আমার কখনো ই বিজনেস করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু
🌺🌺বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম🌺🌺
আসসালামু আলাইকুম,
🤲আশা করি মহান রাব্বুল আলামিন এর দোয়ায় সবাই সুস্থ আছেন ভালো আছেন। আল্লাহ তা আলা এই কঠিন সময়ে সবাইকে সুস্থ থাকার তৌফিক দান করুক সেই প্রত্যাশা ই করি। আমিও আল্লাহ তা আলার অশেষ মেহেরবানিতে প্রিয়জনদের নিয়ে ভালো আছি। এই কঠিন সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুস্থ রেখেছেন সেই জন্য তার দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া জানাই।
✋✋প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার স্যার এর প্রতি। আল্লাহ তা আলা স্যারকে সুস্থ রাখুক ভালো রাখুক। আমাকে আমার এক বন্ধু যখন প্রিয় এই পরিবারে যুক্ত করেন আমি স্ক্রলিং করে স্যার এর পোস্ট দেখি। পোস্ট পড়ে ই আমি তাকে আমার মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। মনে হয়েছে আমি একজন ভালো শিক্ষক পেয়ে গেছি যাকে এতদিন খুজেছিলাম। তারপর ইউটিউব এর ভিডিও গুলো দেখে আমি পুরোপুরি এই ভালো মনের মানুষের ফ্যান। এই ভালো মানুষের জন্য আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অনেক অনেক দোয়া। এই পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য আন্তরিক দোয়া ও ভালবাসা রইল। আলহামদুলিল্লাহ এই প্রিয় পরিবারে অনেক আন্তরিক কিছু ভাই ও বোন পেয়েছি সবাইকে অনেক ভালোবাসা এবং শুভকামনা।
👉একেকটা জীবন মানে ই একেকটা গল্প। সবাইকে আমার গল্পটি পড়ার অনুরোধ রইল।👇👇
👨👩👦👦আমি একদম গ্রামে যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন মেয়ে। আমার জীবন এর গল্প বলতে গেলে এই গল্পের নায়ক আমার বাবার কষ্টের কিছু কথা অবশ্যই বলতে হবে।
🧔আমার গল্পের মহানায়কঃ
আমার বাবা ছিলেন একজন কৃষক এর ছেলে। আমার দাদা একজন কৃষক ছিলেন। বাবা দাদার সাথে জমিতে কাজ করতেন আবার স্কুলে ও যেতেন। তখন গ্রামে তেমন পড়াশুনার প্রচলন ছিল না। কিন্তু দাদা চাইতেন আমার বাবা পড়াশুনা করুক। একসময় মানুষের বাসায় লজিং মাষ্টার থেকে পড়াশুনা করতেন বাবা।আমার বাবা যখন মেট্রিক পাশ করেন দাদা বাজারে গিয়ে সবাইকে ডেকে ডেকে বলেছেন তার ছেলে মেট্রিক পাশ করেছেন।
তারপর বাবা পড়াশুনা করার জন্য ঢাকায় আসেন। তখন থাকা খাওয়ার খুব কষ্ট ছিল। বাবার পক্ষে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই সে মসজিদের মেঝেতে ঘুমাতেন। তারপর কোন এক ভালো মানুষের বাসায় বাচ্চা পড়ানোর বিনিময়ে তার থাকার ব্যাবস্থা হইলো।
তারপর আমার বাবা বিভিন্ন জায়গায় কাজের খোজ নেন। ছোট খাটো চাকরি ও জোগাড় করে ফেলেন।
🧕একজন আদর্শ নারীর আগমনঃ
বিয়ে করেন গ্রামের সহজ সরল মেয়ে আমার মা কে।
মা লেখাপড়া তেমন করেন নি কিন্তু খুব ভালো বংশের ভালো মনের মেয়ে।
🧓এর মধ্যে দাদা খুব অসুস্থ হয়ে পরেন। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আমার মা তখন নতুন বউ তারপরও বাবা আর মা মিলে দাদার খুব সেবা করে। দাদা বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। মা সব পরিস্কার করতেন।
