অনেক দিন ধরে ভাবছি নিজের বলার মত গল্প গ্রুপে আমার নিজের জীবনের একটা গল্প বলবো। কিন্তুু সময় ও ব্যাস্ততার কারণে বলা হয়ে উঠেনা। আমার বাস্তব জীবনে সফলতা না পাওয়ার গল্প
প্রিয় গ্রুপবাসী, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন ও সুস্থ্য আছেন।
কৃতজ্ঞতা জানাই হাজারো ভালো মানুষ তৈরী করার কারিগর মেন্টর পরামর্শদাতা জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে। এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়ে আমার মতো নগন্য মানুষের জীবনের গল্প লিখার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।
অনেক দিন ধরে ভাবছি নিজের বলার মত গল্প গ্রুপে আমার নিজের জীবনের একটা গল্প বলবো। কিন্তুু সময় ও ব্যাস্ততার কারণে বলা হয়ে উঠেনা। আমার বাস্তব জীবনে সফলতা না পাওয়ার গল্প হয়ত অনেকের কাছে ভালো না লাগতে পারে।তবে আমার গল্পে এমন কিছু Message বা বার্তা আছে যা কারো না কারো উপকারে আসতে পারে।
পর্ব-১.
২০০০ সালে এস এস সি পাস করে নিজের পরিবারের জন্য প্রথম কর্মজীবনে আসি, তাও স্বর্নের দোকানে কাজ শিখার জন্য, কাজ শিখতে ২-৩ বছর সময় লাগে কিন্তুু বিভিন্ন কারণ বশত এক জায়গায় কাজ শিখতে না পেরে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে কাজ শিখতে হয়ছে। কাজ শিখার ২০০৩ সালের পর কুমিল্লাতে আমি ছোট করে একটা দোকান দিয়েছিলাম। কিন্তুু ব্যবসা না বুঝার কারণে আমি এক বছরও টিকতে পারিনি। নানাভাবে লোকশান গুণতে হয়ছে।
তারপর ২০০৪ বাড়িতে চলে আসি। ১ মাস বেকার থাকার পর অন্য জুয়েলার্সের দোকানে প্রোডাকশন ম্যান হিসাবে কাজ করি। কিন্তুু কিছুদিন যাবার পর দেখলাম মাসিক ইনকাম ২/৩ হাজার টাকার বেশি হয় না। এখানে একটা কথা বলি আমার কিন্তুু পেছনে সাপোর্ট দেওয়ার মত কেউ ছিলনা। নিজেও ভাল মন্দ কিছু বুঝতে পারতাম না তাই যখন যেটা ভালো বুঝতাম সেটাই করতাম।
তারপর নিজের জীবনের আশার আলো খুঁজতে চলে যাই চট্টগ্রাম শহরের হাজারী গলিতে কাজ করার জন্য। ২০০৪-৭ পর্যন্ত কাজ করেছি, কিন্তুু পরিবারের অভাব দূর করতে গিয়ে নিজের জন্য কিছুই করা হয়নি। শুধু কাজ করে কোন রকম পরিবার চালাতে পারতাম। মা বাবা ছোট দুই ভাই ওদের নিয়ে আমার পরিবার।
বিয়ে:
এই বিষয় নিয়ে কখনো ভাবিনি। কারণ, আমি নিজে চলতে পারছি না আরেক জনকে কিভাবে চালাবো। কিন্তুু পরিবারের চাপে আমাকে যৌতুকের বিনিময়ে২০০৭ সালে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তুু কখনো বুঝিনি একটা বৌকে চালানো আর জাহাজ চালানো কতটুকু কষ্টের। যেখানে নিজেকে চালাতে নিজেই হিমশিম খেতাম। তারপর যা হওয়ার তা হলো সংসারে অশান্তি ঝগড়া মারামারি অভাব চারদিকে ঘিরে ধরলো, সংসারের অভাব মিটাতে না পেরে মা বাবার সংসার থেকে বৌকে নিয়ে বিতাড়িত হলাম। তখন আমার পরিবার ৮ মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিল কোথায় যাবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সাহায্য করার মত কেউ পাশে ছিল না, কথায় আছেনা যার কেউ নেই তার জন্য উপরওয়ালা আছে।
