আপনার মা-বাবা বড় ভাই কখনোই আপনার অমঙ্গল চান না।
আসসালামুয়ালাইকুম🤚
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
প্রথমে শুকরিয়া জানাচ্ছি সেই মহান রবের যিনি আমাকে এই মহামারীর সময় ও সুস্থ রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ
কৃতজ্ঞতা সাথে স্মরণ করছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ ❤️ স্যার কে যিনি আমাদের এত সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে এখানে আমরা প্রতিনিয়ত অনেক কিছু শিখতে পারছি।
আজকে লিখতে বসেছি আমার জীবনের গল্প।😍
আশা করছি সবাই শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকবেন
#ভূমিকা:
আমি একজন সাধারণ ফ্যামিলির সন্তান। আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন । পাশাপাশি মাতব্বরি করতেন এলাকার যেকোনো সমস্যা হলে সবাই তার কাছে আসতো। আমার দাদার অনেক সম্পত্তি ছিল কিন্তু আমার বাবা সেই সম্পত্তি ধরে রাখতে পারে নাই। আমার বাবা আমার জন্মের পূর্বেই তিনি আরেকটি বিবাহ করেন।বর্তমান আর আগের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই বর্তমানে দেখছি দুইটা বিয়া করলে প্রথম স্ত্রীকে বা তার ছেলে মেয়েকে সময় দেয় না ছোট বউ বা ছেলে মেয়েকে বেশি সময় দেয়। আমাদের সময় ও তা হয়েছিল।
তখন থেকেই বাবা কেমন জানি হয়ে গেছে। তিনি ওইখানেই বেশি থাকতেন। আমাদের বাড়িতে আসতেন কিন্তু আগের মত না। কিভাবে দিন যাচ্ছে বেশি খোঁজ খবর নিতেন না😭 আমার বড় ভাইরা তখন বিয়ে করে নাই।আমার আম্মা তাদের সবাইকে নিয়ে খুব কষ্ট করে দিন কাটাত।
#উপার্জন:
তখন আমাদের বড় ভাই বাজারে কাঁচামাল ও কাপড়ের ব্যবসা করতো। গ্রামের বাজার থাকায় বেশি সেল হতো না যা প্রফিট হতো তাই দিয়েই মূলত আমাদের সংসার চলত। এভাবে কয়েকটি বছর অতিবাহিত হল। বড় দুই ভাই কিছুদিনের ব্যবধানে দুজন বিয়ে করল। তাদের ঘরে দুইটা ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম গ্রহন করল। তখন আমার বয়স 10 বা 11 বছর হবে। তখন আমার বাবা সিদ্ধান্ত নেন আমাদের জায়গা সম্পত্তি সব ভাগ করে দিবে। কারণ তার চলার ধরন ছিল আলাদা হয়তো তিনি সেটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। শেষ সম্বল হিসেবে আমাদের ১০ কাটা একটা ক্ষেত ছিল ওইটা ১৮ লক্ষ টাকা বিক্রি করে কারণ ওই খ্যাত ভাগ করে দিলে চাষ করে খাওয়ার মত কোন অবস্থান ছিল না কারণ আমরা ছিলাম ছয় ভাই। আপন চার ভাই সৎ দুই ভাই। তাই তিনি জায়গাটা বিক্রি করে ভাই বোন সবার মধ্যে ভাগ করে দিলেন। এক একজনের বাগে আড়াই লক্ষ টাকা করে পরল। সবাই যার যার টাকা বুঝে নিলো আর সৎ দুই ভাইয়ের টাকা বাবা নিজের কাছে রাখল। আর আমরা ছোট দুই ভাইয়ের টাকা কার কাছে রাখবে সে অনেক কাহিনী। কারণ আমাদের এখন কোন ইনকাম নেই শুধু খরচের পালা। শেষমেষ সেজু ভাই আমাদের দায়িত্ব নিলেন। তিনজনের টাকা একসাথে করে বাজারে দুইটা রুম করলেন। আরেকটি কথা বলা হয়নি আমাদের বাজারে জায়গা ছিল সেখানেই মূলত রুম করা।
#লেখাপড়া
