এরই মধ্যে ফেরেশতার ন্যায় আমাদের বাড়িতে আসলো আমার মেজো আপুর শশুড়। মনে আছে তো তার কথা ? যিনি আমার আপুকে মেয়ে বানিয়ে পরে বউ করে নিয়ে গেছিলেন?
আল্লাহ সর্ব শক্তিমান"
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস্সালামু আলাইকুম,
ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
শুরুতেই আমি শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করছি, আমার প্রিয় প্লাটফর্ম "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর, প্রিয় শিক্ষক, তরুন প্রজন্মের আইডল, লাখ স্বপ্নবাজ তরুণ তরুণীদের পথ পদর্শক -জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারকে। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি, যার নাম নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
যার শিক্ষায় শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের ছোট ছোট অপূর্ণ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার সাহস করছি। যেই প্রিয় মানুষটির দেখানো পথ আমরা তরুন তরুনীরা অনুস্বরন করছি। সেই প্রিয় মানুষটির প্রতি আমার অনেক অনেক ভালেবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তার পাশা পাশি এই প্লাটফর্মের সন্মানিত সকল প্রিয় দায়িত্বশীল ভাই-বোনদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসার রেখে স্বরন করছি, আমাদের প্রিয় প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত সম্মানিত প্রায় ৫ লক্ষ ৫০ হাজার সহযোদ্ধা, ও সহপাঠী যারা আছেন তাদের সবাইকে। যারা শত কর্ম ব্যস্ততার মাঝে থেকে ও কিছু সময় দিয়ে এই প্লাটফর্মের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সকলের প্রতি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা ও দোয়া রইলো। সবাই যেন ভালো মানুষের পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্ত হতে পারেন।
সন্মানিত প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই?
আশা করছি আপনারা যার, যার অবস্থানে নিজের কর্ম ব্যাস্ততার মাঝেও সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন, সুস্থ ও নিরাপদে আছেন, আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
______ 😢--জীবনের গল্প,,,,,,, 🥀
জীবনের গল্প অনেক সময় অনেকের কাছে সুখের, অনেকের কাছে ব্যর্থতার, আবার অনেকের কাছে অনেক কষ্টের, তবে বেশির ভাগ ক্ষেএেই বাস্তব জীবনের গল্প অনেক কষ্টের হয়ে থাকে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,
আজ আমি আমার আমার বাবা- মায়ের কষ্টের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো --আমার বাবা ছোটকাল থেকেই সারাটা জীবন দাদার সংসারের বুঝা টেনে এসেছেন। দাদার ছিলো দুই সংস্যার দাদী মার যাওয়ার পর দাদা আরেকটা বিয়ে করেন সেই দাদীর ঘরের সন্তান সহ - সব মিলিয়ে বাবার ছিলো ৭ভাই বোন বাবার সংসারের বড় ছেলে হিসেবে দাদী মারা যাওয়ার পর সবার দায়িত্ব চলে আসে বাবার উপর। বাবা ও নিজের দায়িত্ব মনে করে ৭ ভাই বোনকে আপন করে নিয়ে সবাইকে লালন পালন করে লেখা পড়া শিখিয়েছেন, বিনিময়ে পেয়েছেন অবহেলা আর অত্যাচার😢
আমার মা,,,,,,,
,মায়ের কেন তুলনা হয় না,, সেই মহান নারীটির কথা কি বলবো ? মা-তো মাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ,,,,
