হাজী ফরিদ হোসাইন ছাত্র জীবন শেষ না করেই পা রাখেন মরুভূমির দেশ সৌদি আরবে
হাজী ফরিদ হোসাইন ছাত্র জীবন শেষ না করেই পা রাখেন মরুভূমির দেশ সৌদি আরবে। পরিবারের বড় ছেলে তাই সংসারের অনেক দায়িত্ব তার উপর। মামাদের মাধ্যমে সৌদি আরবে এসে শুরুতেই চরম চাকরি সংকটে পরেন।
কোথাও কোন কাজ খুজে পাচ্ছিলেন না তিনি। অনেক খোঁজাখুজির পর বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের একটি কাজের সন্ধান পান। কাল বিলম্ব না করে যোগদান করেন কাজে। দীর্ঘ একমাস হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন। যেই নরম হাতে ছিলো খাতা কলম আজ সেই হাতে ইট পাথর। এক মাসে তার নরম হাতটি শক্ত হয়ে গেছে। কিছুই করার নেই এটাই প্রবাস জীবন, এটাই কর্ম জীবন এ কথা ভেবে ভেবে নিজেকে নিজে শান্তনা দেন তিনি। মাস শেষে অপেক্ষায় আছেন বেতনের। বেতনের টাকা হাতে পেলে ভুলে যাবেন সকল পরিশ্রম। কিন্তু বিধিবাম মাস শেষে বেতন দেয়া হলো না। আজ কাল বলে অনেক ঘুরিয়ে যখন বেতন দেয়া হচ্ছিল না তখন ফরিদ হোসাইন সিদ্ধান্ত নেন কাজ ছেড়ে দেয়ার। এত কষ্টে পাওয়া কাজটি ছেড়ে দিতে হয় একমাস বিনা বেতনে কাজ করে।
এভাবে চাকরি সংকট, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম এবং বিনা বেতনে কাজ করে শুরু হয় তার প্রবাস জীবন। কনস্ট্রাকশনের কাজ ছেড়ে জয়েন করেন প্লাস্টিক কারখানায় এখানেও সুবিধা করতে পারেন নি। অতপর খেজুর পেকিংয়ের কাজ করেন কিছুদিন।ভালো কিছু করতে না পেরে সেখান থেকে খাবার হোটেলে কাজ করেন। কোথাও ভালো কিছু করতে পারছেন না ফরিদ হোসাইন।তবে তিনি হাল ছেড়ে দেননি। তিনি লেগে ছিলেন ছায়ার মত কিছু একটা তাকে করতেই হবে এবং ভালো কিছু করতে পারবেন এই আত্মবিশ্বাস ছিলো তার।
এবার একটি ইলেক্ট্রিক এর দোকানে কাজ শরু করেন। এখানে মোটামুটি ভালোই কাটছে তার দিন।কাজের পাশাপাশি পন্য সেল করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকেন। সঙ্গে আরবি ভাষায়ও দক্ষ হতে থাকেন। একটা সময় যখন বিক্রয় কৌশল এবং আরবি ভাষায় অভিজ্ঞ হয়ে উঠেন তখন তার চিন্তাধারা পরিবর্তন হতে শুরু করে। এবার তার মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে এভাবে অন্যের চাকরি আর কত দিন? তিনি ভাবতে থাকেন অন্যের দোকানে চাকরি নয়, এমন একটি দোকানের মালিক হতে হবে।
যেই ভাবনা সেই কাজ এক বছরের মাথায় তিনি দোকানটি কিনে নেন মালিকের কাছ থেকে। সফলতা ধরা দেয় তার কাছে। চাকরিজীবি থেকে তিনি এখন একজন ব্যবসায়ী। এরপর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরের ব্যবধানে একটি দুটি করে চারটি দোকানের মালিক হয়ে যান। যেই সৌদি আরবে হন্যে হয়ে খুঁজে যিনি চাকরি পাননি, চাকরি করেও ঠিকমত বেতন পাননি সেই সৌদি আরবেই তিনি ১০/১২ জন লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করেন।
তার সফলতার গল্প এখানে শেষ নয়, অসুস্থ বাবার উন্নত চিকিৎসা জন্য ভারতে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে তার বাবা দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে চলে যান (ইন্নালিল্লাহি....)। পিতার বড় ছেলে হিসেবে দায়িত্ব আরো বেড়ে যায় তার। তবে তিনি ভেঙ্গে পরেননি কখনো। আল্লাহর উপর ভরসা করে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবেই পালন করেছেন। বাবার শূন্যতা কোন ভাবেই বুঝতে দেননি ভাই বোনদের। বাবার মত বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দিয়েছেন পরিবারের সকল সদস্যদের। পাঁচ বোন দুই ভাই এর মধ্যে ফরিদ হোসাইন দ্বিতীয় ছোট চার বোন কে বিয়ে দিয়েছে নিজ দায়িত্বে। সকলের ছোট ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন (সে এখন স্পেনের নাগরিকত্ব লাভ করেছে)। ফরিদ হোসাইন বলেন আমি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই। চাইলে একা অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার সুযোগ ছিলো কিন্তু এটা আমার কাম্য নয়।
হাজী ফরিদ হোসাইন নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপের একজন এক্টিভ সদস্য এবং কমিউনিটি ভলান্টিয়ার। এই গ্রুপ থেকে তিনি কি শিখেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেক কিছু শিখেছি। যদি এক কথায় বলি তাহলে এভাবে বলতে হয় এই প্ল্যাটফর্ম আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। কোন কাজে লেগে থাকার শিক্ষা আমি এই গ্রুপ থেকেই পেয়েছি যা সফলতার অন্যতম প্রধান শর্ত। তাছাড়া নিজেকে ভালোবাসা, বাবা-মাকে ভালোবাসা, দেশের জন্য কাজ করা, অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো, অন্যের কর্মসংস্থান তৈরি করাসহ এমন অসংখ্য শিক্ষা আমি এই গ্রুপ থেকে পেয়েছি যা সত্যিই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হাজী ফরিদ হোসাইন বলেন, এই গ্রুপের মেম্বার হওয়ার পর অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি এখন আমি একটি গ্রুপ অব কোম্পানী করার স্বপ্ন দেখছি। আশা করছি ২০২০সালেই এটি আত্মপ্রকাশ করবে যেখানে পর্যায়ক্রমে শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
হাজী ফরিদ হোসাইনের পিতার নাম সানাউল্লাহ। তার বাড়ি ঢাকা জেলার, কেরানিগঞ্জ থানার, রুহিতপুর ইউনিয়নে, পোড়া হাটি গ্রামে। এই সফল উদ্যোক্তা এক কন্যা সন্তান এবং দুই পুত্র সন্তানের জনক।
SOD No 152
Date: 02.03.2020
রেজিষ্ট্রেশন নং ১৫৪
৩য় ব্যাচ, কোর ভলান্টিয়ার এবং মডারেটর
নিজের বলার মতো একটা গল্প প্ল্যাটফর্ম,
ডিস্ট্রিকঃ (শিবচর ) মাদারীপুর।
রিয়াদ,সৌদি আরব প্রবাসী।
lokmanbd22@yahoo.com