতে লাগলো কিছু দিন কিন্ত আমার কাকী, চাচাতো ভাই, বোন, কোন ভাবেই এটা মেনে নিতে পারছে না। তাদের আমি ঘুমের ডিস্টার্ব করছি, মাঝে মাঝে রাতে বাসায় এসে দেখি আমার খানা নেই। আমি না খেয়েই ঘুমিয়ে পরতাম।আর এই সব আমার দাদী সহ্য করতে পারতো না , কাকীর সাথে প্রতিবাদ করতো। দাদী আমার, আমার উপর এই অবহেলা মেনে নিতে পারতেন না।অবশেষে আমি এক,দেড় মাস পরে কাকার বাসা হতে বের হয়ে ম্যাসেরুম নেই। এভাবেই চলে যায় ০৮ টি বছর।
👉আমার জীবনের মিরাকেল ঘটনা ঘটলো 🌿; আমি তখন সাভার ইপিজেড এ একটা কোরিয়ান গার্মেন্টসে কাজ করি, আমার কোম্পানির নাম A- ONE BD lTD.একদিন কোম্পানির ছুটির দিন আমি, আমার বোনের বাসায় যাই । ওটা ছিল, তেজগাঁও, ঢাকা। পিছন হতে আমাকে এক ভদ্রলোক ইংরেজিতে ডাকছে। আমি পিছন ফিরে ওনাকে ইশারা করলাম। উনি বললেন আমি আপনাকেই খুঁজছি। ভদ্রলোক আমার সাথে ইংরেজিতে প্রায় ১৫/২০ কথা বললো। আমি ও তখন মোটামুটি ইংরেজিতে কথা বলতে পারতাম।লোকটির কথা শুনে, আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। এত সুন্দর করে কথা বলছে। একপর্যায়ে উনি আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে নিলেন এবং আমাকে বললেন। I want to do something best for you.ঠিক তার এক সপ্তাহ পরে লোকটি আমাকে সকাল ০৫ঃ০০ সময় কল করে বললো, সেদিন তোমাকে যেভাবে আমি দেখেছিলাম। ঠিক ওই ভাবে তুমি আমার অফিসে চলে এসো। আমি গেলাম তার অফিসে ।উনি আমার একটা ইন্টারভিউ নিলো, এক বিদেশী লোকের সামনে এবং আমাকে বলে দিল তুমি সিলেক্টেড, সামান্য কিছু টাকা লাগবে।আমি সেটা জোগার ও করে ফেললাম। এক সপ্তাহের মধ্যে উনি আমাকে দুবাই পাঠিয়ে দিলেন। এখানে একটা কথা বলতে হয়। আমি যখন কোম্পানিতে কাজ করতাম আমি তখন, সব সময় আমার কলিগদের কারো কোন সমস্যা হলে সহযোগীতা করার জন্য ঝাপিয়ে পরতাম।কারো ব্লাড লাগলে, ব্লাড দিতাম। অন্যথায় এরেন্জ করে দিতাম। এই জন্য স্যার বলেন, পরের জন্য কাজ করলে জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয় না।
👉আমার দাদীর সাথে আমার শেষ স্মৃতি🌿 ; আমি এখন প্রবাসী। প্রতি ০২ বছর পর পর আমি বাড়িতে ছুটিতে বেড়াতে আসতাম। দাদী আমার, এখন গ্রামের বাড়িতেই থাকে। আমি গত ০৫ বছর আগে যখন ছুটি কাটিয়ে ফেরত আসবো, তখন আমি দাদীর কাছে গেলাম বলতে, আমি দাদীকে বললাম তুমি আমার জন্য দোয়া করো, আর আমি যদি তোমাকে কখনও কোন দুংখ দিয়ে থাকি, আমাকে মাপ করে দিয়ো ।দাদী আমার কাঁদতে লাগলো, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, তুমি তো জোয়ান মানুষ,তুমি আমার জন্য দোয়া কইরো।আর আমি তোমাকে কিছু বলে থাকলে ক্ষমা করে দিয়ো।দাদীর বয়স তখন ৯০/ ৯৫ শুই শুই। দাদী বললো আমি জানিনা তুমি, আমাকে আর দেখতে পাও কি, না পাও। আমার পরিবারের আমিই এক মাত্র ব্যাক্তি, যে বাহিরে থাকি। আমি বাহিরে আসার ঠিক ০২ মাস পর দাদী, আমাদের সবাই কে কাঁদিয়ে এ পৃথিবী হতে, চির বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। আমি কষ্ট পাবো বলে আমার পরিবারের, কেউ আমাকে জানাই নি। দাদী কে আমি আজও ভুলতে পারি না।দাদী মাঝে মাঝে আজও আমার স্বপ্নে আসে। আপনারা সবাই আমার দাদীর জন্য দোয়া করবেন।
