মহাসম্মেলনের মাঝে বড় ডিসপ্লেতে অনেকের নাম ভাসতে শুরু করলো এর কিছুক্ষণ পরপরই আমাদের কান্ট্রি এম্বাসাডর
আস্সালামু আলাইকুম
খুব একটা ভালো নেই, তারপরও বেঁচে আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজ কেনো জানি মনে পড়ছে, কিছু মনের মাধুরী মেশানো কথা এবং মনে চাচ্ছে পরিবারের কাছে মাফ চাইতে এবং বলতে ইচ্ছা করছে পুরো অনুভূতিটা, প্ল্যাটফর্মের সবাইকে এবং আমার পরিবারকেও।
💞💞💞
স্বপ্নের মহাসম্মেলন ও NRB মিটিং এর কয়েকঘন্টা। 💞💞💞
দেশে আসবো আসবো ছুটিতে চিন্তায় ছিলাম, হঠাৎ নিজের বলার মত একটা গল্প প্ল্যাটফর্মের ডিক্লিয়ার সম্মেলনের। নিজের ছুটিটা ও সম্মেলন কেন্দ্র করে ফেললাম। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ছিলো যেকোনোভাবে সম্মেলন টা ধরতে হবে। একটু আগে গেলে ফ্যামিলিকে সময় দিয়ে সব ম্যাচিং করে নেয়া যাবে এই টার্গেটে নিজের মনটাকে স্থির করে ছুটি লাগিয়ে নিলাম। খুব আকর্ষণ কাজ করছিলো আমি আনন্দিত উচ্ছ্বাসিত দেশে যাব এবং সম্মেলনে যোগদান করবো। আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে নভেম্বর ৩০ তারিখ দেশে আসলাম 2 মাসের ছুটিতে। আমার চিন্তায় তখন শুধু ঢাকায় উদ্যোক্তা সম্মেলনে যাবো। দেশে গিয়ে এক সপ্তাহ পরে Smartwaybd.com অফিস থেকে দুইটা টিকেট নিলাম সাথে এক কাজিন যাবে বলছে তার জন্য সহ।
প্রবাসীদের সময় হলো হিসাব করা ছুটি। এ টিকেটগুলো দেখে আমার পরিবার মনে কস্ট নিয়ে বলতে লাগলো, আসলে ছুটিতে দেশে কি শুরু করলে গ্রুপ নিয়ে? টিকেট নিয়ে আবার ঢাকা যাবে? আমি আমার পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে ঢাকা যাওয়া কথা ছিলো, যখন টিকেট দেখছে তখন আর যাই নাই, বলছে তুমি যাবে সম্মেলনে। তাই ঢাকা যায় নাই পরিবার রাগ করে।আমাকে পরিবার শর্ত দিয়েছে, সম্মেলনে না গেলে ঢাকা যাবে। আমি শর্ত রাজি ছিলাম না, কারণ আমার চোখে মুখে শুধু স্বপ্ন ছিলো এই সম্মেলন। তাই ঢাকা ঘুরতে যাওয়া হয় নাই।
এর মাঝে স্যার ডিসেম্বরে তিনদিনের জন্য ফেনী আসছে গ্রামের বাড়িতে। স্যার সাথে দেখা করার জন্য মনটা পাগল হয়ে ছিলো। Sagar Banik ভাই থেকে স্যার বাড়ি ঠিকানা নিলাম, পরে মিটআপে দেখা হবে এ আশায় আর যাওয়া হয় নাই। আবার ডিসেম্বরে ফেনী জেলা মিটআপে স্যার থাকবে সেটা জানি। মিটআপ সকাল ৯টায় ভোরে ভোরে শীতের সকাল ৭টায় দিকে চলে গেলাম ফেনীতে, তিন এলাকায় ভাইদের নিয়ে স্যারকে দেখবো বলে। মিটআপ শুরু হলো Md Iqbal Hossain ভাইয়ের সঞ্চালনায়। এর মাঝে ইকবাল ভাই আর সাগর ভাই বললো স্যার চলে আসছে নিচে। কিন্তু আমিও স্যারকে দেখার জন্য দৌড় দিবো মনে করেছি নিজে। দেরি সহিতেছেনা। সাগর ভাই বললো কেউ যাবেন না চেয়ারে বসুন সবাই। প্লিজ স্যার আসলে সবার সাথে কথা বলবে, ছবি তুলবে, কেউ বিশৃঙ্খলা করবেন না।