এভাবে অনেকদিন অসুস্থ থাকার পর দাদা মারা যান। আমার কাকা ফুফুরা তখন ছোট ছোট।
বাবার ঘাড়ে আসে পুরো পরিবারের দায়িত্ব। মা সবসময় বাবাকে সাপোর্ট দিতেন।
🤦♂️জীবনের ভুল সিদ্ধান্তঃ বাবা অনেক সরকারি চাকরির অফার পেয়েছিলেন কিন্তু বেতন কম সেই টাকায় ভাই বোনদের মানুষ করতে পারবেন না। তাই সেই চাকরি না করে বেসরকারি চাকরি করেছেন।
বেসরকারি চাকরি করে নিজে টাকা জমিয়ে ভাইকে সরকারি চাকরি দিয়েছেন।
তারপর আমরা ভাই বোন বড় হতে থাকি খরচ বেড়ে যায়। আব্বুর বেতন ও কমে যায়। আগের সব টাকা সংসার এর পেছনে খরচ করে ফেলেছেন। নিজের জন্য কিছু ই রাখেনি। ভাইদের চাকরি দিয়েছে বোনদের পড়াশুনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছে। মা ছিল বাবার ভক্ত বাবা যেটা বলতো সেটা ই মানতো। তাই তাদের হাতে তেমন টাকা পয়সা ছিল না।
👩আমার সাফল্যময় জীবনঃ
আমি ছোটবেলা থেকে খুব ভালো ছাত্রী ছিলাম।ক্লাস প্রথম থেকে দশম পর্যন্ত আমি টপ ছাত্রী ছিলাম।সবচেয়ে মজার বিষয় আমি প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত সব বিষয়ে ৯৫% এর বেশি পেতাম। সেগুলো নোট লিখে বাবার কাছে ঢাকায় পাঠাইতাম।আর বাবা যখন ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতেন আমার জন্য গিফট নিয়ে যেতেন। আমি অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাবা বাড়ি আসবেন আর আমি গিফট পাবো।আমার এই সাফল্যের পেছনে মা এর অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। মা নিজে তেমন লেখাপড়া জানতেন না তাই গ্রামে যখন ই কোন ভালো শিক্ষকের খোজ পেতেন আমাকে নিয়ে যেতেন। আমি ঠিকভাবে শিখছি কিনা খবর নিতেন। ভালো ফলাফলে সবাই আমাকে অভিনন্দন জানালে ও এর পেছনে যার শ্রম তাকে কখনো কেউ অভিনন্দন জানায়নি। খুব ইচ্ছা করে মা কে বলি মা তোমাকে অনেক ধন্যবাদ এই জয় এনে দেবার জন্য। কিন্তু বলা হয় না। না বলা কথা হিসেবে ই রয়ে যায়।
👉আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি আমার বাবা সেজো কাকাকে প্রাইমারি স্কুলে চাকরির ব্যাবস্থা করে দেন। এর আগে আমি বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে পড়লে ও কাকার চাকরি হওয়ার পর কাকা ই আমার পড়াশুনার সব কিছু দেখতেন। কাকা ই আমাকে পড়াতেন। তারপর শেষ হলো পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা আমি যথারিতী ভালো ফলাফল করলাম। এর মধ্যে আমার কাকা বিয়ে করলেন আমার ই ছোটবেলার প্রাইভেট টিউটর কে।
আমার মা কে বুঝানো হইল এই মেয়েকে বিয়ে করলে সব বাচ্চাদের পড়াইতে পারবে। তাই মা সবাইকে রাজি করলো কাকার পছন্দের মেয়েকে বউ করে আনার জন্য। সবাই রাজি হইলো। আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি কাকার বিয়ে হয় কাকি ও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা।
👉মায়ের কষ্ট বিজরিত পারিবারিক জীবনঃ
