গ্রাম_থেকে_উঠে_আসা_এক_নারী_উদ্যোক্তা_হওয়ার_গল্প
শুরু করছি পরম করুণাময় আল্লাহর নামে,
আসসালামু আলাইকুম,
#গ্রাম_থেকে_উঠে_আসা_এক_নারী_উদ্যোক্তা_হওয়ার_গল্প!
#সর্বপ্রথম শুকরিয়া আদায় করছি মহান রাব্বুল আলামিনে দরবারে, যিনি আমাদেরকে "আশ্রাফুল মাখলুকাত" হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অালহামদুলিল্লাহ্,
#ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের সকলের পথ প্রদর্শক জনাব, #Iqbal_Bahar_Jahid স্যারের প্রতি। যার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতী উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এবং কি অনেকেই সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
স্যার আপনার জন্য রইলো অগণিত দোয়া ও ভালোবাসা।
🌹খুলনা, খালিশপুর আমার জন্ম। বাবা তখন খুলনা চাকুরী করতেন। সেখানে আমাদের বাড়ি ছিলো। সবকিছু বিক্রি করে ২০০৫ সালে বাবা আমাদেরকে নিয়ে গ্রামে চলে আসেন।
🌹#জন্ম যদিও শহরে, শৈশব থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত গ্রামেই বেড়ে ওঠা। কি সুন্দর মনোরম পরিবেশ, মাঝেমাঝে সবুজ প্রকৃতি যেন মন খারাপে সঙ্গ দিতো।
🌹#মা আমার অনুপ্রেরণা🥰
🍀ছোটবেলায় যখন নানার বাড়িতে, মামার #মক্তবে পড়তাম রীতিমত যাওয়া হতো না। খুব ভোরে দের কি.মি. পথ হেটে রোজ পড়তে যাওয়া, দেরি করে গেলে বেতের বাড়ি খাওয়া😥 না গেলে বিভিন্ন রকমের শাস্তি। খুব কান্না করতাম। মা প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে আমাকে আর আমার বোনকে পড়তে পাঠাতেন। কখনো গুড়-মুড়ি, চানাচুর, বিস্কুট কখনো পিঠা, আবার কখনো চিড়া/মুড়ির মোয়া দিয়ে মা আমাক বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠাতেন।😋 পড়ার ফাঁকেফাঁকে #মামা যখন এদিক ওদিক তাকাতেন আমি সু্যোগ বুঝে একটু খেয়ে নিতাম। দেখে ফেল্লেই মারতেন 😢 কি অবস্থা পড়ার জন্য খেতেও পারবো না, মনে মনে বকে দিতাম🤬
🍁আমি পথে বোনকে খুব জালাতন করতাম, একটু হেটে বসে পড়তাম ও বারিতে এসে নালিশ দিত😥
মা আপুকে বুঝাতো, ও ছোটো বুঝে না তাই এমন করে; বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।
💐একদিন বায়না ধরেছিলাম পড়তে যাবো না, হাটতে কষ্ট লাগে #জোর করে পাঠালেন চিল্লায় কান্না করছি তবুও নিস্তার পাই নি।
ছোটো মামা সব শুনে বললেন, মামাদের বাড়িতে একেবারেই থেকে যেতে ওনার তখন পাঁচ ছেলে কোনো মেয়ে নেই। মামা আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। আমিও ও বাড়িতে থেকে কোরান শরিফ খতম করলাম। এরপর নূরানি মাদ্রাসায় এক বছর পড়লাম। আমার আপু তখন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। আমিও মনস্থির করলাম স্কুলে পড়বো, আপু আমাকে একদিন স্কুলে নিয়ে