তারপর স্যার আসলো মিটআপে রুমে। এ যেনো মহেন্দ্রক্ষন আমার স্বপ্ন পূরন হলো, যাকে এতোদিন প্রবাসে বসে তার ভিডিও দেখতাম, কথা শুনতাম এ মানুষ আমার সামনে বিশ্বাস হচ্ছে না।
স্যার এসে প্রথমে সবার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। প্রথম প্রিয় শিক্ষক সাথে দেখা এবং হ্যান্ডশেক করে সাগর ভাই পরিচয় করিয়ে দিলো কাতার থেকে এসেছে স্যার উওর বললো ও গ্রেট। এ প্রথম স্যার মুখে কথা সরাসরি শুনা। স্যারকে আমরা বরন করে নিলাম smartwaybd.com পক্ষে থেকে।
তারপর স্যার মিটআপ গ্রুপে সকল কার্যক্রম তুলে ধরলো। কিভাবে গ্রুপকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার সুপরামর্শ দিয়েছেন। মহাসম্মেলন কার্যক্রম অগ্রগতিও তুলে ধরেছে মিটআপে স্যার।
স্যারের পরিবার নিচে গাড়িতে ছিলো, তাই বেশি সময় দিতে পারে নাই।চলে যাওয়ার সময় স্যারকে বললাম স্যার একটা ছবি তুলবো স্যার বললো শিওর। স্যার অনেক তাড়া এর মাঝে সেলফি নেওয়ার সময় মোবাইল একবার অফ হয়ে গেলো স্যার বিরক্ত হয় নাই, স্যারকে বললাম সরি। আর একবার স্যার সে সুযোগ আমাকে দিয়েছে স্যার। কি অমায়িক এ মানুষটাকে কাছে থেকে না দেখলে আসলে বুঝা যাবে না। যাইহোক ঐদিনের মতো মিটআপটি সম্পন্ন করলাম মনে হল স্বপ্নের প্রথম সিঁড়ি অতিক্রম করলাম।
মহাসম্মেলন আগের তিনদিন শুরু হলো, সারা দেশে অনেক বৃষ্টি এবং সাথে শীততো আছে। এ যেনো পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সম্মেলনে যাওয়া হবে না। কিন্তু আমি যে কাতার টিমকে কথা দিয়ে আসলাম, সম্মেলনে যাবো তাহলে সে কমিটমেন্ট ও আমার নির্ঘুম রাত জাগা স্বপ্নের কি হবে? এর মাঝে ঢাকা যাওয়ার জন্য বাস বুকিং করবে টাকা জমা দিতে বললো জেলা এম্বাসেডর কামাল মজুমদার পারভেজ। তাকে আমি আর আমার এক কাজিন দুইজনে টিকেট এর জন্য বিকাশ টাকা জমা দিলাম। এর মাঝে বৃষ্টি দেখে আমার কাজিন বললো আর যাবে না সে ঢাকা। আমি হয়ে গেলাম একা কেমনে যাবো ঢাকা একা একা ভালো লাগতেছে না। এর মাঝে পরিবার বার বার না করতেছে, আর এরই মাঝে, এ বৃষ্টিও তোমাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না, বৃষ্টিতেও যাবে ঢাকা তুমি এসব বলে পরিবার। সবার কথা না শুনে সিদ্ধান্ত নিলাম বৃষ্টি হোক আমি যাবোই একা একা। তাই ৪ জানুয়ারী তারিখ রাত ৪টার দিকে এলাকার এক সিএনজি ভাইকে বলে রাখলাম বাড়ি থেকে ফেনী দিয়ে আসা জন্য। সারা রাত চলতেছে বৃষ্টি, বন্ধের কোন লক্ষন নাই, চিন্তায় পড়ে গেলাম। ঘুম আসেনাই চিন্তায় রাত তিনটা ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা করে সিএনজি ভাইকে কল করলাম, এতো রাতেও বৃষ্টি হচ্ছে- ধুর! কল ধরে কিনা আর আসে কিনা সে চিন্তা ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ সে ভাই কল ধরলো, যথাসময়ে এসে