👉কিভাবে আমি যুক্ত হলাম নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনেঃ 🌿একদিন রাত ০২ঃ০০ বাজে আমি Facebook এ বাগেরহাটের ইয়ানা ইসলাম বৃষ্টি আপুর একটা পোষ্ট দেখতে পাই, ওখানে লেখা যারা এখনও রেজিষ্ট্রেশন করেন নাই করতে পারেন। আপু কে দেখে আমার ভিতর একটা কৌতুহল হলো। আমি ম্যাসেজে লিখলাম আমি তো করতে চাই কিন্তু কিভাবে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয় আমি জানি না।সাথে সাথে আমি দেখলাম আপু সহ, জামসেদ ভাই বাপ্পি সহ আরো ২০ জন আমাকে নক দিয়ে বলছে আপনি চেষ্টা করেন। আমরা সহযোগিতা করবো।আমি উনাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম আর রেজিষ্ট্রেশন করে ফেললাম। আমি ঐ সময় আরো খুঁজতে থাকলাম কে এই ইকবাল বাহার জাহিদ। খুঁজতে খুঁজতে আমি স্যারের মাছরাঙা চ্যানেল এ, একটি স্বাক্ষাতকার পেয়ে গেলাম। স্যারের সহজ সরল কথাগুলো আমি শুনে স্যারের পুরো ফ্যান হয়ে গেলাম। স্যারের সবচেয়ে ঐ উক্তি গুলো আমার বেশি দাগ কেটেছে।
❤️চাকুরী করবো না
চাকুরী দেবো।❤️
🌷স্বপ্ন দেখুন, 🌷সাহস করুন,🌷শুরু করুন লেগে থাকুন 🌷
🌷সাফল্য আসবেই। 🌷
👉আপনার জন্ম শুধু একটি চাকুরীর জন্য হয় নাই
আপনার মাঝে লুকিয়ে আছে অনেক প্রতিভা। 🌹
👉আমার আগামীর পরিকল্পনা🌿 ; স্যারের সেশন গুলো আমি এক এক করে পড়তে থাকি আর আমার ভিতর স্বপ্ন কাজ করতে থাকে। অবশেষে আমি ফরিদপুরের কয়েক ভাই নিয়ে বসে সিন্ধান্ত নেই । আমরা কিছু করবো আর সেই স্বপ্ন বুকে ধারন করে আমরা একটি অনলাইন শপ ওপেন করতে যাচ্ছি। আমি এবং আমরা আরো ০৫ ভাই মিলে। আমাদের স্বপ্নের শপের নাম ডানা শপ এবং ডানা ডেলিভারি।আমার স্বপ্ন ডানা উপর ভর করে আমি যদি সফল হতে পারি, আমার লাভের একটা নিদিষ্ট অংশ দিয়ে, আমি চ্যারেটি বোড গঠন করবো। যেখান হতে টাকা নিয়ে সমাজের যে দরিদ্র ছেলে মেয়ে পড়া লেখা করতে পারে না। তারা ওখান হতে টাকা নিয়ে পরা -লেখা করতে পারবে। যে দরিদ্র বাবা - মায়েরা টাকার অভাবের কারণে চিকিৎসা করতে পারে না, তারা চিকিৎসা করাতে পারবে এবং যে দরিদ্র বাবা - মায়েরা টাকার অভাবে তাদের মেয়ে বিবাহ দিতে পারছেনা তারা ও ওখান হতে সহযোগিতা পাবে।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন আমার আশা পুরণ করেন। আমিন।
👉এতক্ষণ যারা আমার লেখা ধৈর্য ধরে পড়েছেন। সকলের জন্য রইল শুভকামনা ও অনেক অনেক দোয়া ও ভালবাসা । ধন্যবাদ। 🌹🌹
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮৪
Date:- ৩১/০৭/২০২১
শুভেচ্ছান্তে,
🦋🦋🦋 আমি 🦋🦋🦋
👇
💎নাইমুল হাসান সোহেল
💎ব্যাচ নং - ১৩
💎নিজ জেলা -ফরিদপুর
💎রেজিষ্ট্রেশন নং -৫২৭৭৩
💎বর্তমান অবস্থান - দুবাই।
ফাউনডার- ডানা শপ ও ডানা ডেলিভারি।