আসলো ওর সাথে। আমার কাছে স্কুলের পরিবেশ খুব ভালো লাগলো। পরিবারের সম্মতিতে আপু আমাকে স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিলো। তখন আমার জন্য কোনো প্রাইভেট টিচার ছিলো না। পরিবারের কেউ পাশে ছিলো না শুধু মায়ের ওই কথাটাই ছিলো বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে পড়াশুনা করে ভালো মানুষ হবো। কখনো নানার বাড়ি কখনো খালার বাড়ি থেকেই স্কুলে যেতাম। আপু যেই গাইড পড়ে ফেলতো পরের বছর আমি সেগুলি পড়তাম। পারিবারিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিলো না। কারন আমাদের পরিবারে সদস্য ছিলো বেশি। বাবা একাই উপার্জন করতেন। সেখান থেকে পি এস সি পরীক্ষা দিলাম ২০০৯ সালে। তখন দিনে দু বিষয় পরিক্ষা হতো আমাদের। আমার সহপাঠীদের মধ্যে অনেকের অভিভাবক সাথে আসতো এক বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গেলে বিরতি দিতো তখন ওরা খুব হাসি-খুশি থাকতো। কিন্তু আমি মন খারাপ করে থাকতাম, আমার সাথে যাওয়ার মত কেউ নেই বাবা চাকুরী করে, মা ঘর সামলাতেই ব্যস্ত, বড় ভাই ও নেই😥 খালার বাড়িতে থেকে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিলাম।
🍀বাবা চাকুরী করতেন চট্টগ্রামে, ছয়/চারমাস পর এক সপ্তাহের জন্য বাড়ি আসলেও আমাদেরকে তেমন সময় দিতে পারতেন না। পারিবারিক কাজে এদিক ওদিক যেতে হতো। তবে বাবা আমাদেরকে অনেক ভালোবাসতেন। সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতেন আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে। #বাবা সবসময় বলতেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, তোমাদের মায়ের কথামত চলবে।
🍀সমাপনী পরীক্ষায় পাস করার পর আপু আমাকে, ও যেখানে পড়তো সে স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। বাড়ি থেকে স্কুলে আসা যাওয়া করতাম। একদিন স্কুলে গেলে ১ সপ্তাহ যাওয়া হতো না, নতুন স্কুল বন্ধু -বান্ধব নেই। বাড়ীর পাশে যখন জমিতে চাষ দিতো ওখানে চালনি বা ঠেলা জাল নিয়ে মাছ ধরতাম, কাদা নিয়ে খেলতাম, গাছে গাছে বগারে বগা খেলতাম। নারিকেলের মালা, সুপারির খোল, মাটির হাড়ি পাতিল ছিলো আমাদের খেলার আসবাবপত্র।
🍀এভাবেই দিন যাচ্ছে, স্কুল থেকে একদিন দুলাল স্যার ( আমাদের প্রধান শিক্ষক) কল করে মাকে অনেক কথা শুনালেন আমি স্কুলে যাই না তাই😥 সেদিন মা আমাকে স্কুলে যাওয়া নিয়ে প্রথম মারলেন। সেদিন আর স্কুলে গেলাম না জিদ করলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আর স্কুল গ্যাপ দেব না দেখি কিভাবে মারে।
🍀আর কখনো স্কুলে যাওয়া নিয়ে বকাবকি করতে হয়নি। নিজেই রেগুলার স্কুলে যেতাম, ঠিকমত পড়াশুনা করতাম।
