নিজেকে ভালো মানুষ হীসাবে গড়ে তুলেছি।
#জীবনে_বদলে_যাওয়ার_গল্প।
গ্রামের মধ্যোবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। পরিবারের বড়ো ছেলে।সংসারের হালটা তাই কাঁধে এসে পড়ে সবার আগে।
পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে বিদেশ পাড়ি দেই ১৯ বছর বয়সে। ২০০৭ সালে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায়।এতো ছোটো বয়সে বিশাল দ্বায়িত্ব আমার কাঁধে। আমি কি পারবো সবার চাহিদা মিটিয়ে মুখে হাসি ফুটাতে?
প্রবাস জীবন কতোটা কষ্টের সেটা উপলব্ধি করতে হলে তাকে প্রবাসে যেতে হবে।কম্পানির নামে ভিসা।যেমনটি বলে নিয়ে গিয়েছিল তেমনটি পাইনাই।অনেক কষ্ট করেও ফলস্বরূপ সামান্য কিছু পেতাম যেটা যতেষ্ট ছিলোনা আমার জন্য।সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত বেসিক ডিউটি ছিল,তারপর ওভার টাইম।
আমার বয়োস কম, বুদ্ধি ও কম, তবে সবাই আমাকে অনেক ভালো বাসতো আমি ছোটো বলে।স্বল্প বেতনে আর পেরে উঠছিলাম না।পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছিলামনা সামান্য বেতনে।মালিককে বেতন বাড়াতে বল্লে সে আরো কঠোর হয়ে যেতো।এদিকে ওয়ার্ক পারমিট ছিল কোম্পানির নামে।পাসপোর্ট ছাড়া আবার অনেক অসহায়। পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যার্থ হলাম।পরে অনেক চিন্তাভাবনা করে কিছু আপন মানুষের সাথে আলোচনা করে সেখান থেকে পালিয়ে গ্রামের এক চাচার কাছে গেলাম।একটু বলে রাখি সেটা হলো আমি যে কম্পানিতে গিয়েছিলাম সেটা ছিলো একটা এজেন্সির, মালিক ছিল পাকিস্তানি। সামান্য ভুলে অনেককেই আঘাত করতেন।
গ্রামের এক চাচা আমাকে কারওয়াশে চাকরি দেই।সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত ডিউটি বেতন ৪০ রিংগিত। মোটামুটি ভালো ছিলাম সেখানে। কারওয়াশের পুরো কাজটা আমি শিখে গেলাম।ড্রাইভিং ও পারতাম।বছ আমার কাজে খুশিহয়ে বেতন ৫ রিংগেট বাড়িয়ে দিলো।বরাবরই নিজে কিছু করবো এটা আমার মাথাই ছিলো।বছর খানেক পরে বছকে বললাম আমি চাকরি করবোনা। বছকে কারোনটা বল্লে সে মেনে নিতে চাইলোনা।
সেখান থেকে চলে এসে ৩জনে মিলে একটি কারওয়াশ খুলি।ভালোই চলছিলো আমাদের ব্যাবসা।হঠাৎ পারমিট নিয়ে সমস্যা পড়লাম।রিক্স হয়ে গেলো সেখানে ব্যাবসা করা।সবই পরিস্থিতির শিকার।পরিবারের কথা চিন্তা করে রিস্ক নিলাম না।ভাবলাম আমি টিকে থাকলে হয়তো আবার আরো ভালো কিছু করতে পারবো।কারওয়াশ বিক্রি করলাম।সামান্য কিছু টাকা পেলাম সেখান থেকে।টাকাটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে গ্লাভস ফ্যাকটারিতে চাকরি নিলাম।
গ্লাভস ফ্যাকটারিতে ভালোই ছিলাম কিন্তু বেশিদিন চাকরি করতে পারলামনা সেখানে।ফ্যাকটারি ক্লোজ হয়েগেলো।চলে গেলাম কন্সট্রাকশনের কাজে।এভাবে চলতে থাকলো জীবন।
পর্যায়ক্রমে অনেক জাইগাই চাকরি করেছি। এর মধ্যে
পরিবারে অনেকটা স্বচ্ছলতা এসেছে।ছোট ভাই চাকরি পেলো,বড়ো বোনটার বিয়ে দিয়ে দিলাম। আমারা দুই ভাই দুই বোন সবার উপরে আমি তারপর আমার ছোটো ভাই তারপর দুই বোন।অনেক শুখে কাটছে পরিবার।
