যখন একা থাকি নিজে নিজে কল্পনা করি বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর নানা যেদিন মা
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"
"আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ"
আজ অন্য কোন পোস্ট নয়।
আজ আমি আপনাদেরকে শোনাব #জীবন_যুদ্ধে_হার_না_মানা_এক_নারীর_গল্প
সেই নারী আর কেউ নন তিনি হলেন আমার গর্ভধারিণী মা
🍁আমার মা
একজন কৃষক বাবার ৫ সন্তানের পরিবারের দ্বীতিয় কন্যা সন্তান। মাত্র 14 বছর বয়সে নবম শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে বাবার সাথে মায়ের বিয়ে হয়। আমার বাবা একজন সরকারী চাকুরিজীবি ছিলেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের মেয়ে হিসেবে একজন সরকারী চাকুরিজীবির সাথে বিয়ে হওয়াটা আমার মা এবং তার কৃষক বাবার পরিবারের জন্য ছিল একরকম সৌভাগ্যের ব্যাপার। সুখেই কাটছিলো আমার মায়ের সংসার।
সময়টা 1988 সাল প্রথম পুত্র সন্তান হিসেবে মায়ের কোলজুড়ে আগমন ঘটে আমার। সরকারি চাকরিজীবি স্বামী, কোলজুড়ে প্রথম পুত্রসন্তান সাথে আত্মীয় স্বজন সবার ভালবাসা সবকিছু মিলিয়ে আমার মায়ের সংসারে শুধু সুখ আর সুখ। কিন্তু আল্লাহর কি লীলাখেলা সেই সুখ বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হলো না। আমার বাবার করা একটি ভুল সংসারের সমস্ত সুখকে বিলীন করে দিলো।
সময়টা 1992 সাল আমার বয়স তখন চার বছর। ঘটনাক্রমে আমার বাবা দ্বীতিয় আর একটি বিয়ে করে বসে। মায়ের জীবনে একরাশ সুখের বিপরীতে নেমে আসে ঘন কালো দুঃখের মেঘ। বাবার দ্বীতিয় বিয়ের খবর শুনে মেয়ের বাড়িতে ছুটে আসেন আমার নানা। মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন সে যেহেতু আবার বিয়ে করেছে তোমার আর তার সংসার করার দরকার নেই। আমার নানা মা,কে আরও বলেন তুমি তোমার স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে এবং তার ছেলেকে তার কাছে দিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসো তোমার যেহেতু এখনো বয়স কম আমি তোমাকে ভাল দেখে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেবো। মা সেদিন নানাকে বলেছিলেন বাবা, সে যতই ভুল করুক সে আমার স্বামী আর আমার একটি পুত্র সন্তান আছে আমি আমার সন্তানকে নিয়ে আমার স্বামীর এই সংসার আকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চাই। তুমি চলে যাও বাবা। আর সেদিন থেকেই শুরু হয় আমার মায়ের জীবন যুদ্ধ ।
বাবা ছোট মাকে নিয়ে তার কর্মস্থলে থাকেন। আমাদের স্থান হয় আমার দাদীর দেয়া এক টুকরো জমির ওপর দাদা দাদী এবং নানার সহযোগিতার বানিয়ে দেয়া ছোট্ট একটি টিনের ছাপড়া ঘরে। বাবা মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন অতিথির মতো কয়েকদিন থেকে আবার চলে যেতেন। যেহেতু সরকারি চাকরি করতেন একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্রতি মাসে কিছু কিছু টাকা পাঠাতেন আবার মাঝে মাঝে পাঠাতেন না। আমার পড়ালেখার খরচ সহ সংসার চালাতে মাকে হিমশিম খেতে হতো। খরচ যোগাতে মা তার হাতের কাজ শুরু করলেন, আশপাশের মহিলারা মায়ের কাছে আসতো কাথাঁ সেলাই করিয়ে নেয়ার জন্য। মা ঘরে বসে সেগুলো সেলাই করে দিতেন সেখান থেকে কিছু টাকা উপার্জন হতো। আবার বিকাল বেলা ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়াতেন সেখান থেকেও কিছু টাকা আসতো। এভাবেই আমার পড়াশোনার খরচ সহ কোনমতে চলতে থাকে আমাদের মা ছেলের সংসার।