অন্যান্য বিষয় নিজে নিজে পড়লেও গণিত বিষয়ে দূর্বল ছিলাম। মাকে বললাম মা প্রাইভেট পড়ার অনুমতি দিলেন। জীবনে সপ্তম শ্রেণিতে, বিক্রম স্যারের কাছে প্রথম প্রাইভেট পড়া শুরু করলাম।
🍀২০১২ সালে জে. এস. সি পরীক্ষা দিয়ে ৩.২৯ পেয়ে কোনোভাবে পাস করলাম। আমার পরিবারের সবাই সেদিন অনেক খুশি হয়েছিলেন। সবাইকে #মিষ্টি খাইয়েছে। কারন তখন আমাদের বাড়িতে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া আমিই একমাত্র মেয়ে। সারাবছর পড়াশুনা যাই করেছি পরীক্ষার সময় অসুস্থ থাকার কারনে ভালোভাবে লিখতে পারিনি তাই রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হয়েছিলো।
🍀অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে একটা কারিগরি বোর্ডের পরিক্ষায় আমি আর আমার বান্ধুবি কলি স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। সেখানে পরীক্ষার পর যে কোনো কোর্স হাফ বেতনে শেখাবে বলেছে। কিন্তু মা রাজি হয়নি, কারন আমি তখন বসুরহাট, কলেজ রোড চিনতাম ও না বয়স ও কম😥 মাকে বুঝিয়ে বাড়ির পাশে এক খালাম্মার কাছে ২৬০০ টাকা দিয়ে দর্জির কাজ শিখলাম মত্র ২১ দিনে।
লেডিস আইটেম... আব্বা মেশিন কিনে দিলেন। সেই থেকে ঘরের কাপড় নিজেই সেলাই করতাম।
🍀এরপর, নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। অফিস থেকে স্যার ডেকে পাঠালেন কে কে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে চায় আমিসহ আরো কয়েকজন অফিস কক্ষে গেলাম স্যার জে. এস. সি পরীক্ষার রেজাল্ট জানতে চাইলো বললাম। সেই কি ধমক! এই রেজাল্ট নিয়ে সাইন্স থেকে পড়বে? সাইন্স বানানা কর😥 ততক্ষণে ভয়ে চুপসে গেলাম। বাকিরাও কোনো ভাবে দাঁড়িয়ে আছে সবাইকে এভাবে দু একটা প্রশ্ন করে ছেড়ে দিলো। কোনোভাবে ক্লাসে আসলাম মনটা খুব খারাপ😥 চারজন ছেলে আর একটা মেয়ে ছাড়া আর কেও সাইন্স নিয়ে পড়ার সাহস করলো না।
🍀কয়েকদিন পর স্যার আমাদেরকে অফিসে ডাকলেন এবং বললেন সাবরিনা একা সাইন্স নিয়ে পড়লে ওর আনইজি লাগবে, ওর বাবা বলেছে আরো দু, তিনজনকে সাইন্স দিতে তাই তোমাদেরকে ডাকলাম। আমরা কিছুই বলছি না, পরে আবার জিজ্ঞেস করলো আমরা বললাম স্যার আপনি যা ভালো মনে করেন।
🍀২০১৫ সালে সাইন্স থেকে এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে ৪.১৭ পেয়ে পাশ করলাম। পরিবারের সবাই সেদিন খুব খুশি কারন আমাদের বাড়িতে প্রথম আমিই এস. এস. সি পাশ মেয়ে। এখনো আর কেউ নেই....
মা খুশিতে সবাইকে মিষ্টি মুখ করালেন।
🍀অনেক হয়েছে, মেয়ে মানুষের এত পড়তে হয় নাকি😎 হিসেব বুঝে নাম ঠিকানা লিখতে জানে, হাতের কাজ জানে আর কি... সংসার সামলাতে এটাই যথেষ্ট। এবার বিয়ের পালা...! যতই পড়ুক, চুলা গুতাইতে হবে😥 বেশি পড়লে আবার বিয়ের জন্য বড়লোক আসবে না ঘিনে গরিব আসবে না ভয়ে মামা, খালা, প্রতিবেশীর নানা উক্তি.....
