মেয়েটি যশোর নারী উদ্যোক্তা নামে একটি গ্রুপে এড ছিল।।
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম "
💘"জীবন থেকে নেয়া জীবনের গল্প"💘
🌄শুরু করিতেছি মহান সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহর নামে যিনি মহান ও অত্যন্ত দয়ালু,...
🌻সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য । লাখো কোটি দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) এর প্রতি ।
🌄 শ্রদ্ধা ভালোবাসা , আমাকে যারা জন্ম দিয়েছেন লালন পালন করেছেন । আমার মা ও বাবার প্রতি।
🌄কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার, লাখো তরুণ তরুণীর আইডল, জীবন্ত কিংবদন্তি, প্রিয় মেন্টর,প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি, যার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের মতো একটা সুবিশাল প্লাটফর্ম ।
আমি মহান আল্লাহর কাছে স্যার সহ পরিবারের সকলের জন্য দোয়া করছি আল্লাহ যেন সসবাইকে সুস্থতা ও নেক হায়াত দান করেন । আমিন.....আসসালামুয়ালাইকুম।
🌷আমি ১৪তম ব্যাচ থেকে এই প্লাটফর্মে আছি। অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট,মিটাপে জয়েন করে অনেক কিছুই শেখার চেষ্টা করছি। কিছু কিছু শিখতে পারছি।
আজ একটা গল্প শোনাব। আশা করি সময় করে সবাই ধৈর্য্য ধরে শুনবেন।
🌷গল্প ঠিক নয় জীবন থেকে নেয়া।
🌷একটি মেয়ে বা নারী ৩ বছর বয়স থেকে যার জীবন যুদ্ধ শুরু।
🌷 ছেলেবেলা:
১৯৮২ সালে জন্ম। ৩ ভাই ও দুই বোনের সংসার।১৯৮৪ সাল ২৫শে ফেব্রুয়ারি সকালে সে কিছু্ই বুঝতে পারছেনা। সবাই কান্না করছে।নানা ,নানী,মামা খালা সবাই এসেছে। মা কান্না করছে। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা বা বোঝার ক্ষমতা নেই। উত্তর হলো সংসারের বট গাছের ছায়া বাবা আর নেই। শুরু হলো যুদ্ধ যাত্রা। তিনদিনের মিলাদের পর সবাই মিলে চলে এল নানা বাড়ি। মা তখন অন্তঃসত্ত্বা। বাবা মারা যাওয়ার ৬ মাস পর ছোট ভাইয়ার জন্ম হয়। ভালোই চলছিল সব। কিন্তু ঝড় উঠতে তো সময় লাগে না। আবারো ঝড়। বড় ভাইয়ের পায়ে একটা ইনফেকশন হয় । ভাইয়ার চিকিৎসায় নানার ব্যাবসার পুঁজিতে টান পড়লো। শুরু হলো সংসারে অভাব অনটন। কিন্তু বাবার ইচ্ছে প্রাধান্য দিতে মা আমাদের স্কুলে পাঠান ঠিকই। আর মেয়েটা অনেক লক্ষী ও ভালো ছাত্রী ছিল। তার ক্লাসে কখনো ৫ এর বাহিরে রোল যেত না।
🌷 শিক্ষা জীবন:
৫ বছর বয়সে সে এলাকার একটি স্কুলে ভর্তি হয়।নাম মসজিদ মহল্লা এবং এই ভর্তি থেকেই সে ২ রোল এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত কখনো ১০ এর বাহিরে রোল যায়নি। ষষ্ট শ্রেনীর ভর্তি রোল ছিল ৩১। আবার ৭তম শ্রেনীতে অষ্টম হয়। নবম শ্রেণিতে মেয়েটিকে সায়েন্সে ভর্তির কথা বলেন শিক্ষকরা। মেয়েটি ও ডাঃ হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু মা যে তার খরচ চালাতে পারবেন না তাই সে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। মেয়েটি এস এস সি তে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। এইচএসসি তে সে কমার্স নিয়ে পড়তে চাইলে অনেক কষ্টে কেনা এক খন্ড জমি বিক্রি করে এনে ১৭০০০ টাকা দিয়ে মা বলে এই শেষ সম্বল ছিল। একথা শুনে মেয়েটি চিন্তা করল এই টাকাই সে হয়তো first year শেষ করতে পারবে।