বাড়ি থেকে সবাই বলে আগের চাকুরী তে আবার ব্যাক করার জন্য কিন্তু নিজের একটা ব্যক্তিত্ব আছে তাই আর সেখানে ব্যাক করলাম না।
আসসালামুআলাইকুম!
আজ বলবো এই প্রানের গ্রুপের সাথে আমার পরিচয় হলো যেভাবে সেই গল্প.....
সদ্য বিবাহিত একটা ছেলে, বিয়ে করেই ছুটি শেষ করে বউকে বাড়ি রেখে কর্মস্থল আশুগঞ্জে ফিরে যায়!
স্বাভাবিক ভাবেই কাজে মনোযোগ কম এবং মনটা ও একটু খারাপ ছিলো....
তারিখটা ঠিক মনে নেই, তবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের কোনো একটা তারিখ হবে হয়তো, মর্নিং শিফট অফিস শেষ করে অফিসের ডরমেটরীতে এসে বসে বসে ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখছিলাম, হটাৎ একটা ভিডিও তে চোখ আটকে গেলো!
স্যুট-কোট পরা একজন স্মার্ট ভদ্রলোক মাইক্রোফোন হাতে স্টেজে দাড়িয়ে বলছে "আসুন আমরা পঞ্চাশ টাকায় খুশি কিনি"!
এই কথাটাই কেনো জানি একটা আকর্ষণ ছিলো! কথাটা শোনার পরেই আমার মধ্যে কেমন যেনো একটা অনুভূতি কাজ করলো এবং মনে হলো এই লোক কোনো সাধারণ লোক না, ইনি কোনো এক মহামানব! উনিই হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় শ্রদ্ধেয় Iqbal Bahar Zahid স্যার!
উনি সবাইকে পঞ্চাশ টাকায় খুশি কিনে দেবে মানে উনি পঞ্চাশ টাকা করে সবার থেকে নিচ্ছে বিরিয়ানি কিনে পথশিশু/হতদরিদ্র দের খাওয়াবেন। আর সেই বিরিয়ানি খেয়ে পথশিশু রা যে খুশি হবে যা আসলেই অমূল্য!
এটা ছিলো সম্ভাবত কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট এ সংবাদকর্মী দের নিয়ে কোনো একটা অনুষ্ঠানে!
পরবর্তীতে এই ভদ্রলোকের সম্পূর্ণ বক্তৃতা আর না দেখে যাওয়া যায়????
বক্তৃতার বাকি অংশে ছিলো তরুণদের নিয়ে উৎসাহ মূলক অনেক কথা এবং উনি "নিজের বলার মতো একটা গল্প" নামক একটা অনলাইন প্লাটফর্ম খুলেছেন যেখানে ৯০ দিনের অনলাইন ভিত্তিক একটা কোর্স করান এবং তা আবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে! যার একটা কোর্স অলরেডি শুরু হয়ে গেছে যেখানে ৬৪ জেলার ১৬৪ জন অংশগ্রহণ কারী আছেন নারী-পুরুষ মিলিয়ে! এটা শোনার পরে আমার কেনো জানি একটা আফসোস হলো যে কেনো আরো আগে জানলাম এটা। মনে হলো আমি অনেক পিছিয়ে আছি, কারণ উদ্যোক্তা হওয়ার এতো চমৎকার একটা প্রোগ্রাম তাও আবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ও অনলাইনে শুরু হয়েছে অথচ জানতে পেরেছি এতো দেরীতে!
উনি উনার বক্তৃতায় এটা বলেছিলেন যে পহেলা এপ্রিল থেকে নতুন ব্যাচ শুরু হবে যেখানে উনি ২০০০ শিক্ষার্থী রাখবেন। এটা শোনার পরে মনের মধ্যে একটা আলোড়ন তৈরি হলো, সে যে কি অনুভূতি তা বুঝাতে পারবো না। একবার মনে হচ্ছিলো প্রথম ব্যাচ মিস করেছি এবারের ব্যাচে কি চাঞ্চ পাবো? আবার মনে হলো যে কোরেই হোক এপ্রিলের ব্যাচে জয়েন করতেই হবে.... কিন্তু কোনোকিছুতেই মন স্থির হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি করে ঐ ভিডিওটা আবার টেনে দেখলাম যে গ্রুপের নাম বলেছিলেন ওটার নাম কি? নাম শুনে এবার ফেসবুকে সার্চ দিলাম, পেয়ে ও গেলাম কিন্তু তখন চিলো ওটা ক্লোজ গ্রুপ তাই পেয়েও কোনো লাভ হলো না, যে গতিতে উৎফুল্লতা বেড়ে গেছিলো তার দ্বীগুন গতিতে কমে গেলো! কি আর করা, একটা জয়েন রিকুয়েষ্ট দিয়ে রাখলাম!