সময়টা 2000 সাল মায়ের কোলজুড়ে আমার ছোট ভাইটির আগমন ঘটে। সংসারে নতুন অতিথির আগমনের সাথে সাথে সংসার খরচও বেড়ে যায়। বাড়তি খরচ যোগানোর জন্য মা তার হাতের জমানো টাকা দিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনে নেন। শুরু করেন আশপাশের মহিলাদের কাপড় বানিয়ে দেয়ার কাজ । আমি যখন একটু বড় হলাম সবাই মাকে বলতো তোমার ছেলেতো এখন বড় হয়েছে তুমি এতো কষ্ট না করে ওকে কোন কাজে লাগিয়ে দাও তাহলেতো তোমার সংসারে আর কোন কষ্ট থাকে না। মা সবাইকে একটা কথাই বলতেন আমার যত কষ্টই হোক না কেন আমি আমার ছেলেকে পড়াশোনা শেখাবো। ও যখন পড়াশোনা শিখে ভাল চাকরি করবে তখন আর আমার কোন কষ্ট থাকবে না। একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সময়টা ২০০৫ সাল আল্লাহর রহমত আর আমার মায়ের চেষ্টা এবং দোয়ায় আমি মোটামুটি ভাল একটা চাকরি পেলাম। ২০০৮ সালে বাবা রিটায়ার্ড করে ছোট মা এবং আমার আরও দুই ভাইকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলেন। আমি একটু জমি কিনে আলাদা একটা বাড়ি করলাম। আমরা দুই পরিবার দুই বাড়িতে থাকি সবকিছু যখন ঠিকঠাক হয়ে উঠছিল ঠিক তখনই বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। বাবার জন্য কষ্ট লাগে ওনার জন্য জীবনে কিছুই করতে পারিনি। তবে মায়ের জীবনের অতীতের কষ্ট গুলোকে সুখে রুপান্তর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি।
নিজের কাছে খুব ভালো লাগে যখন শুনি আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে অনেকে মা,কে বলে দেখো আগে অনেক কষ্ট করেছো বলেই আজ তুমি সুখী। এখনো মা তার দায়িত্বে অবিচল আমি,আমার স্ত্রী,আমার দুটি কন্যা,আমার ছোট ভাই পরিবারের সবার মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে স্নেহ মমতা দিয়ে সবাইকে আগলে রেখেছেন।
মাঝে মাঝেই কোলে মাথা রেখে মায়ের কাছে শুনি মা আমাদের জন্য জীবনে তুমি অনেক কষ্ট করেছো। সত্যি কি এখন আমরা তোমাকে সুখে রাখতে পেরেছি? মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মা বলেন, বাবা আমার জীবনের সমস্ত সুখ তো তোমরা, পরিবারের সবাইকে আল্লাহ সুস্থ রেখেছেন তোমারা ভালো আছো এতেই আমি সুখী।
চাকরির কারনে এখন কিছু দিনের জন্য দেশের বাহিরে আছি। মা'কে অনেক মিস করি, দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচবার মায়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি।
যখন একা থাকি নিজে নিজে কল্পনা করি বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর নানা যেদিন মা,কে নিয়ে যেতে এসেছিলেন সেদিন যদি মা তার নিজের সুখের কথা ভেবে আমাকে ছেড়ে চলে যেতেন, তাহলে আমার জীবনটা হয়তো দুঃখের সাগরে ভেসে যেতো। #লাভ_ইউ_মা।
শ্রদ্ধা জানাই পৃথিবীর সকল মা,কে। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য, পরিবারের সবার সুখের জন্য আজীবন যুদ্ধ করে যাওয়া অনেক মায়ের গল্পই হয়তো লেখা হয়না।
কৃতজ্ঞতা জানাই জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি #নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প প্লাটফর্ম না পেলে হয়তো আমার মায়ের গল্পটিও আমি কোনদিন লিখতাম না। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
আল্লাহ হাফেজ, আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৭৮
১৩-০৭-২০২০
👦মোঃ আল মামুন
📖 দশম ব্যাচ
🖋রেজিষ্ট্রেশনঃ 17873
💉রক্তের গ্রুপঃ B+
🇧🇩জেলাঃঝিনাইদহ
বর্তমানঃ 🇰🇼NRB Kuwait.
📞মোবাইলঃ +965 60795642