তারপর? তাই সে আবার মানবিক বিভাগে যশোর মহিলা কলেজে ভর্তি হয় এবং ৭৪২ নম্বর নিয়ে মহিলা কলেজে সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয় হয়। এর পর টিউশনির টাকা দিয়ে টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করে। পরীক্ষা দেয় ঘ বিভাগে। সে ওয়েটিং লিস্টে ছিল কিন্তু বাধ সাধল সেই অভাব নামের পরমাত্মীয়। ঢাকাই কেউ না থাকায় সে সাহস পেল না।তাই ভর্তি হলো যশোর এমন এমন কলেজে ভূগোল বিভাগে। সেখান থেকে অনার্সে দ্বিতীয় বিভাগে ৫৮ তম এবং মাস্টার্স এ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। এই পড়াশোনা পাশাপাশি তার চাকরি ও সংস্কৃতি চর্চা কিন্তু অব্যহত ছিল।
পড়ালেখার পাশাপাশি হলদে পাখি 🐦, গার্লস গাইড,রেড ক্রিসেন্ট এবং সাথে সাথে হ্যান্ডবল,ভলিবল,ব্যাডমিন্টন, দৌড় ইত্যাদি চলতে থাকে।
আর চলে কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক সহ সংস্কৃতি চর্চা। সে স্বপ্ন যে ভাবে হোক অভাব অনটন দূর করে মাকে ভালো রাখতে হবে, সংসারে অভাব দূর করতে হবে। স্বপ্ন দেখতো টেলিভিশনে নাটক, আবৃত্তি, উপস্থাপনা এসব করবে।
🌷 অভাবের সাথে যুদ্ধ:
গল্পটা পড়ে মনে হচ্ছে বেশ সুখেই ছিল মেয়েটি। আসলে তা নয়। বাবা মারা যান ১৯৮৪ সালে । বাবা না থাকলে যা হয় বড় ভাইটা পড়াশোনা করতে চান না। তখন তাকে একটি ওয়েলডিং কারখানায় কাজে দেয়া হয়। নানা বাড়িতে বেশ ভালই ছিল তারা। কিন্তু কিছু মানুষের সুখ খুব ক্ষণস্থায়ী হয়। মেয়েটির জীবন ও এর ব্যতিক্রম নয়। বড় ভাইয়ের পায়ে পেরেক ঠুকে ইনফেকশন হয়। যাতে নানার জমজমাট ব্যবসায় ধ্বস নামে। শুরু হয় অভাব নামক অতিথির আনাগোনা বিনা নিমন্ত্রণে। কিছু দিনের মধ্যে সে এই পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে অর্থাৎ অভাব বেশ তীব্র আকার ধারণ করে।
🌷এমন দিন গেছে এক কেজি চিড়া কিনে প্রায় ১০ থেকে ১২জন মিলে খেয়েছে। শেষে না পেরে মেয়েটির মা সমাজ সেবা অধিদপ্তর এর একটি সমিতিতে যোগদান করেন। সংসারের ভাই বোনের দায়িত্ব পরল মেয়েটির বড় বোনের উপর। মায়ের প্রতিচ্ছবি বড় বোন। কেননা তখন মেয়েটি সহ ছোট আর ও দুটি ভাই ছিল।
🌷এতো কষ্টেও মা কিন্তু তাদের পড়াশোনা করানো বন্ধ করেনি। কারন মেয়েটির বাবাকে কথা দিয়েছিল তাদের পড়াশোনা করাবে। ভালো রাখবে।আর এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে মেয়েটির নানা,নানি যদি না থাকতো তাহলে আজ তারা এখানে আসতে পারতো না। যতই ঝড় উঠুক না কেন তারা কারো গায়ে লাগতেই দেয়নি।
🌷 প্রেরণা:
আর মেয়েটির জীবনের চলার পথ প্রদর্শক ও প্রেরনা তার বড় বোন, যে মেয়েটির কাছে দ্বিতীয় মা। মেয়েটির চলার পথে বাবার মতোই বটের ছায়া হয়ে ছিল আজও আছে।
