এক বছরের মধ্যে অফিসার পদে প্রমোশন হয়।তার পর অন্য একটি কোম্পানি তে ম্যানেজার পদে
বিসমিল্লাহির রাহ মানির রাহিম। সকল প্রসংশা মহান আল্লাহ তায়ালার যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসাবে।
ইসমাইল হোসেন পলাশ
রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ঃ১১৫৭২
ব্যাচঃ নবম
জেলা ঃকুমিল্লা
অবস্থান ঃবাহারাইন
বিষয় ঃ নিজের বলার মত একটা গল্প।
অনুপ্রেরণায় ঃ ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার
২০০০ সালে আমি কুমিল্লা জেলার আলোচিত বিদ্যাপীঠ গুনবতী বহুমুখী উচ্ছ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এক বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হই।অনেক ইচ্ছা ছিল মাধ্যমিক শেষ করে শহরে পড়তে যাব। বন্ধুদের পরামর্শ আর পরিবারের কথা চিন্তা করে যাওয়া হলো না, নিজেদের কলেজ গুনবতী ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হলাম ব্যাবসা শিক্ষা শাখায়। পাশাপাশি গ্রামের বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলাম বন্ধুজন পরিষদ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। পড়াশুনা,সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সামাজিক কাজ,সব মিলিয়ে বেশ ব্যাস্ততায় কাটিয়ে দিলাম সু-সৃংখল দুটি বছর। আমি বরাবরি ইংরেজিতে কিছুটা কাঁচা ছিলাম। ব্যাবসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিটি বিষয়ে ভাল করতাম বিশেষ করে হিসাব বিজ্ঞান বেশ প্রিয় ছিল। পড়াশুনা যতটুকু করতাম বেশিরভাগ সময় ই হিসাব বিজ্ঞানের অংক করতাম। নবম -দশম এবং আমার নিজ ক্লাসের কিছু ছাত্র-ছাত্রী দের টিউশনি করাতাম। ২০০২ সালে এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করলাম। আমি জানতাম আমি ইংরেজিতে দুর্বল তাই বন্ধুদের উপর কিছুটা নির্ভর ছিলাম অন্যান্য বিষয়ে আমিও অন্যদের হেল্প করতাম। কিন্তু আমার ইংরেজী পরীক্ষা ভাল হয়নি যার কারনে আমি অকৃতকার্য হই।তাই রেজাল্ট এর আগেই বাড়ী থেকে পালিয়ে যাই। ঢাকায় গিয়ে কোহিনুর ক্যামিকেল কোম্পানি তিব্বত কসমটিক্স কোম্পানি তে একটি সল্প বেতনের চাকুরী নেই। কাজ করতে গিয়ে বুজতে পারি লেখা পড়া অনেক প্রয়জন। শিক্ষ ছাড়া জীবনে কিছু করা সম্ভব নয়। তাই আমার এক বসের অনুপ্রেরনা নিয়ে চাকরি ছেড়ে আবার গ্রামে চলে যাই এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে উচ্ছ মাধ্যমিক এবং স্নাতক সম্পন্ন করি।
২০০৫ সালে চট্টগ্রামে প্রথম একটি এম সি এস কোম্পানি তে চাকুরী নেই জুনিয়র অফিসার (মাঠ কর্মী) হিসাবে।
এক বছরের মধ্যে অফিসার পদে প্রমোশন হয়।তার পর অন্য একটি কোম্পানি তে ম্যানেজার পদে যোগদান করি। ২০০৬ এ আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়ার জন্য একটা তহবিল গঠনের পরিকল্পনা গ্রহন করি। দশ জন প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে ৫০০০ হবে , মাসে দুইবার চট্টগ্রাম শহরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবগাহন হবে। সমুদ্র সৈকতের নির্মল বালুকা রাশিতে খালি পায়ে পথচলা, বাটালি পাহাড়, সি আর বি পাহাড়, ডিসি হিল,কর্ণফুলী সেতু,কখনো কাপ্তাই লেক, কখনো বাশখালি ইকো পার্ক আবার কখনো সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক। এই ছিল আমাদের ভ্রমন বিলাশ। এক বছর পর মাথায় এল নতুন চিন্তা সেই আমাদের স্যারের চাকুরী করবোনা চাকুরী দেব, উদ্যোক্তা হয়ে, উঠা