একদিন খাবার টেবিলে বাবা বললেন তুমি বিদেশে চলে যাও, এতোদিন কিছু বলিনি , আজ
আসসালামু আলাইকুম সবাই আশা করি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
#আমার_জীবনের_ব্যর্থতার_গল্প
তখন সময় ছিল ২০১১ ইংরেজী, খুব অল্প বয়সে সংসারিক জীবনে পা রেখেছিলাম।
মা বাবার ১মাত্র ছেলে আমি এবং দুই বোন নিয়ে আমাদের সংসার, বাবা ছিলেন প্রবাসী ২০১১ সালে প্রবাস জীবনের ইতি টানেন,
যৌথ পরিবার ছিল আমাদের কিন্তু শুদু আমরা ছাড়া সব চাচারা প্রবাসে উনাদের পরিবার ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকতেন।
বছর খানেক পরপর ১-২ সাপ্তাহের জন্য দেশে বেড়াতে আসতেন। তবে যার যার আলাদা আলাদা বাড়ি করে নিয়েছিলেন দেশে।
কিন্তু সব সময় আদর স্নেহ ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখতেন আমাকে,
এবার আসল কথায় আসি, সংসার জিবন শুরু করার আগ পর্যন্ত জিবনটা ছিল রঙ্গিন হাসি খুশি আড্ডা মাস্তিতে ভরপুর, সংসার জীবনে পা রাখার পর থেকে নতুন করে পথযাত্রা শুরু করলাম, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় নেমে পড়লাম।
#প্রথমবার_নিজের_কিছু_করার_প্রচেষ্টা।
সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যবসা শুরু করবো, আর কতদিন বেকার বসে বসে বাবার হোটেলের আহার গ্রহন করবো, নিজে থেকে দায়িত্ববোধ বেড়ে গেলো,
কি ব্যাবসা করবো চিন্তা করতে লাগলাম, একদিন আমার এক বন্ধুর সাথে ব্যাবসা করার কথা শেয়ার করলাম , আমার বন্ধু আমাকে আইডিয়া দিল যে মুরগির র্ফাম করতে পারিছ, লাভবান হতে পারবি, বন্ধুর কথা মতে শুরু করলাম, প্রায় ৫০হাজার টাকা ইনভেস্ট করে ঘর একটা ভাড়া করা সহ বাচ্চা উঠিয়েছিলাম, কিন্তুু কয়েক দিন পর পর একটা দুইটা করে বাচ্চা মারা যেথে থাকলো, হটাৎ এক রাতে বজ্র বৃষ্টি শুরু হলো সারা রাত বৃষ্টি হবার কারনে শেড এ পানি ডুকে গেলো,
হাতে গুনা কয়েকটা বাচ্চা বেঁচে গিয়েছিল বাকি সব গুলা বাচ্চা মারা গিয়েছিল।
মনবল হারিয়ে ফেলি, এখানে আমি যে ভুল গুলা করেছি তা হয়ত আপনারা বুজতে পারছেন, ভুল জায়গা নির্বাচন , কোন প্রশিক্ষন ছাড়া উদ্যোগ, সময় না নিয়ে হুট করে শুরু করা।
#২য়বার _নিজের_কিছু_করার_প্রচেষ্টা।
তার কিছুদিন পর ২য় ব্যবসার প্ল্যান করলাম, ২য় ব্যবসাটা একটু ভেবে চিন্তে নিয়েছিলাম, ডিস লাইনের ব্যাবসা, এবার এক বন্ধুকে ব্যাবসার পার্টনার করে ২য় ব্যাবসা শুরু, এলাকায় ডিস লাইন ঘরে ঘরে পউছে দেওয়া এবং মাস শেষে টাকা গুনা,
ইনভেস্ট ২লক্ষ টাকা, জন প্রতি ১লক্ষ টাকা, একটু বেশিই ইনভেস্ট কারন ডিস লাইনের তার এবং এমডি ফ্লায়্যার মেশিন এই সব জিনিস পত্রের দাম একটু বেশি , তাই একটু বেশি ইনভেষ্ট করতে হয়েছে।
ও আপনাদেরকে বলা হয়নি টাকা কোথায় পেলাম, আসলে বাবা যখন বিদেশে ছিলেন তখন টাকা আমার একাউন্টে পাঠাতেন , খরচের জন্য এবং সেইভ করার জন্য উনার আলাদা একাউন্টের পাশাপাশি আমার একাউন্টে ও পাঠাতেন আমার বাবার অনেক পরিশ্রমের টাকা।