🍀মা চিন্তায় পড়ে গেলেন কি করবেন🤔🤔🤔
আব্বাকে অনেকেই বুঝিয়েছে কলেজে পড়লে লক্ষলক্ষ টাকা লাগবে, সাইন্স নিয়ে পড়লেতো আরো অনেক কোটি টাকাও লাগতে পারে এত টাকা আব্বা কই পাবে। আমি একা নাকি ছেলে মেয়ে আরো আছে ওদেরকে দেখতে হবে না। এক সময় বলেই দিলেন আর পড়তে হবে না😥
🍁আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলাম মন খুব খারাপ😥 এদিকে সহপাঠীরা কল দিচ্ছে, কোন কলেজে ভর্তি হবি, কবে? ওদেরকে বললাম পরে জানাবো। আমি অনেক ভাবলাম কি করা যায় হঠাত বড় দুলাভাইর কথা মনে পড়লো ওনাকে ফোনে সব জনালাম। উনি তখন
বিকাশে পাচ হাজার টাকা পাঠালেন আর বললেন কলেজে ভর্তি হতে যা হওয়ার পরে হবে।
🍁আমার বান্ধুবি পল্লিকে কল দিলাম ও ওর বাবাকে আমার কথা বলল। পরে ওদের সাথে যেয়ে সব ঠিকঠাক করে কলেজে ভর্তির আবেদন করলাম। পরে মানবিক বিভাগ থেকে কলেজে ভর্তি হলাম। মন খারাপ সাইন্স নিয়ে পড়া আর হল না😥 কাছের বান্ধুবিটাও নোয়াখালী মহিলা কলেজ ভর্তি হলো। আমি একা হয়ে গেলাম। কলেজ, প্রাইভেট, টিউশন, টুকটাক সেলাই কাজ এভাবে পার করলাম দু'বছর। কত কথা শুনলাম চারিদিক থেকে সে আর নাইবা বলি...... ২০১৭ সালে এইস, এস, সি. তে ২.৯২ পেয়ে কোনো ভাবে পাশ করলাম। সে ব্যাচে আমার স্কুল ফ্রেন্ড রা অনেকেই ফেল করলো মন খুব খারাপ হয়ে গেলা 😥
🍀আর পড়া লাগবে না ঠেলিঠুলি আই এ পাশ করছি দেখতে শুনতেও মোটামুটি ভালো ঘর পাওয়া যাবে, বর যেমন হোক😄 এখানেই ফুল স্টপ.... কিন্তু আমি এতে নারাজ।
অনার্সে ভর্তি হবো, আবার ভাবি এ রেজাল্ট নিয়ে চান্স পাবো🤔
যাইহোক নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সু্যোগ পেলাম।
🥰#আমার_মা আমাকে সবসময় সাপোর্ট করেছেন। ছোটো ছোটো চাওয়াগুলি পুরন করেছেন। নিজে না খেয়ে আমাদেরকে খাইয়েছেন।
#বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। যা এখনো অব্যাহত। এখনো বাবা লোকাল গাড়িতে চড়েন, যেনো ভাড়া কিছু কম লাগে। বাবাকে কোনো ঈদে শপিং করতে দেখিনি। #বাবা_ময়ের এ ত্যাগের মহিমা কোনোদিন ম্লান হওয়ার নয়।
আল্লাহর কাছে মা-বাবার নেক হায়াত কামনা করি। অনেক ইচ্ছে ছিলো সংসারের হাল ধরবো.... আমি যে #মেয়ে এসব ইচ্ছে করতে নেই😥😥
🍀২০১৮ সালে অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ১৯ অক্টোবর পারিবারিক সম্মতিতে ঘরোয়া ভাবেই #বিবাহ সম্পন্ন হয়। তখন আমি নোয়াখালী সরকারী কলেজের ছাত্রী নিবাসে থাকতাম। বিয়ের পর পরীক্ষার তাগিদে আবার চলে গেলাম ছাত্রী নিবাসে পরীক্ষা শেষ হলো। চিন্তায় পড়ে গেলাম, কলেজ হোস্টেলের নিয়ম অনুযায়ী বিবাহিত মেয়েদের সিট ক্যান্সেল করে দেয়া হয়, তাই পরিবারের সাথে আলোচনা করে ৫ ই নভেম্বর এপ্লিকেশন জমা দিয়ে সবকিছু মিটমাট করে বাড়ি চলে আসি।
🍀তখন আমার স্বামী চট্টগ্রামে কে,ডি,এস. আই.ডি.আর এ চাকুরীরত। আমাকেও নিয়ে আসে চট্টগ্রামে, ৮ তারিখে বাড়ি থেকে চলে আসলাম সাগরিকা, বড় আপার বাসায় সেখান থেকে কক্সবাজার। ঘুরেফিরে ১১ তারিখে নিয়ে আসলো ভাড়া বাসায়। বিস্তারিত অন্যদিন লিখবো....
