এই পরিবার কে তৈরি করে দিয়েছেন কে জানো , আমাদের নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান , মেন্টর শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।
আপনাদের মাঝে আজ আমার মায়ের জীবন কাহিনী তুলে ধরছি ।
" মা "
.........................................................................
মা ও মা , তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ । এই প্রবাসী খোকা তোমাকে ডাকছে ।সুদুর ৬ হাজার কিলোমিটার দূর সৌদি আরব থেকে । ঈদ চলে গেল,কেউ বললো না ,বাবা তুমি কেমন আছো কি করছো ,কি খেয়েছ ।আমি ছাতক পাখির মতো পথ চেয়ে বসে ছিলাম ,তোমার আসায় । তুমি কখন আমাকে ডাক দিয়ে বলবে , খোকা কেমন আছো কি খেয়েছ, কি কুরবানী দিয়েছ । সকালে নাস্তা শেমাই তৈরি করেছো কি না ।
মা আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম , তুমি আমাকে ভোর বেলা ডাক দিয়ে বলবে , খোকা ঘুম থেকে উঠ ,গা গুসল করে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য রেডি হয়ে নাও ।সবাই ঈদের নামাজ পড়ার জন্য রৌনা দিয়েছে , তুমি কখন ঈদের নামাজ পড়তে যাবে খোকা ।
মা আমি তোমার ডাকের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি , বলতে পারবো না । অপেক্ষার প্রহর আর কাটেনা মা ।
মা তোমার কি মনে পড়ে আমার সেই ছোট বেলার কথা ।আমি ছোট বেলা খুব দুষ্টু ছিলাম,সব সময় মাঠে ঘাটে ,বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতাম । স্কুলে যেতাম না । পাড়ার ছেলেদের সাথে সব সময় আডডা মারতাম ।সারা দিন টোটো কোম্পানীর মতো ঘুরে বেড়াতাম ।যে দিন স্কুলে যেতাম না ।ঐ দিন বাবা আমাকে ভাত দিতে নিষেধ করতেন তোমাকে । তুমি বাবার কথা অমান্য করে চুপি চুপি করে, আঁচলের ভিতর ভাত নিয়েসে খাইয়ে দিতে । একদিন বাবা , আমাকে ভাত দেওয়ার অপরাধে তোমার গায়ে হাত তুলেছিল ।পরের বার আবার যখন , আমার জন্য আঁচলের ভিতর করে ভাত নিয়েসতে ছিলে,সে সময় বাবা তোমার পিছনে পিছনে এসে ভাতের থালা কেরে নিয়ে আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে ছিল । বাবার প্রতিটি লাঠির আঘাত তোমার পিঠের উপর নিয়েছ । একটা লাঠির মার আমার শরীরের উপর পড়তে দেওনি । তোমার পিঠের উপর কত যে মারের দাগ পড়েছে ,আমি গুনে শেষ করতে পারিনি । তুমি আমাকে নিয়ে কত কেঁদেছ ,কত আঘাত সহেছ ।সে দিনের মারের আঘাতের কথা আজও আমি ভুলিনি । তোমার শরীরের উপর আঘাত দেখে আমি অনেক কেঁদেছি । আজ ও কাঁদি ।
তার পরেও আমি স্কুল ফাঁকি দিতাম ।বাবা মায়ের উপর অনেক রাগ করতেন ।আমি দিনের বেলায় বাড়িতে আসতাম না । মাগরিব নামাজের পর বাড়িতে আসতাম , চুপি চুপি করে ঘড়ে ডুকে খাটের নিচে বসে থাকতাম ।বাবা ঘুমিয়ে পড়লে , তুমি আমাকে ডাক দিয়ে ভাত খাওয়াতে মা ।