এরই মধ্যে ৭ বছর পার হয়েগেলো প্রবাসে।পারমিট ও করে ফেলেছি এর মধ্যে। পরিবার থেকে চাপ দিতে লাগলো দেশে আসার,বিয়ে করার।
২০১৩ সালে দেশে আসলাম।পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলাম।দ্বায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো।মাথার উপর এখন আরো অনেক বড়ো দায়িত্ব। ৪ মাস পরে আবার প্রবাসে চলে গেলাম।কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলাম।
মাথায় একটাই চিন্তা কি করে সফল হবো।পার হয়ে গেলো একটি বছর। আবার দেশে এলাম ৩ মাসের জন্য।ভাবনার শেষ নেই।৩ মাস পর আবার প্রবাসে চলে গেলাম।
আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো পজিশনে চাকরি করছি ১০০+ জন আমার পরিচালনায় কাজ করছে।
ভালোই কাটছে সময়।চাহিদা অনুযায়ী যতেষ্ট ইনকাম করছি।আমার সহধর্মিণী অত্যান্ত সহজ সরল একটা মেয়ে।সব সময় আমাকে উৎসহ দিতেন।হঠাৎ স্বাধ জাগলো বউকে বিদেশ নিয়ে যাবো আমার কাছে।ভাবনার সাথে সাথে কাজ শুরু দেশে এসে বউকে নিয়ে গেলাম।১১ বছর পার হয়ে গেলো প্রবাসে।আল্লাহর রহমতে স্বচ্ছলতার দোয়াড়ে পৌঁছে গেছি।পরিবার, সহধর্মিণী সবাই চাচ্ছেন দেশে এসে কিছু করতে। অনেকতো হলো বিদেশে।
ভাবনার রাজ্যে বসবাস করছি দিন রাত।কি করে নিজের ব্যাবসা দাড় করানো যায়।কি ভাবে শুরু করতে হবে।কি করতে হবে ব্যাবসা করতে গেলে।ব্যাবসায়ের কোনো অভিজ্ঞতা নেই আমার।ফোন করে করে গ্রামের মানুষের কাছে পরামর্শ চাইতাম।সবাই বলতো টাকা থাকলে সব ব্যাবসা করা যাবে।যদি জানতে চেতাম কি ব্যাবসা করবো সবাই বলতো আগে দেশে আয় তারপর হবে।হতাশা বাড়তে থাকলো কি করবো দেশে গিয়ে?
ব্যাবসার অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভিডিও দেখতাম ইউটিউবে। মনের মতো কিছুই পেতাম না।হঠাৎ আমার বউয়ের চোখে পড়লো ইকবাল বাহার স্যারের ভিডিও।বউ সেটা নিজে ভালো করে শুনে তারপর আমাকে দেখালো।মুগ্ধ হয়েগেলাম Iqbal Bahar Zahidস্যারের কথা শুনে।তখন স্যার নিজের অফিসে বসে ভিডিও করতেন।যুক্ত হলাম #নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প গ্রুপে।দ্বিতীয় ব্যাচ চলমান তখন।শুরু করলাম স্বপ্ন দেখতে।
স্যারের প্রতিদিনের সেশন পোস্ট গুলো খুব যত্ন সহকারে নিজের মধ্যে লালন করতে লাগলাম।এ ভাবে শেষ হয়েগেলো চতুর্থ ব্যাচ।৫ম ব্যাচ থেকে শুরু হলো কথা বলার জড়তা কাটানোর ভিডিও সেশন। প্রতিদিনই ভিডিও করতাম সময় করে।বউকে দেশে পাঠিয়ে দিলাম।
কথা বলার জড়তা কাটানোর ভিডিও সেশনগুলো করে অনেক পরিচিতি হলো,কাটলো কথার জটিলতা।সহজেই ক্যামেরার সামনে কথা বলতে পারছি আমার মা আমার ভিডিও দেখে বল্লো আমি নাকি আগের চেয়ে অনেক সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারি।খুশি হয়ে গেলাম মায়ের কথা শুনে।অনেক ভালো লাগছে তখন।
স্যার হঠাৎ একদিন সেশন পোস্ট দিলেনঃ বাবা- মাকে ভালোবাসি কথাটি কে কে বলেছেন? যদি কেউ লজ্জায় এতোদিন না বলে থাকেন তবে আজই বলে ফেলুন।বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে বলুন অনেক ভালবাসি। যারা প্রবাসে আছেন বা দূরে আছেন মা-বাবা ছেড়ে তারা ফোন করে বলুন।যখন তখন ফোন করলাম মাকে বল্লাম মা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।বিশ্বাস করেন জীবনে এতো শান্তি আর কখনো পাইনাই।