🌷 কৃতজ্ঞতা প্রকাশ:
আর মেয়েটির জীবনে পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষক ও বন্ধু বান্ধবীদের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তাদের সাহায্য আর প্রেরনা না থাকলে হয়তো বা আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতো না। শিক্ষকরা বিনা বেতনে পড়াতেন। স্কুলে , কলেজে ফুল ফ্রি করা হতো বেতন।আর গাইব বই কেনার টাকা না থাকায় বন্ধু, বান্ধবীদের কাছে থেকে গাইব বই এনে লিখে নিত বা নোট করে নিত।
🌷কয়েক জন শিক্ষকের নাম না বললেই নয়। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সুলতানা স্যার,আব্দুস সামাদ স্যার, আসাদুজ্জামান স্যার,দাদা স্যার, সুরাইয়া আপা, মোমেনা আপা, রওশন আপা, লুৎফুন্নেসা আপা,মন্টু স্যার,গনি স্যার ,কাদের স্যার, ইলিয়াস স্যার সহ সকল শিক্ষকদের প্রতি।
🌷মেয়েটি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী থাকার সময় থেকেই টিউশনি শুরু করে। আর অনার্স পরীক্ষা শেষ করে শুরু করে চাকুরী জীবন।
🌷স্বপ্ন:
তখন থেকেই মেয়েটি স্বপ্ন দেখতো নিজে কিছু করার। সে যুব উন্নয়ন থেকে সেলাই কাজ শেখে।একটি খ্রীষ্টান এনজিও থেকে সর্টহ্যান্ড টাইপিং শেখে,ব্লকের কাজ শেখে আর মায়ের কাছে যশোরের হাতের কাজ। সবমিলিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। সে স্বপ্ন দেখতো তার নিজের একটা জায়গা যেখানে তার মতো অসহায় আরো নারীর রুটিরুজি, ভালোবেসে কাজ করার মতো নির্ভরতার জায়গা। সে তার মতো এতিমদের, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতো।
🌷 বিপদের বন্ধু:
মেয়েটি যেকোনো মানুষের , বন্ধু বান্ধবীদের বিপদে এগিয়ে যেতো সবসময়। রক্ত ও দিয়েছে কয়েক বার। একটি ঘটনা আজ মেয়েটাকে শিউরে দেয়। মেয়েটির নানা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ২০০৩ সালে। বড় আপু তখন খুলনা থাকে তাই মেয়য়েটি হাসপাতাল অনেক ভয় পেলে ও তাকেই নানাকে হাসপাতালে দেখতে হয় । রাতে মেয়েটির মা আর মেয়েটি থাকে। একদিন সন্ধ্যায় একটি প্রচন্ড অসুস্থ রোগী আসে হাসপাতালে। লোকটি স্ট্রোক করে খিচুনি উঠছে এবং নাক মুখ দিয়ে রক্ত উঠছে। তার সাথে তার মেয়ে এসেছে। মেয়েটি খুব কান্না করছে আর তার বাবাকে বাঁচাতে বলছে। ঐ রোগিটি ছিল বেদে। রোগিটির শিরা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।নার্স বলল প্লিজ কেউ একটু ওনার হাতটা ধরেন আমি রক্তটা পুস করে দেয় না হলে উনি বাঁচবে না। লোকটি বেদে জাতের বলে কেউ এগিয়ে আসেনি। গল্গের মেয়েটি ধরেছিল এবং তার হাতের মধ্যে রোগটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাত তখন প্রায় ১২টা। রক্ত দেয়া হলোনা। তারা খুব গরীব ছিল অনেক টাকা দিয়ে রক্ত কিনেছিল। তাই রক্ত যেখান থেকে কেনা হয়েছিল ঐ রাতে যে মেয়ে একা ভয়ে ওয়াশরুমে যায় না সে মেয়ে হাসপাতালের এ মাথা থেকে অন্য মাথায় একা রক্তটা ফেরত দিয়ে টাকা এনে দেয়। কারন এই টাকা দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে মাটি দেয়ার কাজে লাগবে। এই টাকাটা না পেলে হয়তো ভিক্ষা করে মৃত ব্যক্তির দাফন করতে হতো। কেননা মেয়েটি জানতো বাবা না থাকার কষ্ট। এভাবেই সবসময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করতো সে।