আবারো মনের মধ্যে একটা আলোড়ন তৈরি হলো, উনি তো একটা লাইক পেজের কথা বলেছিলেন, সেই লাইক পেজ খুজে বের করলাম, লাইক দিলাম, কমেন্ট করলাম যে জয়েন করতে চায় কিন্তু কোনো রিপ্লাই পাইলাম না। ইনবক্সে সুন্দর করে সালাম দিয়ে সুন্দর একটা মেসেজ করলাম কিন্তু no reply!
না পেরে সেই পরশ পাথর ব্যাক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় Iqbal Bahar Zahid স্যারের ইনবক্সে ও মেসেজ দিলাম, কিন্তু ঐ একই অবস্থা no seen, no reply!
প্রতিদিন মেসেজ চেক করতাম কিন্তু no seen, no reply!
কিছুই করার নেই, শুধু ভাবতাম অনলাইনে কোর্স, মানে কি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভিডিও কলে আসতে হবে??? আবার ভাবতাম আমার তো শিফটিং ডিউটি তাই আমি তো প্রতিদিন একই সময়ে উপস্থিত থাকতে পারবো না! এরকম নানান প্রশ্ন মনে মনে কাজ করতে লাগলো। তবে একটা আশা ছিলো যে যেহেতু বিনামূল্যে তাই প্রতিদিন উপস্থিত না থাকতে পারলেও পরের ব্যাচের সাথে আবার রিপিট করে নেবো!
পহেলা এপ্রিল আমাকে গ্রুপে একসেপ্ট করিনি, মানে একটা চাপা টেনশন কাজ করছিলো। পরেরদিন এপ্রিলের ২ তারিখে আমাকে এড করা হল
কিন্তু স্যারের এই যে সেশন পোস্ট এটা পড়লাম, বুঝলাম, ভালো ও লাগলো কিন্তু এটা বুঝলাম না যে এটাই ক্লাস, এটাই কোর্স!
কারণ আমার মাথার মধ্যে তো আছে যে ভিডিওতে ক্লাস নেবে এরকম একটা ধারণা গেথে আছে।
ভাবলাম হয়তো হবে, দেখতে থাকি...
এভাবে চলতে লাগলো, প্রতিদিন একটা করে সেশন পোস্ট দেয় স্যার আর সেইটা পড়ি আর মনে মনে সেগুলো পালন করি/ভাবি আর স্বপ্নদেখি আমাদের ও একটা ফ্যাক্টরি হবে, আমাদের ফ্যাক্টরি তে অনেক লোক কাজ করবে। আমিও উদ্যোক্তা হবো, একদিন অনেক বড় শিল্পোদ্যোক্তা হবো.....
যে ভাবনা সেই কাজ, ইতিমধ্যে ছোট পরিসরে একটা এ্যলুমিনিয়ামের তৈজসপত্র তৈরির ফ্যাক্টরির কাজ শুরু করি পারিবারিক ভাবে। এটা অবশ্যই সম্পূর্ণ আব্বুর ছিলো, আমি শুধু ইনভেস্ট করেছিলাম নিজের জমানো টাকা ও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে।
তখন গ্রুপে আর কোনো পোস্ট হতো না, আর আমিও তেমন কোনো কমেন্ট ও করতাম না, শুধু দেখতাম আর মেনে চলার চেষ্টা করতাম। এভাবেই ধীরে ধীরে ৯০ দিনের কোর্স শেষ হতে না হতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি চাকুরী ছেড়ে দেবো। যেহেতু এ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি হচ্ছে তাই বাড়ি যেয়ে ফুল টাইম আব্বুর সাথে ব্যবসা করবো। যেই ভাবনা সেই কাজ, অফিসের নিয়ামুযায়ী ৩ মাস আগে রিজাইন দিতে হবে, তাই রিজাইন লেটার দিয়ে দিলাম!
এভাবে ২য় ব্যাচ শেষ করলাম, কিন্তু ২য় ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানে ঢাকায় যেতে পারলাম না, কারণ ঐ সময়ে আমি আশুগঞ্জ এর চাকুরী টা রিজাইন দিয়ে দেই, বলে ছুটি ম্যানেজ করতে পারিছিলাম না।
যাইহোক পরবর্তীতে এ্যালুমিনিয়ামের ফ্যাক্টরি আর ভালোভাবে চালাতে পারিনি, ক্যাপিটাল সংকট প্লাস উৎপাদনের তুলনায় সেল মাত্র ২৫% তাও ম্যাক্সিমাম বাকি। রানিং/ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেখতে শূণ্য হয়ে গেলো!
শুরুতেই খেলাম বড় এক ধাক্কা!