আমার মা সবার বড় ছিলেন দাদার বাড়িতে কষ্ট তো করেছনই। মায়ের আাবার সংসারে এসে ও অনেক কষ্ট করেছেন " এই নিয়ে মা কখনো কোন দুঃখ প্রকাশ করেননি। তিনি ধরেই নিয়েছে এটাই আমার কাজ আর কাজ করলে মানুষের শরীর পচে যায় না হয়তো এখন কষ্ট করছি এমন দিন আসতে পারে আমার সুখ আর সুখ। তবে সেই সুখের পেছনে অনেক ছুটেছে মা বাট সুখ আর ধরা দেয়নি, জীবনে শুধু কষ্ট করেই যাচ্ছেন। এখনো করছেন নিজের সংসারের জন্য।
আগে করেছেন দাদার সংসারের তার পর নানার সংসারে এখন নিজের সংসারে। নরীদের জীবনটা এমনিতে চলে যায়,,, সুখের আশায় আশায়। কখনো সুখ ধরা দেয় না। হয়তো সবার এমন টা না ও হতে পারে সবাইতো আর সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায় না।
যদি একটা ভাই থাকতোঃ-
ভাই হারা সংসারে আমি সহ আমাদের পরিবারে চার বোন, আমার আম্মুর কোলজুড়ে আসে আমার আরেকটি বোন,,,,
যে কিনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড❤️ আমার দুঃখ-সুখের সাথী❣️ হাসি খুশিতে সবার সাথে মিলে মিশে ভালোই চলছিল আমাদের এই ছোট সংসার। ছোট কাল থেকে আমার বড় তিন বোন খুব কষ্ট করেছে বাবার সংসারে । যদিও আমরা দু-বোন ছোট বিধায় এতো কষ্ট আমরা দেখিনি। তবে শুনেছি মায়ের মুখে। (একটি কথা না বললেই নয়)যদি ও আমার মা-বাবা জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন, কিন্ত তাদের কষ্টটা আমাদেরকে কখনো বুঝতে দেননি। আমাদের কি লাগবে সেটা আমরা না বললেও আমার মা বুঝে যেতেন । তাই চাওয়ার আগে আমাদের ছোট ছোট চাওয়া গুলো পূরন করে দিতেন ,,
I love you mum তেমাকে স্যালুট মা ❣️❣️
আমার দেখা পৃথিবীর সেরা মা-ই তুমি মা,,,যদি এই সুন্দর পৃথিবীতে মানুষের আবার জন্ম হয় ❤️ তাহলে সব সময় আমি তোমাকেই মা হিসেবে চাইবো।
আমার বাবা,
আমার জন্মের পর আমার আব্বু যে বিশাল জায়গার মালিক হন সেই জায়গাটাতে তরকারী, ধান, বিভিন্ন শাক সবজী ফসলাদী আবাদ করে আমাদের সংসার চালাতেন । আমার বড় কোন ভাই না থাকার কারনে। ভাইয়ের পরিবর্তে আব্বু-আম্মুর এই কাজে সর্বদা সাহায্য করতেন আমার বড় তিন বোন।
আমাদের বাড়ির পাশে আনসার ক্যাম্প ছিল। বাবা মায়ের মুখের কথা আমি যখন ছোট পিচ্ছি ছিলাম, আমি নাকি খুব চঞ্চল ছিলাম😆সর্বদা নাকি ছেলেদের শার্ট পড়ে ঘুরতাম🤭
পড়ালেখায় ও নাকি খুব মেধাবি ছিলাম। তাই ক্যাম্পের আনসাররা ও আমাকে আদর করে আম্মু বলে ডাকতো। খুব আদর করতেন সেই আনসার আঙ্কেলদের প্রতি অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি
আমাদের পাঁচ বোনের জীবন:
আপুদের কে বেশি পড়ালেখা করায়নি বাবা-মা।
সময়টা ২০০৪...
আমার সেজো আপুকে আম্মু স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে ভর্তি করাতে।আমার সে কি কান্না ভর্তি হবার জন্য😥কিন্তু চার বছরের একটা মেয়েকে কি আর ভর্তি করাবে?
কিন্তু আমার কান্নাকাটি দেখে আম্মু পরের বছর মানে,২০০৫ সালে আমাকে পাঁচ বছর বয়সেই ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করিয়ে দেয়।আপুদের সাথে স্কুলে আসা যাওয়া করতাম।কিন্তু সেই ওয়ানের পিচ্ছি মেয়ে বাড়িতে এসে কি করতাম জানেন?😁
আমি বই ছিড়ে ফেলবো বলে আপুরা যে বই লুকিয়ে রাখতো সেই বই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে শেষ করে ফেলতাম🥴