গিয়েছে। ব্যাগ নিয়ে ছাতা একটা নিয়ে একা একা রওনা দিলাম সিএনজি বাড়ি থেকে ফেনী উদ্দেশ্য। একা একা বৃষ্টি আর রাত ভয়ও লাগছিলো ছিনতাইকারি ধরলে! আল্লাহর নামে রওনা দিলাম, ফেনী মেসেন্জার মেসেজ দিলাম আসতেছি ফেনী। ফেনী মেসেন্জার মেসেজ দেখে Mohammed Forkan ভাই কল করলো, মোতালেব ভাই আমাকে একটু উঠানোর জন্য। বাসা থেকে আমি রাজি হয়ে গেলাম। বাস স্ট্যান্ড একদিকে, আর ভাইয়ের বাসা অন্য দিকে, তাই সিএনজি ভাইকে অনুরোধ করলাম, সেখানে যাওয়ার জন্য ভাইটি অনুরোধ রাখলো। ফোরকান ভাইয়কে বাসা থেকে উঠালাম এবং তার সাথে কামাল মজুমদার পারভেজ ভাইকে সাথে নিয়ে বাস স্ট্যান্ড পৌঁছে গেলাম। ঐসময় এতো রাতে আমার একটু সহযোগিতায় ফোরকান ভাই সাথে তার পরিবার আর কামাল মজুমদার পারভেজ ভাইয়ের কাজে লাগছে। কারন ঐসময় ফেনী টাউনে কোন রিকশা ছিলো না, বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার। এদিকে আবার বাস ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছিলো! তারপর বাস স্ট্যান্ড গিয়ে রওনা দিলাম সম্মেলনে উদ্দেশ্য আল্লাহ নামে। সকাল ৯ টার দিকে সম্মেলন পৌঁছলাম। ঢাকাতে আল্লাহ রহমতে বৃষ্টিও বন্ধ হয়ে গেলো। সকাল থেকে সম্মেলনে শুরু হয়ে গিয়েছে।।সম্মেলনে ইনডোর স্টেডিয়ামে হল রুম গিয়ে দেখি কানায় কানায় পূর্ণ। এসব বৃষ্টি আর শীত ভালো মানুষদের দমিয়ে রাখতে পারে নাই। মনে মনে মনে এত আনন্দিত হয়েছিলাম আপনাদের লিখে বুঝাতে পারব না, শুধু এতোটুকুই বললাম আনন্দে আত্মহারা ছিলাম।এক এক করে মেয়র, মন্ত্রী সবার কথা শুনালাম এবং স্যার শপথ পাঠ করালো আমাদের সবাইকে।শপথপাঠ গগনবিদারী আওয়াজ পুরো ইনডোর স্টেডিয়াম। পুরো অনুষ্ঠানে স্যার নিজ হাতে হ্যান্ডেলিং, একটু রেস্টও ছিলো না স্যার।
মহাসম্মেলনের মাঝে বড় ডিসপ্লেতে অনেকের নাম ভাসতে শুরু করলো এর কিছুক্ষণ পরপরই আমাদের কান্ট্রি এম্বাসাডর MD Showkat Ali এর নামটা দেখে গর্বে বুকটা ভরে যায়। কারণ কাতার টিমের পরিচিত কারো নাম এইটা একটা গর্বের ব্যাপার। সম্মেলনে ভেতরে এনআরবি কাতার সদস্য মোঃ মহিউদ্দিন মুন্সী ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। মহাসম্মেলন স্যার কাতার সেরা কান্ট্রি এ্যাওয়ার্ড দেয় এটা এনআরবি কাতার সকলের অর্জন। আমি পুরো সম্মেলনে সময়টা থাকতে পারি নাই। এ পুরো সময়টা না থাকতে পারা আমাকে এখনো পীড়া দেয়। এনআরবি কাতার সদস্য মো মহিউদ্দিন মুন্সী এবং Rakib Shikdar ভাই এওয়ার্ড রিসিভ করেছে। সম্মেলনে স্যার সাথে কথা বলা এবং স্যার হাত থেকে এওয়ার্ড না নিতে পারার আক্ষেপ ছিলো। ইস অল্পের জন্য মিস করে ফেললাম! এই আফসোস টা যেন সামান্য কুরে কুরে খাচ্ছিল কিন্তু সাথে সাথে রিঅ্যাক্ট করলাম না একটু ধৈর্য ধরে স্যারের কিছু সেশন মনে করলাম নিজেকে কন্ট্রোল করে ফেললাম।