ব্যাবসায়িক টুকটাক অনেক বিষয় নিয়ে এখন আমি অভিজ্ঞ।সব শিখেছি স্যারের কাছ থেকে। প্রবাস জীবন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।চলে এলাম দেশে। তবে দেশে আসার আগে ছোটো পরিসরে গরুর গোয়াল করে রেখেছিলাম।কারণ আমি এগ্রো ফার্ম করবো পরিকল্পনা করেই দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
শুরু করলাম এগ্রো ফার্মAHNAF RF AGRO FARM। একটি দুইটি করে ৯ টি গরু কিনলাম, বাড়িতে একটি আগেই ছিলো।আমার ফার্মের বয়স ৫মাস। আল্লাহর রহমতে ভালই চলছে।
নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপ জীবন বদলে দিলো।উদ্দোক্তা হওয়ার স্বাদ মিটালো।গ্রুপে যুক্ত হয়ে বিশাল এক নেটওয়ার্ক পেলাম।অনেকগুলো ভালো মানুষ পেলাম।অনেক মানুষকে অনেক ভাবে পাশে পেলাম।গ্রুপ থেকে আবার অনুপ্রেরণা পেয়ে #ঘি এর ব্যাবসা শুরু করলাম।
নিজেস্ব তত্বাবধানে তৈরি করতে লাগলাম ১০০% খাঁটি গাওয়া #ঘি।এতো বড়ো নেটওয়ার্ক পেয়ে গেলাম।সতাতা নিয়ে কাজ করি যেটা শিখেছেন ইকবাল বাহার স্যার। নিজেকে ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেছি।আলহামদুলিল্লাহ এখন আমার উৎপাদিত গাওয়া #ঘি বাংলাদেশের সব জেলাতেই সরবরাহ করছি।প্রতিদিন অনেক অর্ডার পাচ্ছি। কাষ্টমারের চাহিদা পূরণ করছি যত্ব সহকারে।ভালোই চলছে আমার ব্যাবসা।
Iqbal Bahar Zahid স্যার প্রাই বলেন একটি কাজ করতে করতে আরেকটি কাজের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় বা আরো অনেক কাজের দোয়ার খুলে যায়।আসলেই ঠিক।অনেক কাজের অভিজ্ঞতা হয়েগেছে।আগামীতে আরো ভালো কিছু নিয়ে উপস্থিত হবো আপনাদের মাঝে। দোয়া করবেন সবাই।
গ্রুপের পজেটিভ মানুষের সাথে মিশে অনেক জ্ঞান অর্জন করছি প্রতিদিনই।প্রতিনিয়োতোই কিছু কিছু অভিজ্ঞতা এড হচ্ছে জীবনে।
নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপে যুক্ত হয়েঃ--
*নিজেকে ভালো মানুষ হীসাবে গড়ে তুলেছি।
*অনেক বড়ো একটা নেটওয়ার্ক পেয়েছি।
*পেয়েছি ব্যাবসায়ের আইডিয়া।
*উদ্দোক্তা হতে পেরেছি।
*অনেক পরিচিতি বাড়াতে পেরেছি।
*ভলান্টিয়ারিং করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।
*কথা বলার জড়তা কাটাতে পেরেছি।
*অসহায় মানুষের পাশে থাকার শিক্ষা পেয়েছি।
*মিলেমিশে কাজ করার অভিজ্ঞতা পেয়েছি।
*উদ্দোক্তা হয়ে পন্যো কেনা বেচা করতে পারছি গ্রুপে এটা অনেক বড়ো পাওয়া।
*এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।
#নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প সবার জীবনে আসুক। সবাই নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি করুক।
স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুণ
শুরু করুণ এবং
লেগে থাকুন
সাফল্য আসবেই
-ইকবাল বাহার
স্বপ্ন দেখেছি, সাহস করেছি, শুরু করেছি,লেগে আছি সাফল্য আসবেই ইনশাআল্লাহ।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -১৭৭
২৯-০৩-২০২০
মোঃ রুবেল আহমেদ
কোর-ভলেন্টিয়াররা, মডারেটর
দ্বিতীয় ব্যাচ,সাতক্ষীরা
01319933170