অনেকে আমাকে বলেছে বিয়ে হয়ে গেছে পড়াশুনা হয়তোবা এখানেই শেষ ।
আমার বদলে যাওয়ার গল্প
আমি ফারজানা ইয়াসমিন ।খুব সাধারন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির খুব সাধারন একটা মেয়ে।
আমার জন্ম চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানা মোহাম্মদপুর গ্রামে। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবকিছুই। বৈবাহিক সূত্রে 13 বৎসর আগে ঢাকায় আসা। আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমি মাত্র ইন্টারমিডিয়েট কমপ্লিট করেছি। বিবিএস এ ভর্তি হয়েছি।
অনেকে আমাকে বলেছে বিয়ে হয়ে গেছে পড়াশুনা হয়তোবা এখানেই শেষ । কিন্তু আমার চিন্তা ছিল আমি যেভাবে হোক পড়াশোনা শেষ করব ।এভাবে আমি বিবিএস ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার শেষ করি। গ্রামে গিয়ে পরীক্ষা দিতাম। ফাইনাল ইয়ারে এসে আমি সন্তান-সম্ভবা ।
এর মাঝে আমার ফরম ফিলাপের সময় আসে। অনেকেই আমাকে নিষেধ করে এই অবস্থায় যেন আমি ফরম ফিলাপ না করি । আমি ফরম ফিলাপ করার পর যদি আমি পরীক্ষা দিতে না পারি। কারণ হচ্ছে আমি ৮ মাসের সন্তান সম্ভবা। আমি বলেছি আমি ফরম ফিলাপ করার পর যদি পরীক্ষা দিতে না পারি তাহলে আমি বলব আমি চেষ্টা করেছি ,বাকিটা আমার ভাগ্যের ব্যাপার। ঠিক আমার ক্ষেত্রে তাই হল আমার প্রথম সন্তান হওয়ার 20 দিনের মাথায় আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। আলহামদুলিল্লাহ আমি পরীক্ষাটা সফলভাবে শেষ করলাম। এবং ভালোভাবে উত্তীর্ণ হলাম।
আবার আমি যখন এমবিএ তে ভর্তি হই, তার আগে আমার হাজব্যান্ডকে আমি বলি মাস্টার্সের ফরম উঠাতে। আমি মাস্টার্সে ভর্তি হব ।আমার হাজব্যান্ড খোঁজ খোঁজ নিতে দেরি করে, ততক্ষনে মাস্টার্সের সময় চলে যায়। আমি তখন ঢাকা শহরের পথঘাট ভালো করে চিনি না। একা একাই বি আই ইউ তে গিয়ে এমবিএর ফরম উঠাই। তখন আমার হাতে এক টাকাও ছিল না। আমার হাজব্যান্ড ঐ সিচুয়েশনে আমার পড়াশোনার খরচ চালাতে রাজি হয়নি। কারণ সংসারের খরচ চালানোর পর, আমার পড়াশোনা খরচ চালানো তার পক্ষে অনেকটা অসম্ভব ছিল।আমি আমার এক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে 10000 টাকা ধার নেই এবং বাকি টাকাটা আমি অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে আমি ভর্তি হই।
অনেকেই আমাকে বলেছে আমার পক্ষে কখনোই পড়াশোনা শেষ করা সম্ভব হবে না ।কারণ প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়াশোনা মনে অনেক টাকার ব্যাপার। আমি বলেছি আমি শুরু যখন করেছি ,শেষ করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। ঠিক তাই হলো, এর মাঝে আমি বাসায় কতগুলো স্টুডেন্ট পড়ানো শুরু করি। এভাবেই আমার পড়াশোনার খরচ চালাই। সুন্দরভাবে পড়াশোনা শেষ করি। পড়াশোনা শেষের দিকে আমি আবার দ্বিতীয় সন্তানসম্ভবা ছিলাম। এর মাঝে আমি বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা চালাই। এবং চাকরির সুযোগও আসে। একটা সময় পরে আমার মনে হয়, আমাকে চাকরি করতে হলে ব্যাংক অথবা বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল অর্গানাইজেশনে চাকরি করার সুযোগ আসবে বা সুযোগ আছে। কিন্তু আমি এমন কোন চাকরি করব না ,যে চাকরিতে ইন্টারেস্টে সম্পৃক্ত কাজ আছে। আমি যদি ব্যাংকে চাকরি করতে চাই ,তাহলে ব্যাংকের কাজে হচ্ছে ইন্টারেস্ট সম্পর্কিত সুতরাং এই কাজ আমার দ্বারা সম্ভব না।
ঠিক যেই কথা সেই কাজ, চাকরির চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলাম। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা অনেকটা দিশেহারা অবস্থা। খুজতেছিলাম এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে আমি দ্বীনের পথে থেকে সংসার, সন্তান সামলিয়ে কিছু করতে পারবো। ঠিক সেই মুহুর্তে আলোর পথের দিশারী হয়ে আমার জীবনে এলো আমার প্রাণপ্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের
