আমার জব সাইডের বড় সমস্যা ছিলো সবাই একসাথে টিউশনি হয়না। আর যে কোন জায়গায় আছে, টিউশন হয়ে
নমস্কার 🙏
আমাদের জীবনের শুরু থেকে, আমরা নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হই এটা আমাদের কাজ। তাই আমিও কিছু নতুন ভালো মনের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি।
প্রথমে আমার কথা বলি।
নামঃ মন্টি সরকার ( নন্দিতা)
শিক্ষাগতযোগ্যতাঃ বি.বি.এ অনার্স ৩য় বর্ষ, বিষয় - মাকেটিং।
পেশাঃ শিক্ষিকা😍 ২ বছর ৫মাস হলো এই মহৎকর্মের যুক্ত আছি 🤗
পরিবারঃ বাবা মা💑+ ছোট ২ বোন,👩❤️👩 আছে।
আমি বাবা মা' র প্রিয় আদরের প্রথম মেয়ে🥳
সবাই আমাকে বলতো মেয়ে মানুষ,
পড়ালেখা করে কি ব্রিটিশ হবি?
সাল ২০১১ তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি জেএসসি পরীক্ষা দিব, মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ে যার বাসায় বাসায় পড়ানোর মত টিচার নেওয়ার অবস্থাটা ছিলো না। আমার সব সহপাঠীদের বাসায় ২থেকে ৩টা টিচার বাসায় যেতো, আর যদি আমার কথা বলি! শুধু স্কুলের কোচিং সেন্টারের পড়তাম, কারণ পরিবারের সব খরচের মেটানোর পর আমার পরিবারের পক্ষে আমার জন্যে টিচার বাসায় রাখবে, এমনটা সম্ভব ছিলো না। থাক এসব অভাবের কথা- মনে হলে যেনো আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ছে, দু চোখের পানি আটকানো সম্ভব হয় না, হৃদয়ের যেনো রক্তক্ষরণ হয়। তবে এটা নিয়তি মেনে নিলাম। যাই হোক নাইবা লিখি, মজার স্মৃতি গুলোই নিজের জীবনকে আরো উচ্ছ্বাসিত করে তুলেছে, সেরকম ঘটনাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম - জীবনে প্রথমবার সরকারি বোর্ড পরীক্ষা দিবো, মায়ের সাথে পরীক্ষা হলে গেলাম মনে মনে যারা অনেক আশায় করে, তাদের বুঝি এমনি হয়। পরীক্ষা হলে ঢুকতে যাবো প্রথমেই পায়ে সাথে পা লেগে গিয়ে হলভর্তি ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে মাঝেতে পড়ে যাই, সবাই হাসাহাসি শুরু করলো। যাক কষ্ট পাই নাই এক বন্ধু সাহায্য করলো আমি উঠে দাঁড়ালাম খুঁজে বের করলাম আমার পরীক্ষার সিট, দেখি প্রথম বেঞ্চে আমার পরীক্ষার সিট পড়েছে ভয় সয়ে একাকার, হঠাৎ যেনো বাঘ এসে সামনে দাড়ালো এমন ভয়। বুকটা ধরপর ধরপর করছিল যাই হোক অবশেষে পরীক্ষা টা দিয়ে দিলাম। সব দিনের পরীক্ষা আমার ভালো হয়েছিলো। পরীক্ষা শেষ হলো ১ মাস পর আমার জিএসি রেজাল্ট বের হলো মোটামুটি ভালো একটা রেজাল্ট আসলো আমার, স্কুল জুড়ে বেশ ভালো একটা নাম হলো যে নন্দিতা পরীক্ষা দিয়েছে, ভালো রেজাল্ট করেছে। বাবা মা পরিবার স্কুলেের সবাই ☺ খুশি আমিও অনেক খুশি ছিলাম। ২ বছর আমার এসএসসি পরীক্ষা চলে আসলো -------
