যারা পার্টনারে বিজনেস করতে আগ্রহী । কারোর সাথে মিল পাচ্ছিলাম না। কেউ কেউ টাকা দিতে চায় কিন্তু মাঠে কাজ করতে চায়না । আমি
লিখব লিখব করে লেখা হচ্ছিল না আজ লিখেই ফেললাম নিজের প্রবাস জীবনের গল্প
”""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
আসসালামু আলাইকুম । আশা করি আমাদের প্রাণের এই গ্রুপের সকল ভাই ও বোনেরা অনেক ভাল আছেন । আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের প্রাণপ্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে । যার কারনে আমার জীবনটা বদলে গেছে। আমি আমার প্রবাস জীবনের গল্প সবাইকে বলতে চাই।
প্রবাস জীবন শুরু করলাম মাথায় চার লাখ টাকার ঋণ নিয়ে। দুবাই আসলাম একটা টেকনিকেল কোম্পানিতে কাজ করার জন্য । ১২০০ দেরহাম বেতনে, আমাদের কাজ হল কুলিং সিস্টেম মেনটেনেন্স। কোম্পানিটা নতুন হলেও মোটামুটি ভালই চলছিল,
কোম্পানির মালিক বেতন বাড়াতে চায় না বাংলাদেশী কর্মী হিসেবে । কারণ আমি দুবাই আসার ১৫ দিন পরে বাংলাদেশী ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। ভিসা বন্ধ থাকার কারণে আমার কোথাও যাওয়ার সুযোগও ছিল না। দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আমার এক কাজিন ( দুবাইয়ে থাকতো ) সে ছুটিতে বাংলাদেশ যাচ্ছিল । আমারও মন ছুটে গেল এবং বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য মোটামুটি বেকুল হয়ে গেলাম। চিন্তা করছিলাম মালিক যেতে দিবে কিনা। পরে বুঝতে পারলাম দুবাইয়ের রুলস হল এক বছর পর এক মাসের ছুটি দিতে হবে। সেই সুযোগটা আমি গ্রহন করলাম এবং আমার কাজিনের সাথে ছুটিতে বাংলাদেশে যাওয়ার প্রস্তাব দিলাম।
কোম্পানির মালিক আমাকে অফিসে ডেকে জিজ্ঞেস করল কেন এত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে যেতে চাচ্ছি সে মনে করে ছিল আমি হয়তো আর আসবো না । আমি বললাম এত অল্প বেতনে আমার সারা জীবন চাকরি করলেও আমার কোনো লাভ হবে না। এর আগে আমি তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য( N O C ) পেপার চেয়েছিলাম সে দিতে রাজি ছিল না । সেটাও বললাম তাকে । কারণ দুবাই ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনেক মূল্যায়ন আছে কাজের ক্ষেত্রে । সে আমাকে ওয়াদা দিল ছুটি থেকে আসার পর আমাকে( N,O,C )পেপার দিবে ।
ছুটি শেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসার পর তার কাছ থেকে এনওসি পেপার নিলাম এবং একটি ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম। এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্সে জন্য স্কুলে ভর্তি হতে হয় এবং ক্লাস করতে হয়, সেই জন্য অনেক টাকা লাগে । আমার কাছে এত টাকা ছিল না বাড়ি থেকে ঋণ করে আরো কিছু টাকা নিয়ে আসলাম , ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য । কারণ আমি জানি যদি আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে পারি তাহলে আমি বেতন বাড়াতে পারব । যখন ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার সময় আসলো তার আগের রাত ঘুমাতে পারিনি চিন্তায়। প্রথম পরীক্ষায় ফেল করলাম কিন্তু মনের ভিতর সাহস হচ্ছিল ইনশাআল্লাহ আমি পারবো । মা এর কাছে দোয়া চাইতাম সব সময় । দ্বিতীয় পরীক্ষায় আমি লাইসেন্স পেয়ে গেলাম। অনেক আনন্দ লাগছিল সেটা বলে বুঝাতে পারব না । ১৫ দিন পরে মালিক আমাকে গাড়ি চালাতে দিল এবং বলল এখন তো তোর বেতন বাড়াতে হবে। আমি যে টিমে কাজ করতাম সে টিমে মাত্র দুজন ছিল । অন্য টিমে তিনজন কারণ আমি ড্রাইভার কাম টেকনিশিয়ান ছিলাম।