তারপর শুরু হয় আমাদের পরিবারের পাল্টা চিত্র আর আমার মা এর অক্লান্ত পরিশ্রম। আমার কাকা-কাকি আমরা সকাল নয়টায় স্কুলের জন্য বের হয়ে যাবো তাই মা অনেক ভোরবেলা উঠে সব কাজ শেষ করতেন। সবার খাবার রেডি করতেন। আর আমার দাদি ও তখন মা কে কাজের বেশি চাপ দিতেন। কাজ একটু ভুল হলে আমাদের সামনে বকা ঝকা করতেন। আমার মা যেহেতু পড়াশুনা তেমন করেন নি তাই সবাই আমার কাকি কে বেশি প্রাধান্য দিতেন। মা ও অক্লান্ত পরিশ্রম আমার আর আমার ছোট ভাইয়ের পড়াশুনার কথা চিন্তা করে। আমার কাকি সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে এক বালতি কাপড় ভিজিয়ে রেখে যেতো সেই কাপড় আমার মা ধুয়ে রাখতো। সারাদিন কাজ করার পর বিকালে সবাই যখন স্কুল থেকে আসতো আমার দাদি আমার মা এর নামে বিভিন্ন নালিশ দিতো কাকা-কাকির কাছে। তখন সবাই মা কে বিভিন্ন কথা শুনাইতো। এগুলো দেখে আমি খুবই কষ্ট পেতাম।
👉বাবার ভাবনা এবং আমার অবস্থানঃ
বাবা ভেবে রেখেছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে।তাই আমিও মন স্থির করে সেই অনুযায়ী পড়াশোনা করতে লাগলাম। কাক এখন আর আগের মতো আমার পড়াশোনার খবর নেন না। তাই আমকে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট টিউটর এর কাছে পড়তে হবে। আমি মা কে বলি আমার শিক্ষক লাগবে সে বলে তুমি স্কুলের শিক্ষকের কাছে পড়ো তোমার বাবা টাকা দিবেন।তারপর থেকে আমি নিয়মিত স্কুলের শিক্ষকের কাছে পড়ি। পাশাপাশি স্কুলের অনেক ভভলান্টিয়ার এর কাজ করেছি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর জন্য অনেক পুরস্কার ও পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
👉আমি সব ক্লাসে ভালো ফলাফল করি।ভালো ই চলছিল আমাদের সংসার। কিন্তু এর মধ্যে আমার কাকি বিভিন্ন অভিযোগ দেয়া শুরু করেন। আমার বাবা কম টাকা দেন কিন্তু আমাদের খরচ বেশি। ছোট খাটো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। আমার কাকা আমাদের খুব ভালোবাসতেন কিন্ত আমার কাকি সেটা পছন্দ করতেন না।
👉আমাদের কষ্টের দিনগুলোঃ
এর মধ্যে আমার বাবার অফিসে একটা ঝামেলা শুরু হয় বাবার আয় অনেক কমে যায়। বাবা আগের মতো টাকা দিতে পারেন না। শুরু হয় আমার কাকির নতুন নতুন নালিশ। আমরা তিন ভাই বোন আর তাদের তেমন খরচ নেই। আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি আমার কাকি নালিশ করে আমার ছোট বোনটা বারবার ভাত খায় তাই চাল বেশি লাগে। আরও অনেক কথা আমার মা কে নানান কথা শুনান আমার দাদি। সে আমার কাকিকে বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথা বলতেন মা কে নিয়ে।
👉এসব কথা শুনে আমার বাবা খুবই কষ্ট পায়। বাবা জীবন এর সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছে ভাই বোনদের জন্য। তারপর সবাই সিদ্ধান্ত নেয় আলাদা থাকার। আমাদের আলাদা করে দেয়া হয়। বাবা কিছু চাল ডাল প্লেট বাটি কিনে আনেন।বাবার কাছে তখন টাকা ছিল না। মানুষের কাছ থেকে কিছু টাকা আনেন। আমি তখন এসব দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে কাদতাম।আমি মানসিকভাবে ভালো ছিলাম না এসব দেখে।
তারপর আসে আমার এস এস সি পরীক্ষা । কিন্তু আমি আগে ভালো ভাবে যা পড়ে রেখেছিলাম সেগুলো ও রিভাইস দিতে ইচ্ছা করতো না মন খারাপ থাকতো।