এভাবেই দিন কাটতে লাগলো ভাইয়ের কাছে বড় হতে লাগলাম। সেজু ভাই শুধু একটা দেখাতে চেয়েছিলেন অবহেলিত থেকে আমাদের কিভাবে ভালো একটা জায়গায় পৌঁছানো যায়।তিনি আমাদের পড়াশুনা বিষয়ে অনেক মনোযোগী হন। মেজ ভাই এবং আমি পড়ালেখার অনেক মেধাবী ছিলাম।ভাই ওকে অনেক কষ্ট করে ময়মনসিংহ থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করালো। আর আমার ফাইভ এ রোল নাম্বার এক ছিল। ফাইভ এ ভালো রেজাল্ট করি।আমার মার অনেক আশা ছিল আমি যেন মাদ্রাসাতে পড়ি ।যখন সিক্স এ ভর্তি হব তখন মা বলছিল মাদ্রাসাতে আর তারা বলছিল স্কুলে শেষমেষ আলিয়া মাদ্রাসাতে ভর্তি হলাম। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার সময় আমি তিন বিষয়ে ফেল মারি। তিনটা বিষয় ছিল আরবি। আমি আরবি জানতাম না লিখব তো অনেক দূরের কথা ,অন্য সাবজেক্ট গুলো ভালো নাম্বার পেয়ে পাশ করেছিলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল তিন সাবজেক্টে ফেইল। পরে আমি আরবি শিখার জন্য হাফিজি মাদ্রাসার ভর্তি হলাম। আমি শুধু সকলের যেতাম। আস্তে আস্তে আমি হাফিজি মাদ্রাসা প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাই মাকে বললাম আমি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়বো।মা তো আগে থেকে চাইতেন আমি মাদ্রাসায় পড়ি তাই তিনি রাজি হয়ে গেলেন।কিন্তু ওইখানেও বেশিদিন থাকতে পারি নাই কারণ ওই খেলাধুলা আর বন্ধুদের আড্ডায় মেতে থাকতাম সারাদিন। কিছু দিন এভাবেই অতিবাহিত হলো পরে বাবা আর ভাই মিলে আমাকে আবার স্কুলে ভর্তি করল। এভাবে স্কুল থেকে মাদ্রাসা ,মাদ্রাসা থেকে স্কুল তিন-চারবার পাল্টানো হলো।স্কুল জীবন ভালোই চলছিলো কিন্তু এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই আমাকে আবার ভূতে ধরলো। আবার সেই পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগী ঠিকমতো কোচিং করিনা স্কুলে যায় না। ভাই অনেক চেষ্টা করত বকাঝকা করত পড়াশোনার জন্য কিন্তু শেষমেশ কোন লাভ হলো না। আমার পড়ালেখা স্কুল পর্যন্তই সমাপ্ত কলেজে আর যাওয়া হলো না।😭😭 কিন্তু এখন আফসোস করি কতই না ভুল করেছি পড়ালেখা না করে।😭😭
পড়ালেখা ভালো না লাগার কিছু কারণও ছিল যেমন ব্যবসায় বসা, আর মাঝে মধ্যে বলতো এ পড়াশোনা করে কি লাভ তোকে বিদেশ পাঠিয়ে দেবো। যখন বিদেশের কথা শুনি আমার পড়ালেখার বারোটা বেজে গেছে আমি আর পড়ালেখা করি না শুধু মেতে আছি কখন বিদেশি আসবো।😍
#ব্যবসা
আমার কাছে ব্যবসা করতে অনেক ভালো লাগতো কারণ যেহেতু ভাইয়ের ব্যবসা ছিল আমি মাঝেমধ্যে ওইখানে বাসতাম ওই থেকেই ব্যবসার প্রতি ভালোবাসা। তখন আমাদের হোটেলের দোকান ছিল আর মাছের ফিশারি ছিল। আমি দোকানে বসতাম আর ভাই মাছের ফিশারি। এভাবে কিছুদিন কেটে গেল।
#প্রবাসে আসার গল্প
ভাই ভাবলো এই গ্রামের বাজারে আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার কারণ ভাই ছোট থেকেই এই বাজারে ব্যবসা করে আসছে। শেষে ঠিক করল আমাকে প্রবাস পাঠিয়ে দিবে। আমিও রাজী হয়ে গেলাম কারণ নিজের পায়ে দাড়াবো নিজে কোন কিছু করব এটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগতো। 2013 সালে পাসপোর্ট করি মেডিকেল করতে গিয়ে আনফিট