এক মাস পর আমার বেতন ১২০০ থেকে ১৮০০ তারপর ২২০০ দেরহাম হল আমি ঋণ পরিশোধ করা শুরু করলাম আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করে ফেললাম । আলহামদুলিল্লাহ। তিন বছর পর আমার কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় মালিকের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। কোম্পানির অন্যন্য কর্মীরা সবাই নিজ নিজ দেশে চলে যায় । বাংলাদেশী কর্মী হিসেবে শুধু আমিই ছিলাম মালিক আমার ভিসা ক্যানসেল না করে পালিয়ে যায় ।দীর্ঘ চার মাস কোন কাজকর্ম ছিলনা। কিছুই ভাল লাগত না , সেই সময়টা আমার কাছে এমন মনে হতো যে মৃত্যু এর থেকে ভালো ছিল ।
ওই সময়টাতে প্রায়দিনই বাড়ির সবার সাথে কথা হত, পরামর্শ করতাম আমার পরিবারের লোকজন আমাকে সৌদি আরব যাওয়ার পরামর্শ দেয় । কারণ তখনো দুবাইয়ের ভিসা বন্ধ ছিল । আমার এক আত্মীয় সৌদি আরবে থাকে। তার সাথে যোগাযোগ করতে বলল , আমি যোগাযোগ করলাম এবং ভিসার ব্যাপারে কথা বললাম তখন 6 মাস হল সৌদি আরবের ভিসা খোলা হয়েছে । সে আমাকে বলল তুমি বাংলাদেশে আসো , আমি তোমার জন্য ভিসা পাঠাবো। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেমন খরচ হতে পারে সে আমাকে বলল এখন সৌদি আরবের ভিসার অনেক দাম এখন আসলে 6 লাখ টাকার উপরে খরচ হবে। তখন আমি চিন্তা করলাম, দুবাইয়ের পরিবেশ আমার জানা আছে। এখানের অবস্থা সম্পর্কে আমি অবগত আছি। সৌদি আরবে একটা নতুন অবস্থান তৈরি করতে অনেক সময় এর ব্যাপার । যে টাকা খরচ করে আমি সৌদি আরবে যাব । সেই পরিমাণ টাকা খরচ করলে আমি এখানেই একটা কিছু করতে পারি ।তাই আমি বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিলাম ।একটা মাধ্যমে জানতে পারলাম দুবাইয়ে ইনভেস্ট ভিসা খোলা আছে। তখন আমি খোজ খবর নিলাম ইনভেস্ট ভিসা এবং লাইসেন্স করতে কেমন টাকা খরচ হতে পারে। জানতে পারলাম 12 লাখ টাকার উপরে খরচ হয় । এত টাকা তো আমার কাছে নেই কি করা যায়। চিন্তা করতে করতে আরো কিছুদিন চলে গেল
আমি বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করলাম । যারা পার্টনারে বিজনেস করতে আগ্রহী । কারোর সাথে মিল পাচ্ছিলাম না। কেউ কেউ টাকা দিতে চায় কিন্তু মাঠে কাজ করতে চায়না । আমি এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে আমার সাথে সরাসরি কাজ করবে এবং ফিফটি পার্সেন্ট ইনভেস্ট করবে । খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম একজনকে ।সে আমার আগের কোম্পানিতে একসাথে আমরা কাজ করতাম। সে ইন্ডিয়াতে অবস্থান করছিল কারণ সে ইন্ডিয়ান ।তার সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করলাম এবং আমার বিজনেস প্রপোজাল তার কাছে তুলে ধরলাম । সে আমার কথায় রাজি হয়ে গেল। আমাকে বিশ্বাস করে সে ওখান থেকে টাকা পাঠানো এবং আমাদের কম্পানির লাইসেন্সের জন্য প্রসেসিং শুরু করলাম।
আমাদের কোম্পানি শুরু হলো ।প্রাথমিক অবস্থায় কাজ অনেক কম ছিল কারণ প্রথম বছর যা ইনকাম করেছি সম্পূর্ণ খরচ হয়ে গেছে। আমাদের কোম্পানি এখন তৃতীয় বছর চলছে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি ভালোভাবে চলছে আমাদের কোম্পানি । আমাদের কাজ হল এসি এবং কুলিং সিস্টেম মেনটেনেন্স । সবার কাছে দোয়া চাই কোম্পানির অবস্থান যেন আরো বড় করতে পারি । এতক্ষণ ধৈর্য ধারণ করে আমার প্রবাস জীবনের গল্প পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৬৭
২-০৭-২০২০
* সাব্বির আহমদ
* অষ্টম ব্যাচ
* রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৫৯৭৪
* জেলা জামালপুর
* দুবাই প্রবাসী
* NRB, UNITED ARAB EMIRATES