তারপর এস.এস.সি পরীক্ষা দেই। আমার পরীক্ষা আশানুরূপ হয়নি। এস.এস.সি তে ৪.৬৯ পাই।
A+ না পাওয়ায় খুব মন খারাপ হয়েছিল।
👉আমার ইচ্ছা আমি ঢাকায় পড়াশোনা করবো। কিন্তু বাবার কাছে টাকা নাই। তখন আমার মামা কিছু টাকা দেন। আর বাবা কিছু টাকা ম্যানেজ করে আমাকে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ এ ভর্তি করেন। যেহেতু থাকার জায়গা ছিল না তাই হোস্টেল এ থাকতে হয়েছিল। আর কলেজ হোস্টেল এর পরিবেশ ভালো অন্য জায়গার তুলনায় তাই বাবা আমাকে সেখানে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
✌️✌️আমার নতুন অর্জনের দিনগুলোঃ
অল্প দিনে ই আমি কলেজের শিক্ষকদের নজরে আসি ভালো পড়াশোনার জন্য।
কিন্তু সবসময় মন খারাপ থাকতো একা একা থাকতে।
মা কে খুব মিস করতাম। অনেক কাদতাম। যখন ই ছুটি হইতো সবকিছু নিয়ে বাড়ি চলে যেতাম আর আসবআসবো না ভেবে। কিন্তু বাবার কষ্টের কথা ভেবে আবার চলে আসতাম। এভাবে কলেজ লাইফ পার হলো। ভালো রেজাল্ট করলাম কিন্তু এবারও A+ প্লাস পেলাম না। এবার সবাই তিরস্কার করতে লাগলো ঢাকায় এত টাকা দিয়ে মেয়েকে পড়িয়ে কি লাভ হইলো।আমার খুব খারাপ লাগতো এসব শুনে।
👉তারপরও আমার বাবা হাল ছাড়েন নি আমার উপর আস্থা রেখে আমাকে কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দিলেন।
কিন্তু আমি দুর্ভাগা তখনও বাবার আশা পুরন করতে পারিনি। কোন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম না।
আমার নিজেকে তখন খুবই ছোট মনে হতে লাগলো।
👉তারপর ভর্তি হলাম আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লালমাটিয়া মহিলা কলেজে রসায়ন বিভাগে। আবার পুরনো শিক্ষকরা আমাকে সাহস দিতে লাগলো।
আলহামদুলিল্লাহ সবার অনেক ভালবাসা পেয়েছি।
✌️✌️আমার সাফল্য এবং নতুন দায়িত্বঃ
কলেজ থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি বলার মতো।ভালো রেজাল্ট এর জন্য বৃত্তি পেয়েছি। যতবার ই কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি বিজয়ী হয়েছি।
কলেজের বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে ছিলাম।
ভলান্টিয়ার ছিলাম এবং কলেজ হোস্টেল এর ম্যানেজারও ছিলাম। আমার সকল কাজ দেখে হোস্টেল সুপার স্নাতক চতুর্থ বর্ষে আমাকে হল ম্যানেজার এর দায়িত্ব দেন। তখন পড়াশুনার ও অনেক প্রেসার ছিল তার মধ্যে আবার নতুন দায়িত্ব। তখন হলে ৪০০ মেয়ে ছিল সেই ৪০০ জন এর ডাইনিং ম্যানেজমেন্ট, বাজারের হিসাব, খাবারের হিসাব, টাকা পয়সার হিসাব সব কিছুর ডাটা প্রতিদিন জমা দিতে হয়েছিল। তখন আমার সাথে আমার আরেকজন বান্ধবী ছিল পার্টনার হিসেবে।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা এক মাসে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ডাইনিং এর সব কিছু ম্যানেজমেন্ট করি। বাকি যে টাকা ছিল তা দিয়ে মাস শেষে সবার জন্য ভালো খাবার এবং পার্টির আয়োজন করি। আলহামদুলিল্লাহ সবাই অনেক খুশি। মাস শেষে আমরা আমাদের কাজের বুয়াদের গিফট দেই এবং ২০০০০টাকা হলের ফান্ডে জমা দেই। আমাদের কাজে মুগ্ধ হয়ে সম্মানিত প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের পুরস্কৃত করেন। আলহামদুলিল্লাহ এটা ছিলো আমার জন্য অনেক বড় একটা অর্জন।
