""নদী চর খাল বিল গজারির বন টাংগাইলের শাড়ি তার গর্বের ধন""
চলছে গল্পে গল্পে ইন্ডাইরেক্টলি সেল পোস্ট
তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমি বলবো টাংগাইল জেলার ঐতিহ্য টাংগাইলের গর্ব টাংগাইল শাড়ির গল্প.......
""নদী চর খাল বিল গজারির বন
টাংগাইলের শাড়ি তার গর্বের ধন""
আপনার অঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক টুকরো ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিল্প, শাড়িকে এভাবে ব্যাখ্যা করলে বোধ হয় খুব একটা ভুল হবে না! যুগ পাল্টেছে, মহিলারা পাল্টেছেন, কিন্তু শাড়ি (saree) ঠিক তার নিজ মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে এখনও আমাদের আলমারি আলো করছে! আপনি বরংপরম্পরায় পেয়ে থাকুন, উপহার হিসেবেই পেয়ে থাকুন কিংবা চাকরির প্রথম মাইনে দিয়েই কিনে থাকুন, শাড়ি ব্যাপারটা বাঙালিদের কাছে এখনও বড় কাছের জিনিস। এই পোশাকটি ছাড়া আমাদের বিয়ে অসম্পূর্ণ, পুজো অসম্পূর্ণ, মায় কলেজের ফ্রেশার্স ওয়েলকামও অসম্পূর্ণ! তাই আমরা বাঙালিরা শাড়ি বড্ড ভালবাসি। আর সেই সঙ্গে ভালবাসি শাড়ির গল্প, শাড়ির ইতিহাস। আজ এই শাড়িকথায় সেসব নিয়েই আপনাদের সঙ্গে এক বাংগালী নারীর গল্প বলতে চলেছি আমি...
শাড়ি নিয়ে প্রতিটা মেয়েরই মনে হয় একটা করে গল্প থাকে। খুব আপন, খুব আদরের, খুব রোমান্টিকও হয়তো বা! তখন ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আমার বয়ফ্রেন্ড সেই সময়ে টিউশনী করতো। টাকা জমিয়ে জমিয়ে একদিন আমাকে একটা হলুদ- লাল কাতান শাড়ি কিনে দিলো। হ্যা! একদম দেশীয় তাতে বোনা। আর শাড়ির দামটা একটু বেশী ছিলো। তাই ওকে দুই তিন মাসের টিউশনীর বেতন জমাতে হয়েছিল। ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে যখন শাড়িটা ও আমাকে গিফট করে, আমি এততো অবাক, এততো খুশী হয়েছিলাম! যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমি শাড়িটা খুব যত্ন করে তুলে রেখেছিলাম আর ওকে বলেছিলাম, শাড়িটা আমি আমাদের গায়ে হলুদে পরবো। ও বললো, তখন আবার কিনে দিবো নতুন শাড়ি। এখন এটা পরো। আমি রাজি হইনি। কারণ শাড়িটা ও ওর পরিশ্রমের টাকায় কিনেছিল। এর ঠিক ৫ বছরের মাথায় আমাদের বিয়ে হয়। এবং আমাদের গায়ে হলুদে আমি ঠিক সেই শাড়িটাই পরেছিলাম। আর বলাই বাহুল্য, শাড়ি কিনে দেয়া সেই মানুষটাই এখন আমার বর...
এই ছিল শাড়ি নিয়ে একটি মেয়ের গল্প এবার একটু টাংগাইল শাড়ির গল্প শুনাতে চাই...
মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুদের পূজা এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সব রকম উৎসব আয়োজনে, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও আমলাদের স্ত্রী-কন্যাদের চাহিদা ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে টাঙ্গাইলের তৈরি তাঁতের শাড়ি। টাঙ্গাইলের অন্যতম শিল্প হচ্ছে তাঁত শিল্প। এ তাঁত শিল্পে তৈরিকৃত শাড়িই টাঙ্গাইলের সুনাম বা পরিচিতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। এটি বাঙালী জাতির হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্য। ভ্রমণ পিপাসু বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা এদেশে এসেছিলেন তার লেখায় টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের বিধৃত রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ আমেরিকা জয় করেছে টাঙ্গাইলের তাঁত বস্ত্র। টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প আজ যে বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে তা একদিনে আসেনি। বসাকদের অপরিসীম ত্যাগ, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলেই টাঙ্গাইলের এককালের সাধারণ মানের তাঁতের শাড়ি আজ বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বসাক সম্প্রদায়ের তাঁতীরাই টাঙ্গাইলের আদি তাঁতী। এদেরকে এক শ্রেণীর যাযাবরও বলা যায়। সিন্ধু সভ্যতার অববাহিকা থেকে পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদে এসে তাঁতের শাড়ি বুননের কাজ শুরু করেন। সেখানকার আবহাওয়ায় শাড়ির মান ভাল না হওয়ায় নতুন জায়গার সন্ধানে বের হয় বসাকরা। চলে আসে বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে। সেখানকার আবহাওয়া তেমন ভাল না থাকায় বসাকরা দুদলে বিভক্ত হয়ে একদল চলে আসে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, অন্যদল ঢাকার ধামরাইয়ে। এদের কিছু অংশ সিল্কের কাজের সাথে যুক্ত হয়ে রাজশাহীতেই থেকে যান। ধামরাইয়ে শাড়ির মান তেমন একটা ভাল না হওয়ায় আরও ভাল জায়গা খোঁজ করতে করতে টাঙ্গাইলে এসে বসতি স্থাপন করে। টাঙ্গাইলের আবহাওয়া তাঁতের শাড়ি বুননের উপযুক্ত হওয়ায় পুরোদমে তাঁতের কাজ শুরু করেন বসাকরা। এক সময় টাঙ্গাইলের বেশিরভাগ এলাকাজুড়েই ছিল বসাকদের বসবাস। তারা অনভিজ্ঞদের বসাক সমিতির মাধ্যমে কাপড় বুননের প্রশিক্ষণ দিতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বসাক তাঁতীরা ভরতে চলে যায়। ওই সময় বসাক ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও তাঁত শিল্পের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে পরে। তারাও বসাক তাঁতীদের মত দক্ষ হয়ে উঠেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শোনা যায় মাকুর খট-খট শব্দ। দেখা যায় তাঁত শিল্পীদের নিপুন হাতে শাড়ি বুনার দৃশ্য। টাঙ্গাইলের লক্ষাধিক তাঁতের সাথে জড়িত আছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা। টাঙ্গাইল শাড়ি বুনে পুরুষরা, চরকায় সূতা কেটে সহায়তা করে মহিলারা। টাঙ্গাইল শাড়ি বুনার তাঁত কয়েকরকমের রয়েছে তারমধ্যে চিত্তরঞ্জন (মিহি), পিটলুম (খট-খটি), অটোমেটিক, সেমি অটোমেটিক তাঁত উল্লেখযোগ্য। এসব তাঁতে তৈরি হয় নানা রঙ ও ডিজাইনের নানা নামের শাড়ি। বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে তৈরি হয়, জামদানি, বালুচুরি, সফ্ট সিল্ক, হাফ্ সিল্ক, হাজারবুটি, থান, বেনারশী, সম্বলপুরী, সুতি পাড়, কটকি, স্বর্ণচুর, আনারকলি, দেবদাস, কুমকুম, প্রভৃতি ও সাধারণ নামের শাড়ি। এর মধ্যে জামদানির দাম সবচেয়ে বেশি। জামদানি তৈরি হয় আন্তর্জাতিক মানের। এ শাড়ি তৈরির জন্য ৮২ কাউন্টের সূতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য শাড়ি তৈরিতেও ৮২ কাউন্টের সূতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেশের সীমানা পেরিয়ে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির কদর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ ইউরোপ আমেরিকা জাপানেও।
কিন্তুু আজ টাংগাইল তাঁতের শাড়ি মহাজনী চক্রের হাতে বন্দি হয়ে পড়ার ফলে বিপনন ব্যবস্থা সুষ্ঠভাবে না হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে টাঙ্গাইল শাড়ি মার খেয়ে যাচ্ছে।
আমাদের পুরাতন ঐতিহ্য প্রাচীন তাঁত আজ ধংসের মুখে। যারা তাঁতের কাজ করতো তারা এখন কর্মহীন হয়ে পড়ছে। একবার তাদের পরিবারে কথা চিন্তা করুন। বিদেশী শত্রুরা মসলিন নামের একটি সুন্দর ঐতিহ্য ধবংস করে ফেলেছে। আমরা পাশ্চাত্য ফ্যাশনে হাবুডুবু খাচ্ছি। তাই আসুন সবাই অন্তত কিছু তাঁতের পন্য ব্যবহার করে তাঁত ও তাঁতীদের শিল্প ঐতিহ্য ও পরিবার রক্ষায় অংশগ্রহণ করি। আর এই দেশিয় শিল্প কে বাঁচানোর জন্য আমরা আপনাদের সহযোগিতা কমনা করি। আমরা এসেছি তাঁতের জন্য, এসেছি তাঁতিদের জন্য, এসেছি শিল্প ও ঐতিহ্য রক্ষায়। টাংগাইলের ঐতিহ্য বাহী যেকোন ধরনের তাঁত শাড়ির জন্য আমরা আছি আপনাদের জন্য।
আমাদের নিজেদের কারখানায় (জে এস টেক্সটাইল) উৎপাদিত হচ্ছে টাংগাইল শাড়ি।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 192-12/04/2020
ইবনে সাইম রানা 01719182082
ডিসট্রিক্ট এম্বাসেডর টাংগাইল
চতুর্থ ব্যাচ, রেজিঃনং ১৩৭৩
ব্যবসাঃ Tangail Sharee টাংগাইল শাড়ি
ওয়েবসাইটঃ www.tangailsharee.com