নিজে কিছু করা পরিবর্তন পরিবর্ধন হল পরিকল্পনা। মাসিক ৫০০ এর পরিবর্তে ১০০০ করে, ভ্রমন বিলাশ বন্ধ , অর্থনৈতিক মুক্তি প্রয়োজন, করতে হবে সঞ্চয়। এক বছরে জমলো বার হাজার করে ১,২০,০০০ টাকা কি হবে এই টাকা দিয়ে কিছুই না! তারপর গ্রহন করা হল নতুন সিদ্ধান্ত। চাকরি ছেড়ে দিলাম হাল ধরলাম নিজের প্রতিষ্ঠানের oda mcs ltd. সবাই নতুন করে মুলধন দিল ৪০,০০০ টাকা করে আরো ৫ জন নতুন করে যুক্ত করা হল পনের জন মিলে সাড়ে সাত লাখ টাকায় দাড়িয়ে গেল একটি প্রতিষ্ঠান। বাড়লো শেয়ার হোল্ডার,বাড়লো মুলধন দিন -দিন যোগ হতে থাকলো নতুন নতুন প্রকল্প, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প,গ্রামীন উন্নয়ন প্রকল্প,কারিগরি শিক্ষা,আবাসন বা হাউজিং প্রকল্প, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র। মুলধন দাড়াল প্রায় এক কোটি, বার্ষিক মুনাফা ২০/২৫ লাখ প্রায়।নজর পড়লো কিছু সুবিধাবাদি সার্থ্যন্যসি শকুনের, শুরু হল ষড়যন্ত্র, রাজনীতি, সময় এল নেতৃত্ব পরিবর্তনের আমাকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখার জন্য অপহরণ করা হল, তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন সমপন্ন করে নতুন নেতৃত্ব আসল শেয়ার বাজারে এবং আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে পুরো প্রতিষ্ঠান এর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হল। অবশেষে সর্বশান্ত হয়ে অর্থ ভিত্ত হারিয়ে নতুন সপ্ন নিয়ে প্রবাস যাত্রা। ২০১৬ সালে ধার দেনা করে ৪০০,০০০ টাকা খরচে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বাহারাইন আগমন। যিনি ভিসা দিয়েছিলেন তিনি বলেছিলে ২ বছরের ভিসা, আসার পরপর ই কাজের ব্যাবস্থা হয়ে যাবে মাসিক বেতন ৫০,০০০ টাকা।কিন্তু বাস্তবা ভিন্ন, আমি যে আর সব সাধারণ প্রবাসী দের মতই মস্ত বড় এক প্রতারক দালালের হাতে পড়েছি সেটা বুজতে পারি যখন বাহারাইন এয়ারপোর্টে এসে ইমিগ্রেশন পাস করি তখন। প্রথমে পাসপোর্ট এ অলংকৃত ভিসা পেইজে চোখ বুলিয়ে দেখি প্রতারক দালাল চক্র আমার থেকে চার লক্ষ টাকা খেয়ে ২ বছরের কথা বলে মাত্র এক বছরের জন্য ভিসা লাগিয়েছে। মন টা খুব খারাফ, মাথা হয় আছে গরম। এ দিকে দালাল চক্রের যে মহান প্রতিনিধি আমাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা তাকে খুজেই পাচ্ছিনা। বাহারাইন এয়ারপোর্টে নতুন আগত সকল প্রবাসী কে একটি করে ভিবা মোবাইল সিম উপহার দেওয়া হয়। সেই সিমটা দেশ থেকে নিয়ে আসা মোবাইল ফোনে এক্টিভ করে জনাব কে কল করে জানতে পারি ওনার মোবাইল টি বন্ধ রয়েছে। চার ঘন্টা এয়ারপোর্টে অবস্থান করার পর ও কেউ আসল না আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার সাথে যারা আসছে তারা সবাই চলে গিয়েছি আমি শুধু একা বসে আছি বাহারাইন বিমান বন্ধরের বারান্দায়। এ দিকে ক্ষিধায় পেট চুচু করছে, বাড়িতে জানানোর পর ৬ ঘন্টা পর এক জন এসে আমাকে নিয়ে গেলেন আলহুরা ইমিগ্রেশন অফিসের কাছে পানির টাংকি এলাকায়। সেখানকার একটি কেরালা রেষ্টুরেন্ট এ আমার জন্য দুই টা চাপাতি আর ডাল ভাজি অর্ডার দিয়ে ভদ্রলোক কোথায় যেন কোন এক জরুরী কার্য সাধন করতে গেলেন। এক ঘন্টা পর ও তিনি যখন ফিরে আসলেন না দোকান্দার তখন আমার কাছে দাম চাইলেন এবং দোকান থেকে বের হয়ে যেতে বললেন আমি রেষ্টুরেন্ট এর বিল পরিশোধ করে বাইরে এসে তার অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকলাম।কয়েক ঘন্টা পর অন্য এক জন আসলেন একটা রুমে নিয়ে গেলেন, যেটার আয়তন ছিল খুব বেশি হলে ১০০ স্কয়ার ফুট। সেখানে বেড হল ৩ টা, একটা সোফা সেট যার মেইন বোর্ডার চার জন বাকি ৬ জন আমার মত নবাগত। তাদের জন্য কোন সীটের ব্যবস্থা নেই ফ্লোরিং করে অথবা অন্যের সিটে ঘুমিয়ে দি কাটাতে হয়। ২ টাকার রুটি এনে ছয় জন খেতে হয় এভাবে সময় ক্ষেপন হতে থাকে ২ মাসের মধ্য দালাল চক্র কোন কাজের ব্যাবস্থা করতে পারেন নি, ২ মাস পর বলেন আমরা অনেক চেষ্টা করেছি বর্তমান পরিস্থিতি ভাল না আপনারা নিজের চেষ্টা নিজে করেন আমাদের পক্ষে আর কিছু করা অসম্ভব। এর পর চলে গেল ৬ মাস।কোন কাজ নাই, খেয়ে - না খেয়ে, বন্ধু -বান্ধব,আর্তিয়-পরিজন এর সহ-যোগিতা আর ধার দেনা করে ৬ মাস চলে গেল। এর পর কিছুদিন লন্ড্রি, কিছু দিন রেষ্টুরেন্ট, কিছু দিন কনষ্ট্রাকশানের কাজ এভাবে চলে গেল আর ৬ মাস।এক বছর পর মাষ্টার পয়েন্ট সুপার মারকেট এ সাত মাস কাজ করার পর রেডিমেড গার্মেন্ট হাইপার মারকেট আল হারাম সেন্টারে যোগদান করি। এভাবে কেটে গেল প্রবাস জীবনের চারটি বছর।ছাত্র জীবন থেকে আমি একজন সাংগঠনিক মানূশ, সমাজ কর্মী, সাহিত্য, সংস্কৃতি,মানবিক ও সামাজিক কাজ কর্ম,পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা, ব্যাবসায়ে সফলতা, ভিবিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন সম্পৃক্ত থেকে এক বর্নাড্য জীবন ছিল আমার। কিন্তু প্রবাসে আসার আগের কাছের মানুষ দের কাছ পাওয়া আঘাত,অপহরন,আর্থিক বিপর্যয়ের পর মানষিক ভাবে খুব ই ভেংগে পড়ি, নিজের উপর আস্থা হারিয়া ফেলি, কোন কিছুতেই মন বসেনা, অস্থিরতার মধ্যেই কাটিয়ে দেই প্রবাসের চারটি বছর। ২০২০ সালের শুরুর করোনা মহামারীর প্রাক কালে একদিন ইউটিভি লাইভ এর একটি অনুষ্ঠান দেখে খুব ভাল লাগল, এর পর ইউটিভি লাইভের কয়েকটি প্রোগ্রাম দেখালাম সেখান থেকে সন্ধান পেলাম ভাল মানুষের প্লাটফর্ম নিজের বলার মত একটা গল্প গ্রুপের এবং আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের। এর পরে রেজিষ্ট্রেশন করে ফেললাম নবম ব্যাচে। তারপর স্যারের প্রতি দিনের সেশন গূলো দেখতে থাকলাম। এর পর আমি নিজের ভিতর অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম, আমি আবার অনুপ্রানিত হলাম জীবন কে উপভোগ করার জন্য, আমার ভিতর থেকে ধীরে ধীরে নিস্তব্দতার কাল মেঘ ঝরে যেতে থাকল, তার পর স্থির করে ফেললাম নিজে কিছু করবো। অবশেষে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে যার কারনে কোম্পানি থেকে কিছু লোক অপসারন করা হল, যেখানে যুক্ত হল আমার নিজের নাম ও। যাই হোক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কিছু সঞ্চিত অর্থ আর এক বছরের সার্ভিস ভিনিফিট এর টাকা দিয়ে প্রিয় প্লাটফর্ম আরপ্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এবং নিজের বলার মত একটা গল্প এন আর বি বাহারাইন শাখার সকল এম্বাসেডর, কোর ভলন্টিয়ার এবং প্রিয় সদস্য ভাইদের সহযোগিতা নিয়ে গ্রিণ বিডি অনলাইন ফ্রুটস এন্ড ভেজিটেবল এবং ওয়ান্ট ফর এব্রি ডে ( WED) online shop এর মাধ্যমে বাহারাইন এ নতুন সপ্ন বোনা শুরু করলাম সকলের দোয়া প্রত্যাশী। আজ আপনারা একটা ব্যার্থতার গল্প শুনলেন ইনশাআল্লাহ সকলের সহযোগিতায় অচিরেই একটি নিজের বলার মত সফলতার গল্প বলতে পারবো। প্লাটফর্ম এর সকলে নিকট ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৭৪
০৯-০৭-২০২০
ইসমাইল পলাশ
কুমিল্লা