অনেক সময় আমার উপর রাগ করে বলতে , তুমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও । তোমার মুখ দেখতে চাই না । তোমার জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হয় , আমাকে মার খেতে হয় । তোমার যে দিকে দু চোখ যায়,সে দিকে চলে যাও । তোমাকে নিয়ে আমি আর,তোমার বাবার হাতের মার খেতে পারব না ।গালি শুনতে পারব না । তুমি আমার কাছ থেকে দুর হয়ে যাও ।আর কোন দিন তুমি আমার কাছে আসবে না ।
আজ আমি অনেক দুরে এসেছি ।সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে । তোমাকে আর আমার জন্য কথা শুনতে হবে না । আমার জন্য মার খেতে হবে না । আমার জন্য গালি শুনতে হবে না । আমি তো ভুলেই গেছি, তুমি আমার মাঝে নেই , সেই ২০১৩ সালে আমাকে ছেড়ে , ফাঁকি দিয়ে পড় পারে চলে গেছ । না ফেরার দেশে ।
তুমি আমাকে ফাঁকি দিয়ে ,পর পারে যেয়ে ভালোই আছ । তোমার এই দুষ্টু ছেলে প্রবাসে কেমন আছে,কি খেয়েছে , একবার খোঁজ নিয়েছ । তুমি জাননা তোমাকে একবার না দেখলে ,কথা না বললে আমাকে ভালো লাগে না । আমি পাগলের মত হয়ে যায় । কোন কাজে মন বসে না । পড়ানটা পারে থাকে তোমার জন্য ।
আমার প্রতিটি ক্ষণ সময় দিন রাত কি ভাবে কেটে যায় , তুমি যদি জানতে , তাহলে আমাকে ফাঁকি দিয়ে এই ভাবে চুপ থাকতে পারতে না । আমি প্রবাসে বড় একা,বড় একাকী হয়ে গছি মা ।
যদি কোন সময় কেউ ফোন দিয়ে জানতে চাই, তুমি কেমন আছো ,তার পর বলে টাকা পয়সা কি কর । আমার টাকা লাগবে , আমার টাকা লাগবে ।
তুমি ফোন দিয়ে বলতে, খোকা তুমি কেমন আছো ,কি খেয়েছ, তোমার শরীর ভালো আছে ।সময় মতো খাওয়া দাওয়া করবে , শরীরের প্রতি যত্ন নিবে । বেশি কষ্ট হলে বাড়িতে চলে এসো ।
মা ছাড়া আর যারা আছে , তাদের কাছে বাড়ি আসার কথা বললে , খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায় । কারন আমরা প্রবাসী টাকার গাছ । আমরা প্রবাসীরা টাকার গাছ লাগিয়েছি ।টান দিলেই ,টাকা চলে আসে ।
পৃথিবীতে মা শুধু বলেন , আমার টাকা লাগবে না ।খোকা তুমি ভালো থাকলে আমি মহা খুশি । তুমি ভালো থাকলে আমি ভালো থাকি ।
আমাদের প্রিয় গানের শিল্পী , ফকির আলমগীর হোসেন ভাই, মাকে নিয়ে গান গেয়েছেন ।
#মায়ের এক ফোটা দুধের দাম,
কাটিয়া গায়ের চাম,
পাপস বানালে কোন দিন সোধ হবে না ।
মায়ের মতো দরদি আর কেউ হবে না মাগো #
আমি ফকির আলমগীর হোসেন ভাইয়ের সাথে মিল রেখে এই কথায় বলছি ,আমি মায়ের এক ফোটা দুধের দাম কোন দিন সোধ করতে পারব না
।
আমরা ভাই বোন ১১ জন ।আমরা ৬ ভাই ৫ বোন ।আমি ভাই বোনদের মধ্যে ৭ নাম্বার । আমি ছোট বেলা দেখেছি , বাবার সংসারে অভাব আর অভাব ।সব সময় অশান্তি লেগেই থাকতো ।এক ভাই এসে বলে মা ভাত দাও ।আরেক ছেলে এসে বলে মা, পানি দাও ।আরেক মেয়ে এসে বলে ,মা জামা দাও ।সব সময় ভাই বোনদের বাইনা লেগেই থাকতো । মা সব সময় তুমি আমাদেরকে শান্তনা দিয়ে বলতে , , তোমার বাবা হাট থেকে আসলে, তোমাদের জন্য সামনের হাটে জামা কাপড় নিয়াসতে বলব ।মাছ মাংস নিয়াসতে বলব ।