আমার এক বোনের সহায়তায় আমাদের নিজ এলাকায় ছোট্ট একটা বাসা নিয়ে আমরা দুজন থাকতাম। শুরু হয়ে গেল জীবনের সবচেয়ে বড় দু:সময়। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি আমি বিয়ের পরেই কিন্তুু নিজের পরিবারের কথায় চট্টগ্রাম ছেড়ে নিজের এলাকায় চলে আসি। সেখানে ও একটা ভুল করলাম। অনেক কষ্টে নিজ বাজারে একটা দোকানে কাজ নিয়েছিলাম। চলতে খুব কষ্ট হতো। কখনো একবেলা কখনো না খেয়ে। কারণ কাজের উপর নির্ভর করত টাকা। গ্রামের বাজারে এতো কাজ ছিলনা। কি করব।, চলছে কোনরকম। যা ইনকাম হত দুজনে কোন রকম চলতো তেমন কিছুই ছিলনা, একটা প্লেটে দুজনে মিলে খেতাম। আমার পরিবার প্রবাসী বাবার আদরের বড় মেয়ে ছিল, কিন্তুু ভাগ্যর পরিহাস আমার জীবনে এসে বেচারির জীবনটাও কষ্টে ভরে গেল, কিছু বলতো না আমার সাথে সবসময় মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, সবসময় ভরসা দিত। আমি যাতে ভেঙে না পড়ি।
২০০৮ সাল জুলাই মাসের ১৫ তারিখ আমার পরিবারের ডেলিভারি পেইন শুরু হয়ে গেল হাতে শুধু ৩০০ টাকা ছিল। রাতের আধাঁরে কাউকে পাশে পাইনি। নিজেই ওকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম অনেক কষ্টের বিণিময়ে আমার ঘর আলো করে আমার বড় মেয়ে আগমন হলো। হাসপাতালে ওকে দেখার মত কেউ ছিল না, পরিবারের গলার চেইন বন্ধক দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনি। একটা কথা সবাই জানেন মেয়েরা নাকি ঘরের লক্ষী।
সেই লক্ষী আমার ঘরে আসার পর কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করলো। আমি জানিনা কি ঠিক কি বেঠিক, তবু সময় চলে তার মত করে, শুধু আমরা পারিনা সময়ের দাম দিতে। আমার মেয়ের এক দেড় বছরের মাথায় আমি ভাল কাজের আশায় আমার পরিবার নিয়ে চলে যাই পাশ্ববর্তী উপজেলা ছাগলনাইয়া বাজারে। ওখানে এক ভাইয়ের দায়িত্বে আমি একটি জুয়েলার্সের দোকানে সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করি। বেতন ৫০০০ টাকা ছিল সাথে হাতের কাজও করতাম। মোটামুটি ভালোই চলছে।
কিছুদিন যাবার পর আমার পরিবার চিন্তা করল ও কিছু করবে, আমাকেও বলতো আমি রাজি হতাম না, অনেক চিন্তার পর ভাবলাম দুইজনে মিলে যদি কিছু করি তাহলে হয়তো সংসারে সচ্ছলতা আসাবে। ওর শখ ছিল পার্লারে কাজ শিখবে, তাই ওকে কাজ শিখতে দিলাম। ৬ মাস অক্লান্ত প্ররিশ্রম করে কাজ শিখলো। যেখানে কাজ শিখতো ওর ম্যাডাম ওর কাজ দেখে সেলারি ধরল মাসিক ৬০০০ টাকা। দুই জনেই মোটামুটি ভালোই চলেছে ওর টাকা কিছু সঞ্চয় করত আর আমার টাকা দিয়ে সংসার চলতো। তারপর ও স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো নিজে পার্লার খুলবে, কিন্তুু ভালো করে দিতে গেলে অনেক টাকার দরকার কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, তারপর আমি যে ভাইয়ের দায়িত্বে ছাগলনাইয়া বাজারে আসছিলাম উনাকে শেয়ার পার্টনার বানিয়ে আমার পরিবারের কিছু জমানো টাকা আর গহনা বিক্রি করে ছাগলনাইয়া বাজারে একটা পার্লার দিয়েদিলাম ২০১৩ সালে।
কি সবাই ভাবছেন সুখ বুজি ওদের ধরা দিল তাহলে...