" নিজের বলার মত একটা গল্প" প্লাটফর্ম
এ প্লাটফর্ম এ আসার আগে আমি নামাজ পড়ে দোয়া করতাম আল্লাহ যেন আমাকে এমন কিছু একটা সুযোগ করে দেয়, যেটাতে আমি দ্বীনের পথে থেকে সংসার সামলিয়ে কাজ করতে পারবো ।আল্লাহ যেন এমন কোন একটা ব্যবস্থা করে দেয় যেটাতে আমি বাসায় বসে কাজ করে যেতে পারবো। আল্লাহ আমার জন্য সেই ব্যবস্থাই করে দিল।
আমার যেহেতু পড়াশোনা ব্যবসা নিয়ে ,আমার চিন্তা ছিল আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং আমি ব্যবসাটাকে হালাল ভাবে করবো, যদি কখনো সুযোগ আসে।
কাউকে না ঠকিয়ে, ওজনে কম না দিয়ে, ভালো পণ্য দিয়ে, বাজারের চেয়ে কম মূল্য ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের সেবা করে যাবে।
সে লক্ষ্যে গত বছর এর মাঝামাঝি ফ্রোজেন ফুড নিয়ে ব্যবসা শুরু করি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো সাড়াও পাই।কিছুদিন পর ডেঙ্গুতে আমার ননদ তিনদিনের জ্বর এ দুই সন্তান রেখে মারা যায়। আমার ননদের ছোট সন্তানের বয়স ছিল মাত্র 14 মাস।
আমারও ডেঙ্গু হয় । তিন তিনবার ডেঙ্গুর টেস্ট করার মধ্যে দুইবার ই নেগেটিভ আসে। অর্থাৎ রিপোর্টে ভুল আসে কিন্তু আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি। বিছানার প্রায় এক মাসের মত ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি বাঁচবো না। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। ফ্রোজেন ফুড এর কাজ যেহেতু অনেক পরিশ্রমের কাজ , সেহেতু ওই কাজটা কে আমি ধরে রাখতে পারেনি।
সুস্থ হওয়ার পর আমি চিন্তা করলাম আমার ননদের মত আমিও মারা যেতে পারতাম।আমি ভাবলাম হয়তোবা এটা আমার জন্য ঈমানী পরীক্ষা হিসেবে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তারপর মাথায় আসলো যতদিন বেঁচে থাকব কোন না কোন ভাবে মানুষের উপকার করা যাব। শুরু করলাম অর্গানিক পন্য নিয়ে ব্যবসা।
চিন্তা করলাম যতদিন বেঁচে থাকব এই ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের সেবা করে যাব। কখনো কাউকে ওজনে কম দেবো না ,খারাপ পণ্য দিব না ,অতিরিক্ত মুনাফা করব না।এ ব্যবসা থেকে আমার যে মুনাফা হবে, সেই মুনাফা দিয়ে আমার সাধ্যমত আমি গরিব দুঃখী সহ যারা বিপদে আছে তাদেরকে সাহায্য করবো।
সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।যতদিন বেঁচে থাকব কারও উপকার ছাড়া আমার দ্বারা কারো ক্ষতি হবেনা ইনশাল্লাহ।
সর্বোপরি নিজের বলার মত একটা গল্প আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, আমাকে হতাশা থেকে মুক্তি দিয়েছে।কিভাবে ভালো মানুষ হয়ে, বুক ফুলিয়ে বেঁচে থাকতে হয়, সেই শিক্ষা দিয়েছে ।কাউকে না ঠকিয়ে নিজে ঠকে ও ভালো থাকা যায় সেই শিক্ষা পেয়েছি এই প্ল্যাটফর্ম থেকে। যতদিন বেঁচে থাকব এই প্ল্যাটফর্মের সম্মান বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ন হতে দিব না।
ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আমাদেরকে শিখিয়েছেন সফলতা মানে শুধুমাত্র নিজে ভালো থাকা নয় ,অন্যকে ভালো রেখে নিজে ভালো থাকার নাম হচ্ছে সফলতা। অন্যকে দেওয়ার মাঝে মাঝে একটা তৃপ্তি আছে সেই অন্তচক্ষু টা খুলে দিয়েছেন আমাদের মেন্টর" ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।"
Sod no: 160
Date: 10.03.2020
ফারজানা ইয়াসমিন
ব্যাচ: তৃতীয়
রেজিস্ট্রেশন নম্বর: 4915
মোবাইল নাম্বার: 01822894289
জেলা :চাঁদপুর
বর্তমান ঠিকানা: বাসাবো