আর সেই পড়াটাই আমার একসময় কাজে লেগেছে।
কারন ছয় বছর বয়সে যখন আমি ক্লাস টু তে।তখন আমি রোল ০১ করে ক্লাস থ্রিতে কৃতকার্য হই🥰
কিন্তু ম্যামদের একটাই কথা মেয়ে ছোট,সে ছয় বিষয় সামলাতে পারবেনা। কিন্তু ভাগ্যিস বেচে গেলাম।এক ম্যাম আমার কান্নাকাটি দেখে আমাকে বললো ক্লাস থ্রির একটা বাংলা কবিতা বলো। যদি বলতে পারো তবে তোমাকে থ্রিতে উঠানো হবে। যেই বলা সেই কাজ আমি অনায়সে ক্লাস থ্রির একটা কবিতা আর ফোরের একটা কবিতা বলে দিলাম। আর উঠে গেলাম ক্লাস থ্রিতে❣️তখন তো ছোট ছিলাম এতোটা বুঝতাম ও না। ম্যমকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার বড় আপু আমাদের কে খুব আদর দিয়ে বড় করেছেন । বিশেষ করে আমাকে💕
আপুর মুখের কথা,,,,,,আমি নাকি ছোট বেলায় আপুকে ছাড়া একটা রাত ও ঘুমাতাম না। আপু যদি কোথাও বেড়াতে যেত তখন নাকি আমাকে নিয়ে যেতে হতো❤️
কিন্তু আমার পাচ বছর বয়সে ২০০৫ সালে আপুর বিয়ে হয়ে যায়।আমাকে আর আপুর মতো আগলে রাখার কেউ ছিলো না কারন আপুর কাছে থাকতেই আমি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতাম। 😥
এরই মাঝেই ঘটে গেল আরেক ঘটনা,,,,,,
ক্যাম্পে এক আনসার(আংকেল) বদলি হয়ে আসে।তার কোনো মেয়ে সন্তান ছিলনা। তিনি আমাদের বাড়ির পাশে পরিবার নিয়ে আরেক বাড়িতে ভাড়া থাকতো।এভাবেই আমাদের বাড়িতে উনার ওয়াইফ মাঝে মাঝে আসতো।আমাদের পরিবার কে ওনাদের ভালো লাগে। বিশেষ করে আমার আব্বুকে নাকি ওই আনসার আংকেলের খুব ভালো লাগে তাই,২০০৭সালে তিনি আমার মেঝো আপুকে পছন্দ করে ১২বছর বয়সেই ওনার ইন্টার পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে বিয়ে করিয়ে নেন বগুড়া। খাগড়াছড়ি টু বগুড়া অনেক দুর।
আমার একটা ভাই নাই যে আমার আপুকে অতো দুর গিয়ে দেখতে পারবে। তার মধ্যে আব্বুও অসুস্থ, তাই আমার পরিবার এই বিয়েতে রাজি ছিলনা।মকিন্তু আমার আনসার আংকেল জোড় করে বিয়ে করিয়ে নিয়ে যায় আপুকে। এমনকি বিয়ের সময় উনি বলেছে যে কেউ যেতে হবেনা।আনতে হবেনা আপু কে নাকি ওনারাই আনবে নিবে।আলহামদুলিল্লাহ আপুর শশুড় তার কথা রেখেছে।খুব আদর করে আপুকে।
একদম নিজের মেয়ের মতো।এমনকি উনার চাকরি পেশায় সন্তানদের নামের পাশে আমার আপুর নামটিও মেয়ের পরিচয়ে দিয়ে দিয়েছে🥰🥰আর আপুর শাশুড়ির কথা কি আর বলবো!সেতো আমার মায়ের কার্বন কপি😍 আলহামদুলিল্লাহ আমার আপু এখন এক সন্তানের জননী🥰
এইমি করেই চলতে লাগলো দিন।দেখতে দেখতে আমিও গ্রামের এক স্কুল থেকে ২০০৯ সালে প্রাইমারি শেষ করলাম।২০০৯ সালেই পিএসসি পরিক্ষা প্রথম চালু হয়েছিল🥰
ভর্তি হলাম ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে গ্রামের একটা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।বেশ চলতেছিল পড়ালেখা।
এরি মধ্যে সেজো আপুর ও বিয়ের ঘন্টা বাজলো😥
২০১২সালে আমার পূর্বপুরুষদের স্থান কুমিল্লা বুড়িচং থেকে আমার খালামনি,খালাতো ভাই-বোন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে।আর এসেই খালামনি পছন্দ করে ফেললো আমার সেজো আপুকে।সাথে সাথে বিয়ে করিয়ে নিয়ে চলে গেল😥
আমি সেজো আপুর ছোট ছিলাম।তাই দুজন সর্বদা খুব খুটাখুটি করতাম।যার জন্য আপুর বিয়ে হয়ে যাবার পর আমি আপুকে খুব মিস করতাম।আপুও নাকি এখনো তার শশুড়বাড়িতে আমাকে খুব মিস করে আমার কথা খুব মনে পড়ে।