হুম সুখ পাখি ধরা দিয়েছিল আমাদের সংসার সুন্দর চলছে, দুজন দুজনের কাজে খুব ব্যস্ত টাকার পিছনে ছুঁটছি। ও ওর মত কাজ করছে। সংসার আমাদের মেয়ে ওর পার্লার নিয়ে খুব ব্যাস্ত হয়ে গেল।
কিন্তুু আমি,
ধীরে ধীরে কেমন হয়ে গেলাম, কথায় আছেনা টাকা থাকলে বন্ধুর অভাব হয়না আমিও সেরকম কিছু খারাপ বন্ধু পেয়েছিলাম। হয়তো অনেকে বলবেন কত টাকা পেতেন আপনি? আমি যে দোকানে চাকরি করতাম সেখানে মালিক আমার কাজ আর পরিশ্রম দেখে ৫০০০ থেকে ৮০০০ বেতন দিত সাথে কাজের মজুরিসহ মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আসতো। আবার পার্লার থেকেও ১৫-২০ হাজার আসতো। ভালো একটি বাসা নিলাম এবং মেয়েকে ভালো স্কুলে ভর্তি করালাম। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের মতই চলছিল আমাদের।
আবারও ভুল পথে পা বাড়ালাম, হয়ত বলবেন এত কষ্ট করার পরও কেন ভুল পথে গেলেন? সঙ্গদোষ! মানুষ ভালো মানুষর পাশে থাকলে ভালো কিছু শিখে আর খারাপের সাথে থাকলে খারাপ হতে বাধ্য করে যেটা আমার হয়েছিল।
জড়িয়ে গেলাম নেশার জগতে। দিন দিন মাদকে আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, টাকা যাই ইনকাম হতো বেশিরভাগ নেশার পেছনে খরচ করে ফেলতাম পরিবারের প্রতি অনিহা, সংসার ঠিকমত চালাতে পারতাম না পরিবারে সাথে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো, আমার পরিবার অনেক বুঝিয়েছে কিন্তুু আমি বুঝতাম না। ও কি করবে বলুন, আমি যা পারতাম সামান্য কিছু দিতাম বাকিটা দিয়ে ও সংসারটা চালাতো। দিনে চাকরি করতাম রাত হলে নেশা করে বাসায় যেতাম, কতদিন ধৈর্য্য ধরবে একটা মেয়ে যে তার স্বামী প্রতিদিন নেশা করে বাড়ি ফেরে, তার উপর অত্যাচার করে।
কি ভাবছেন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে?
না ভুল ভাবছেন। এত কিছুর পরও আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমাকে ভালো করার জন্য যতরকম চেষ্টা আছে ও করছে কিন্তুু পারেনি আমাকে ফেরাতে। এখন আপনারাই বলুন, এখানে আমার কিসের অভাব ছিল কেন আমার জীবনটা এমন হলো। এটা ছিল আমার দেশের গল্প।
বর্তমানে আমি এবং আমার স্ত্রী এই প্লাটফর্ম এর নিয়মিত একজন সদস্য। আপনারা শুনে আরো অবাক হবেন! যে আমার স্ত্রী কিন্তুু আমাকে এই প্লাটফর্ম এর সন্ধান দিয়েছেন।
দ্বিতীয় পর্বে শুনাবো আমার প্রবাসের গল্প। আজ এই পর্যন্ত, জানি না আপনাদর কাছে কেমন লাগবে, লেখায় যদি ভুল থাকে ক্ষমা করে দিবেন।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৭৮
১৩-০৭-২০২০
নাম: রাজীব বনিক
রেজি : ১৮৭৯৯
জেলা : ফেণী, ছাগলনাইয়া
ব্যাচ : দশম
ব্লাড : এ +
পেশা : chef (commis3)
বর্তমানে বাহরাইন প্রবাসী।
মোবাইল :+৯৭৩৩৭২৯৮৩৩১
জিমেইল : rajibbanik797@gamil.com