২০১৪ সালটা আমার কাছে অনেকটাই প্রিয় কারণ জীবনের দশটা বছর পড়াশোনা করে। এই বার পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্যে একটা বাসায় টিচার রাখা হলো, ভালো ভাবে পড়ে প্রস্তুতি নিলাম পরীক্ষার জন্য, বোর্ড পরীক্ষা দিলাম, বেশ ভালো হলো রেজাল্ট মোটামুটি ভালো আসলো। দুর্গা দুর্গা বলে কলেজে ভর্তি হলাম কলেজে। এই দু'বছরো বেশ ভালো কাটলো। তো অনেক বন্ধু-বান্ধবী ছিলো হৈ-হুল্লোড় আর মজায় কেটেছিলো দিনগুলো, জীবনের অন্য রকম আনন্দ। দুই বছরের কষ্ট শেষে পরীক্ষা দিলাম পরীক্ষা মোটামুটি ভালো দিয়েছিলাম, ভাগ্য দোষে আমার একটি বিষয়ে খারাপ আসে। মেজাজটা খুব গরম হয়েছিলো, তার পরেও স্বাভাবিকভাবে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় শুরু করলাম কঠোর পরিশ্রম, তবে সেটার জন্য আমাকে একটা বছর অপেক্ষা করতে হলো, এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ ঘরে ছিলাম পড়াশোনা নিয়েছিলাম, এক বছর পর পরীক্ষা দিলাম, ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো-- রেজাল্ট ভালো হলো। তেমন আনন্দ ছিলোনা স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তার পর-পর অনার্সে ভর্তি হবো। তখন আমাদের বাসা চেঞ্জ হয়, শ্যামলী থেকে বাড্ডা চলে আসলাম, মধ্যবাড্ডা আসলাম, মাসখানেক লাগলো ঘরবাড়ি সব কিছু গুছাতে। আরেক দিকে অনার্সে ভর্তি হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো। ভর্তির জন্যে চেষ্টা করলাম ভগবানের আশীর্বাদে ভর্তিও হলাম। দুঃখকে যত দূরে ঠেলে রাখি, দুঃখ ততই বন্ধু রূপে আত্মপ্রকাশ করে, খুশির কথা গুলো শেয়ার করতে না করতেই, দুঃখ এসে আবার হাজির। প্রিয় পাঠক না লিখতে চাইলেও লেখা হয়ে যাচ্ছে, দেখুন না অভাবের সংসার যা কিনা পাহাড় ভেঙে চৌচির হওয়ার মত। মধ্যবিত্তদের বর্তমান সমাজের সমস্যা হচ্ছে, সঠিক ভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া, যে পরিমাণ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টাকা খরচ করতে হয় ভর্তির সময় ১২৫০০ টাকা এবং প্রতি মাসে ১০০০ টাকা এবং খুবই কষ্টদায়ক ছিলো বাবা সম্ভব হচ্ছিলো না যে, সংসারে পাশাপাশি এতো বড় খরচ বহন করে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া। তো মা বললো যে কিছু একটা করা দরকার।
মা আমাকে বললো
মাঃ তুমি পড়াশোনা করেছিস, এখন নিজে হাতে টাকা উপার্জন করা প্রয়োজন, আর নিজে অর্থ উপার্জন না করলে, পড়াশোনা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। সেই থেকে আমার ইনকামের একটা চাওয়া ও মনের টার্নিং পয়েন্ট বলতে পারেন।
আমিও আমার সবটা দিয়েও জব, না টিউশনি, কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না, বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করলাম, কথা বললাম, কোন দিকে হচ্ছিলো না। টিউশনি বড় আপু ভাইয়া মাধ্যমে খোঁজ করলাম তাও হচ্ছিলো না। চারপাশে যখন মানুষ যা চায় তখন পায় না। চারদিকে ঘোরা অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না এদিকে আমার পড়ার প্রবল ইচ্ছা। পাশাপাশি পরিবারের যদি সাপোর্ট করতে পারি, নিজেকে