🌷 সংস্কৃতি প্রেমি:
একটা সময় বেশ ভালোই সংস্কৃতি জগতে তার পদচারণা ছিল।সে বেশ ভালোই নাটক, আবৃত্তি করতো। ১৯৯৯ এবং ২০০০সালে সে ৩ বার মঞ্চ নাটক করতে কলকাতা যায়। মেয়েটি যশোর বিবর্তনের একজন গর্বিত সদস্য। কিন্তু বিয়ের পর সব কিছুতেই ভাটা পড়ে।
❤️ সংসার ও চাকুরী জীবন:
মাস্টার্স শেষ করে শুরু হয় বিবাহিত জীবনের। ভালোবাসার মানুষ কে পেতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে নিজের জীবনের গতি পথ। নিজের চিন্তা চেতনাকে। অনেক কিছু লুকিয়েই চলতে থাকে । ঐ যে ভালোবাসার টান। কিন্তু সেখানেও তার জীবনে সুখের দেখা মেলেনি। খুরিয়ে খুরিয়ে চলাকে ভালো থাকা বা সুখে থাকা বলেনা।
🌹 মাতৃত্বের কষ্ট:
প্রতিটি মেয়ের জীবনে মাতৃত্ব এক অনন্য অনুভুতি। সারাজীবনের চাওয়া।আর এখানেই একটি মেয়ের জীবনের স্বার্থকতা। মেয়েটি ও সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিয়ের এক বছর পর প্রথম কনসিভ করে ২০০৭ সালে। কিন্তু ঐ যে সুখ সবার কপালে সহ্য হয়না। মেয়েটির ও স্বপ্নভঙ্গ হলো । আড়াই মাসে প্রথম সন্তান এ্যাবোরশন হয়ে যায় এবং মেয়েটির একটি ওভারি কেটে ফেলতে হয়। যেখানে দুটি ওভারি থেকে ও অনেকেই মা হতে পারে না সেখানে তার একটি ওভারি কেটে ফেলতে হলো সেকি আর মা হতে পারবে? মেয়েটি প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ল। মেয়েটির অপারেশনের সময় তার মা আর শ্বাশুড়ি সেকি প্রচন্ড কান্নাকাটি করেছি তা মনে পড়লে আজও মেয়েটির চোখ ভিজে ওঠে।
🌹প্রথম কন্যার জন্ম:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মেয়েটির উপর অনেক সদ্বয়।পরের বছরই সে আবার কনসিভ করে, জন্ম হয় প্রথম কন্যার। যে আজ ১৩ বছরের লাইবা। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। আল্লাহ মেয়েটিকে দুটি কন্যা সন্তান দিয়েছেন। মেয়েটি আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করে সবসময়।
🌷 ব্যাংককে চাকুরী:
প্রথম কন্যার জন্মের পর ছোট বোনকে ভালো রাখার জন্য তার বড় বোন মেয়েটিকে ব্যাংকে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন। মেয়েটির চাকুরীর জন্য সে নজরুল ইসলাম স্যার ও শাহরুখ স্যারের কাছে চির কৃতজ্ঞ। এই চাকুরী না পেলে মেয়েটির জীবনে হয়তো কালবৈশাখী হানা দিতে। সব এলোমেলো হয়ে যেত। একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকুরী পায় , ভালোই চলছিল। কিন্তু কিছু মানুষ সৌখিন চাকুরী করে। অর্থাৎ তার ভালোবাসার মানুষটি চাকুরী করে, করে না এভাবেই চলতে থাকে।। এভাবেই চলছে আর চালিয়ে নিচ্ছিল সংসার জীবন ও চাকুরী।
🌷 হঠাৎ ঝড়:
সেখানে ও ছন্দপতন ঘটলো। শ্বশুরবাড়িতে যৌথ পরিবারে ছিল। সেখানে পারিবারিক কলহে আলাদা করে দেয়া হলো। শুরু হলো নতুন আরেকটি যুদ্ধ।
🌷আলাদা হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি আবার ও সমস্যায় পরে যায়। তার ছোট্ট মেয়েটিকে কে দেখবে? তাকে দেখভাল করার জন্য কাজের মানুষের খোঁজে তখন বিচলিত। তাই বাধ্য হয়ে দূর সম্পর্কের এক ননদের ফুল ফ্যামিলি ৩ জনকে নিয়ে আসা হয়। মেয়েটির ননদ, তার স্বামী ও ২ বছরের ছেলে।একজনের আয় আর ৬ জন মানুষের জন্য ব্যয় খুব দুস্কর। শুরু হয় দেনার দায়। মে দায় বাড়তে বাড়তে আজ ৯ লক্ষ টাকাই দাঁড়িয়ে।
🌷 দ্বিতীয় কন্যার জন্ম:
কোনো রকম ভাবে চলছে মেয়েটির সংসার এরই মাঝে আসে দ্বিতীয় অতিথি। দ্বিতীয় কন্যা। ছোট মেয়েটির জন্ম ছিল খুশির কিন্তু ৪দিনের থেকে পরবর্তী এক মাস ছিল দূর্বীসহ । যমে মানুষে টানাটানি চলছে।সে সময়ের কথা ভাষায় বলার মতো নয়। চিন্তা করলে আজ ও গায়ে কাঁটা দেয়। মায়ের সামনে ডাক্তার বলছে আমার হাতে সিজার করা কোন বাচ্চা গত ৩০ বছরে মারা যায়নি। তোর বাবুটা মারা যাবে?এটা হতে পারে না। আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকা ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মায়ের আকুতি মিনতি শুনে মেয়েটিকে সুস্থ করে দেন।আজ সে ৮ বছরের লিয়ানা।
🌷এভাবেই ঝড় ঝঞ্ঝা পেরিয়ে চলতে চলতে মেয়েটির দেনার দায় বাড়তে থাকে। হতাশা তার বন্ধু হয়ে উঠে তার।
🌷উদ্দ্যোক্তা জীবন শুরু:
গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে করোনার সময় থেকে তার হাজবেন্ড সম্পূর্ণ বেকার। সে বুঝতে পারে না আসলে কি করবে?মেয়েটির বছর খানেক আগে ফারজানা এলিজা নামে একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয় ব্যাংকে । ফারজানা মেয়েটির কাছে একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যাই। তার সাথে এখন মেয়েটির বোনের সম্পর্ক। সেই বলে আপু তুমি অনলাইনে কিছু একটা করতে পারো চাকুরীর পাশাপাশি। ফারজানার একটা পেইজ আছে। ফারজানা হোমমেড বেবিফুড নামে। ফারজানা মেয়েটিকে একটি পেইজ ওপেন করে দেয়। তারপর মেয়েটির হাজবেন্ড পেইজটা ঠিক কর দেয়। মাত্র ৪৪০০ টাকা দিয়ে তার উদ্দ্যোক্তা জীবন শুরু করে। আর মেয়েটির কলিগ খান মনিরুজ্জামান মেয়েটিকে তার বাবার কারখানার শাড়ি দিয়ে সাহায্য করে। কলিকের বাবা এম এ মজিদ খান ঠিক যেন বাবার মতো এসে মেয়েটির পাশে দাঁড়ায়।এভাবেই মেয়েটির উদ্দ্যোক্তা হয়ে ওঠা। কিন্তু পরিচিত না থাকায় কোনো ভাবে চলছে । সেল তেমন নেই তবে মেয়েটি আল্লাহর নিকট হাজার হাজার শুকরিয়া গোঁজার করে যেটুকু হচ্ছে সেটুকু নিয়েই।
🌷 ঘুরে দাঁড়ানো:
মেয়েটি যশোর নারী উদ্যোক্তা নামে একটি গ্রুপে এড ছিল।। এখানকার এডমিন জেসমিন রোজ আপুর সাথে তার পরিচয় হয় । রোজ আপুর কাছে থেকে সে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর কথা শোনে এবং এড হয়। রেজিস্ট্রেশন ও করে ১৪ তম ব্যাচে। তারপর শুরু হলো তার স্বপ্নকে নতুন করে বাঁচানোর চেষ্টা।আর বর্তমান মেয়েটি অনেক বেশি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে।
