বাবা আগে আগে কালেমা পাঠ করলেন আর আমাদের সাথে সাথে পাঠ করতে বললেন
#খোলা_চিঠি_ইকবাল_বাহার_জাহিদ_স্যার
কথা তো বলাই যায়..
করে দেখেছেন কখনো !!!
বড় হয়ে গেলে, অনেকে কিছুই বলা মানায়.....
পড়াশোনা অবস্থায় কিছু করা যায় নাকি..! আর আমাদের সমাজ সেটা মেনেও নেয় না কখনো ভাই, আপনি বলেছেন অন্যদের কিছু করতে কিন্তু আপনার ছেলেকেই বলবেন.. পড়াশোনা করতেছো পড়াশোনাই করো.. তোমার কামাই এখন আমার খেতে হবে না, রেজাল্টা এখন ভালো করো এটুকুই চাই👏। দুঃখিত স্যার,সবাই বা সবার বাবা এমন নয়,, আমার বাবাও এমন ছিলেন না..আপনার মতই স্বপ্নবাজ শিক্ষক, আমার হেডলাইট আমার বাবা❤️ আল্লাহ তায়ালার দয়া আর তারই কারনে আজ আমি অন্য কারো মুখাপেখি নই।
ছোট বেলা থেকেই অনেক কিছু নষ্ট করেছি.. মাছ চাষ, মুরগির ফার্ম, গরুর খামার, হাস পালন, বাধাই ব্যবসা(লুঙ্গি /কাপড়), আরো অনেক কিছু করেছি SSC পরিক্ষার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত।
SSC শেষ করে, ভাবলাম বসে থেকে কি করব.. একটা মুরগির খামার করি (এলাকায় তখন এক মামা মুরগির খামার করে ভালো প্রোফিট অর্জন করেন দেখে খুব ইচ্ছা করে ) .. সেই মোতাবেক কাজ শুরু করলাম..
আশে পাশের সবাই কান ঘুসাঘুসি করতে শুরু করলো মাষ্টার মানুষের ছেলে বাবার এত সম্পত্তি থাকতেও এই কাজ করা লাগবে. ওর দ্বারা এই এত কঠিন কাজ হবে না.. ইইইইইইইইইই. এমন কথা শুনে খারাপ লাগতো খুব.. তখন বাবা বলতো, শুরু করেছো.. করো.. তুমি পারবে..
কিন্তু আপসোস প্রথম বারে লস করি, আম্মু আমার কষ্ট করা দেখে ২য় বার আর বাচ্চা উঠাত দেয় না।
এটা বাদ থাকে.. ইন্টার ক্লাস শুরু হয়.. একদিন পর পর ক্লাস, বসে থাকতে ভালো লাগে না.. বাড়ির সামনে আমাদের একটা পুকুর ছিল, আব্বুকে বলি, মাছ ছাড়ার কথা.. আব্বু সাথে সাথে পারমিশন দিয়ে দিন, তারপর দিনই জেলে ডেকে এলাকার বন্ধুদের সাথে নিয়ে পুকুর মেরামত করে মাছ দেই। সেটাতেও লস... আব্বু আবার ছাড়তে বলেন,, সেবার লাভ হয়,, এখনো আমার মাছ চাষ আছে।
তখন আমি আবার নতুন করে মুরগি চাষ করতে আগ্রহী হই, নতুন আইডিয়া নিয়ে, যেখানে কষ্ট কম হবে, 3 ফিট উঁচু করে মাচাল করে তাঁর উপরে মুরগি চাষ, বাড়িতে বললাম, আম্মা রাজি হলো না, পরে আব্বু কে বলে, আমাদের এলাকার এক ছেলে খুবই সৎ দরিদ্র পরিবারের সন্তান, অকে বললাম সব কিছু আমি দেব ও শুধু পরিচর্যা করবে, লাভ 50% 50%। ও রাজি হলো.. আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে মাঠের পাশে ওদের বাড়ি। আমার ঘর ওদের ওখানে নিয়ে মাচাল করে তুললাম, 500 বাচ্চা নিয়ে শুরু।
প্রথম বারেই লাভ, ঘরের টাকা সহ উঠে আসলো। আজ 3 বছর হলো আমাদের ফার্ম এখনো চলছে,, আমার কিছু করতে হয় না এখন আর, শুধু ডিলারের সাথে যোগাযোগ রেখে মাঝে মাঝে ফার্ম দেখে আসি, প্রতি 2 মাসে প্রায় 8/10 হাজার টাকা করে ওখান থেকে আসে।
BBA 3rd year exam 2019হয়ে গেল.. প্রায় সবাই হতাশ। আগের ব্যাচের বড় ভাইরা কেউ ভালো জব পাইনি এখনো। আমাদের ব্যাচের পোলাপান আরো বেশি ফাঁকিবাজ থাকায়, বিদায়ী সংবর্ধনায় স্যারদের কথায় আরো দুমরে মুচরে উঠলো সবার ভিতরটা।
প্রায়ই ফেবুতে স্যাড স্ট্যাটাস আপডেট হতে দেখি বড় ভাইদের ক্লাসমেট দের এমনকি জুনিয়রদেরও।
এভাবে দেখতে চিন্তা করতে থাকি কি করা যায়!