মা আমাদেরকে বলতেন ,আজ তোমার বাবা বড় একটা মাছ হাট থেকে কিনে নিয়াসবে ।আমরা সবাই বাবার হাট থেকে আসার অপেক্ষায় থাকতাম ,বাবা হাট থেকে মাছ নিয়াসলে , সেই মাছ দিয়ে ভাত খাব । বাবা হাট থেকে বাড়িতে আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যেত ।আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়ে যেতাম ।
পড়ের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে বলতাম,মা বাবা হাট থেকে বড় মাছ কিনে নিয়াসছে ,মাছ কোথায় ? আমাদেরকে মাছ খেতে দাও ।মা আমাদেরকে শান্তনা দিয়ে, বুকে টেনে নিয়ে বলতেন , তোমার বাবা মাছ আনতে ভুলে গেছে । সামনের হাটে মাছ কিনে নিয়াসবে ।আমরা সেই দিনের জন্য মাছ খাওয়া ভুলে যেতাম । পড়ের হাটের অপেক্ষায় থাকতাম ।
মায়ের শরিরের যন্ত ঃ
মাকে কোন সময় পায়ে সেন্ডেল পরতে দেখেনি , যদিও কোন সময় সেন্ডেল পরতে দেখেছি, নামাজ পড়ার জন্য অজু করার সময় । আর বিছানায় শুয়ে পরার সময় ।বাকি সময় খালি পায়ে হেঁটে যেতে দেখেছি ।
মা, তুমি কি সেই মা , কঠিন শীতে , মানুষ যখন ঘড় থেকে বাহির হতে চাই না । তুমি শীতকে উপেক্ষা করে ,পাতলা কাপড় পরে আমাদের জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছ । তুমি কি সেই মা , সংসারের কাজ এবং রান্না করার সময় আমরা কান্না করলে বুকে টেনে নিয়ে আদর করে, কপালে চুমু খেয়ে, ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে, আবার সংসারের কাজে এবং রান্নার কাজে চলে যেতে ।
তুমি কি সেই মা , নিজের শরীরের প্রতি যত্ন না নিয়ে , সন্তানের শরিরের প্রতি যত্ন নিয়েছ । তুমি কি সেই মা নিজে না খেয়ে আমাদেরকে খায়িয়েছ ।
আবার মনে পড়ে গেল দেশের গানের কথা ,
#জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো ,
তোমার বুকে জনম নিয়ে মা #
মা তোমার বুকে জন্ম নিয়ে,আমি আজ ধন্য ।আজ আমাকে তুমি জন্ম না দিলে এই সুন্দর পৃথিবীর মুখ দেখতাম না । গাছ পালা, নদী নালা,খাল বিল, কিছুই দেখতাম না ।মা তোমাকে আমার এবং আমাদের সকল সন্তানদের পক্ষ থেকে সেলুট জানাই ।
মা , তোমাকে আজ আমায় দেখতে মন চাচ্ছে । তুমি একটি বার আমাকে দেখা দাও । তোমার এই দুষ্টু ছেলে পাগল ছেলে , তোমাকে দেখতে চাই । তুমি আমার উপর রাগ করে আছ মা ।আমি ছোট বেলার মত ,আর দুষ্টুমি করব না । বাবাকে দিয়ে গালি শুনাব না । বাবাকে দিয়ে আর মার খাওয়াব না ।
মা, তোমার এই দুষ্টু ছেলে ,প্রবাসে এসে ভালো হয়ে গেছে । আর দুষ্টুমি করে না , স্কুল ফাঁকি দেই না । তোমার এই ছেলে ,আর কোন দিন , তোমার কথার অবাধ্য হবে না মা । আমাকে ক্ষমা করে দাও মা ।
মা আমাকে বলেন ,খোকা তুমি আমাকে দেখতে চাও । তাহলে ঘড় থেকে বাহির হয়ে , চাঁদের দিকে তাকাও , তাহলে আমাকে দেখতে পাবে চাঁদের পাশে । আমি সেখান থেকে তোমাকে দেখি, তোমার জন্য দোয়া করি ।সুখে থাক খোকা ভালো থেকো । তোমার মা সব সময় তোমার পাশে আছে । তোমার জন্য দোয়া করে ।
জান মা , তোমার খোকার আজ অনেক টাকা পয়সা হয়েছে । তোমার আর জামা কাপড়ের অভাব হবে না ।খালি পায়ে হাঁটতে হবে না । শীতের মধ্যে কাজ করতে হবে না ।