এর মাঝে আমার কাতার আসার তারিখ গনিয়ে আসলো। ২৮ জানুয়ারী ২০২০ তারিখ ফ্লাইট আমার। এর মাঝে একটা মেসেজ দেখলাম Mi Hossain ভাইয়া একটা মেসেন্জার গ্রুপ ওপেন করলো, আমাকেও এড করলো। শুরু হল সম্মেলনের কিছু অপূর্ণতা পূর্ণ করনের নতুন স্বপ্ন, ঢাকা সেন্ট্রাল জোন আয়োজনে প্রবাসী নিয়ে একটা মিটিং হবে ২৭ জানুয়ারি, সেখানে স্যারও থাকবে। এটা শুনে আমি খুশি হলাম। একদিন পরে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার মাঝে স্যার সাথে দেখা হবে এটাই শুধু প্রাপ্তি আর খুশি ছিলো। এ মিটিং এর জন্য একদিন আগে ২৬ জানুয়ারি বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে, পরিবারসহ ঢাকায় আসলাম। ঢাকায় বনশ্রী মামার বাসায় পৌঁছলাম বিকালে। কথা ছিলো ঢাকা এসে পরিবারকে নিয়ে একদিন ঘুরবো হাতে সময় একদিন।ঢাকা ঘুরবো না স্যারে সাথে দেখা! কোনটা বেছে নিবো? পরিবারকে নিয়ে ঘুরা বিসর্জন দিয়ে, চলে গেলাম স্যার সাথে দেখা করবো বলে, সকাল সকাল Cafe Levender বাড্ডায়। সেখানে গিয়ে ঢাকায় সেন্ট্রাল সব প্রিয় ভাইয়া এবং আপুদের সাথে পরিচয় হয়।
সে অনুষ্ঠানে সকাল ৯ টায় শুরু হলো, স্যার একটু পরে আসছে।এ প্রথম পাশাপশি স্যার সাথে বসে কথা বলা।স্যার প্রবাসী নিয়ে অনেক সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন।
স্যার সাথে মিটিং শেষ করতে করতে দুপুর ১ টা ওপরে হয়ে যায় লাঞ্চ করে বাসায় গিয়ে তিনটা বেজে যায়।
আগামীকাল ফ্লাইট পরিবারকে সময় দিই নাই, অনেক মনে কষ্ট পরিবারের, আমার সাথে কথা বলা বন্ধ সেইদিন বিকাল থেকে কিছু সময় জন্য। আর বলেন মনে কষ্ট নিবেন আইবা কেনো? প্রবাসে চলে আসছি, সামান্য কিছুক্ষণের জন্য সময়টা দিতে পারলাম না, এই আফসোস টা আমার থাকার কথা কিন্তু বিশ্বাস করেন, সেই আফসোস নেই, ঐদিন স্যারের সাথে কিছুক্ষণ আলাপনে আমার সব দুঃখ কষ্ট একাকার হয়ে গেছে।
লক্ষ্যটাকে ঠিক রেখে স্বপ্নের পথে লেগেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। ওই সময়ের স্বপ্নটা পূরণ হয়ে গেছে, হ্যাঁ স্বপ্ন পূরণে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়, সেটা আমি জেনে গেছি।
এইটা পরিবারের সাথে স্বার্থপরতা অবশ্যই হয়েছে, তাই পরিবারের কাছে আমি সবার সামনে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার আবেগ এবং স্বপ্নের মুহূর্তের সফলতা অর্জনের জন্য ওই দিনের এই ত্যাগ। ঐদিন আমার স্বপ্নটা ছিলো স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করা একান্তে, সকল প্রবাসী মিলে।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৬৮
০৩-০৭-২০২০
ধন্যবাদ,
👱আবদুল মোতালেব (রুমন)
🇶🇦 কান্ট্রি এম্বাসেডর -কাতার
👨🎓 ষষ্ঠ ব্যাচ
🖋️রেজি.নং: ৬৪৭
💉 ব্লাড গ্রুপ: A+
🇧🇩 ফেনী জেলা
📱+97477741268
📧 motalebnf@gmail.com