🌷শুরু হল সংসার জীবন।
স্বামী ডিউটিতে চলে গেলে বাসায় একা একা থাকতাম। এখানে বেশির ভাগ মানুষ কর্মব্যস্ত তাই কারো সাথে তেমন সাক্ষাৎ হতো না।
🌿প্রথম বর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হলো। দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করলাম। স্বামী বই-পুস্তক কিনে দিলো মাঝে মাঝে পড়তাম। ক্লাস না করায় পড়ায় মন বসতো না😥
সারাদিন নিউজ ফিডে ঘুরে ঘুরে সময় কাটানো কেমন যেনো বিরক্তিকর হয়ে গিয়েছে, আর ভালো লাগে না😢 যদি নতুন কিছু করতে পারতাম।
🌻#দ্বিতীয় বর্ষের ফরম ফিলাপের দিন তারিখ ঘোষণা হলে। একদিন ও ক্লাস না করায় স্যার ফরম ফিলাপে অসম্মতি জানাল😥 স্বামী ও বুঝালো যে, তুমি অসুস্থ পরীক্ষা দিতে পারবা না বাদ দাও। বাদ দেওয়া কি এত সহজ আমি কিছুতেই মন কে স্থির করতে পারলাম না। #অনেক কষ্টে স্বামীকে বুঝাতে সক্ষম হলাম। এবার স্যারের পালা, ডিপার্টমেন্ট হেডের নাম্বার নিয়ে ভয়ে ভয়ে কল দিলাম... সব কিছু বুঝিয়ে বলাতে তিনিও ফরম ফিলাপ করাতে রাজি হয়ে গেলেন। Mohammad Ullah Rakib ভাইয়ের মাধ্যমে ফরম ফিলাপের কাজ সম্পন্ন করি। কারন তখন আমি #সন্তান সম্ভাবনা। শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারনে ঠিকমত বসতেও পারতাম না😥 তবুও কষ্ট করে এসাইনমেন্ট লিখে ভাইয়ের কাছে কুরিয়ারে পাঠাই। আর আল্লাহ্ কে ডাকতে থাকি পরীক্ষার ডেট যেনো পিছিয়ে যায়...
🍀নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য প্রতিনিয়ত ভাবতাম কি করা যায়। "৩১ আগস্ট ২০১৯ " ছেলে সন্তানের মা হলাম। এরপর থেকে ওকে নিয়েই সময় কাটাই।
🌻পরীক্ষার রুটিন দেয়, ছেলের বয়স দের মাস😥 মনটা খারাপ ওকে রেখে কিভাবে যাবো তবুও মনে সাহস রাখি। মায়ের সাথে বাড়ি চলে গেলাম, পরীক্ষার রুটিন চেইঞ্জ হল। #ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের কারনে.... দেখতে দেখতে বাবুর ২ মাস ১০ দিনের দিন আমার পরীক্ষা শুরু হয়। ৯ অক্টোবর..