খুব গর্বিত মনে করতাম, মনের ভিতরে স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো। তো খুঁজতে খুঁজতে ভগবানের অশেষ কৃপা আমার উপরে! আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এক বড় দিদি থাকতো, একটা অটিজম বাচ্চাদের স্কুলে জব করতো, দিদি সাথে কথা বলে জানতে পারলাম অনার্স কমপ্লিট ছাড়াই নাকি আমি জব করতে পারবো। যারা স্টুডেন্ট জব করতে পারবে, সবচেয়ে বড় কথা আমার পড়াশোনাটাও আমি সঠিক ভাবে করতে পারবো, দিদি আমায় বলল জবের সম্পর্কে কতটুকু টাইম ওইখানে দিতে হবে, আর বললো তোর যত সার্টিফিকেট, সিভি রেডি করে রাখ। আমিও দিদির কথা মত সবকিছু নিয়ে রেডি থাকলাম। আর - এক রবিবার তোকে নিয়ে স্কুলে যাবো। আমিও অপেক্ষা আছি কবে যাবো। ১০ দিন পর আমার সার্টিফিকেট, সিভি নিয়ে গেলাম এক রবিবার(তাটিখ -১৮/০২/১৮) স্কুলের, নাম ছিল স্কুলে স্মাইলিং চিল্ড্রেন স্পেশাল স্কুল , স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি অল্প বয়সে চাকরি করতে হবে, সবেমাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছি। চাকরি করতে হলে ওই স্কুলের শর্ত ছিলো, পাঁচ দিন এখানে যেতে হবে সম্পূর্ণ কাজটা শিখতে হবে। তারপরে চাকরিটা আমার কনফার্ম হবে।আমিও ৫দিন সময় দিলাম সেই স্কুলে। ৫দিন পর চাকরীটা হলো আমার। বাস্তব জীবনের আর্নিং-এর টার্নিং এইখান থেকে শুর। দীর্ঘশ্বাসটা ফেলেই দিলাম। যাক একটা চিন্তা শেষ হলো। আমার পড়াশোনা জন্যে টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। সব চেয়ে আমার ভালো লেগে ছিলো সেখান থেকে চাকরী করেও আমি আমার কলেজের সব পরীক্ষার গুলো দিতে পারবো। কিন্তুু পরীক্ষা জন্যে ছুটি দিবে না সেই দিনের জন্যে আমার বেতন থেকে টাকা কেটে রাখবে, থাক তাও আমি অনেক খুশি ছিলাম। আর একটু কষ্টেও ছিলাম, ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম যে ভার্সিটিতে যারা ভর্তি হয়, তারা অনেক স্বপ্ন দেখে। আমিও স্বপ্ন দেখেছিলাম বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিবো ঘুরবো কলেজেই। একটি ক্লাস আমি এটেন্ড করবো কিন্তু আমার সেটা ভাগ্য হয়নি। সপ্তাহে একদিন শুধু শনিবার ক্যাম্পাসে যেতাম, একদিন সময় দিলাম নিজের পড়াশোনাকে। জয়েন করলে প্রথম জীবনের চাকরি অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে, এখানে কাজ শিখতে হয়েছে। আর জীবনের অনেক ভালো কাজ করলে নাকি ভালো মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। আর এতো সুন্দর একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি, যেখানে সর্বোত্তম মানবের সেবা করা যায়। আর মানসিক সমস্যা ও অটিস্টিক বাচ্চা কখনো নিজের ছাত্রী হবে ছাত্র গুলো কখনোই ভাবেনি আমাদের কাছে সন্তানেরা, অনেক প্রিয় একটা স্বর্গীয় বাচ্চাদের জন্য ভালোবাসা অন্যরকম আর একটা স্পেশাল স্কুলের বা যেকোন একটা প্লাটফর্মে প্রথমেই সফলতা আসে না।