এইতো সেপ্টেম্বর মাস 2019, আব্বুকে বললাম, আব্বু টাকা পয়সা ছাড়া তো চাকুরী নেই, আর কিছু দিন গেলে পরিক্ষা হয়ে গেলে তো বেকার হয়ে যাবো.. একটা কাজ করি,, একটা শো-রুম করি, পাশাপাশি পড়াশোনা শেষ করি, চাকরির চেষ্টা সাথে করতে থাকবো, তোমাদের দোয়ায় চাকরি হয়ে গেলে, চাকরি করবো.. সাথে শো-রুম ও চলবে না হয় কাউকে দিয়ে দিব। আমার ❤️ বাবা ❤️ অসুস্থ ছিলেন (2010 থেকে বাত ব্যথার রুগী হাটতে পারতেন না হুইলচেয়ারে ক্লাস করতেন, বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক) কিন্তু আমাদের চাওয়া কোন সময়ই অপূর্ণ রাখেনি। বাবাও আমার আইডিয়া শুনে রাজি হলেন.. #বলে_রাখি, আমি তখন নিজের বলার মত একটা গল্প এর নতুন ৭ম ব্যাচ এর সদস্য। শো-রুম ব্যবসা সম্পর্কে এখান থেকেই আইডিয়া নেই, তার পূর্বে আমার কোন আইডিয়া ছিল না।
সব কিছুর মত বাহার স্যারের শেখানো ফান্ডিং আইডিয়া দিয়ে আমি প্রায় 20 লক্ষ টাকা গুছিয়ে ফেলি, অবশ্য ❤️বাবা ❤️ 5 লক্ষ প্রথমেই আমাকে দিয়ে দিন।
শুরু করি থানা পর্যায়ে মেগা শপ করার কাজ.. আমার পাশের অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, ৩ মাসের সময় আমাকে বেধে দেন অনেকেই, মেগা শপ করে ৩ মাসের বেশি আমি বাজারে টিকতে পারবো না..... এটা চলবে না... টাকা গুলো মাইর খাবে... ইইইইইইইইই....
মন খারাপ হলো খুব পরিমাণ, আব্বুকে বললাম, আব্বু বলল, যা হবার হবে, শুরু করেছো.. করো দোয়া করি, ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। সাহস পেলাম.. গ্রুপে ঢুকলাম, স্যারের স্ট্যাটাস গুলো দেখে আরো সাহস বাড়লো। (মন খারাপ হলে গ্রুপে স্যার সহ সদস্যদের বিজয়ের গল্প শুনলে আর আব্বুর পাশে গিয়ে বসলে মন ভালো হয়ে যেত💞😢💞)
সব বাধা পেরিয়ে কিছু প্রিয় মানুষদের সহযোগিতায় পহেলা ডিসেম্বর ২০১৯ উদ্বোধন করি আমার বাবার স্বপ্নে দেখা #বরাত_শপিং_মল নামের মেগা শপ।
আমার টিম মেম্বাররা আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য করেন, এই মেগা শপ করায়, আর এর পিছনে আমাদের নিজের বলার মত একটা গল্প এর পাবনা জেলার অনেকের কাছেই কৃতজ্ঞ বিশেষ করে Jubaer Ahmad ভাই Ahashanul Hasan ভাই Sofiqul Islam ভাই সহ অনেকেই।
মজার ব্যাপার হলো প্রথম মাসেই আমরা প্রায়ই 10 লক্ষ টাকা সেল করি সব খরচ বাদে প্রোফিট থাকে প্রায় 1,50,000/= এর মত এর সামান্য কিছু অংশ ❤️ বাবার ❤️ হাতে দিয়েছিলাম,,সেই সময়ে বাবার খুশি মুখটি ছিল পৃথিবীর সব থেকে বেশি আকর্ষণীয় ❤️ ভুলবো না কোন দিন বাবা❤️