🌴মন খারাপ বাবুকে ফরমুলা দুধ দিয়ে মায়ের কাছে রেখে যেতে হবে ওর বাবার নিষেধ সাথে নেয়া যাবে না। 😥 ছোটো বাচ্চাদের গাড়ির বাতাসে ক্ষতি হয় তাই, তাছাড়া তখন ঠান্ডা পরছিল।
মন কে কঠোর করে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে রাফসান কে নানুর কাছে রেখে পরীক্ষা দিতে চলে গেলাম, ১১.৩০ এ গেলে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যেতো 😥 কারন গ্রামের দিকে সময় মত গাড়ি পাওয়া যায় না, বারতি সময় হাতে রেখেই বের হতাম। এভাবে পরীক্ষা শেষ করলাম। পরীক্ষার ১ দিন পরে আবার চট্টগ্রামে চলে আসি তখন গ্রামে প্রচুর ঠান্ডা ছিলো বাবুর কথা ভেবে চলে আসলাম। এদিকে ওর বাবার ও রান্নাবান্না করে খাওয়াটা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো।
🌿পরীক্ষা দিয়ে আসার পর আর যাওয়া হয় নি গ্রামে।
🌻ছেলের বয়স ৭ মাস ছেলে এখন বসে, ও ঘুমালে আমি আবার একা সারাদিন কোনো কাজ নেই। সকালে আর রাত্রে রান্না টুকটাক নাস্তা এখানেই সীমাবদ্ধ আর ভালোলাগে না। আবার আইডিয়া খুঁজতে থাকি কি করা যায়.....?
এখানে আমার এক ফ্রেন্ড Jahed Sikdar Ansariআছে চট্টগ্রাম সিটি করেজে পড়ে আনোয়ারা বাড়ি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত কিছু একটা করতে চাই প্লিজ পরামর্শ দে। ও নিজস্ব পরামর্শ পাশাপাশি "নিজের বলার মত একটি গল্প" গ্রুপে জয়েন্ট হতে বলে।
🌻আমি সাথে সাথেই সার্চ দিলাম, পেয়েও গেলাম। গ্রুপের সব নিয়ম-কানুন পোস্ট পড়তে লাগলাম আমার বেশ ভালো লাগলো। এপ্রিল এর ২০ তারিখে জয়েন্ট হলাম গ্রুপে প্রথমে বুঝতে একটু কষ্ট হয়েছে আস্তে আস্তে বুঝতে সক্ষম হলাম।
🌻রেজিষ্ট্রেশন করতে সহযোগীতা করেছেন #ইমরান_হোসাইন ভাই ওনার কাছ থেকে অনেক কিছুই যানতে পারলাম। ২২ তারিখে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হলো। ভাইয়ের এই উপকার আমি আমরণ মনে রাখবো। ইনশাআল্লাহ.....
🍱ছোটো বেলা থেকেই হরেক রকমের রান্নাবান্না আর নাস্তা বানানো ছিলো আমার নেশা, সু্যোগ পেলেই #রাঁধুনির ভেশ ধরতাম যাই পারতাম রান্না করতাম। মাশা আল্লাহ্ সবাই প্রশংসা করতো....!
চাচা শশুরের বাসায় বেড়াতে গিয়েও তাদেরকে পিঠা বানিয়ে খাইয়েছিলাম। যদিও ভয়ে ছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ্ সবাই প্রশংসা করেছিলো। আর চাচি শাশুড়ি আমার🎶 গান শুনে খুব খুশি হয়েছিল।
🍂আরেকটা কথা, ফেব্রুয়ারি মাসে আমার হাসবেন্ড অফিস থেকে কলিগরা সহ রাঙামাটি পিকনিকে গিয়েছিলো। তখন আমি #স্প্রিং_রোল আর #নারিকেল_পুলি পিঠা সবার জন্য নাস্তা দিয়ে ছিলাম যা ছিলো তাদের কল্পনাতীত।
💐সবাই অনেক খুশি হয়েছি, তাদের সুন্দর রিভিউ পেয়ে আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে। সেদিন আমার হাসবেন্ড ও খুব খুশি হয়েছিলো। গত কাল ও #আমিন ভাই বল্ল সেই নাস্তার কথা....
🌼#সাতপাঁচ না ভেবেই🤔 সিদ্ধান্ত নিলাম আমি যেটা ভালো পারি সেটা নিয়েই কাজ করবো। লোকে যা বলার বলুক...