🌹 কৃতজ্ঞতা প্রকাশ:
কৃতজ্ঞতা জেসমিন রোজ আপুকে, তার মাধ্যমে মেয়েটি এই প্লাটফর্মে যুক্ত হতে পেরেছে।এরকম একটা ভালো মানুষের প্লাটফর্ম থাকতে পারে মেয়েটির জানা ছিল না।
🌷এই প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর যশোর জেলা ও ঢাকা ধানমন্ডি জোনের মেসেঞ্জারে যুক্ত হয় মেয়েটি। যশোর জেলা ও যশোর এন আর বি কমিউনিটি মিলে সেশন চর্চা ক্লাস শুরু করলে সেখানে যুক্ত হয়ে সেশন চর্চা ক্লাস কর প্রতিদিন। একদিন যে যা পারে করতে বললে মেয়েটি তার ভাললাগা ও ভালবাসার জায়গা থেকে কবিতা আবৃত্তি করলে সবাই খুব উৎসাহ দেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কোর মডারেটর Abdul Karim Munna । তিনি মেয়েটির কবিতা আবৃত্তি শুনে বললেন, অসাধারণ। মেয়েটি ভাবেনি ১৪বছর পর তার কবিতা শুনে কেউ মুগ্ধ হতে পারে। আর প্রায় ১৪বছর পর মেয়েটি আবার নিজেকে খুঁজে পেতে শুরু করেছে। তাকে উৎসাহ দিয়েছেন Abdul Karim Munna ভাইয়া। এখন এই প্লাটফর্মের অনেক ভাইয়া ও আপুরা মেয়েটির চলার পথের প্রেরণা যোগায়। সকলের কাছে মেয়েটির কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সবার কাছে থেকে এতো ভালোবাসা পাবে সে স্বপ্নে ও কখনো ভাবিনি।
🌄 মেয়েটির জীবনে তার বড় বোনের ভালোবাসা, উৎসাহ, প্রেরণা, সবসময় বট গাছের ছায়া দেয়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে সবসময়।
অনেকক্ষন আমার গল্প শোনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।
""এই মেয়েটি কিন্তু আর কেউ নয় আমি ""
🔥জোবেদা খাতুন টুনি🔥
🌷শেষান্তে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনারা যারা এতক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে আমার লেখাটা পড়েছেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমি স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর আগামীর......
🌄আমার জীবন চলার পথে আপনাদের দোয়া ভালোবাসা এবং সাপোর্ট আমার ভীষণ প্রয়োজন, আশা করছি ভালোবেসে পাশে থাকবেন সবসময়, পরিশেষে আপনাদের সবার সুন্দর ও সুখি জীবন কামনা করে সুন্দর হোক আপনাদের সবার আগামী জীবনের প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষণ, শুভ কামনায় আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি, ভালোবাসা অবিরাম...
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৮৮
Date:- ০৪/০৮/২০২১
🌹🌹ধন্যবাদান্তে 🌹🌹
--------------
আমি জোবেদা খাতুন টুনি,
১৪ তম ব্যাচ।
রেজিঃ নং ৬৫১৮৬।
জেলা যশোর।
ধানমন্ডি জোন।
বর্তমান অবস্থান ঢাকা শেখেরটেক ৩ নম্বর।
🥻🥻কাজ করছি দেশীয় ঐতিহ্যবাহি তাঁতের শাড়ি, থ্রিপিস , যশোরের হাতের কাজের ওয়ান টু থ্রি পিস, ইন্ডিয়ান ওয়ান টু থ্রি পিস, ইন্ডিয়ান কুর্তি ও মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক 👗 নিয়ে।🥻🥻
❤️আমার ভালোবাসার প্রয়াস: ধড়াচূড়া ❤️