আমিও ওইখানে এক বছর পরেও টিউশন পাই এখানে প্রথম কাজ ছিলো এটা বেশ ভালই টাকা দিয়ে এইভাবে আট ঘণ্টা সাড়ে নয় ঘণ্টা স্কুলে থাকে ডিউটি করতে হবে। নিজের পড়াশোনা মনে হচ্ছিলো না সবাই ইউনিভার্সিটি ভর্তি স্বপ্ন দেখে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে যাবে আনন্দ করবে সেই সুভাগিনী আমি ছিলামনা, আমার জন্য একটা সপ্তাহের সম্পন্ন হত, ৫দিন স্কুলে সময় দেই, আর হাতে পেতাম দু'দিন সময়, প্রথম ১ দিন ছিলো শুক্রবার, শনিবার বাড়িতে থাকতাম, শুক্রবার ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিয়ে, বাসায় থাকতাম ও নিজের পড়াশোনা করতাম। আরেক টা দিন ছিলো আমার কলেজের সময় দেওয়ার দিন শনিবার। আমার জব সাইডের বড় সমস্যা ছিলো সবাই একসাথে টিউশনি হয়না। আর যে কোন জায়গায় আছে, টিউশন হয়ে যায় কিন্তু আমাদের চাকরী জগতে যারা আছে ছাএ-ছাএী বাবা মা রা বাসায়, অভিজ্ঞ টিচার ছাড়া বাসায় বাঁচার জন্য টিচার নেয়ই না, সেক্ষেত্রে কি করা যায়? সবাই আমাদের সিনিয়র যারা আছেন ,দুই থেকে বছর তিন চাকরি করার পর টিউশন হয় আর ভালো অংকের টিউশন ফি আসে। সেই আশা করে ভালো করে কাজ শিখলাম। উনাদের থেকে এক বছরের দুমাস পর আমার একটা টিউশন হয়, প্রথম টিউশন পাওয়ার পর নিজের জন্য একটা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট করলাম। বেশ কিছু টাকা ওখানে রাখতে শুরু করলাম। তার পাঁচ, সাত মাস পর আমার ২য় টিউশান তার ৪ মাস পর ৩য় টিউশান টাও হয়ে যায়। মোট ৩ টা টিউশান আমার হয়েছে আমার বেশ ভালোই কাটছিলো দিন। আবার এর পাশাপাশি অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিলাম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিলাম। টিউশন, চাকরী,পড়াশোনা নিয়ে ভালোই চলছে। আমার চাকরী জীবনের কষ্ট ছিলো কোথাও ঘুরতে যেতে পারতাম না, আর আমার দু'বছর ৫মাস কমপ্লিট হয়। স্পেশাল কৃতজ্ঞতা দিদি।
গল্প নিয়ে মানুষের জন্ম হয় না, মানুষ জন্মের পর গল্প তৈরি করে। তার জীবন চলার পথে নতুন নতুন দিন, নতুন নতুন সব নতুন নতুন গল্প, সবাই বলতো পড়াশোনা করে কি ব্রিটিশ হবি নাকি? আমি ব্যর্থ হয়েছি পড়াশোনা করে একজন ব্রিটিশ হতে পারিনি! হয়েছি শিক্ষিকা। পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা আমার উপরে। যে আমি পড়াশোনা করে, ব্রিটিশ হয়নি! হয়েছি মানুষ গড়ার কারীগড়! তার নাম হলো শিক্ষক। আমার লেগে থাকা ও তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে আজকের এই আমি। আমার মানব জীবন ধন্য যে আমি একজন শিক্ষিকা।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮১
১৭-০৭-২০২০
ধন্যবাদ
নামঃ নন্দিতা বাড়ৈই
বর্তমান অবস্থান ঢাকা
গুলশান জোন 🌸
ব্যাচঃ ১০তম
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ ২১৮৫৭
জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ
রক্ত গ্রুপঃA+