#পাছে_লোকে_কিছু_বলে তাতে আমার কি😎
🌻#স্বামীর মতামত জানতে যাইলে সে বলল তোমার যা মন চায় কর। তবে অতিরিক্ত প্রেশার নিও না কারণ বাচ্চাটা এখনো ছোটো 😍
অতঃপর,
"Rafsan_Online_Food_Shop &রাফসান পিঠা ঘর" বর্তমান নাম #FM_FOOD নামে একটা পেইজ খুললাম।
🌻এদিকে স্যারের সেশনগুলি পড়ছি শিখছি। বিজনেস নিয়ে আমার এত তাড়া নেই, আমি #গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যেতে চাই। কারণ আমি মনেপ্রাণে ধারন করি যে, ধির এবং স্থিররাই জয় লাভ করে।
🌻এরপর গ্রুপে সবার পোস্ট পরতে থাকি, কমেন্ট করি। নিজেও ২ একটা পোস্ট দেই। উচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রেগুলার পোস্ট দেওয়ার সাহস হয় না, সংকোচ কাজ করে আর বাবুর জন্য টাইপ করতে একটু সময় বেশি লাগে।
🌻ইতোমধ্যে পেয়ে যাই, আমাদের নোয়াখালী ড্রিস্টিক এম্বাসেডর Akm Fakhrul Islam ভাই কে। ভাইয়া ও সহজে কিছু বুঝিয়ে বলেন। ওনার সাথে পরিচিত হতে পেরে খুব ভালো লাগলো।
🌺যাইহোক, একদিন Rasel Rasul ভাইয়ের সাথে মেসেঞ্জারে কথা হয়। ভাইয়া আমার লিখার প্রশংসা করে এবং কি লিখার উৎসাহ দেয়। এখন একটু একটু লিখি আর যথাসময় একটিভ থাকার চেষ্টা করি।
🌺আপুদের সহযোগীতায় #গার্লস গ্রুপেও এড হয়েছি। যতদিন যাচ্ছে ততই অনুপ্রাণিত হচ্ছি। সকলের সফলতার গল্প শুনে নিজেও প্রস্তুতি নিচ্ছি #নিজের বলার মত একটি গল্প তৈরি করার। জানি না কবে সফল হবো।
🌻#এইগ্রুপ না থাকলে এতকিছু, এত পরিবর্তন সম্ভব হতো কি না জানি না। হয়তো এভাবে কথাগুলি নিজের মধ্যেই সিমাবদ্ধ থেকে যেতো। তাই সর্বাবস্থায় আমাদের প্রিয় মেন্টর #ইকবাল_বাহার_জাহিদ স্যারের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। আল্লাহ্ ওনাকে সুস্থতার হায়াত দারাজ করুন এটাই প্রার্থনা।
🍁#খুব_আপসোস হয় আরো আগে কেনো এই গ্রুপের কথা জানতে পারলাম না, যদি জানতাম তাহলে এত সময় অপচয় হতো না। #সবাই দোয়া করবেন ভবিষ্যতে যেনো একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের বলার মত গল্প তৈরি করতে পারি।
#এখন থেকে প্রতিটি সময় যেনো কাজে লাগাতে পারি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত রেখে শেষ করছি।
সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ।
দোয়াকরি সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আল্লাহ্ হাফেজ।
♦ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন প্লিজ😘
ধন্যবাদ সবাইকে।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮০
১৬-০৭-২০২০
ফারজানা আক্তার
১০ ম ব্যাচ
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার: ১৪২০২
ব্লাড গ্রুপ: "ও" পজেটিভ
পড়াশুনা: অনার্স (৩য় বর্ষ)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নোয়াখালী সরকারি কলেজ।
জেলা: নোয়াখালী।
বর্তমানে স্বামীর চাকুরী সুবাদে চট্টগ্রামে আছি।
কাজ করছি হোমমেড ফুড, পিঠা,#কেক, মিষ্টি, বিশেষ করে আমাদের নোয়াখালীর বিখ্যাত #নাড়িকেলের_নাড়ু ও ম্যারা পিঠা নিয়ে।https://www.facebook.com/FM-FOOD-104807017895567/