👩🦰হোস্টেল জীবন এর সমাপ্তিঃ
এভাবে অনার্স লাইফ শেষ করি রসায়ন বিভাগ থেকে ফাস্ট ক্লাস নিয়ে। যেহেতু কলেজ হোস্টেল থেকে নির্দিষ্ট টাইম ছাড়া বের হওয়া যায় না। তাই বাইরে কোন টিউশনি বা জব করতে পারতাম না। তবে খুব ইচ্ছা করতো নিজে কিছু করার। তাই ভাবলাম অনার্স এর পরে আর হোস্টেল এ থাকবো না। অবশ্যই নিজের কিছু করতে হবে।
👉নতুন পথচলা শুরুঃ
গত দুই বছর আগে যখন স্নাতক শেষ করলাম মেসে থাকা শুরু করেছি কিন্তু কিছুতেই ভালো লাগছিল না।অনেক কষ্ট রান্না করে, ক্লাস করে আবার পড়াশুনা করতে।তারপর এম এস সি তে ভর্তি হই।প্রায় ৭ বছর মায়ের কাছ থেকে দূরে থেকে পড়াশুনা করেছি। যখন হোস্টেল ছাড়লাম খুব ইচ্ছা করত মা এর কাছে থাকতে।কিন্তু বাবার পক্ষে সম্ভব ছিল না এত টাকা দিয়ে পুরো পরিবার ঢাকায় রাখা।
🙋♀️নতুন ভাবনা এবং উদ্যোগঃ
ভাবতাম যদি নিজের খরচ নিজে যোগাড় করতে পারি বাবার উপকার হবে। তাই সারাদিন বিভিন্ন টিউশন মিডিয়ার পোস্ট দেখতাম কিছুদিন এর মধ্যে একটা টিউশনি পেয়ে গেলাম। ৩০ মিনিট হেটে গিয়ে ২.৫ ঘন্টা একাধারে পড়াইতাম। তারপর থেকে বাবার কাছে বেতন চাইতাম না। মাস্টার্স এর সকল খরচ নিজে দিতাম।স্কুলের গেটে গিয়ে বসে থাকতাম টিউশনির জন্য বিভিন্ন আন্টিদের সাথে কথা বলতাম। আলহামদুলিল্লাহ এভাবে জোগাড় হয় আরও একটি টিউশনি।
তারপর আমার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়তে লাগলো। তারপর আরও দুইটা টিউশনি জোগাড় করলাম। যেহেতু ভালো পড়াইতাম তাই টিউশনি পেতে কষ্ট হয়নি।
👨👨👦👦আমার ইচ্ছা পুরনঃ
বাবাকে বললাম মা কে নিয়ে আসো আমরা সবাই একসাথে থাকি। বাবা ভরসা পাচ্ছিল না। তারপরও নিয়ে আসি মা কে। ছোট বোনকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেই। তখন আমি মহা খুশি মা কে কাছে পেয়ে।
ভাই বোন আর মা কে নিয়ে একসাথে থাকি কিন্তু বাবা চাকরির জন্য চলে যায় চিটাগাং।
🧕বড় বোন এর দায়িত্ব পালনঃ
বাবা সবসময় বলেন তুমি ই আমার বড় ছেলে এই কথা শুনলে সবসময় মাথায় একটা দায়িত্ববোধ আসতো ছোটদের জন্য কিছু করতে হবে।সেই ভাবনা থেকে ছোট ভাইকে একটা কম্পিউটার কিনে দেই নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে। ভাই ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করে কম্পিউটার দিয়ে আর আমি টিউশনি করি। আমার এবং ভাইয়ের খরচ আব্বুকে দিতে হয় না। খুব ভালোভাবে চলছি আমরা। আমি খুব ভালো ভাবে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেই এবং কয়েকটা টিউশনি করি।
✌️✌️আমার স্নাতকোত্তর ডিগ্রিঃ
মা আমাদের খুব ভালো দেখাশুনা করলেন। আমি টিউশনি করতাম ছোট বোনকে পড়াইতাম। স্নাতকোত্তর এর পড়াশোনা করতাম এবং চাকরির প্রস্তুতি নিতাম।
এভাবে দেখতে দেখতে মাষ্টার্স পরীক্ষা চলে আসে। যথারিতী ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেয়া শুরু করি।