আমরা দুই বন্ধু অনেক পরিশ্রম করার পর ডিস ব্যাবসা শুরু করি, দুই তিন মাস ভালই চলছিল, কিন্তু দুই তিন মাস পর শুরু হল মহা বিপদ, অনেক গ্রাহক মাসে বিল পরিষোধ করতে তাল বাহানা শুরু করে দিল, আমার পার্টনার চিল শান্ত নিরব, কাউকে কিছু বলতে পরতোনা , কিন্তুু আমি আমার রাগটাকে সামাল দিতে পারতাম না, কেউ দুই একবার টাকা দেবার তারিখ করে ফেললে রাগ করে ঝগড়া করে লাইন কেটে দিতাম, এই রকম প্রায় ঝগড়া করতে হতো গ্রাহক এর সাথে, অনেক গ্রাহক আভার রাগ করে রাতের আধারে লাইন কেটে দিতো যাতে অন্যরা দেখতে না পেরে আমাদের হয়রানী করে।
এই ভাবে ঝগড়ায় জড়িয়ে যেতাম প্রায় সময়, একটা না দুইটা না হাজারটা নালিশ করতেন আমার ঘরে এবং লন্ডনে চাচাদের কাছে। সবাই আমার উপর চড়াও হয়ে এই ব্যাবসা ছাড়তে বাধ্য করলেন।
কি আর করার আছে আমার, ছেড়ে দিলাম, আমার শেয়ার আমার পার্টনারকে দিয়ে দিলাম ওর শর্তে , কারন কেউ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছিলেন না, আর আমার পার্টনার এক সাথে এত টাকা দিতে পারবেনা, কিস্তি কিস্তি করে টাকা পরিষদ করবে।
কিন্তুু এই কিস্তির টাকা আমার কোন কাজে আসলনা, সব হাতের মধ্যে রেগে খরছ হয়ে গেলো, ২য় ব্যাবসার সমাপ্তি।
কিন্তুু আমি হার মানিনি , এই যুদ্বে আমাকে বিজয়ী হতে হবে।
#৩য়বার _নিজের_কিছু_করার_প্রচেষ্টা।
Freelancer হবার যাত্রা শুরু করলাম, ঘরে আছে কমপিউটার শুদু গান বাজনা শুনা হতো, বিঙ্গাপন দেখলাম অনলাইনে প্রতি মাসে ৫০-৬০হাজার টাকা ইনকাম করা যায়, প্রশিক্ষন গ্রহন করতে ১০ হাজর টাকা লাগবে, Odesk ডট কম এ ১০০%প্রফাইল তৈরী করে দেওয়া হবে এবং কাজ শেখানো হবে।
ভর্তি হয়ে গেলাম সিলেট জিন্দাবাজার ছিল প্রশিক্ষন কেন্দ্র, প্রায় ২মাসে শেখানো হলো
Microsoft office ও Seo (Search engine optimization)
এবং Odesk ওয়েব সাইটে ১০০% প্রফাইল তৈরী, আগ্রহের সাথে শিখে নিলাম, ওই ক্লাস থেকে স্যার বলেছিলেন আপনারা আরো কাজ শিখতে চাইলে এখানে ভর্তি হয়ে যান , যত কাজ শিখবেন ততো কাজ বাড়বে, সব ধরনের কাজে বিট করতে পারবেন।
তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ ও শিখে নিলাম।
এবার শুরু করবো আনিং, একটা Laptop ও Modem কিনলাম অনলাইনে ইনকাম করবো বলে।
প্রশিক্ষনের সময় স্যার বলেছিলেন ধস্যার বলেছিলেন ধৈর্য ধরতে হবে,ধৈর্য হারালে হবেনা, তাই ধৈর্য ধরে প্রায় দুই মাস যাবত লেগে থাকলাম, কিন্তু একটাই দূর্বলতা ছিল কাজ করতে খুব সমস্যা করতো. তা হলো নেটওয়ার্ক, খুব বেশি সমস্যা হতো নেট স্লো হবার কারনে।
দুই মাসের উপর আর র্ধয্য শক্তি রাখতে পারিনি, এই দুই মাসে হাজারটা কাজে বিট করেছি , ফিডব্যাক নেই, নেট স্লো র্ধয্য শক্তি হারিয়ে freelancer হওয়া থেকে সমাপ্তি।