তবে আলহামদুলিল্লাহ আমার সেজো আপুও অনেক সুখে আছে শশুড়বাড়িতে।এখন সে দুই সন্তানের জননী আলহামদুলিল্লাহ
তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেল।মা-বাবা,আর আমরা দু-বোনের একা সংসার হয়ে গেল।আমি ২০১২ সালে জেএসসি পরিক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হই।
কিন্তু এই কৃতকার্য-ই আমার জীবনটাকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চেয়েছিল😥
কারন,অজপাড়া গা,,,কোন মতে নিম্ন-মাধ্যমিক লেভেল চালু করেছিল।এখন ক্লাস নাইনে ভর্তি হতে হলে যেতে হবে সাত মাইল দুর উপজেলা সদরে।কিন্তু আমার একটা ভাই নাই, ঘরে অসুস্থ বাবা তাই এতো দুর বাসাভাড়া থেকে পড়ালেখা করাটা খুব ডিফিকাল্ট 😥 তাছাড়া আমি একজন মেয়ে মানুষ।,,,,,,
তাই আব্বু-আম্মুর কথা হচ্ছে যা পড়ছো তাই হবে।আর পড়ালেখা লাগবেনা😥আমি পড়াশুনাকে খুব ভালোবাসতাম তাই আমি খুব কান্না করলাম।তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। আমি চাচ্ছিলাম লেখা পড়াটা কন্টিনিউ করতে। পরবর্তীতে অনেক কষ্টে বাবা মাকে রাজি করাতে পারলাম না।
কথায় আছেনা, মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না😊
এরই মধ্যে ফেরেশতার ন্যায় আমাদের বাড়িতে আসলো আমার মেজো আপুর শশুড়। মনে আছে তো তার কথা ? যিনি আমার আপুকে মেয়ে বানিয়ে পরে বউ করে নিয়ে গেছিলেন?
তিনি আব্বু আম্মু কে বুঝিয়ে - নিজেই আমাকে ভর্তি করিয়ে দেন উপজেলা সদরের একটা বালিকা সরকারী হাই স্কুলে🥰
ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে রোল নাম্বার ২৭ হলো আমার।ওই স্কুলে পুরনো স্টুডেন্টদের ভর্তি পরিক্ষা হয়নি তাই ওদের পিছনে আমি পড়ে গেলাম😪
শুরু হলো স্কুল জীবনঃ-
আমি একজন মেয়ে মানুষ, তাই বাসা ভাড়া নিয়ে দেন আমার এক দুর সম্পর্কের আত্বীয়ের বাসায় । এভাবে আম্মু-আব্বু+আংকেল(আপুর শশুড়) আমার পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছিলো ,,,,,,,,
আলহামদুলিল্লাহ পড়াশুনায় খুব ভালো হওয়াতে নতুন স্কুলের সব টিচারদের প্রিয় হয়ে উঠলাম।গনিত টিচারের কথা কি আর বলবো 😊পুরো স্কুলের সবার মুখের কথা গনিত টিচার নাকি খুব মেজাজি। খুব পিটায়😥তারমধ্যে প্রথম গনিত সৃজনশীল আমাদের এসএসসি ব্যাচ😪
কিন্তু আমার বেলায় এর উল্টোটা হলো,,,,
খুব আদর করতো আমাকে। স্যার আমার কি মাস্টারি করবে ?🥴 আমি ছিলাম স্যারের মাস্টার😁
কারন,স্যার বসে থাকতো আর আমি ব্লাকবোর্ডে অংক করাতাম সবাইরে। সবাই বলতো আমাদের ক্লাসে টিচার ২জন।
১/আমি নিজেই,,
২/স্যার।
এর মাঝেই নাইনের ফাইনাল পরিক্ষা দিয়ে নতুন স্কুলের সবাইকে পিছনে ফেলে ক্লাস টেন এ হয়ে গেলাম ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল।রোল নাম্বার ১ হয়ে উত্তীর্ণ হলাম💕তারমধ্যে নাকি আবার গনিতে হাইস্ট নাম্বার আমি পেয়েছি🥰শুরু হয়ে গেলো ক্লাসমেটদের হিংসা😥 গনিত স্যার আমাকে খুব বেশি আদর করতো তাই হিংসুটে কিছু ক্লাসমেট স্যারের কাছে খুব মিথ্যা প্যাচ লাগিয়ে আমাকে মার খাওয়াতে বা স্যারের কাছে খারাপ বানাতে চাইতো।
কিন্তু স্যার আমাকে খুব ভালো জানতো। উনি জানতো যে একটা স্ট্রাগল করা মেয়ে এতো খারাপ হতে পারেনা। তাই যে যত কিছুই বলুক না কেন স্যার আমাকে কিছুই করতো না। আমার মনে আছে আমি স্যারের হাতের একবার উনার কানটানা খেইছিলাম🤭তাও আবার ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হয়ে টিফিন পালানোর অপরাধে😁