কিন্তু এর মধ্যে প্রাইমারি সহকারি শিক্ষিকা পরীক্ষার ডেট দেয়। আমার সবচেয়ে কঠিন বিষয় সন্নিবেশ রসায়ন এর আগেরদিন এই পরীক্ষা। অনেক কষ্টে আগেরদিন এর লঞ্চে বরিশাল যাই মাথায় ছিল আমাকে চাকরি পেতে হবে আবার ডিগ্রি ও নিতে হবে। পরীক্ষা দিয়ে ই আবার লঞ্চে উঠি।অনেক ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরও আমি টিকিনি। পরে শুনেছি প্রশ্ন ফাস হয়েছে। এভাবে মাষ্টার্স পরীক্ষা শেষ করি।
আলহামদুলিল্লাহ ফাস্ট ক্লাস নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করি।
😭😭আমাদের পরিবারে করোনার ভয়ানক রুপঃ
করোনা এসে যেন সবার প্রথম আমাদের ই আঘাত দিল। আব্বু করোনা আক্রান্ত হইল এবং ভয়াবহ অবস্থা কেউ ভাবেনি আব্বু বেচে যাবে।আব্বুকে প্রথমে প্রাইভেট মেডিকেল এ ভর্তি করলাম সেখানে এক রাতে আমাদের বিল ৫৬০০০ টাকা। তার মধ্যে আমার বাবা ঠিকমতো অক্সিজেন ও পান নি। তারপর কোনভাবে সেই টাকা পরিশোধ করে পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করাইলাম। আব্বু এক মিনিট ও অক্সিজেন মাস্ক ছাড়া থাকতে পারছিলো না।সারাক্ষন আল্লাহ কে ডাকতাম এই যাত্রায় যেনো আমার বাবা কে বাচিয়ে দেন। অনেক টাকা খরচ হইলো যেহেতু আমাদের কোন জমানো টাকা ছিলনা সব টাকা মানুষের কাছ থেকে ধার আনতে হয়েছে। আমার কাকা ও কিছু টাকা দিয়েছেন বাবার হাসপাতাল বিল এর জন্য। শুনেছি কাকি নাকি সব টাকা আটকে রেখেছে আমাদের দিবে সেই কথা ভেবে।আল্লাহ তা আলা আব্বুকে বাচিয়ে রাখলেন কিন্তু আব্বু আর আগের মতো সুস্থ নেই। করোনার জন্য আমার সব টিউশনি বন্ধ হয়ে গেল। ভাইয়ের কাজ ও বন্ধ। খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ঢাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে সবাই গ্রামে চলে গেলাম বাবাকে নিয়ে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতাম সবসময়। এর মধ্যে আমার কলেজ এর শিক্ষিকা বাবা অসুস্থ শুনে আমাকে না বলে আমার একাউন্ট এ টাকা পাঠিয়ে দিলেন। তখন আমার খুব টাকার দরকার ছিলো। আমি তাকে ধন্যবাদ দিতে পারিনি কল দিয়ে শুধু কেদেছিলাম। তবে একটা কথা বলবো মোনাজাতে সবসময় তার মুখ ভেসে উঠে।
🙋♀️উদ্যোক্তা জীবন এর শুরুঃ
তারপর এক বন্ধুর কথায় আল্লাহর উপর ভরসা করে রিসেলার হিসেবে বিজনেস শুরু করি। ওর প্রডাক্ট সেল করে দেই।এক মাসে আমি রিসেল করি ৫০০০০ টাকা।কিন্তু আমাকে প্রফিট দিতো খুবই কম। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সবাই বলে আপু আপনি বিজনেস করলে ভালো করবেন। যেহেতু আমার পুজি কম সাহস পাচ্ছিলাম না তারপরও আল্লাহ তা আলার উপর ভরসা করে শুরু করলাম নিজের বিজনেস। আমি বিজনেস করছি
১.পাঞ্জাবী
২.শাড়ি
৩.হ্যান্ড পেইন্ট এবং ব্লক পেইন্টেড কাপল সেট
৪. থ্রি পিস
৫.স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট নিয়ে।
আমার ছোট উদ্যোগ Dalia's closet এগিয়ে যাচ্ছে সফলতার দিকে।
👩❤️👨সুখের পায়রার দেখাঃ
আলহামদুলিল্লাহ মহান আল্লাহ তা আলা আমাদের উপর আবার তার রহমত দেখিয়েছেন। আব্বু সুস্থ হয়ে আবার তার চাকরিতে জয়েন করেছেন। কিন্তু আব্বু আগের মতো কাজ করতে পারেন। মহান রাব্বুল আলামিন এর রহমতে আমি আমার বিজনেসে ভালো সফলতা পাচ্ছি।এর মধ্যে আমার ভালবাসার মানুষের সাথে বাবা আমার বিয়ে দিতে রাজি হন। আলহামদুলিল্লাহ আমি পারিবারিক ভাবে খুবই সুখী একজন মানুষ। আল্লাহ তা আলা আমাকে ভালো একজন জীবনসংগী দিয়েছেন সেই জন্য আল্লাহ তা আলার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।