এদিকে পরিবার কথা শুনিয়ে যাচ্ছে , একের পর এক টাকা খরছ করে যাচ্ছি অথচ একটা টাকা ও ইনকাম করে দিতে পারিনি, বাবার মুখের দিকে তাকালে বুজতে পারতাম যে আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছেন, বকা দিতে চাচ্ছেন কিন্তু পারতেছেন না, কারন একমাত্র ছেলেকে কি করে বকা দিবেন , মায়া আর ভালবাসার মাঝে সকল শাসন লুকিয়ে রাখতেন, কিন্তু মা একদম ছাড় দিতেন না, রোজ বেকার বলে বলে শাসনের মাঝে রাখতেন ।
#৪র্থবার _নিজের_কিছু_করার_প্রচেষ্টা।
এর পর শুরু করলাম এজেন্ট ব্যাবসা , থাই ফুড অনেকেই তো চিনেন , বেকারী আইটেম নিয়ে, ব্রেড, কেক, বাটার বন, এই গুলাই, জামানত দিয়েছিলাম ২০হাজার টাকা, এবং বিশ হাজার টাকার পন্য এনেছি, লোক নিয়োগ দিলাম দুজন, একজন ভ্যান ডাইবার ও একজন ডেলিভারী ম্যান, নতুন পন্য , তাছাড়া অন্য পন্য বাজার দখল করে অছে, আমিও মাঠে নেমে প্রানপন চেষ্টা করলাম , শুরুতে মোটামোটি চলছিল, প্রায় এক সাপ্তাহ পর দেখলাম যে পন্য গুলা বাকি আছে ওই গুলার ডেট শেষ হয়ে গেছে। ফিরত দিতে হবে নতুন মাল আনতে হবে, তাই করলাম, নতুন মাল সেইল করতে আমার কর্মি মাঠে, আমি শুয়ে আছি ঘরে। কিন্তু ওই দিন আমার ডেলিভারী ম্যান পন্য বিক্রি করে এবং কিছু বাকি পাওনা টাকা দোকানদারের কাছ থেকে তুলে ডিউটি শেষ করে আমার সাথে দেখা না করে টাকা দিয়ে পালিয়ে গেছেন, উনার আইডি কার্ডের ফটোকপি ছিল আমার কাছে তাই থানায় ডিডি করলাম, এবং পত্রিকায় নিউজ ছাপালাম কোন কাজ হলোনা, কিছু দিন পর পরিচলনা করতে না এই ব্যাবসাটা ও ছেড়ে দিলাম ।
ভেঙ্গে পড়লাম, মনে মনে ধরে নিলাম যে আমার ধারা কিছুই হবেনা, আমি পারবনা, উদাসিনতা কাজ করছিল, আমার ধৈর্য শক্তি কম ছিল বিধায় আমর এই অবস্থা হয়েছিল, ধীরে ধীরে নিঃস্ব হতে লাগলাম।
আর কত জমানো টাকা খরচ করতে করতে একদম শূন্য হবার পথে, কোন ইনকাম নেই, এই ভাবে আরো কয়েক মাস বেকার থেকে কাটাতে লাগলাম।
#৫মবার _নিজের_কিছু_করার_প্রচেষ্টা।
ব্যবসার পোকাটা মাথা থেকে যাচ্ছেনা, একটু একটু ও নাড়া দেয়, হাল ছাড়িনি লেগে থেকেছি ব্যবসার পিছনে,
হঠাৎ একদিন আমাদের গ্রামের বাজারে একটা মার্কেটে ঘর খালি জানতে পারলাম, মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম এই মার্কেটে ব্যবসা শুরু করবো, কি নিয়ে ব্যাবসা করা যায় নিজে নিজে ভাবতে লাগলাম, কিন্তু ভাবনাটা ও খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে, কারন মার্কেটের মালিক অন্য কাউকে ঘরটা ভাড়ায় দিয়ে দিবেন, মালিক পরিচিত ছিলেন তাই মোবাইলে কল করে ঘরটা ভাড়া রেখে নিলাম, এডভান্স দুই মাসের ঘর ভাড়া নিয়ে ঘরের চাবিটা নিজের হাতে নিয়ে নিলাম, ফাইনাল করলাম এবার গ্রাফিক্স এর কাজ করবো , ফটো প্রিন্ট, টাইপিং এবং সাথে ষ্টেশনারী,