ভালোই চলতে থাকে আমাদের মেগা শপ। ১৮ই জানুয়ারি বাবা আরো অসুস্থ হয়ে পড়লেন😢 বাবাকে নিয়ে হসপিটালে। ছোট ভাই ইন্ডিয়া আলিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে ৩ দিন আগে চলে যায়.. বাবা ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে ছোট ভাই কে আসতে বললাম। বাবা একটু সুস্থ আগের থেকে।সদর হসপিটালের ডাক্তার সভাপতি আমাদের চাচাতো ভাই এর জন্য ডাঃ রা সবাই খুব আন্তরিক ছিল.. বাবাকে কেবিনে নিতে বলল... ❤️বাবা😢 বলল.. শুধু শুধু টাকা খরচ করবে কেন.. কত মানুষ এখানে থাকে, আমরা আর কিছু বললাম না । কিছুক্ষণ পর আমি নিচে বাবার পায়ের কাছে বসে ঝিমুচ্ছি, ছোট ভাইও পাশে বসে, বাবা আম্মু কে ডে বলল..কেবিনে গেলে, আমার মামুন মেহেদী শুয়ে ঘুমানোর যায়গা পাবে😢😢কথাটা শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি তখন 😭
❤️বাবা❤️
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সন্তানের জন্য কত ভালোবাসা। বাবাগো খুব ভালোবাসি তোমায় 💚
ডাক্তার মামা কল দিয়ে ঢাকা নিতে বললেন,
পাবনা থেকে ঢাকা মামার হসপিটাল ডেলটা তে নিয়ে গেলাম, মামার তত্ত্বাবধানে ডাঃ বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দিলো,, একটু উন্নতি.. বাবা বললেন,, আব্বুরে আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো.. আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আমরা রাজি না হওয়ায় 😭 পায়ে ধরে বাচ্চাদের মত করে কেঁদে বলেছিল, আব্বুরে একটা দিন আমি বাড়িতে থাকবো,, আমাকে বাড়ি নিয়ে চল 😭😭 বুঝাতে পারবো না তখনকর অনুভূতি 😭😭
বাড়ি আসলাম... ২৬ জানুয়ারি রাত ৯ টা.. আমাদের এখানে ইসলামী জালছা হচ্ছে, বাবাকে নিয়ে আসতেছি জেনে সকল আত্মীয় স্বজনরাই চলে আচ্ছে। সবাইকে পেয়ে আব্বু খুশি মনে হলো...আব্বুর অস্থিরতা বাড়লো.. সবাই কে আব্বু ডেকে নিয়ে জরে জরে কালেমার তালকীন দিলেন নিজেই।
বাবা আগে আগে কালেমা পাঠ করলেন আর আমাদের সাথে সাথে পাঠ করতে বললেন, বেশ কয়েকবার পাঠ করালেন,, আব্বু একটু শান্ত হলো.. আমি বললাম, আব্বু এশার নামাজ আদায় করে আসি, আব্বু মাথা ঝাকালেন যাও।
রাত ১২:১০ নামাজ শেষ করতেই সবার কান্নার আওয়াজ 😭😭
হারিয়ে ফেললাম বটবৃক্ষ 😭😭২৭/০১/২০২০...
যাদের বাবা আছেন, আমার কাছে মনে হয়, পৃথিবীর সবকিছু তাদের আছে।
এতিম হয়ে অনুরোধ করছি, প্লিজ কোন বাবাকে কষ্ট দিয়েন না কেউ। একটু খেয়াল রাখবেন.. বাবা খুশি থাকলে দেখবেন আপনার সফলতা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আমার মেগা শপ আজ ৪ মাস সফলতার সাথে এগিয়ে চলছে, আল্লাহু আমার পাশাপাশি এটির দ্বারা আমার মাধ্যমে ৫টি পরিবারের খরচ বহন করাচ্ছেন। আমি মনে করি, এটা আমার বাবা মায়ের দোয়া আল্লাহর রহমত আর স্বপ্ন দেখে সাহস করে কাজ করার ফসল।
আল্লাহুর উপর ভরসা করে, সৎ পথে এগুতে থাকুন, সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন👏 ভালো থাকবেন। সকল বাবাদের ভালো রাখবেন 👏
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -১৮২
০২-০৪-২০২
আল মামুন