👏👏আমার জীবনে নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন এর অবদানঃ
আমার জীবনে একটা ভালো গাইডলাইন এর অভাব বোধ করতাম। তারপর আমার বন্ধু মোঃ নূরে আলম তারেক আমাকে এই ভালো মানুষ এর পরিবারের এর সন্ধান দিল। এই পরিবারে যুক্ত হলাম। একজন ভাইয়ার মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করলাম ভাইয়া আমাকে খুবই সাহায্য করলেন। তারপর আস্তে আস্তে পরিচিত হলাম কয়েকজন ভালো মনের ভাই বোনদের সাথে। তার মধ্যে আমার প্রিয় ভাই Mahabub Alam, Imran Hossain,, Saiful Islam এর কাছ থেকে অনেক ভালবাসা পেয়েছি বোন হিসেবে। প্রিয় বোন Nasrin Jahan কে যেকোনো সময় নক দিলে সাহায্য করেন।
ইতিমধ্যে ককয়েকজন ভাই বোন আমাকে বোনের মতো আপন করে নিয়েছেন তাদের কথা বলতে ই হবে মোহাম্মদ এম আলী, Mahbub Hasan, Runa Ahmed, অন্তর থেকে সবাইকে ধন্যবাদ।
এই ফাউন্ডেশন থেকে প্রতিনিয়ত শিখতেছি কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়।
স্যার এর একটি উক্তি মন ছুয়ে যায়-
" বৃষ্টি সবার জন্য পরে কিন্তু ভিজে কেউ কেউ।"
স্যার সবার আইডিতে লিখতে বলেছেন আমি একজন ভালো মানুষ। আমি লিখে রেখেছি আমি ভালো মানুষ।
সবসময় মাথায় রাখছি আমি একজন ভালো মানুষ এর পরিবারের সদস্য একজন ভালো মানুষ।
👩👩ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ
আমার কখনো ই বিজনেস করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়া সম্ভব না। আর আমি চাই হালাল উপার্জন করতে তাই এখন আমি বিজনেস নিয়ে নতুন নতুন প্লান করছি। আগামী পাচ বছরের মধ্যে আমি আমার বিজনেসকে একটি ভালো পজিশনে নিতে চাই এবং বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই।
👉আমার বিজনেসের টাকা দিয়ে ইতিমধ্যে আমি পথশিশুদের খাবার বাবদ কিছু টাকা দেয়ার প্লান রেখেছি। আশা করি কিছুদিন এর মধ্যে ই বাস্তবায়িত হবে।
👩👫আমার প্রিয় পরিবারের সকল ভাই বোনদের দোয়া চাই যাতে সবার সবার সহযোগিতা ও দোয়া নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি সফলতার পথে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যাতে আমার এই উদ্যোগকে সফল করতে পারি এবং গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের পাশে দাড়াতে পারি।
সবাইকে আমার লেখাটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রিয় পরিবারের সকল ভাই বোন এবং প্রিয় স্যারের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
ডালিয়া সুলতানা,
স্নাতকোত্তর রসায়ন বিভাগ,
Young Entrepreneurs "নিজের বলার মতো একটা গল্প"
ফাউন্ডেশন এর একজন গর্বিত সদস্য।
ফাউন্ডারঃ Dalia's closet
ব্যাচঃ১৪
রেজিষ্ট্রেশনঃ ৬৪৮৬৫
জেলা: বরিশাল
বর্তমান ঠিকানা: মোহাম্মদপুর ,ঢাকা
আমার পেজ:
https://www.facebook.com/Bosonbrand