ভিজিটিং কার্ড, পোষ্টার, লিফলেট ডিজিটাল ব্যানার, ইত্যাদী, ব্যাবসা শুরু করে দিলাম, প্রতিষ্টানের নাম রাখলাম শুভ গ্রাফিক্স , বড় ব্যানার পোষ্টার এর কাজ রেখে আমি কাজ করে প্রেসে ছাপিয়ে নিতাম, এই ভাবে শুরু হল ব্যাবসা, দিরে দিরে এগুতে লাগলাম, ছবি প্রিন্ট ফটোকপি দিরে দিরে চাহিদা মত পন্য বাড়তে লাগলো, চাহিদা মতে আইটেম বাড়াতে লাগলাম, পাশে ছিল উচ্চ বিদ্যালয় তাই ছাপা ছাপির কাজে ছাত্র ছাত্রির আশা যাওয়া বাড়তে লাগলো, শুরুকরে দিলাম কসমেটিক্স আইটেম, দুটুই এক সাথে চলতে লাগল, প্রায় তিন বছর ব্যবসা করার পর সংসারে অথিতি দুইজন বেড়ে গেলেন, এক মেয়ে ও এক ছেলে।
দিরে দিরে চিন্তা বাড়তে লগলো, আমার জন্য না হয় ছেলে মেয়েদের জন্য বেটার একটা কিছু করতে হবে আমাকে,।
একদিন খাবার টেবিলে বাবা বললেন তুমি বিদেশে চলে যাও, এতোদিন কিছু বলিনি , আজ বলছি, এমন করে তোমার জিবনটা কাটবেনা, তোমার জন্য নয়, তোমার সন্তানের জন্য তোমাকে বিদেশে যেতে হবে, ওদের আগামির দিন সুন্দর করে বেড়ে উঠারর সুযোগ তোমাকেই করে দিতে হবে। দেশে তোমাকে দিয়ে কিছুই হবেনা, আমি চলে এসেছি দেশে কারন আমি লিগ্যাল হতে পরবোনা , আর বিয়ে করে লিগ্যাল হওয়াটা আমার জন্য হবেনা, কিন্তুু তোমার জন্য কমতি রাখিনি, সাধ্য মতে তোমার জন্য সব রেখেছি, এখন তোমার কাছে তোমার বাপ দাদার জমি আর সামান্য কিছু টাকা ছাড়া নিজের উপার্জন কি আছে, কি দেবে তোমার সন্তানদের, তোমার এখনও সময় আছে, ৪-৫ বছরে একটা ভালো অবস্থান পেতে পারো, পরিবার নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করতে পারো এই ব্যবসা করে জীবনে কতটুকু করতে পারবে,, ইত্যাদী।
#ব্যবসায়_ক্রমাগত_লোকসান_হওয়াতে_পরিবার_জন্য_প্রবাস_পাড়ি_দেওয়া
অবশেষে পরিবার মুখের হাসি ফুটানোর আশায় বাধ্য হয়ে আমার মামা মাধ্যমে কাতার আসলাম। কাতার প্রবাস জীবনের সুখ দুঃখের কথা অন্য একদিন শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ।
ব্যবসার পোকা কিন্তু মাথা থেকে যায়নি মাঝে মাঝে মাথার ভিতর নাড়া দিত। ঐ সময়গুলো ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার গাইডলাইন ফেলে আমি সফল হতাম। এখন নিজের বলার মত একটা গল্প গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে প্রিয় স্যারের অনুপ্রেরনায় আবার জাগ্রত হয়েছে, তবে এবার কিন্তু কোন ভুল নয়, শিখব জানব, সময় নিয়ে শুরু করবো, নিজের ভিতর থেকে প্রথমে ভাল মানুষটাকে আবিস্কার করবো, লেগে আছি লেগে থাকব, স্বপ্ন পূরনের যুদ্ধে,
হারবনা এবার জিতব আমি স্যারের শিক্ষা গ্রহন করে।,
আমি বারবার হেরেছি কিন্তু শিখেছি অনেক কিছু, বুজেছি আমার দূর্বলতা।
আমি স্বপ্ন দেখেছি
সাহস করেছি
শুরু করেছি
লেগে থাকিনি
তাই সফল হতে পারিনি
এবার পারবো ইনশাআল্লাহ। কারন আমার আছে নিজের বলার মতো একটা পরিবার, আমার আছেন প্রিয় মেন্টর প্রিয় শিক্ষক ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।
আসলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন🙏🙏
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৭
১১-০৭-২০২০
ফয়জুল ইসলাম শুভ
🇶🇦 কাতার প্রবাসী
👨🎓 দশম ব্যাচ
🖋️রেজি.নং: 13698
💉 ব্লাড গ্রুপ: B+
🇧🇩 জেলা: সিলেট, (বর্তমান অবস্থান)
📧 Foyjul121@gmail.com