সদরের স্কুলে ভর্তি হবার পরেই শুরু হলো ছেলেদের ইভটিজিং😭 বালিকা স্কুলে ভর্তি হলেও প্রাইভেট পড়তাম স্যারের কাছে। বাসায় এসে একা একা খুব কান্না করতাম। ইভটেজারের ভয়ে স্কুলে ও ঠিকমতো যেতাম না। এক ছেলে তো সদর হাসপাতালের সামনের দেয়ালে বড় বড় করে আমার নামের সাথে তার নামটা লিখে দিয়েছিল। এটা দেখে আমি বাসায় গিয়ে অনেক কান্না করছি। সর্বদা খুব ভয়ে থাকতাম।কি প্রেম করবো আমি ? তখন তো আমি আই লাভ ইউ টু এবং গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের বাংলা অর্থই জানতাম না🙈
যাইহোক,সব বাধা বিপত্তি পেড়িয়ে যখন ক্লাস টেনের টেস্ট পরিক্ষা দিব তার ২সপ্তাহ আগেই একদিন রাতে হঠাৎ খুব পেটে ব্যাথা শুরু হয়😭আমার রিলেটিভরা আমার কান্নাকাটি দেখে তাড়াতাড়ি আমাকে সদর মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করায়।আমার মা-বাবা শুনা মাত্রই সেই রাতের ১টা বাজে পাগলের মতো ছুটে আসে আমার কাছে❣️ ছুটে আসে সেই রাতে আমার টিউশনির ম্যাম(তিনি আমার স্কুলেরও শিক্ষিকা)!তিনি আমার এতোটাই প্রিয় যার সাথে আমি এখনো মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলি❤️আমার ভালোবাসার একজন শিক্ষিকা তিনি❤️অবশ্য তাকে নিয়ে আমার লিখা একটি কবিতাও আছে🥰
মেডিকেল এক সপ্তাহ ভর্তি ছিলাম। নতুন স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের এতোটাই প্রিয় হয়ে উঠেছিলাম যার ফলে আমার প্রধান শিক্ষক হতে শুরু করে সব টিচাররা হসপিটালে আমাকে ডেইলি ২বার এসে দেখে যেতো। আর ক্লাসমেটরা তো সুযোগ পেলেই আসতো।আর ৩বেস্ট ফ্রেন্ড আমার শুধু আমার কাছে এসে কান্না করতো😭ওরা হয়তো ভাবতো যে আমি হারিয়ে যাব😢 আমার গ্রামের স্কুলের স্যারেরা শুনেও ছুটে আসে আমাকে দেখার জন্য।
এভাবে সাতদিন চিকিৎসার পর ড. অনেকগুলা টেস্ট দেয়। যার মধ্যে এপেন্ডিসাইটিস টা ছিল প্রধান।সবমিলিয়ে আব্বুর ৩০হাজার টাকা খরচ হয়।কিন্তু সৌভাগ্যর বিষয় সব টেস্টের রেজাল্ট-ই আলহামদুলিল্লাহ🌺কারন,গ্যাসটিক ছাড়া আর কোনো কিছুই রিপোর্টে ধরা পরেনি।
এরপর হাসপাতাল থেকে রিলিজ নেয়ার পর শুরু হলো টেস্ট পরিক্ষা।চিকিৎসা চলাকালীন সময়েই পরিক্ষা দিয়ে আমি হাইস্ট নাম্বার পেয়েছিলাম🥴
শুকরিয়া,,,,,, স্কুল জীবনে আমাকে প্রিয় স্যার সহ যত বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের সবাইকে অনেক মিস করি। আপনারা যেখানেই থাকেন যেই অবস্থায় থাকেন ভালো থাকবেন আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
প্রিয় বন্ধুরা এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার এই বাস্তব জীবনের গল্পটা সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ প্যানডেমিক সিচুয়েশনের মধ্যে ও যতটুকু সম্ভব সুস্থ ও নিরাপদে থাকার চেষ্টা করবেন। আপনারা সবাই একটু সাবধানে থাকবেন। বিধাতার নিকট মন থেকে সেই দোয়া করছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৯১
Date:- ০৮/০৮/২০২১
ধন্যবাদান্তে,
আমি আমেনা আক্তার
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার
ব্যাচ:১৪
রেজি:৬২৭৮৩
ব্লাড গ্রুপ:ও পজিটিভ
বর্তমান অবস্থান:মানিকছড়ি,খাগড়াছড়ি
পূর্বপুরুষদের অবস্থান:কুমিল্লা,বি-পাড়া