মা তুমি জান , তুমি চলে যাওয়ার পর ,আমি আর একটি পরিবার পেয়েছি । তুমি জেনে খুশি হবে , আমাদের এই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫,৫০,০০০ হাজার ।আমি এই পরিবারের মধ্যে হাজার হাজার বাবা মা ভাই বোন পেয়েছি । পেয়েছি সুন্দর একটা পরিবেশ ।
এই পরিবার কে তৈরি করে দিয়েছেন কে জানো , আমাদের নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান , মেন্টর শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার । এই মহান ব্যাক্তির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা আজ এতো গুলো বাবা মা ভাই বোনদের সন্ধান পেয়েছি ।
তুমি জানো মা , এই পরিবারের বাবা মা ভাই বোন এতো ভালো মানুষ কোথাও দেখি নাই ।যে কোন মুহুর্তে ডাক দিলে পাশে পাই , পাশে এসে দাঁড়ায় । কোন সময় রক্তের প্রয়োজন হলে, অভাব অনটন হলে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেয় ।
তুমি আমাদের স্যারের জন্য দোয়া করবে ,স্যার যেন সব সময় ভালো থাকেন, সুস্থ্য থাকেন ।মা তোমাকে তো বলাই হয় নি ,
আমাদের স্যার , মেন্টর শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার,আজ ২৪ দিন আগে কোরনা প্রজেটিভ আক্রান্ত হয়েছিলেন । তোমার মতো হাজার হাজার মা বাবা ভাই বোন ,স্যারের রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া মুনাজাত, কুরআন শরীফ খতম,নফল নামাজ পড়েছেন । সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে স্যার এখন মোটামুটি সুস্থ্য আছেন ।
মা তোমার জন্য আমার এবং আমার মতো হাজার হাজার ভাই বোনদের তরফ থেকে , আবার সেলুট ও অভিনন্দন জানাচ্ছি মা ।
আমি সবার হাত ধরে পা ধরে , অনুরোধ করছি ,আপনারা কোন সময় বাবা মাকে কষ্ট দিবেন না । বিশেষ করে মাকে কোন সময় দিবেন না । মা আপনার জান্নাত ।
স্যার আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,আপনারা আজ, আপনার বাবাকে অথবা মাকে বলবেন ,মা তোমাকে অনেক ভালো বাসি । দেখবেন, আপনাদের মনে এতো ভালো লাগবে ,যা কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না ।
আজ আর বিশেষ কিছু লিখলাম না ।অন্য দিন লেখার চেষ্টা করবো ।
পরি শেষে , আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের সুস্থ্য কামনা এবং ১৫ তম ব্যাচের নতুন সদস্যদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমার লেখাটি শেষ করলাম ।আল্লা হাফেজ ।
বাংলাদেশে আমার একটি কোম্পানি আছে। আমার কোম্পানীর নাম প্রবাস বাংলা এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান । আমার কোম্পানী হোম ডেলিভারি নিয়ে কাজ করেন । আমার কোম্পানীর পেইজ লিংক ঃ
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮৮
Date:- ০৪/০৮/২০২১
হাফিজ রহমান
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
(NRB সৌদি আরবে) দাম্মাম জুবাইল ।
ব্যাচ নং। ঃ ৭
রেজিঃ নং ঃ ১৬৬৫৮
মোবাইল নাম্বার ঃ ০০৯৬৬৫৭১৭২৫৬৫৩
জেলা। ঃ নাটোর
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের গর্বিত সদস্য ।