এই প্রথম বুঝলাম শুধু মূলধন থাকলেই ব্যবসা করা যায় না, ব্যবসা করতে লাগে কৌশল! আরো বুঝলাম মার্কেটিং হলো একটা ব্যবসার প্রাণ!
তাছাড়া শুধু ৯০ দিনের কোর্স শেষ করলাম মানেই যে আমি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য নিজেকে appropriate ভাবাটাও ছিলো ভুল!
চরম হতাশায় পড়ে গেলাম, এদিকে চাকুরী রিজাইন দিয়ে দিয়েছি এদিকে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে প্রায়, এদিকে ব্যাংকের ঋণ!!!!
ত্রিমুখী সংঘর্ষ/বিপদ!
বাড়ি থেকে সবাই বলে আগের চাকুরী তে আবার ব্যাক করার জন্য কিন্তু নিজের একটা ব্যক্তিত্ব আছে তাই আর সেখানে ব্যাক করলাম না। ভাবলাম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যেহেতু আছে আল্লাহ চাইলে নতুন অন্যকোনো যায়গায় ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!
ঠিক সেই সময় নিউজ পেলাম খুলনায় একটা পাওয়ার প্লান্ট হবে, চরম হতাশার মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হলো....
এপ্লাই করলাম ইন্টারভিউ দিলাম চাকুরী ও হলো কিন্তু আগের চাকুরীর চেয়ে ৩ র্যাঙ্ক নিচেয় এবং আগের তুলনায় বেতন ও কম!
তবুও জয়েন করলাম কারণ প্রত্যেক মাসে প্রায় ৫৮ হাজার টাকা ইন্সটলমেন্ট দিতে হয় আমার, বেতনের পুরোটাই চলে যায়.....
নতুন অফিসে জয়েন করেই কাজে নেমে গেলাম, প্রজেক্ট চলছিলো তাই প্রচন্ড কর্মব্যস্ততা ছিলো। সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্তডিউটি। আমার মনে আছে আমি জয়েন করার পর থেকে প্রথম ২ মাসে একটা অফডে ও কাটাইনি। কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিলো কাজের মাধ্যমে সবার মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হবে। তাই এই সময়গুলোতে গ্রুপে তেমন সময় দিতে পারিনি। ইতিমধ্যে ৩য় ব্যাচ শেষ হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে ৪র্থ ব্যাচ থেকে মোটামুটি কিছুটা সক্রিয় হলাম, এবং আবারো ৯০ দিনের কোর্সটি রিপিট করলাম।
এরপর ৫ম ব্যাচ থেকে মাঝেমধ্যে পোস্ট করা শুরু করলাম, কিছু কিছু পোস্ট খুব ভাইরাল হলো, বাড়তে থাকলো পরিচিতি। এরই মধ্যে প্রথম বারের মতো কথা বলার জড়তা কাটানোর ভিডিও সেশন চালু হলো, কিছু ভিডিও করলাম যার ফলে পরিচিতি টা আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো...
যেহেতু বেতনের টাকা পুরোটাই ইন্সটলমেন্ট দিতে হয় আর সংসার খরচ বাবাই বহন করে যেটা বেশ খানিকটা লজ্জাজনক তাই ভাবতে শুরু করলাম এবার কিছু শুরু করতে হবে চাকুরির পাশাপাশি।
আমার ওয়াইফ যেহেতু চারুকলার শিক্ষার্থী এবং সে খুব ভালো আর্ট ও পেইন্টিং করতে পারে তাই তার পরামর্শে শুরু করলাম "রঙবেরঙ" নামে হ্যান্ড পেইন্টিং ও ডিজাইন হাউজ!
শুরুটা খুব ভালো চলছিলো এবং গতবছর পহেলা বৈশাখে বেশ কিছু অর্ডার ডেলিভারি করি আমরা এবং কাস্টমারের খুব ভালো রেসপন্স পাই.....
কিন্তু এর মধ্যেই আমার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট হয় বলে ঐ ব্যবসা সাময়িক ভাবে অফ রাখা হয়....
এরপর আরো টুকটাক কিছু ব্যবসা করি.....
গল্পের বাকি অংশ ও খুলনা টীমের প্রিয় ভাই-বোনের নিয়ে বলবো আরেকদিন....
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -১৮০
৩১-০৩-২০২
ধন্যবাদান্তে
ইঞ্জিঃ মুজাহিদ অপু
২য় ব্যাচ (১২৫৪)
খুলনা
মডারেটর
কোর ভলেন্টিয়ার
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন
#মধুসেবক
Facebook.com/purehoneywebbd
+8801754199095
আর #Pure_Honey'র জন্ম ও সফলতার গল্প জানার জন্য Lokman Bin Nurhashem ভাইয়ের আমাকে নিয়ে লেখা গল্পটি পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ https://www.facebook.com/groups/youngentrepreneursbdiqbal/permalink/890907361380621/