আমি আজ আপনাদের সেই মানুষটার গল্প শোনাতে আসি নি যে মানুষটি ডিপ্রেশনে ভুগে জীবনের একপর্যায়ে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আসসালামু আলাইকুম, আমি শাহীতাজ আক্তার "নহর ফ্যাশন'এর প্রতিষ্ঠাতা এবং কর্ণধার। আজ আমার নিজের বলার মতো একটা পরিচয় আছে। আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কে এবং ধন্যবাদ জানাই আমার প্রিয় স্যার জনাব ইকবাল বাহার কে যিনি আমার জীবনের প্রকৃত অর্থেই একজন মেন্টর, পথপ্রদর্শক। আমি আজ আপনাদের সেই মানুষটার গল্প শোনাতে আসি নি যে মানুষটি ডিপ্রেশনে ভুগে জীবনের একপর্যায়ে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বরং সেই মানুষটির এই তথাকথিত সমাজব্যবস্থা, পরিবারের অবহেলা এবং ব্যক্তিগত জীবনে মুখোমুখি হওয়া হিমালয়সম বাঁধা অতিক্রমের পরের ধাপে সাফল্যের স্বপ্নমন্ডিত রাস্তা খুঁজে পাওয়ার গল্প বলবো আজ।
আমি আমার সব ভালোবাসা আর ধন্যবাদ জানাই আমার বাবা-মা কে যারা খুব ছোট থেকেই আমাকে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বাদ আর চর্চা করতে আগ্রহী করে তুলেছিলেন মনুষ্যত্ববোধের, তারা আমাকে শিখিয়েছিলেন আমি যে কোনো ছেলে সন্তানের সমতুল্য, তারা যা পারে আমি মেয়ে হলেও তা পারি। আর এজন্য ছোট থেকেই আমি ছিলাম অনেক জেদী, স্বাধীনচেতা আর সাহসী। এজন্য জীবনের ক্যারিয়ার, বিয়ে আর অসুস্থতা সবক্ষেত্রে একের পর এক দুর্ঘটনা সত্ত্বেও বার বার পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখেছি নিজের মতো কিছু করবো কিন্তু নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাবলিকেশন্স, জাদুঘর সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে জব করার পরও কোথাও স্থির হতে পারি নি। এভাবেই হতাশাগ্রস্ত এই আমাকে কোনো একদিন কেউ একজন অ্যাড করলো এই গ্রুপে কিন্তু আমি তো flying bird প্রথম প্রথম এখানেও ভালো লাগতো না কিন্তু আমি স্যারের প্রতিটা পোস্ট ফলো করতাম, বোঝার চেষ্টা করতাম। 90 দিনের কোর্স শেষ করলেও রেজি. করি না। তারপর একদিন আসাদুজ্জামান ভাইয়ের বলার পরে রেজিষ্ট্রেশন করলাম। আমার চিন্তা ভাবনা ধীরে ধীরে পজিটিভ হতে থাকলো। একজন মানুষের জীবন থেকে যা কিছু হারানোর থাকে তার সবকিছু আমি হারিয়েছি। সেখান থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন, এই গ্রুপ আমাকে সেটি করতে সাহায্য করেছে।
আমার জীবন থেকে সর্বশেষ আমি হারিয়েছি আমার মা কে, যিনি আমার শুধু মা নন, আমার সবচেয়ে কাছের এবং একমাত্র বন্ধু কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমার সাথে তার শেষ দেখা হয় নি। আমি আমার জীবনের সব যন্ত্রণাগুলো থেকে জ্বালানী তৈরী করে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়েছি প্রতিবার। গ্রুপে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কিছু একটি করতে চাইছিলাম নিজের মতো করে, মা কে হারিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম 'নহর' প্রতিষ্ঠিত করার। নহর তৈরি হলো আমার বাবা-মা আর আমার নাম নিয়ে। মা বলতেন "তুমি হিজাব পড়ো", আমি ভাবলাম আমি নিজেও পড়বো, অন্য মেয়েদেরকেও পড়াবো। শুরু করেছিলাম জিরো ইনভেস্টমেন্টে, কাস্টমারের কাছ থেকে অ্যাডভান্স নিয়ে, জীবনে সততার একটি লেবেল অনেক আগে থেকেই ছিল, আর তাই কাস্টমারের বিশ্বাস আর আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ নহর এখন ঢাকা, যশোর আর চট্টগ্রামে পৌঁছে গেছে। 1 জন ফুল আর 1 জন পার্টটাইম কর্মী আছে, নহর সাহায্য করেছে 2 জন গৃহিণী কে স্বাবলম্বী হতে, মাত্র দেড় মাসে এ আমাদের অনেক অর্জন।
আমি এমন একজন সন্তান যাকে তার বাবা মৃত্যুর পূর্বে কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলেন "আমার মেয়ে একদিন অনেক দূর যাবে" আর তাই স্বপ্ন দেখি 'নহর ফাউন্ডেশন' প্রতিষ্ঠা করার যার মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ কে ভরিয়ে দিব 1 লক্ষ গাছ লাগিয়ে সবুজ শ্যামলীমায়, যার শুরু আমার মা করেছিলেন আর বাবা কে কথা দিয়েছিলাম 'বয়স্ক পুর্নবাসন কেন্দ্র' তৈরী করবো যেখানে কোনো বাবা নিজেকে বোঝা মনে করবে না। সবাই আমার 'নহর' এর জন্য দোয়া করবেন যেন আমার 'নহর' অনেক দূর যেতে পারে।
SOD No: 158
Date: 08.03.2020
শাহীতাজ আক্তার
সপ্তম ব্যাচ, রেজিস্ট্রশন নাম্বার :8641
জেলা : নড়াইল, বর্তমান মালয়েশিয়া প্রবাসী