ওরা বলে আমার বয়স হয় নাই। কারণ আমি ফর্সা ছিলাম এবং মুখে কোন দাড়ি ছিল না বয়স অনেক অল্প লাগতো হয়তো এজন্যই তারা আনফিট করে দিয়েছে। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি চেষ্টা করেছি চট্টগ্রাম-ঢাকা তিনবার ট্রাই করেছি কিন্তু কোন লাভ হয় নাই শেষমেষ বিদেশের চিন্তা বাদ দিয়ে আগের ব্যবসায়ায় মননিবেদিত করলাম। ব্যবসা করতে আমার ভালো লাগে আর পড়াশোনা কথা বললেই মাথায় বাড়ি।
#কাজের অভিজ্ঞতা
এখন কিন্তু আমি হোটেল দেখাশোনা করি না আমার বাবা আমাকে কাকার দোকানে টেইলার্স শিখার জন্য দিয়েছে বিদেশ যেহেতু যেতে পারিনাই আর আমার ব্যবসার প্রতি অনেক টান সেহেতু বাবা বলছিল টেইলারি শিখ পড়ে বড় করে দোকান দিয়ে দেবো। এভাবেই কয়েকটি বছর কেটে গেল। তখন আমি লেডিসের সব কাজ করতে পারি, কাটিং ও করতাম। এবং শাট ও পাঞ্জাবী সেলাই করতাম।
লেখাটা মনে হয় অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে বাকি গল্পটা অন্য একদিন।
#বর্তমান আমি ওমান প্রবাসী👷
পরে ওমানে কিভাবে আসলাম সেটার গল্প এবং নিজের বলার মত গল্প গ্রুপে কিভাবে আসলাম, কি শিক্ষা নিলাম, আর এখন কি করছি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি এসব বিষয়ে অন্য একদিন বলবো ।ইনশাআল্লাহ
#গল্প থেকে শিক্ষা:
আপনার মা-বাবা বড় ভাই কখনোই আপনার অমঙ্গল চান না। তারা চায় আপনি যেন মানুষের মত মানুষ হন।আমার মত অনেকেরই হয়তো পড়ালেখা ভালো লাগে না তাদেরকে বলছি পড়ালেখার বিকল্প আর কোন কিছু নেই। ভালো করে বাঁচতে হলে, নিজেকে উচ্চ একটা জায়গায় নিজেকে দেখতে চাইলে জানতেই হবে পড়তেই হবে।
তারা হয়তো একটু বকাঝকা করে কিন্তু সেটা আপনার ভালোর জন্যই আমরা অনেকেই সেটা বুঝতে পারিনা। আমি নিজে ওই সময় বুঝতাম না কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি পড়ালেখা না করে জীবন কত বড় ভুল করেছি।😭😭
#ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে❤️ ধন্যবাদ আমার মত হাজারো আরিফুল ইসলামকে একটা স্কুল তৈরি করে দেওয়ার জন্য যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত অনেক কিছু শিখতে পারছি ।আমি গর্বিত এত বিশাল একটা প্লাটফর্মে একজন নগন্য ছাত্র হতে পেরে। আমি সব সময় একটা কথা বলি ২০ বছরের আমি যা শিখতে পারি নাই
সেটা আমি প্রবাসে এসে পাঁচ বছরে শিখেছি। আর যে বিষয়গুলো আমি পুরো লাইফে জানতামই না সে বিষয়গুলো এই নিজের বলার মত গল্প গ্রুপে এসে শিখতে পেরেছি।প্রিয় স্যার কে আবারো ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়ার জন্য প্রিয় স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
বিঃদ্রঃ অনেক কথা বলে ফেললাম ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ 🙏
#ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার ও তার পরিবার সহ সকল ভাই-বোনদের সুস্থতা কামনা করছি।
আল্লাহ হাফেজ
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৭০
০৫-০৭-২০২০
আমি --
আরিফুল ইসলাম
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
ব্যাচ: নবম
জেলা: নেত্রকোণা
বর্তমান: ওমান প্রবাসী
ব্লাড: ০+